পর্ব ::১০৩
[পূর্বে প্রকাশিতের পর]
এবারেও তাদের বেশিরভাগ নেতারই এই মনোভাব ছিল। তাছাড়া, বাকশালের কর্মসূচি ছিল অনেকাংশে র্যাডিকেল (বিশেষত বহুমুখী সমবায় ও বিকেন্দ্রীকরণের সিদ্ধান্ত)। প্রচলিত আওয়ামী লীগের দলীয় ভাবনাকে সেটি অতিক্রম করে গিয়েছিল। দক্ষিণপন্থিরা এবং চরম বামপন্থিরা (তাদের নাম আজকে নাই-বা করলাম) পূর্বাপর আওয়ামী লীগ ও বাকশাল কর্মসূচির বিরুদ্ধতা করেছিল। তাদের মাথায় ঘুরছিল ভারতের ‘সম্প্রসারণবাদ’ আর সোভিয়েত ‘সামাজিক সাম্রাজ্যবাদ’ বিরোধিতার পুরোনো স্লোগান। অথচ চীন তখন পর্যন্ত বাংলাদেশকে স্বীকৃতি পর্যন্ত দেয়নি এবং ১৯৭২-৭৫ পর্বে এক কপর্দকও সহায়তা করেনি- এমনি ছিল চরম বামপন্থিদের মোহান্ধতা। পাকিস্তানবাদী দক্ষিণপন্থি প্রতিক্রিয়াশীল শক্তির কথা নাই বললাম। আসলে সমাজের বিপ্লবী রূপান্তরের রাস্তা কোনো গুলশান এভিন্যুর মতো মসৃণ রাজপথ নয়। সেটা বঙ্গবন্ধু যেমন জানতেন, তেমনি তৎকালীন সিপিবি-ন্যাপ নেতৃত্বও জানতেন। এদেশের ভেতরে ও বাইরের প্রতিক্রিয়াশীলদের হুমকি থেকে বের করে নিয়ে এসে প্রগতির ধারায় পরিচালিত করতে হবে এক সর্বব্যাপী আয়োজনের মাধ্যমে এটিই ছিল প্রধান উপলব্ধি। এই পথ বিপদ-সংকুল মুজিব নিজেও সেটি বুঝতে পেরেছিলেন। অধ্যাপক নুরুল ইসলামকে সেটা তিনি বলেও ছিলেন। এক ধরনের প্রিমনিশন হয়েছিল তার। যেন দেখতে পাচ্ছিলেন একটি অন্ধকারাচ্ছন্ন ঝঞ্ঝাবিক্ষুব্ধ নদী তিনি নৌকাযোগে পার হচ্ছেন। সেই সময়টা পার হতে পারলেই তাঁর জন্যে অপেক্ষা করে আছে ঝরঝরে বৃষ্টিস্নাত স্নিগ্ধ সোনালি দিন। বাকশাল-পর্ব ছিল সেই অসমাপ্ত মহা-উৎক্রমণের পর্ব।
দেশের সংকট মোকাবিলায় সাময়িককালের জন্য হলেও বাকশালের মতো একটি নতুন ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করা জরুরি- এ উপলব্ধি সিপিবি-ন্যাপ তৎকালীন ‘মস্কোপন্থি’ দল-গোষ্ঠীর মধ্যে একটি বড় অংশের মধ্যেই পূর্বাপর জাগ্রত ছিল। এরা অনেকে ১৯৭২ সাল থেকেই একটি অভিন্ন প্ল্যাটফর্ম বা মঞ্চ গড়ে তোলার প্রয়োজনীয়তা অনুধাবন করে থাকবেন। মতিউর রহমানের পূর্বোক্ত লেখাতেও এর ইঙ্গিত আছে। এটা কোনো অস্বাভাবিক চিন্তা ছিল না সিপিবি-ন্যাপের জন্য। সে সময়ের ষাট-সত্তরের আন্তর্জাতিক কমিউনিস্ট আন্দোলনের মধ্যে একটি বহুল প্রচলিত তত্ত্ব ছিল ‘অপুঁজিবাদী বিকাশের পথ’ (যা পরে সমাজতন্ত্র-অভিমুখীনতার বা ‘সোশ্যালিস্ট ওরিয়েন্টেশন’ বলে অভিহিত হয়)। মধ্যবিত্তের প্রগতিশীল অংশের সাথে শ্রমিক-কৃষক সাধারণ খেটে-খাওয়া মানুষের ঐক্যজোট ছাড়া জাতীয় মুক্তি আন্দোলন এক পর্যায়ে বিপথগামী হয়ে যেতে পারে- এই আশঙ্কা ছিল তৃতীয় বিশ্বের অনেক দেশেই। সিপিবি-ন্যাপের মতো প্রগতিশীল বামপন্থি ধারাগুলো সে কারণেই বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগের সাথে ‘অভিন্ন মঞ্চ’ গড়ে তোলার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেছিল ১৯৭১ সাল থেকেই। শুধু রাষ্ট্রবিজ্ঞানী তালুকদার মনিরুজ্জামান নন, অর্থনীতিবিদ নুরুল ইসলামও মনে করেছেন, বাকশালের পেছনে দেশের বামপন্থি মহল ও আন্তর্জাতিকভাবে সোভিয়েত বা পূর্ব ইউরোপের দেশগুলোর অনেকেই পরোক্ষভাবে সমর্থন জুগিয়ে থাকবে। তিনি অবশ্য সেখানে ‘জনশ্রুতির দোহাই’ দিয়েছেন তার প্রদত্ত তথ্যের উৎস সম্পর্কে বলতে গিয়ে। কিন্তু যেভাবে লিখেছেন তাতে বোঝা যায়, জনশ্রুতিকে তিনি বিশেষ গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করেছেন। পুরো উদ্ধৃতিটি আমি তুলে ধরতে চাই। নুরুল ইসলাম লিখেছেন :
‘জনশ্রুতি ছিল, প্রস্তাবিত সংবিধান সংশোধনীর ব্যাপারে বঙ্গবন্ধু বিভিন্ন ব্যক্তি-গোষ্ঠীর কাছ থেকে পরামর্শ পেয়েছিলেন। কিন্তু এ সম্পর্কে আমার প্রত্যক্ষ কোনো জ্ঞান ছিল না। অনেকে মনে করত যে বঙ্গবন্ধু বিশেষ করে বাংলাদেশের কিছু বামপন্থি রাজনৈতিক নেতার সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করেছেন। হয়তো তাঁরা পূর্ব ইউরোপের একদলীয় রাষ্ট্র ও পরিকল্পিত সমাজতান্ত্রিক অর্থনীতি নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষার ব্যাপারে বঙ্গবন্ধুর মনোযোগ আকর্ষণ করেছিলেন। এ ক্ষেত্রে তাঁরা পোল্যান্ড ও যুগোস্লাভিয়ার মতো দেশের উদাহরণ তুলে ধরে থাকতে পারেন। সাধারণভাবে এই দেশগুলো সোভিয়েত ব্যবস্থা থেকে তাদের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক ধারণাগুলো নিয়েছিল। তারপর কিছুটা রদবদল করে তাদের দেশে তা কার্যকর করেছে। দীর্ঘদিন ধরে চলে আসা তাদের পুরোনো অর্থনৈতিক কাঠামো ও সামাজিক-সাংস্কৃতিক প্রথার সঙ্গে খাপ খাওয়ানোর জন্য পূর্ব ইউরোপীয় দেশগুলোর সোভিয়েত ব্যবস্থার কিছু পরিবর্তন প্রয়োজন ছিল। বঙ্গবন্ধু তাঁর প্রস্তাবিত অর্থনৈতিক ব্যবস্থায় বহুমুখী কৃষি সমবায় ও শিল্প ব্যবস্থাপনায় শ্রমিকদের অংশগ্রহণের যে বিষয়গুলো রেখেছিলেন, তা পূর্ব ইউরোপীয় কয়েকটি দেশের অভিজ্ঞতার সঙ্গে তুলনীয়। এগুলো সবই আমার ধারণা। এ ব্যাপারে আমি সরাসরি কোনো খবর পাইনি অথবা বাম দলগুলোর সঙ্গেও আমার কোনো আলোচনা হয়নি।’
১৯৭২ সাল থেকেই জাতীয় সরকার ধরনের ঐক্যজোট গড়া এবং ১৯৭৪ থেকেই বাকশাল ধারার একটি সাময়িক ব্যবস্থা প্রবর্তন করা নিয়ে রাজনৈতিক মহলে আলাপ-আলোচনা চলছিল। ‘বুর্জোয়া-গণতন্ত্র’ নিয়ে বিভ্রম ছিল না সিপিবি-ন্যাপের বড় অংশের মধ্যে। যে কোনো মূল্যে গণতন্ত্র রাখতেই হবে- এ রকম হঠকারী লিবারেল বিভ্রমের মায়াজালে আবদ্ধ হতে চাননি তারা। অনেক সময়ে অনেক প্রয়োজনে উন্নয়নের শুদ্ধ মানদণ্ড অনুসরণ করা সম্ভব নয়- এটা তারা জানতেন; সোভিয়েত পার্টিরও সেটা জানা ছিল। বঙ্গবন্ধুর মধ্যেও সে উপলব্ধি জেগেছিল। আগে দেশের মানুষের জন্য খাদ্য-সংস্থান করতে হবে; বণ্টন ব্যবস্থায় শৃঙ্খলার অবনতি ঠেকাতে হবে, তারপর অন্যকিছু। ১৯৭২-৭৪ সালের পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে গিয়ে বঙ্গবন্ধুর মনে হয়েছিল, দেশকে বাঁচাতে হলে অন্য পথ নিতে হবে, কয়েক বছরের জন্য হলেও। লাইনচ্যুত রেলগাড়িকে স্বাভাবিক উন্নয়নের পথে ফিরিয়ে আনতে হলে আপাতদৃষ্টিতে কিছু ‘অস্বাভাবিক পন্থা’ অবলম্বন করতেই হয়। যে কোনো প্রবল সংকটের মুখেই মানুষকে তা করতে হয়। সেটা একটা জাতি বা দেশের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। তখন ‘গণতন্ত্র গেল, গণতন্ত্র গেল’ বলে মায়াকান্না জুড়ে দিলে প্রাগম্যাটিক দৃষ্টিভঙ্গির পরিচয় দেওয়া হয় না। মুশকিল হলো, লিবারেলরা বা সোশ্যাল লিবারেলরা ইতিহাসের পরিবর্তনে ‘জোর খাটানোর’ (রোল অব ফোর্স) ভূমিকাকে সজ্ঞানে বা অজ্ঞানে অস্বীকার করে থাকেন। এংগেলসের অ্যান্টি-ডুরিং এ ক্ষেত্রে অবশ্যপাঠ্য ইতিহাসের পট-পরিবর্তনে কেন ‘শক্তি প্রয়োগের’ প্রয়োজন তা বোঝার ক্ষেত্রে।
পোস্ট-কলোনিয়াল আমলে ডোমিন্যান্স ও হেজিমনি দুইয়েরই ভূমিকা থাকে, বিশেষত উন্নয়নের শুরুর পর্যায়ে। বাংলাদেশের অবস্থাটাও সেদিন ছিল সে রকম। মনে রাখতে হবে, সাধারণভাবে বাংলাদেশ ১৯৬৯/৭০ সালের মাথাপিছু আয়কে ছুঁতে পেরেছিল ১৯৮১/৮২ সালের দিকেই কেবল। এ অর্থে ১৯৭২-১৯৮২ এই ১০ বছর ছিল বাংলাদেশের পুনর্গঠন পর্ব। এ ধরনের পর্বের ক্ষেত্রে কোনো অর্থনীতিবিদ বা পরিসংখ্যানবিদই স্বাভাবিক প্রবৃদ্ধি বা উন্নয়নের ধারণা প্রয়োগ করতে চাইবেন না। আর ১৯৭২-৭৪ পর্বের পরিস্থিতি ছিল আরও বিপদসংকুল ও ঝুঁকিপূর্ণ। আমি এ ক্ষেত্রে ১৯১৭ সালের বিপ্লবের সাথে একটি বড় সাদৃশ্য দেখতে পাই। দুই ক্ষেত্রেই প্রথমদিকে নিয়মতান্ত্রিক রীতি-নীতি মেনে চলার চেষ্টা ছিল। কিন্তু তাতে নয়া রিজিমের বিরুদ্ধাচরণ করার ক্রমবর্ধমান অপতৎপরতাকে নিরুৎসাহিত করা যায়নি। রাশিয়ায় ‘হোয়াইট টেরর’ (অর্থাৎ প্রতিক্রিয়াশীলদের ও চরমপন্থি দলগুলোর চোরাগোপ্তা আক্রমণ) যখন ব্যাপক আকারে শুরু হলো এবং স্বয়ং লেনিন ১৯১৮ সালে এদের আক্রমণে গুলিবিদ্ধ হলেন, তখন বাধ্য হয়ে শুরু করতে হয়েছিল ‘রেড টেরর’। এই একই অবস্থার মুখোমুখি হতে হয়েছিল ১৯৭১ সালের পর আওয়ামী লীগকে। ১৯৭২-৭৪ পর্বে প্রায় তিন হাজার নেতাকর্মী বিভিন্ন চোরাগোপ্তা আক্রমণে নিহত হয়েছিলেন। বিপ্লবোত্তর রেড টেররকেই বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন ‘লাল ঘোড়া দাবড়ানোর’ কথা তুলে। এ পরিস্থিতিতে অন্য পথ অবলম্বন করা ছাড়া কোনো পথ খোলা ছিল না। এটাই রূঢ় বাস্তবতা। ‘রেড টেরর’ শুরু হওয়ার পর বহির্বিশ্বে, বিশেষত পশ্চিম ইউরোপ ও আমেরিকায় লেনিনের সরকারের কার্যকলাপ নিয়ে ছি ছি পড়ে গেল। লিবারেলদের মধ্যে অনেকেই মুখ ফিরিয়ে নিলেন নতুন সরকারের থেকে। বঙ্গবন্ধুর ক্ষেত্রেও এটি ঘটেছিল। হয়তো এদের অনেকে রাজনীতির বাইরে থেকে বাকশালের প্রকৃত তাৎপর্য বুঝতে পারেননি। তাদের অবস্থা ছিল অনেকটা বিপ্লবোত্তর রাশিয়ার প্রথম বছরগুলোর বৈরী পরিবেশ হতবিহ্বল ও বিচলিত ম্যাক্সিম গোর্কির মতো। ব্যক্তিস্বাধীনতার নানা হস্তক্ষেপে গোর্কি প্রায়ই লেনিনের দ্বারস্থ হতেন। প্রতিবারই এ নিয়ে দু’জনের মধ্যে অম্লমধুর বাক্য বিনিময় হতো। শেষ পর্যন্ত বিপ্লবোত্তর নতুন ব্যবস্থাকে যারা মন থেকে মানতে পারছেন না, তাদেরকে দেশের বাইরে যাওয়ার সুযোগ করে দেওয়া হয় ১৯২১ সালে। যে স্টিমারে করে তারা দেশের বাইরে চলে যান, তার নাম দেওয়া হয় ‘ফিলোসফার’স স্টিমার’। মূলত লিবারেল রাজনীতির সাথে জড়িত বা একেবারেই যারা রাজনীতি-সচেতন নন, সেসব ঝুঁকি-এড়ানো বুদ্ধিজীবী এই স্টিমারে আশ্রয় নিয়েছিলেন। পরে অবশ্য এদের বড় একটা অংশ বিপ্লবোত্তর রুশ সরকারের সমর্থক হিসেবে প্রবাসে আবার সক্রিয় হয়েছিলেন। বাকশালের ক্ষেত্রে কিছু ভিন্নমত সত্ত্বেও বেশিরভাগ বুদ্ধিজীবীই একে ‘আপৎকালীন ব্যবস্থা’ হিসেবে মেনে নিয়েছিলেন। দেশ এমনই সংকটের মুখোমুখি হয়েছিল যে, ইচ্ছা না থাকা সত্ত্বেও তারা এ রকম ব্যবস্থায় শেষ পর্যন্ত সায় জানিয়েছিলেন বৃহত্তর প্রগতির স্বার্থে।
আগেই বলেছি, বাকশাল জাতীয় ব্যবস্থা গড়া নিয়ে ১৯৭৪ সালজুড়েই কথাবার্তা চলছিল রাজনৈতিক মহলে। সরকারের একজন তীক্ষষ্ট ও তীব্র ‘দক্ষিণপন্থি’ সমালোচক হিসেবে ‘মঞ্চে-নেপথ্যে’ নামে ইত্তেফাক পত্রিকায় কলাম লিখতেন ‘স্পষ্টভাষী’ (খোন্দকার আব্দুল হামিদ)। এহেন ‘স্পষ্টভাষী’ ১৯৭৪ সালের ২৫ এপ্রিল লিখেছেন :
“চারিদিকে অসংখ্য গুজব। ‘এমারজেন্সির’ নামে বলগাহীন জল্পনা-কল্পনা। আমার ওসব জল্পনা-কল্পনার প্রয়োজন নাই। দুর্নীতি, চোরাচালান, মওজুদদারী, মুনাফাখুরী, শ্বেত-সন্ত্রাস ও সমাজবিরোধী নৈরাজ্যবাদী কার্যকলাপ দমনের জন্য সামরিক বাহিনীকে সাময়িকভাবে নামানোর প্রয়োজন বোধ করিলে সরকার তাহা করিবে, আমাদের আপত্তির কোন কারণ নাই। আমরা শুধু চাই শান্তি। আমরা সন্ত্রাস চাই না। আমরা চাই নিরাপত্তা।…’গ্যাংগ্রিন মলমে-প্রলেপে সারে না’ নিবন্ধে বলা হইয়াছে যে, এটা হইল আজিকার জরুরী কর্তব্যের এক দিক। অপর দিকটি হইতেছে অর্থনীতির পাগলা ঘোড়াকে পাকড়াও করিয়া আস্তাবলে আবদ্ধ করা, এই অর্থনৈতিক নৈরাজ্যকে দমন করা, ইহাকে নিয়ম-শৃঙ্খলার মধ্যে ফিরাইয়া আনা। আমি অত বড় বড় তত্ত্ব বুঝি না। কোন বিশেষ তত্ত্বের পক্ষে বা বিপক্ষে আমি কোন সেট-নোশন বা পূর্ব-নির্ধারিত ধারণাও পোষণ করি না।…অতি তেজস্কর ঔষধ অতি ক্ষীণ, দুর্বল রোগীর অঙ্গে পরীক্ষা করিতে গিয়া আমরা রোগীকেই মৃতকল্প করিয়া তুলিয়াছি।…রোগী বাঁচিলে পরীক্ষা-নিরীক্ষার সুযোগ পরে অনেক পাওয়া যাইবে।…অতএব, প্রশাসনিক ক্ষেত্রে ইমারজেন্সি হইবে কি হইবে না, সেটা আমার ততটা বিবেচ্য নয়। আমার চোখে আজ সবচেয়ে জরুরী প্রশ্ন, এই বিশৃঙ্খল অর্থনীতির পাগলা ঘোড়াকে ডিসিপ্লিনে আনা। এই দিকটিকে উপেক্ষা করিয়া শুধু উপরদিকে ইমারজেন্সি-পাওয়ার প্রয়োগ করিলে বাঞ্ছিত ফল সম্পূর্ণ পরিমাণে লাভ করা সম্ভব নাও হইতে পারে।”
এই যদি হয় দক্ষিণপন্থি সমালোচকেরও উপলব্ধি, তবে বামপন্থি মহলে উদ্বেগ আরও গভীরতর হবে, তাতে আর সন্দেহ কী! ১৯৭৫ সালের ২৫ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধুর ভাষণে এই উদ্বেগই ছিল প্রধান সুর। অর্থনীতিকে পুনরুদ্ধার করতে হবে; আইনশৃঙ্খলার অবনতি রোধ করতে হবে; দুর্নীতিকে প্রশমন করতে হবে; জনজীবনে স্বস্তি ফিরিয়ে আনতে হবে- এটাই ছিল তার প্রধান বিবেচনা। রাজনীতি এখানে অর্থনীতির বোধের দ্বারা চালিত হয়েছে। লিবারেল বুদ্ধিজীবীরা অনেকেই সেটি বুঝতে পারেন না। এ বিষয়ে নুরুল ইসলামের স্মৃতিচারণ এখনও প্রাসঙ্গিক।
[ক্রমশ]