মহামারি প্রতিরোধ :ঔপনিবেশিক রাষ্ট্রের ভূমিকা
উপরের সব প্রশ্নের এখানে আলোচনা করা সম্ভব নয়। শুধু দ্বিতীয় প্রশ্নটির কয়েকটি দিকের প্রতি সংক্ষেপে আলোকপাত করতে চাই। প্রথমত, ঔপনিবেশিক রাষ্ট্রের জন্য ‘জনস্বাস্থ্যের’ বিষয়টি ছিল মূলত রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তার সাথে জড়িত। বাণিজ্য করতে এসে বঙ্গদেশে তিনটি গ্রাম নিয়ে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি যখন তার কাজ-কর্ম শুরু করে তখনও ‘জনস্বাস্থ্য’ তাদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হয়ে দাঁড়ায়নি। পলাশীর যুদ্ধে নবাব সিরাজ-উদ-দৌলাকে হারানোর পর বাংলায় (এবং বাংলাকে কেন্দ্র করে অন্যান্য প্রদেশ) অবাধ উপনিবেশ স্থাপনের সুযোগ এলো কোম্পানির সামনে প্রথম বারের মতো। আরো বেশি বেশি করে সেনাবাহিনী গড়ে তোলার প্রয়োজন দেখা দিল। কোম্পানি শাসনের অংশ হিসেবে দাঁড় করাতে হলো এক নতুন আমলাতন্ত্রের। এ জন্য অনেক শ্বেতাঙ্গ রাজকর্মচারী বিলেত থেকে এলেন; তা ছাড়া ভাগ্যান্বেষী ইংরেজরা তো ছিলেনই, যারা নতুন উপনিবেশে এসে রাতারাতি বড়লোক হওয়ার স্বপ্ন দেখেছিলেন। এই ঔপনির্বেশিক কর্মযজ্ঞের পথে প্রধান বাধা হয়ে দঁড়িয়েছিল এদেশের আলো-হাওয়া। ইতিহাসবিদ দীপেশ চক্রবর্তী তার ‘শরীর, সম্পদ ও রাষ্ট্র :ঔপনিবেশিক ভারতে মহামারি ও জন সংস্কৃতি’ প্রবন্ধে দেখিয়েছেন যে, জনস্বাস্থ্যের মূল নিহিত ছিল ‘একটি নিতান্তই সাম্রাজ্যবাদী ও রাজনীতিক প্রশ্নে : শ্বেতাঙ্গ প্রভুরা কি গ্রীষ্ফ্মপ্রধান দেশগুলিতে উপনিবেশ গড়তে পারবেন?’ এই প্রয়োজন মেটাতেই ১৭৬৮ সালে প্রকাশিত হয় জে. লিন্ড রচিত বই- এসে অন ডিসিসেস ইন্সিডেন্ট অফ ইউরোপিয়ানস ইন হট ক্লাইমেটস। এর কয়েক বছর আগে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির মেডিকেল সার্ভিস চালু হয় ১৭৬৪ সালে। সে সময়কার ‘রুলিং আইডিয়া’ ছিল- গরম দেশগুলোর আবহাওয়া শ্বেতাঙ্গ মানুষদের জন্য আখেরে অস্বাস্থ্যকর। ফলে সেখানে তাদের দীর্ঘকাল ধরে রাজত্ব চালানো কঠিন। এই থিওরির ভিত্তি ছিল- ‘মায়াস্মা’ বা পূতিবাষ্প তত্ত্ব। মায়াস্মা বা অশুভ হাওয়া-তত্ত্বের জন্ম চতুর্দশ শতাব্দীর ইউরোপে, যখন ‘কালো মৃত্যু’র (Black Death) করাল-গ্রাসে ইউরোপের প্রায় ৬০ শতাংশ মানুষ নিশ্চিহ্ন হয়ে গিয়েছিল। ১৩৪৬-৪৮ সালের মধ্যে মাত্র তিন বছরে প্লেগের কারণে এই মৃত্যু ঘটে। এর আগেও প্লেগ এসেছিল ইউরোপে, কিন্তু সেবার চীন থেকে প্লেগের যে স্ট্রেইনটি আসে তা লণ্ডভণ্ড করে দেয় ইউরোপের সমাজ-রাষ্ট্র-অর্থনীতির সবকিছু। সে সময়ের বৈজ্ঞানিক চিন্তা-চেতনার মান আজকের মতো ছিল না। সে জন্যই অশুভ হাওয়া-তত্ত্ব জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। এই তত্ত্বের মূল কথা ছিল, প্লেগ ও কলেরার মতো রোগগুলি পচনশীল দেহ (মানুষ বা প্রাণী) থেকে বাতাসে ছড়ায় এবং একবার সেই ‘খারাপ বাতাস’ গায়ে লাগলে মানুষ তাতে সংক্রমিত হয়ে পড়ে। ১৮৬০ সালে যখন ‘জীবাণু-তত্ত্ব’ আবিস্কৃত হলো তখন জন্ম হলো এক নতুন শাস্ত্রের, যার নাম ট্রপিক্যাল মেডিসিন। পচনশীল শরীর এবং হাওয়ায় ভেসে বেড়ানো এই শরীর-নির্গত অশুভ বাষ্পকণা- এর বিপরীতে পরবর্তীকালে এসেছিল জীবাণু-তত্ত্ব অর্থাৎ প্লেগ, কলেরা, বসন্ত প্রতিটি রোগের পেছনে রয়েছে বিশেষ বিশেষ জীবাণুর ক্রিয়াশীলতা। প্রতিটি মারি, মহামারি বা গুরুতর ব্যাধির মূলে আসলে কাজ করছে ভিন্ন ভিন্ন জীবাণু। এই তত্ত্ব আবিস্কারের ফলে দীর্ঘস্থায়ীভাবে উপনিবেশ স্থাপনের ব্যাপারে নিশ্চিত হওয়া গেল- অন্তত স্বাস্থ্যগত দিক থেকে। ট্রপিক্যাল মেডিসিনের জনক প্যাট্রিক ম্যানসন ১৮৯৮ সালে মন্তব্য করেছিলেন, ‘আমি এখন স্থির নিশ্চিত যে, শ্বেতাঙ্গদের পক্ষে গ্রীষ্ফ্মপ্রধান দেশগুলিতে উপনিবেশ স্থাপনা করা সম্ভব।’ কিন্তু এ কথা তো বলা হচ্ছে পলাশীর যুদ্ধ-জয়ের প্রায় দেড়শ’ বছর পরে। ১৮ শতকের দ্বিতীয় ভাগে এবং প্রায় উনিশ শতকজুড়ে তাহলে জনস্বাস্থ্যের প্রশ্নটিকে সামাল দেওয়া হয়েছিল কী করে? নাকি জনস্বাস্থ্য বলতে সে রকম কিছু ছিলই না তখন?
সমসাময়িক নানা প্রতিবেদন থেকে দেখা যায় যে কোম্পানির সৈন্যদের মহামারি থেকে রক্ষা করাই ছিল জনস্বাস্থ্যের মূল মনোযোগের বিষয়। ১৮১৭ থেকে ১৮৫৭ পর্যন্ত ভারতে ইউরোপীয় সৈন্য ও অফিসারদের মধ্যে মৃত্যুর ৯৪ শতাংশই ছিল নানাবিধ অসুখের কারণে। এর মধ্যে রয়েছে ম্যালেরিয়া জাতীয় জ্বর, কলেরা, রক্ত-আমাশা, উদরাময় প্রভৃতি অসুখ। এসব অসুখ থেকে বাঁচার সর্বোৎকৃষ্ট উপায় ছিল উপনিবেশের প্রজাদের বাসস্থানের পরিবেশের উন্নতি ও উন্নত স্বাস্থ্যবিধির প্রবর্তন (যথা, পানীয় জলের ব্যবস্থা, পয়ঃনিস্কাশন, যেখানে সেখানে থুতু-কফ না ফেলা, স্যানিটেশন, হাত ধোয়ার অভ্যাস ইত্যাদি)। এটা হলে কিছুদিন পরপর সংক্রামক মারির আশঙ্কা অনেকখানি লুপ্ত হতো, সন্দেহ নেই। কিন্তু ঔপনিবেশিক সরকারের পক্ষে এ-দায়িত্ব পালন করা কঠিন। তার উদ্দেশ্য এখানে ‘ওয়েলফেয়ার স্টেট’ প্রতিষ্ঠা নয়, বরং অশুভ হাওয়া-তত্ত্ব মেনে কী করে শোষণের মাত্রা আরো তীব্র করে সম্পদ-পাচার দ্রুত গতিতে নিষ্পন্ন করা যায় সে লক্ষ্যে কাজ করা। আইনের প্রয়োগের সূত্রে বলা হলেও এর বৃহত্তর তাৎপর্য রয়ে গেছে। উনিশ শতকের মানদণ্ড অনুযায়ী জনস্বাস্থ্যের যেসব রীতি ইংল্যান্ডে প্রয়োগ করা হয়েছে, পরাধীন ভারতবর্ষে তা একেবারেই অনুসৃত হয়নি। আইনের প্রয়োগ সবার জন্য সমান হয়নি। পার্থ চ্যাটার্জী একেই বলেছিলেন ‘কলোনিয়াল রুল অব ডিফারেন্স’। উনিশ শতকজুড়েই বাংলাদেশের গ্রাম ছিল একটি উপেক্ষিত বিষয়- বিশেষত জনস্বাস্থ্যের দৃষ্টিকোণ থেকে। ভূদেব মুখোপাধ্যায়ের ‘পারিবারিক প্রবন্ধ’ (১৮৮২) গ্রন্থটির কোন কোন অংশে রাষ্ট্রের ওপরে নির্ভর না করে ‘পরিবার’কে সক্রিয় করতে চাওয়া হয়েছে এই কারণেই। মমার্থ এই যে, ঔপনিবেশিক রাজশক্তির কাছে জনস্বাস্থ্য-রক্ষা কর্মসূচি প্রত্যাশা করে লাভ নেই। ভারতবাসীকে বাঁচাতে হলে পারিবারিক পর্যায়েই স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলে ঘুরে দাঁড়াতে হবে, নতুবা কলেরা-বসন্তে মৃত্যুবরণ করতে হবে। ভূদেবের গ্রন্থের পঞ্চদশ প্রবন্ধের শিরোনাম ‘পরিচ্ছন্নতা’। সেখানে বিবরণটি এই রকম :
‘দেহ এবং গৃহস্থিত সমুদয় সামগ্রী সুবিশুদ্ধ এবং সুপরিস্কৃৃত রাখিবার অবশ্যকর্ত্তব্যতাও শাস্ত্রে যথোচিত পরিমাণে উল্লিখিত আছে। গৃহের এবং গৃহস্থিত দ্রব্যের যথোচিত বিলেপন ও সন্মার্জ্জনাদি, স্নান, ভোজন, আচমন, বস্ত্রাদির পরিবর্ত্তন প্রভৃতি ব্যাপার আমাদিগের অবশ্যকরণীয় প্রাত্যহিক কার্য্যের মধ্যেই নির্দিষ্ট। বিশেষত :গৃহস্থের বাটীতে দেববিগ্রহ ও ঠাকুরঘর রাখিবার ব্যবস্থা করিয়া সচল গৃহস্থেরই শুচিতার এবং পরিচ্ছন্নতার এক একটি আদর্শ পাইবার উপায় করা হইয়াছে। ঠাকুরঘর যেভাবে রাখ, আজকের সকল ঘর সেইভাবে রাখিলেই হইল। বস্তুত :শুচিতাপ্রিয় য়িহুদীদিগের মধ্যে সংক্রামক রোগ অল্প হয়। তাহার কারণ এই যে, গৃহে এবং গৃহোপকরণ সমস্ত অতি সুপরিস্কৃৃত করিয়া রাখিবার নিমিত্ত উহাদিগের ধর্মশাস্ত্রে আদেশ আছে, এবং য়িহুদীরা আপনাদের শাস্ত্রের আদেশ সমস্ত ভক্তিপূর্বক প্রতিপালন করে।’
তবে ভূদেব এটাও লক্ষ্য করেছেন- অর্থনৈতিক উন্নতি না হলে পরিস্কার-পরিচ্ছন্নতায় উন্নতি ঘটানো একান্তভাবেই কঠিন। ‘পরিচ্ছন্ন হইয়া থাকিতে সকলেই চায়- উহা ধর্ম্ম্য, স্বাস্থ্যকর এবং সাক্ষাৎ সুখপ্রদ। কিন্তু এ কথাও বলি, পরিস্কার এবং পরিচ্ছন্ন হইয়া থাকা কিঞ্চিৎ ব্যয়সাধ্য ব্যাপার; লক্ষ্মীর অধিষ্ঠান ব্যতিরেকে পরিস্কার এবং পরিচ্ছন্ন হওয়া সম্যক ঘটিয়া উঠে না।’ অবশ্য যদি রাষ্ট্রতরফে পরিস্কার-পরিচ্ছন্নতা বিষয়ে ব্যাপক জন-সচেতনা কার্যক্রম পরিচালিত হত বা আধুনিক যুগের ন্যায় স্বাস্থ্যসম্মত শৌচাগার, আবর্জনা পয়ঃনিস্কাশন প্রণালী, সুপেয় ও নিরাপদ পানীয় জলের ব্যবস্থার প্রবর্তন করা হত, তাহলে গরীবরাও পরিচ্ছন্নতার কার্যক্রমে সমান তালে এগিয়ে আসতেন। কিন্তু ঔপনিবেশিক পরিস্থিতিতে এটা আশা করা সম্ভব ছিল না।
১৯১২ সালে এদেশে প্রাদেশিক পর্যায়ে সর্বপ্রথম পাবলিক হেলথ্ ডাইরেক্টরেট-এর প্রতিষ্ঠা হয়। কলেরা, বসন্ত, প্লেগ জাতীয় মহামারিতে অনেক সেনা সদস্যের মৃত্যু এই প্রতিষ্ঠার পেছনে কাজ করেছে। অবশ্য এতে করে জনগণের স্বাস্থ্যে কোন গুণগত পরিবর্তন আসেনি। এদেশের জনসাধারণকে মারি বা মহামারি মোকাবিলায় মূলত নিজের চেষ্টার ওপরেই নির্ভর করতে হয়েছে। পাবলিক হেলথ্ ডিপার্টমেন্ট ‘স্বাস্থ্যবিধি’ লিখে প্রচার করেনি। তাই ভূদেবের মতো প্রাচীনপন্থি পণ্ডিতকে ‘রোগীর সেবা’ করার বিধান লিখতে হয়েছে। মহামারি ছড়িয়ে পড়ার কারণে ভূদেবকে সতর্কবাণী উচ্চারণ করতে হয়েছে :
‘গৃহস্বামী সকলকে সতর্ক করিয়া দিবেন, যেন পীড়িতের বিছানা, বালিস, বস্ত্রাদি বাটীর অপর কাহার বস্ত্রাদির সহিত না মিশে-তাহার মল, মূত্র, ক্লেদাদি বাটী হইতে অধিক দূরে নিক্ষিপ্ত এবং পরিস্কৃৃত হয়- তাহার ব্যবহূত পাত্রাদি বাটীর সাধারণ পাত্রাদি হইতে স্বতন্ত্র থাকে- এবং সেবকেরা যতদূর পারেন, যে কাপড়ে … ঘরে থাকেন, সে কাপড় না ছাড়িয়া বাটীর অপর লোকের …ঘনিষ্ঠ সংস্পর্শে না আইসেন।’ এ যেন হাল আমলের করোনার কালের ‘হোম কোয়ারেন্টাইন’ বিধিমালা তৈরি করছেন ভূদেব মুখ্যোপাধ্যায়।
তবে ঔপনিবেশিক রাষ্ট্র একেবারেই এদেশীয় জনগণের স্বাস্থ্য সম্পর্কে নিরুত্তাপ ছিল, তা নয়। রাষ্ট্রের নিস্পৃহ হওয়ার উপায় ছিল না যখন কোন সামাজিক বা ধর্মীয় কর্মকাণ্ড বড় আকারের সমাবেশ করার আশংকা তৈরি করত। বিশেষত, ১৮৫৭ সালের সিপাহি বিদ্রোহের পরে, এই সচেতনতা আরো তীক্ষষ্ট হয়ে গিয়েছিল। যেসব স্থানে প্রচুর জনসমাবেশ হতো, ঔপনিবেশিক সরকার সেসব স্থানের ওপরে কড়া নজরদারি রাখতেন। সাব-অলটার্ন হিস্টোরিয়ান ডেভিড আর্নল্ড দেখিয়েছেন যে, ইংরেজ সরকার হরিদ্বারের কুম্ভমেলা, এলাহাবাদের প্রয়োগের মেলা, পুরীর জগন্নাথধাম, অল্প্রব্দপ্রদেশের তিরুপতি, তামিলদেশের কাঞ্চিপুরম, মহারাষ্ট্রের নাসিক প্রভৃতি ধর্মীয় মেলা ও তীর্থস্থানে বড় ধরনের সংক্রমণের ঝুঁকি দেখতেন। এসব উৎসব এলেই তারা ‘নার্ভাস’ বোধ করতেন। গণহারে যেহেতু তখন প্রতিষেধক ব্যবস্থা সম্ভব ছিল না- সময়টাকে মোটা দাগে ‘প্রি-ভ্যাকসিনেশন যুগ’ বলতে পারি- উদ্বেগ প্রকাশ করা ছাড়া ঔপনিবেশিক সরকারের বিশেষ কিছুই করার ছিল না। দল বেঁধে তীর্থযাত্রা, গঙ্গায় স্নান, ঈদের বড় জমায়েত ইত্যাদি সামাজিক প্রথায় হাত দেওয়ার ইচ্ছে থাকলেও শেষ পর্যন্ত বিরতই থাকতে হয় রাষ্ট্রপক্ষকে। বিশেষত ১৮৯৯ সালের প্লেগ দমনের একটা পর্যায়ে বোম্বাই ও অন্যান্য শহরে যখন দাঙ্গা বেধে যায়, তার পরে আর রাষ্ট্রশক্তি জনজীবনে হস্তক্ষেপ করতে সাহস করেনি। এ অবস্থায় রাষ্ট্রের জনস্বাস্থ্য নীতির উদ্দেশ্য ছিল জনগণকে স্বাস্থ্যবিধিসম্মত জীবনযাত্রায় উদ্ধুদ্ধ করা নয় (যা ছিল ভূদেব, রবীন্দ্রনাথ প্রমুখের উদ্দেশ্য)। বরং নিজেদেরকেই মহামারি বা মারির ‘অশুভ হাওয়া’ থেকে রক্ষা করা। এলক্ষ্যেই ইংরেজ সৈন্য, অফিসার ও রাজকর্মচারীরা যেখানে থাকতেন, সেগুলোকে ‘মিলিটারি ক্যান্টনমেন্ট’-এর আদলে শহরের অন্যান্য এলাকা থেকে বিচ্ছিন্ন করে গড়ে তোলা হয়। প্রতিটি শহরে সুনির্দিষ্ট করে দেওয়া হয় ইংরেজদের চলা-ফেরা, রাস্তা-ঘাট, বাসস্থান, ক্লাব, খেলার মাঠের জন্য স্বতন্ত্র এলাকা, যার সংস্পর্শে আসার কোন সুযোগ ছিল না ‘নেটিভদের’। ক্লাবের বাইরে যে লেখা থাকত ‘ইন্ডিয়ানস অ্যান্ড ডগস আর নট অ্যালাউড’- এটা হয়তো ক্যান্টনমেন্ট-মডেলে আবদ্ধ থাকার জনস্বাস্থ্য-নীতিরই এক অন্য প্রকাশ। দীপেশ চক্রবর্তী তাই লিখেছেন :১৯০৯ সালে ক্যান্টনমেন্টস্ ম্যানুয়ালে লেখা হলো – ‘এ কথা আমাদের সর্বদা স্মরণ রাখা প্রয়োজন যে…ক্যান্টনমেন্টগুলোর মুখ্য উদ্দেশ্য ব্রিটিশ সৈন্যের স্বাস্থ্যরক্ষা।
[ক্রমশ]