অনিদ্রার দুই রূপ
অনিদ্রা মানে কি?
প্রশ্নটাই যে অবান্তর। এর উত্তর আমার ভাল ভাবেই জানা।
এর মানে স্তব্ধতায় প্রহর গোনা, আর কখন সশব্দে বেজে উঠবে এলার্ম এই ভেবে ভয়ে কুঁকড়ে যাওয়া, এর মানে স্বাভাবিক শ্বাস ফেলার নিস্ফল ম্যাজিক, এর মানে শরীরের ভার এপাশ ওপাশ করে সইয়ে নেবার, এর মানে জোর করে চোখের পাতা বন্ধ করে রাখা, এ কোন তীক্ষ্ণ চেতনা নয়–জ্বরেরই মগ্ন অবস্থা যেন, এর মানে বহু দিন আগে পড়া কোন বিচ্ছিন্ন স্তবক বিড়বিড় করে আওড়ানো ফের, এর মানে যখন অন্যেরা ঘুমন্ত তখন একা একা জেগে থাকার অপরাধবোধ, ঘোরের ভেতরে অবচেতনে ডুবে যেতে চাওয়া, তবু অবচেতনে ডুবে যেতে না পারা, এর মানে বেঁচে থাকার ত্রাস, ত্রাসের মধ্যে বেঁচে থাকা, এর মানে আরো একটি ধন্দলাগা দিনের শুরু।
জীবনী-শক্তি মানে কি?
এর মানে এক মানব দেহে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে চলা আতংক, যে-দেহের ক্ষমতা ক্রমেই কমে যাচ্ছে,এর মানে দশকের পর দশক ধরে অনিদ্রার মধ্যে বাস, কোন সময়ের এককেই যাকে মাপা যায় না,এর মানে নিজের ভেতরে বয়ে বেড়ানো অনেক সমুদ্র আর পিরামিডের ভার,অনেক দুর্লভ গ্রন্থরাজি, প্রাচীন বংশের ধারা, হজরত আদম যেসব ভোর দেখেছিলেন তার স্মৃতি, এর মানে এক জায়গাতে আটকে থাকার অনুভূতি, যেরকম আমি বাঁধা পড়ে আছি আজ এই দেহের সাথে, আমার কন্ঠস্বরের সাথে, যার আওয়াজ আমি শুনতে চাই না সেই স্বীয় নামের সাথে, প্রতিদিনের অসংখ্য খুচরো বিবরণ, যার উপর আমার কোন নিয়ন্ত্রণ নেই, যে-ল্যাটিন আমি জানি না অথচ যার জন্যে আমি তৃষ্ণার্ত, এসব কিছুর সাথে,এর মানে হচ্ছে নিজেকে কেবলই মৃত্যুর ভেতরে ডোবানোর চেষ্টা, তবু মৃত্যুর মধ্যে ডুবতে না পারা, এর মানে হচ্ছে বেঁচে থাকা এবং বেঁচে থাকতে হবে এই বোধে আবারও চলতে শুরু করা।