পর্ব ::৭১
পূর্বে প্রকাশিতের পর
৮. বাহাত্তরের সংবিধানের গণতান্ত্রিক সমাজতন্ত্র
বঙ্গবন্ধু মার্কসীয় সমাজতন্ত্রের অনুসারী ছিলেন না। তবে সত্যের ওপরে কেবল তো ‘মার্কসবাদীদেরই’ মনোপলি নেই। পুঁজিবাদী সমাজের তুলনায় সমতাবাদী সমাজের শ্রেষ্ঠত্ব সম্পর্কে তার মনে কোনো দ্বিধা ছিল না। রবীন্দ্রনাথের মতো বঙ্গবন্ধুর এই বিষয়ে চিন্তা স্বচ্ছ ছিল। যদিও তার লক্ষ্য ছিল শোষণমুক্ত সমাজ গড়া, কিন্তু লক্ষ্যটা যে অনেক দূরের স্টেশন, এ রকম একটা কৃষিপ্রধান পশ্চাৎপদ সমাজের পটভূমিতে সহজে সমাজতন্ত্রে পৌঁছানো সম্ভব নয়, সেটা তিনি পঞ্চাশের দশকেই বুঝতে পেরেছিলেন। সুতরাং সমাজতন্ত্র তার কাছে কোন End-State নয় বরং একটি Process বা দীর্ঘকালীন অভিযাত্রার মতো বিষয় বলেই প্রতিভাত হয়েছিল। অর্থাৎ এটি কোনো তিন বা পাঁচ বছরে সমাধা করার মতো চ্যালেঞ্জ নয়। ইতিপূর্বে আমরা দেখেছি যে, ১৯৭২-৭৫ পর্বে তিনি সমাজতন্ত্র অর্জনের অনিবার্যতার পাশাপাশি এর দীর্ঘ পথযাত্রার কথা বারবার স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন। মার্কস বা লেনিনের মতো তত্ত্বচর্চা করেননি তিনি, কিন্তু বাস্তব কাণ্ডজ্ঞানের জোরে ‘আদর্শ’ ও আদর্শ বাস্তবায়নের জন্য এক সুদীর্ঘ ‘প্রস্তুতি-পর্বের’ মধ্যে পার্থক্য নির্দেশ করতে পেরেছিলেন। সিপিবির দ্বিতীয় কংগ্রেসে ১৯৭৪ সালের ৪ ডিসেম্বরের ভাষণে আবারও ফিরে যেতে হয়। সেখানে তিনি বারবার বলছেন যে গণতন্ত্রের কাঠামোয় সমাজতন্ত্রের পথে যাত্রা করা সহজ নয়। এমনকি যারা দ্রুত অগ্রসর হওয়ার জন্য গণতন্ত্রের হাত ছেড়ে দিয়েছিল, তারাও এখনও সমাজতন্ত্রে পৌঁছাতে পারেনি:
‘সোশ্যালিজম যেখানে শুরু হয়েছে সে সোভিয়েত ইউনিয়নে আজ ৫১ বৎসর হয়ে গেছে সোশ্যালিজম করতে পারে নাই। এখনও ঘাত-প্রতিঘাতে অগ্রসর হচ্ছে, নতুন নতুন পথ তাদের জানতে হচ্ছে। এ রাস্তা সোজা রাস্তা নয়, এ রাস্তা কঠিন রাস্তা।’
যদি সোভিয়েত ইউনিয়নের জন্যই এটা প্রযোজ্য হয়, তাহলে বাংলাদেশের মতো কৃষিপ্রধান এবং প্রযুক্তিতে পিছিয়ে থাকা দেশের পক্ষে সমাজতান্ত্রিক আকাঙ্ক্ষাকে বাস্তবায়ন করা কতটা কঠিন হতে পারে, তা সহজেই অনুমেয়। এ বিষয়ে বঙ্গবন্ধু কোনো রাখঢাক করেননি :
‘পরিস্কার কথা … সোশ্যালিজম এত সোজা না। আমরা কিছু পদক্ষেপ নিয়েছি যাতে ভবিষ্যতে এ দেশে সমাজতন্ত্র কায়েম হয়। সে পদক্ষেপ নিয়ে আমরা অগ্রসর হচ্ছি। বাধা আমাদের আসবেই। যাদের কাছ থেকে আমরা সম্পদ নিয়েছি, যারা এখানে সম্পদ ফেলে গেছে, তাদের দালালরা, বিদেশি শক্তিরা তারা আজকে চেষ্টা করছে আমাদের এই সমাজতান্ত্রিক ইকোনমি বানচাল করার জন্য। যাতে প্রডাকশন কম হয়, যাতে দুশমনরা খুশি হয়, মানুষের কষ্ট হয়। … এত তাড়াতাড়ি কিছু দিবার ক্ষমতা আমাদের নেই। … আমরা একটা সিস্টেম নিয়েছি। যে সিস্টেমে আমাদের কোনো অসুবিধা হতো না যদি সোশ্যালিজম না নিতাম। … যখন আমাকে আঘাত করতে হয়েছে, বুঝে শুনে আঘাত করেছি। … ব্যাংক, ইন্স্যুরেন্স, কোম্পানি, মিল-ইন্ডাস্ট্রিজ, ইমপোর্ট-এক্সপোর্ট যদ্দুর পারা যায় হাতে নিয়ে নেও। কষ্ট হবে, বুঝতে হবে এক্সপিরিয়েন্স নাই। ভবিষ্যতে, অদূর ভবিষ্যতে সোশ্যালিজম [হবে বলে] আজকে লেট করা যায় না। ১০ বৎসর, ২০ বৎসর, ২৫ বৎসর পর লেট করা যায়। এইটা মানুষকে বুঝতে হবে, যারা সোশ্যালিজমে বিশ্বাস করে। যারা সমাজতন্ত্রে বিশ্বাস করে, তারা না বুঝলে উপায় নাই। সোজা রাস্তায় হয় না। সে জন্যে সে পথ আমাদের ছাড়তে হবে।’
দেখা যাচ্ছে যে, দুটো চিন্তাই বঙ্গবন্ধুর মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে। একদিকে রাতারাতি যেমন সমাজতন্ত্র গড়া যাবে না, অন্যদিকে, সমাজতন্ত্র দূরের স্টেশন বলে প্রগতিশীল পদক্ষেপ নেওয়া থেকে আজকে বিরত থাকা যাবে না। ‘দীর্ঘমেয়াদি লক্ষ্য’ এবং ‘আসন্ন কর্তব্য’ উভয়ের মধ্যে একটা ভারসাম্য আনতে হবে। এবং সেই ভারসাম্যতা বজায় রাখতে হবে গণতন্ত্রকে রক্ষা করেই। তা-ও আবার কৃষিপ্রধান পশ্চাৎপদ সমাজের পটভূমিতেই। স্বাভাবিকভাবেই বোঝা যায় কেন মুজিবের পক্ষে সমাজতন্ত্রকে একটি ‘end-state’ হিসেবে দেখা সম্ভব ছিল না, এবং কেন সমাজতন্ত্রকে তিনি একটি ‘চলমান প্রক্রিয়া’ হিসেবেই দেখতে চেয়েছিলেন। এর অর্থ হলো, পুঁজিবাদের ‘প্রগতিশীল’ অর্জন ও বিকাশের ধারার মধ্যেই তিনি ‘সমাজতান্ত্রিক’ উপাদানগুলোকে লালন ও বৃদ্ধিশীল করতে চেয়েছিলেন। এই বিষয়টি তিনি মার্কস চর্চা করে বোঝেননি, বুঝেছিলেন ইনটুয়েটিভলি। তবে এ ধরনের ভাবনার আলো-হাওয়ার মধ্যেই তিনি বাস করছিলেন বুদ্ধিবৃত্তিক ভাবে, এটা অনুমান করা শক্ত নয়। ১৯৭৪ সালেই ঢাকায় অনুষ্ঠিত হয় ইন্টারন্যাশনাল ইকোনমিক অ্যাসোসিয়েশন-এর উদ্যোগে কনফারেন্স ‘দ্য ইকোনমিক ডেভেলপমেন্ট অব বাংলাদেশ উইদিন এ সোশ্যালিস্ট ফেমওয়ার্ক’ (পরে এটি বই আকারেও প্রকাশিত হয়)। অনুন্নত কৃষিপ্রধান অর্থনীতিতে ‘সমাজতান্ত্রিক রূপরেখা’ কীভাবে দাঁড়াতে পারে তা নিয়ে তর্ক-বিতর্ক করেন দেশ-বিদেশের প্রথিতযশা অর্থনীতিবিদেরা। দূরের লক্ষ্য সমাজতন্ত্র এবং কাছের লক্ষ্য অর্থনীতির পুনরুদ্ধার ও তার প্রগতিশীল রূপান্তর- এই দুটো বিষয়ই সেই সম্মেলনে স্থান পেয়েছিল। সুতরাং দূর এবং আশু কর্মসূচির লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য সম্পর্কে বঙ্গবন্ধু নানা উৎস থেকেই তথ্য ও প্রেরণা পাচ্ছিলেন। তবে এটি শুধু গণতান্ত্রিক সমাজতন্ত্র নয়, সমাজতন্ত্রের সার্বিক ধারণার ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য। মার্কস-এঙ্গেলস, এমনকি লেনিন শেষ পর্যন্ত এটা মেনে নিয়েছিলেন সমাজতন্ত্র বিনির্মাণকে ‘End-State’ হিসেবে না দেখে বরং ‘Process’ হিসেবেই দেখা শ্রেয়তর। তার অর্থ, পুঁজিবাদের উপাদানগুলোর পাশাপাশি সমাজতন্ত্রের উপাদানগুলো অবস্থান করবে, জন্ম নেবে এবং আর্থসামাজিক রূপান্তরের ধারায় সমাজতন্ত্রের উপাদানগুলো ক্রমশই জয়যুক্ত হয়ে সমাজতন্ত্রকে আখেরে বিজয়ী করবে। সমাজতন্ত্রের আদর্শকে যদি Socialism-as-an-end-state হিসেবে না দেখে Socialism-as-a-process হিসেবে দেখা যায় তাহলে বৃহৎ-উল্লম্ম্ফনমূলক হঠকারী কর্মসূচিকে যেমন পাশ কাটানো যায়, আবার পুঁজিবাদের স্বয়ংক্রিয় ও স্বতঃস্ম্ফূর্ত বিকাশের কাছে অসহায় আত্মসমর্পণ করার নিষ্ফ্ক্রিয় অবস্থানকেও এড়ানো সম্ভব। নিউ ইকোনমিক পলিসি (NEP) নিয়ে লেনিনের নানা বক্তব্যের মধ্যে Socialism-as-a-process এই দৃষ্টিভঙ্গির প্রতি সমর্থন স্পষ্ট হয়।
সমাজতন্ত্রে পৌঁছাতে হলে যে কয়েক দশক লেগে যেতে পারে তার ইঙ্গিত লেনিনের লেখাতেই পাওয়া যায়। ইনট্রোডিউসিং নিউ ইকোনমিক পলিসি শীর্ষক ভাষণে লেনিন বলেছেন, ‘ক্ষুদ্র জোতের কৃষিব্যবস্থায় প্রযুক্তিগত পরিবর্তন আনতে কয়েকটা প্রজন্ম লেগে যেতে পারে। তার মানে এটা বলছি না যে, শতাব্দী লেগে যাবে। কিন্তু আমাদের মতো এতো বড় দেশে সবাইকে ট্রাক্টর যন্ত্রপাতি ব্যবহারে সুবিধা এবং বিদ্যুৎ দিতে হলে কয়েক দশক লেগে যেতে পারে। এটাই অবজেকটিভ পরিস্থিতি।’ তার মানে পুঁজিবাদ থেকে সমাজতন্ত্রে উত্তরণের পর্ব সম্পন্ন করার বিষয়টি এক-দুই বছরের নয়, কয়েক দশকের ও প্রজন্মের ব্যাপার এটি। সেরকম সময়ে গ্রামীন অর্থনীতিতে সমবায়ী খাতের পাশাপাশি ক্ষুদ্র কৃষকেরাও থেকে যাবে এক সুদীর্ঘ কাল।
পুঁজিবাদের পাশাপাশি সমাজতন্ত্র অনেক দিন পর্যন্ত অবস্থান করে চলতে পারে- পুঁজিবাদের ‘ভেতর থেকেই’ যে সমাজতন্ত্রের অনেক ‘বস্তুগত ভিত্তির’ জন্ম হয় বা হতে পারে- এ কথা লেনিন অনেকবারই বলেছেন। একটি উদাহরণ কেবল এখানে দেব। অক্টোবর বিপ্লবের পরও যে নারীরা ‘স্বাধীন’ হতে পারছে না, তার কারণ বাসার কাজের বোঝা তাদের ওপরে পূর্বাপর থেকেই যাচ্ছে। এক্ষেত্রে তিনি বিশেষ করে তাকাতে বললেন উন্নত পুঁজিবাদী দেশের বেশ কিছু প্রগতিশীল উদ্ভাবনের প্রতি। পুরো উদ্ৃব্দতিটি বর্তমান আলোচনার জন্য প্রণিধানযোগ্য। লেনিন লিখেছেন :
‘Do we take proper care of the shoots of communism which already exist in this sphere? Again the answer is no. Public catering establishments, nurseries, kindergartens- here we have examples of these shoots which can really emancipate women. These means are not new, they (like all the material prerequisites for socialism) were created by large-scale capitalism.’
পুঁজিবাদী দেশগুলোয় সর্বজনীন নির্বাচনী ব্যবস্থায় উত্তরণ, সর্বজনীন স্বাস্থ্য ও সামাজিক সুরক্ষা-ব্যবস্থা, সর্বজনীন ও মৌলিক শিক্ষাবিধির প্রচলন, বেকার ভাতা ইত্যাদি ধারণাগুলো এমনিতেই অর্জন হয়নি। এর পেছনে ছিল শ্রমিক শ্রেণির নিরন্তর আন্দোলন-সংগ্রাম, অর্থনৈতিক মন্দা ও সংকট, বিপ্লব ও বিপ্লবপ্রচেষ্টা, যুদ্ধ ও যুদ্ধের কারণে বদলে যাওয়া সামাজিক-শ্রেণি শক্তির পুনর্বিন্যাস প্রভৃতি উপাদানের চাপ। প্যারি কমিউন না হলে বিসমার্কের জার্মানিতে (সামাজিক গণতন্ত্রীদের ক্ষমতায় আসারও ঢের আগে) ‘Social State’-এর জন্ম হতো না। ‘ওয়েলফেয়ার স্টেট’ ধারণার পেছনে বিসমার্ক থেকে শুরু করে দ্বিতীয় আন্তর্জাতিকের সোশ্যাল ডেমোক্রেটসরা, লিবারেল কান্ট-মিল থেকে কমিউনিস্ট আন্দোলনের মার্কস-এঙ্গেলস সকলেই প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে অবদান রেখেছেন। ‘কমিউনিস্ট মেনিফেস্টোতে’ মার্কস-এঙ্গেলস যেসব ‘গণতান্ত্রিক দাবি’ তুলেছিলেন তা কোনো দূর-ভবিষ্যতের সমাজতান্ত্রিক অর্থনীতির জন্য বিশিষ্ট দাবি নয়। অর্থাৎ আমি বলতে চাচ্ছি যে, যাকে আমরা আজকে ‘Social democracy’ বলি, তার অধিকাংশ দাবিই উদারনৈতিক গণতন্ত্রী আর কট্টর সমাজতন্ত্রী মতের অনুসারীদের কখনও বিচ্ছিন্ন, কখনও সমবেত, আন্দোলন-সংগ্রামেরই ফসল। এসব Social Democratic দাবি-দাওয়ার কোনটি লিবারেলদের সংগ্রামের অর্জন, কোনটি সামাজিক গণতন্ত্রীদের বা কোনটি কমিউনিস্টদের সংগ্রামের প্রভাব সেটি চুলচেরা বিশ্নেষণ করে বলা সত্যই কঠিন কাজ। মিল, বার্নস্টাইন এবং লেনিন যথাক্রমে লিবারেল, সোশ্যাল ডেমোক্রেটিক ও কমিউনিস্ট ধারাকে প্রতিনিধিত্ব করেন। এই ত্রিধারার মধ্য থেকেই যার যার মতো করে অতীতে ‘সমাজতান্ত্রিক’ ধ্যান-ধারণা বলার চেষ্টা করা হয়েছে এবং বাস্তবায়নের চেষ্টা হয়েছে। এটুকু বলা যায়, বঙ্গবন্ধু ও তার নিকট সহযাত্রীরা মোটা দাগে এসব ধারা ও উপধারা সম্পর্কে সচেতন ছিলেন। তিনি এসব আন্দোলনের জল-হাওয়াতেই বড় হয়ে উঠেছেন এবং রাজনৈতিকভাবে পরিপকস্ফ হয়েছেন। এ কথা তিনি জানতেন যে, সব ধারার মধ্যেই শিক্ষণীয় ও বর্জনীয় দিক রয়ে গেছে। বাংলাদেশের প্রগতিশীল রূপান্তরের জন্য তিনি বিভিন্ন সূত্র থেকে ধ্যান-ধারণা ও অভিজ্ঞতা আহরণের পক্ষপাতী ছিলেন। এই ‘প্রাগম্যাটিক’ চিন্তাই লেনিনের ভাষায় ‘প্র্যাকটিক্যাল ইকোনমিকস’- তাকে সংবিধানের ‘৪টি স্তম্ভ’ নির্বাচনে সাহায্য করেছে। তিনি গণতন্ত্রও চান, সমাজতন্ত্রও চান। ধর্মনিরপেক্ষতাও চান, আবার বিশেষ চিহ্ন সম্বলিত জাতীয়তাবাদও অবলম্বন করতে চান। কোনোটিকেই তিনি অন্যটির চেয়ে বেশি ‘গুরুত্ব’ দিতে চান না। এই মূল আদর্শের মধ্যে আবার রয়ে গেছে নানা ধারা ও উপধারা। সেসব মিলিয়ে একটি দূরদর্শী কিন্তু বাস্তবোচিত ‘সোশ্যাল কন্ট্রাক্ট’ তিনি গড়তে চেয়েছিলেন। বলেও ছিলেন, দেশের উন্নয়নের জন্য সব উৎসের দিকে তিনি হাত বাড়াতে প্রস্তুত। তারই প্রতিফলন ঘটে বাহাত্তরের সংবিধানে।
১৯৭২ সালের ২৬ মার্চ স্বাধীনতা দিবসের ভাষণে (যে ভাষণে জাতীয়করণের নীতি ঘোষিত হয়) বঙ্গবন্ধু জানালেন যে, তিনি সংবিধান তৈরির কাজে হাত দিয়েছেন। এ নিয়ে অযথা কালক্ষেপণ করতে চান না তিনি। এ নিয়ে বিলম্ব করায় পাকিস্তান রাষ্ট্র যথাযথভাবে পরিচালিত হতে পারেনি, সামরিক বাহিনী রাষ্ট্র ক্ষমতায় জেঁকে বসেছিল এবং শেষ পর্যন্ত ৬-দফার ভিত্তিতে সাংবিধানিক প্রশ্নের অনিষ্পত্তির কারণে পাকিস্তান ভেঙে গিয়েছিল। সে জন্যেই স্বাধীন দেশে তার ফার্স্ট প্রায়োরিটি হয়ে দাঁড়ায় একটি আধুনিক, প্রগতিশীল, কার্যকর ও ভবিষ্যৎমুখীন সংবিধান নির্মাণ। উপরোক্ত ভাষণে তিনি জানালেন : ‘বিশেষজ্ঞরা খসড়া শাসনতন্ত্র প্রণয়নের কাজে নিয়োজিত রয়েছেন। তাদের কাজ অনেকটা অগ্রসর হয়েছে এবং খসড়া শাসনতন্ত্র গণপরিষদের সামনে পেশ করা হবে। এই শাসনতন্ত্রের মূল স্তম্ভ হবে জাতীয়তাবাদ, গণতন্ত্র, সমাজতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষতা’।
এই ভাষণের দুই সপ্তাহ পরে (১০ এপ্রিল, ১৯৭২) গণপরিষদের অধিবেশনে ‘স্বাধীনতা ঘোষণা’ সম্পর্কিত প্রস্তাব পাস হয়। এই ঘোষণার পরের দিন (১১ এপ্রিল, ১৯৭২) সংবিধান তৈরির জন্য একটি ‘ড্রাফটিং কমিটি’ (Constitution Drafting Committee) গঠিত হয়। যার নেতৃত্ব দেন কমিটির সভাপতি হিসেবে ড. কামাল হোসেন। এ কমিটির সদস্য সংখ্যা ছিল ৩৪ জন; সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত ছাড়া বাদবাকি সবাই ছিলেন আওয়ামী লীগের থেকে।
[ক্রমশ]