আমি আশাবাদী (I am optimistic)

অর্থনীতির ক্ষেত্রে নতুন বছরটা ভালোই যাবে মনে হচ্ছে। এর বড় দিক হলো, আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেলের মূল্য এখন অনেক কম। সরকার যেহেতু তেলের মূল্য পুরোপুরি সমন্বয় করেনি, সেহেতু এ খাত থেকে আয় জমা হচ্ছে। স্থানীয় অর্থে পদ্মা সেতু নির্মাণ এবং সরকারি চাকরিজীবীদের বেতন বৃদ্ধিজনিত অর্থ সরবরাহে এই অর্থ কাজে লাগবে। অন্যদিকে রফতানি বাজারে অশুভ কোনো ছায়া দেখতে পাচ্ছি না। মধ্যপ্রাচ্যে সামান্য যে আঞ্চলিক গোলযোগ হচ্ছে, তা অভিবাসনের ক্ষেত্রে তেমন সমস্যা সৃষ্টি করবে না।

দ্বিতীয়ত, গত দুই বছরের সঙ্গে তুলনা করলে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ফিরে আসার লক্ষণ দেখা যাচ্ছে। এ প্রবণতা অব্যাহত থাকলে বিনিয়োগে আস্থা ফিরতে সহায়ক হবে। সেক্ষেত্রে বিনিয়োগের ঘাটতি কিছুটা পূরণ হবে। প্রশ্ন হচ্ছে, আর্থিক খাতে অনিয়মের মূলে আঘাত হানা যাবে কি-না! অনিয়মের রাশ টেনে ধরতে না পারলে অর্থায়নের ক্ষেত্রে নানা সমস্যা রয়ে যাবে। ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পে কার্যকর অর্থায়নের খুবই দরকার। এ খাতের উদ্যোক্তাদের শক্তিশালী করা গেলে অভ্যন্তরীণ অর্থনীতিতে তারা নতুনভাবে অবদান রাখতে পারবেন।

অর্থনীতিতে প্রতি পাঁচ বছর অন্তর একটা পালাবদল আসে। ২০১০ থেকে ২০১৫ সাল একভাবে গেছে। ২০১৫ থেকে ২০২০ সাল অন্যভাবে যাবে। আমার মনে হয়, দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের অর্থনীতি হবে আগামী কয়েক বছরের জিডিপি প্রবৃদ্ধির একটি বড় উৎস। এতদিন ঢাকা ও চট্টগ্রামকেন্দ্রিক উন্নয়ন হয়েছে তুলনামূলক বেশি। পদ্মা সেতু এবং একে ঘিরে রাস্তাঘাট, রেলপথসহ অবকাঠামোর যে উন্নয়ন দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে হবে, তা নতুন এক ধরনের সম্ভাবনা তৈরি করবে। চট্টগ্রামের পার্বত্য অঞ্চলের অনেক সম্ভাবনা এখনও কাজে লাগানো হয়নি। বেসরকারি বড় উদ্যোক্তাদের কেউ কেউ সেখানে যাচ্ছে। ওই এলাকা দিয়ে ভারতের সঙ্গে যোগাযোগ কিংবা মিয়ানমারের সঙ্গে বাণিজ্য বৃদ্ধির ক্ষেত্র তৈরি হচ্ছে। পাশাপাশি সমুদ্রকেন্দ্রিক ব্লু ইকোনমির নতুন সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে। সুতরাং ওই অঞ্চলে যে গুণগত পরিবর্তন আসছে, তা অর্থনীতিতে বড় অবদান রাখবে।

অর্থনীতির সম্ভাবনা বিষয়ে আমি ব্যক্তিগতভাবে বিশ্বব্যাংকের প্রধান অর্থনীতিবিদ ড. কৌশিক বসুর সঙ্গে একমত। আমি মনে করি, ২০১৬ সালে বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি চীনের কাছাকাছি চলে যাবে। কারণ চীনের গতি শ্লথ হচ্ছে, আর আমাদের বাড়ছে। বাংলাদেশের জন্য এখন দরকার গ্যাস, বিদ্যুৎ ও যোগাযোগের গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামো উন্নয়নের কাজ সেরে ফেলা এবং সম্ভাবনাময় বিশেষ এলাকার দিকে নজর দেওয়া। তা করতে পারলে খুব সহজেই জিডিপি প্রবৃদ্ধি আট শতাংশে নিয়ে যাওয়া যাবে।

আরেকটি বিষয় বলা দরকার এবং তা হলো, মানব উন্নয়নের সাফল্য ধরে রাখতে হবে। বিশেষত শ্রমশক্তির দক্ষতা বৃদ্ধির কাজে বিশেষ মনোযোগ দিতে হবে। যুবশক্তিকে যথাযথভাবে প্রশিক্ষণ দিতে পারলে দেশের ভেতরে ও বিদেশে কর্মসংস্থানে গুণগত পরিবর্তন আসবে। এটা যে কতটা ফলদায়ক তার লক্ষণ ইতিমধ্যে দেখা যাচ্ছে। কারিগরি প্রশিক্ষণ নিয়ে আমাদের জনশক্তি বিশেষত নারীরা বিদেশে কাজ পাচ্ছেন।
আমাদের মধ্যবিত্তের আকার গত দুই দশকে দ্বিগুণ হয়েছে। মধ্যবিত্তের আরও সম্প্রসারণ প্রয়োজন। এটা করতে হলে গরিব মানুষের ছেলেমেয়েদের মধ্যবিত্তের সমপর্যায়ে উন্নত শিক্ষা দিতে হবে। ইংরেজি মাধ্যমের বাইরে শিক্ষার গুণগত মান কমে যাচ্ছে। গরিবের সন্তান দুর্বল মানের শিক্ষায় আটকে যাচ্ছে। তাদের শিক্ষা ব্যবস্থার উন্নতি করতে হবে। মধ্যবিত্ত হতে গেলে গরিবদের সেবা খাতে আসতে হবে। কৃষি শ্রমিক হিসেবে থাকলে হবে না। সুতরাং কীভাবে গরিবকে মধ্যবিত্ত শ্রেণীতে উন্নীত করা যায়, তার চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে হবে বাংলাদেশকে। আমি প্রত্যাশা করি, ‘দারিদ্র্য’ শব্দটি একদিন ইতিহাসে পরিণত হবে।

Leave a comment