পর্ব :: ৯২
[পূর্বে প্রকাশিতের পর]
১৯৮২ সালে দৈনিক সংবাদের একটি লেখায় স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে আবু জাফর শামসুদ্দীন এ বিষয়ে লিখেছেন:
‘বক্তৃতার এক পর্যায়ে তিনি [ভাসানী] পশ্চিম পাকিস্তানি শাসক শ্রেণির উদ্দেশে তাঁর সুবিখ্যাত ‘আসসালামু আলাইকুম’ উচ্চারণ করেন। ঐ আসসালামু আলাইকুম তাৎপর্য উপস্থিত শ্রোতা এবং যাঁদের উদ্দেশে উচ্চারিত হয়েছিল তাঁরা উভয় পক্ষই উপলব্ধি করেছিলেন। আমার ক্ষুদ্র মতে, বাংলাদেশের রাজনৈতিক স্বাধীনতার প্রথম স্পষ্ট দাবি এবং তজ্জন্য প্রয়োজনীয় সংগ্রাম ও ত্যাগের সংকল্প ঐ ‘আসসালামু আলাইকুম’ ধ্বনির মাধ্যমে ঘোষিত হয়েছিল।’
আবু জাফর শামসুদ্দীনের অনুভূতিটি কিছুটা অতিরঞ্জিত। রাজনৈতিক স্বাধীনতার আকাঙ্ক্ষা ১৯৪৭-৭০ পর্বের বিভিন্ন পর্যায়ে বিভিন্ন ব্যক্তি বা রাজনৈতিক ধারা-উপধারার মধ্যে বিক্ষিপ্তভাবে জেগে উঠতে দেখা যায়। পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তানের মধ্যে বিরাজমান (ও ক্রমবর্ধমান) বৈষ্যম্যের প্রেক্ষিতের পিছনে ক্রিয়াশীল ছিল। ১৯৫৪ সালের যুক্তফ্রন্টের ২১ দফার মধ্যেও এই বৈষম্য-বোধ ছিল প্রধান চালিকাশক্তি। কিন্তু মওলানা ভাসানীর কণ্ঠে বেজে ওঠা কাগমারীর ডাক ‘আসসালামু আলাইকুম’ তৎকালীন রাজনৈতিক মহলে প্রচণ্ড আলোড়ন সৃষ্টি করেছিল। ভাসানীর ভাষণের পরিপ্রেক্ষিতে যে তীব্র প্রতিক্রিয়া হয়েছিল, তার প্রত্যুত্তরে পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী লীগকে বিবৃতি দিতে হয়েছিল। দলের যুগ্ম সম্পাদক আবদুস সামাদ এক বিবৃতিতে বলেন:
‘সম্প্রতি কাগমারীতে অনুষ্ঠিত পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী লীগ কাউন্সিল অধিবেশনকে কেন্দ্র করিয়া পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী লীগের সভাপতি সর্বজননন্দিত মজলুম জননেতা মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানীর প্রতি কতিপয় স্বার্থান্বেষী মহলের হীন অপপ্রচার তাঁহাকে হেয়প্রতিপন্ন করার চেষ্টা করিতেছে। …আঞ্চলিক স্বায়ত্তশাসনের দাবি পূর্ব বাংলার সাড়ে চার কোটি মানুষের প্রাণের দাবি। পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী লীগের মেনিফেস্টোতে আঞ্চলিক স্বায়ত্তশাসনের দাবি প্রথম হইতেই সন্নিবেশিত রহিয়াছে। বিগত সাধারণ নির্বাচনে ২১ দফার মধ্যে দেশরক্ষা, মুদ্রা ও বৈদেশিক বিষয় ব্যতীত আর সমগ্র বিষয় প্রদেশের হাতে ছাড়িয়া দেওয়ার পক্ষে পূর্ববাংলার সাড়ে চার কোটি জনসাধারণ তাহাদের চূড়ান্ত রায় প্রদান করিয়াছে। …শ্রদ্ধেয় মওলানা সাহেব তাঁহার সারগর্ভ বক্তৃতায় অন্যান্য বিষয়ের মধ্যে আঞ্চলিক স্বায়ত্তশাসনের উপর বিশেষ জোর দিয়া বলেন যে, গত এক বৎসর মুসলিম লীগ বিভিন্ন দিক দিয়া পূর্ব বাংলাকে বঞ্চিত করিয়াছে। পূর্ব বাংলা আজ শ্মশানে পরিণত হইয়াছে। …এরপরেও যদি পশ্চিম পাকিস্তানের শোষকরা পূর্ব পাকিস্তান শোষণ করিতে থাকে তাহা হইলে এক বছর, দুই বছর, পাঁচ বছর, দশ বছর পূর্ব বাংলার সচেতন জনসাধারণ অপেক্ষা করিয়া অতীতের ন্যায় শোষকদিগকে বলিবে ‘আস্সালামু আলাইকুম।’
স্টকহোম শাস্তি সম্মেলনে বিশ্ব শান্তির জন্য ভাসানী বক্তৃতা দিতে গিয়ে আবেগময় ভাষায় বলেছিলেন: “ইসলাম আমার ধর্ম। ইসলাম আমার দর্শন। ইসলাম আমার সাধনা। আর যে ইসলামের উৎপত্তি আরবি শব্দ ‘সলম’ থেকে যার অর্থই হচ্ছে শান্তি। কাজেই আমি বিশ্বাস করি কোনো মুসলমানই শান্তির প্রশ্নে বিশ্বাসঘাতকতা করতে পারবে না। …শান্তির ধর্মের অনুগামীরূপে বাকি জীবনটি আমার উৎসর্গ করেছি শান্তির কাজে, মানবতার কাজে। বিশ্বব্যাপী আজকে শান্তি আন্দোলন আমার কাছে তাই ধর্মীয় কর্তব্য।”
কাগমারী সম্মেলনেও ভাসানী ধর্মীয় প্রতীক অবলম্বন করেই পশ্চিম পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীকে ‘আস্সালামু আলাইকুম’ জানালেন। ধর্মে বিশ্বাস এই দুই উদাহরণেই ‘ধর্মনিরপেক্ষ’ কনটেন্ট তুলে ধরার ক্ষেত্রে বাধা হয়ে দাঁড়ায়নি। স্টকহোম এবং কাগমারী উভয় সম্মেলনেই মওলানা ভাসানী সাম্রাজ্যবাদবিরোধী, সাম্প্রদায়িকতাবিরোধী ও বিশ্বশান্তির পক্ষে জোরালো অবস্থান নিয়েছেন। তিনি তার ধর্ম পরিচয় ব্যবহার করেছেন সক্রিয়ভাবে সাম্রাজ্য, সাম্প্রদায়িকতা ও অশান্তির বিরুদ্ধে লড়াইয়ে। বাংলাদেশের সংবিধানের ‘ধর্মনিরপেক্ষতা’র ধারাটিকে এই আলোকেও বিচার করতে হবে।
চতুর্থত, ১৯৫৭ সালের ২৫-২৬ জুলাই মওলানা ভাসানী ঢাকা ‘নিখিল পাকিস্তান গণতান্ত্রিক কর্মী সম্মেলন’ শীর্ষক এক সভা আয়োজন করেন। এটি ছিল ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি (ন্যাপ) গঠনের প্রস্তুতি সম্মেলন। সেখানে প্রদত্ত ভাষণেও ব্যক্তিগত ধর্মবিশ্বাস ও ধর্মনিরপেক্ষ সাম্রাজ্যবাদ ও সাম্প্রদায়িকতাবিরোধী রাজনৈতিক দর্শনের তাৎপর্যপূর্ণ সংশ্লেষণ দেখতে পাই। সেখানে ভাসানী বলেন :’পাক-ভারতে স্বাধীনতা সংগ্রামে হিন্দু-মুসলমান, বৌদ্ধ ও অন্যান্য ধর্মাবলম্বী বহু লোকের বহু ত্যাগ ও কোরবানির ইতিহাস আমাদের সম্মুখে মওজুদ আছে। কিন্তু ঐ সমস্ত ত্যাগী ও দেশপ্রেমিকদের মধ্যে অনেকেই স্বাধীনতার পূর্বে অথবা কিছুদিন পরেই আমাদিগকে চিরদিনের জন্য তাহাদের সাধনা ও আদর্শ হইতে বঞ্চিত করিয়া আল্লাহর ইচ্ছায় পরলোকগমন করিয়াছেন। আজ যাঁহারা পাকিস্তানের কর্ণধার ইহাদের মধ্যে যখনই যে দল ক্ষমতা দখল করিয়াছে তাহাদের মধ্যে খুব কম লোকই আছেন যাহারা স্বাধীনতা সংগ্রামে কোনো প্রকারের কোরবানি বা নির্যাতন ভোগ করিয়াছেন। নির্যাতিত নেতা যেরূপভাবে দেশের নির্যাতিত জনসাধারণের প্রতি দরদ রাখে যাহারা জীবনে কখনো জালেমের জুলুমে পতিত হন নাই তাহাদের পক্ষে দেশের প্রতি সেরূপ দরদ রাখা সম্ভবপর নহে।’
ন্যাপের গঠনতন্ত্রে জনকল্যাণমুখী, অসাম্প্রদায়িক ও প্রগতিশীল বিভিন্ন ধারা যুক্ত হয়েছিল। ধর্মনিরপেক্ষতা উচ্চারণ না করলেও গঠনতন্ত্র পড়লে কোনো সন্দেহ থাকে না যে, মওলানা ভাসানীর ন্যাপ একটি ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্রেরই অনুরূপ স্বপ্ন দেখেছিল পাকিস্তানের মৌলিক আদর্শের ভিত্তি হিসেবে। সেখানে স্পষ্ট করে ‘লক্ষ্য’ হিসেবে বলা ছিল :
‘শাসনতান্ত্রিক, আইনসম্মত ও শান্তিপূর্ণ উপায়ে সকল প্রচার বিদেশি প্রভাব হইতে মুক্ত করিয়া পাকিস্তানে এমন একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র ও সমাজব্যবস্থা কায়েম করা যাহাতে রাষ্ট্রের জনসাধারণের মধ্যে সাম্প্রদায়িক ভেদাভেদ থাকিবে না এবং সকল প্রকার নির্যাতন ও শোষণের অবসান হইবে। ব্যক্তিসত্তার পূর্ণ বিকাশের জন্য এই গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে ও সমাজব্যবস্থায় আইনের দৃষ্টিতে প্রতিটি লোকের সমান অধিকার এবং ভৌগোলিক অবস্থান, ধর্মীয় বিশ্বাস, জাতিধর্ম ও সম্প্রদায়গত ভেদাভেদ ও নারী-পুরুষ নির্বিশেষে সকলের চাকরি, আশ্রয়, শিক্ষা, ব্যক্তিস্বাধীনতা ও ধর্মীয় অধিকার প্রয়োগের পূর্ণ অধিকার থাকিবে।’
ন্যাপের গঠনতন্ত্রেও বলা ছিল ‘পূর্ণ আঞ্চলিক স্বায়ত্তশাসনের’ কথা: ‘ফেডারেল সরকারের অধীনে পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তানের জনসাধারণের স্বায়ত্তশাসনের অধিকারকে গ্যারান্টি দেওয়ার জন্য নিল্ফেম্নাক্ত ব্যবস্থাবলি গ্রহণ করা হইবে: পাকিস্টত্মানের উভয় অংশকে পূর্ণ আঞ্চলিক স্বায়ত্তশাসন দান। দেশরক্ষা, পররাষ্ট্র নীতি ও মুদ্রা শুধু এই তিনটি ছাড়া অন্যান্য সকল বিষয়ের পরিচালনভার পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তান সরকারের উপর ন্যস্ত করা। …অবিলম্বে জাতিসংঘের মানবাধিকার সনদে উল্লিখিত মৌলিক মানবাধিকার প্রতিষ্ঠিত করা। ধর্মীয় বিশ্বাস ও সম্প্রদায় নির্বিশেষে সকল নাগরিক যাহাতে স্ব-স্ব নিয়ম-কানুন পালন করিতে পারে তাহার ব্যবস্থা করা।’
বস্তুতপক্ষে পথ ও রণকৌশলের কিছুটা পার্থক্য সত্ত্বেও অসাম্প্রদায়িক ধর্মনিরপেক্ষ আদর্শে রাষ্ট্র নির্মাণ ও শোষণমুক্ত জনকল্যাণমুখী সামাজিক ন্যায়বিচারের ‘সমাজতান্ত্রিক’ ধারার অর্থনীতি গড়ে তোলার প্রশ্নে বঙ্গবন্ধুর পুনরুজ্জীবিত আওয়ামী লীগ ও তৎপরবর্তী ৬ দফার লক্ষ্য, আদর্শ, কর্মসূচি ও আন্দোলনের সাথে মওলানা ভাসানীর নেতৃত্বাধীন ন্যাপের একটি বরাবর পরস্পর-সহানুভূতিশীল পরিপূরক অবস্থান ছিল। মাঝে মাঝে ন্যাপের ‘হঠকারী বামপন্থি’দের অংশের চাপ এবং আওয়ামী লীগের ‘রক্ষণশীল ডানপন্থি’ অংশের চাপ এই দুই দলকে রণকৌশলের প্রশ্নে বিপরীতমুখী অবস্থানে নিয়ে গিয়েছিল বটে, কিন্তু মূল স্রোতধারার মধ্যে অমিলের চেয়ে মিলের প্রবণতাই বেশি দেখা যায়। একেক সময়ে এ-ও আমার মনে হয়েছে যেন মওলানা ভাসানী ও বঙ্গবন্ধু ১৯৬৬ সালের ৬ দফা পরবর্তী আন্দোলন-সংগ্রাম-নির্বাচন ইত্যাদি বিভিন্ন পর্যায়ে নিজেদের মধ্যে আগাম শলা পরামর্শ করেই রাজনৈতিক পদক্ষেপগুলো নিচ্ছেন। যা আপাতদৃষ্টিতে কখনো কখনো পরস্পরবিরোধী বলে মনে হলেও আমাদের জাতীয় মুক্তি সংগ্রামের গতিমুখকে কণ্টকমুক্ত ও অগ্রগামী করে রেখেছিল। মওলানা ভাসানীর বিরুদ্ধে সাময়িককালের জন্যে হলেও ‘ডোন্ট ডিস্টার্ব আইয়ুব’ নীতি গ্রহণের জন্য অভিযোগ তোলা হয়েছে কোন কোন ভাষ্যে। আবার সেই মওলানা ভাসানীকে ১৯৬৮-৬৯ সালে (বঙ্গবন্ধু যখন কারাগারে বন্দি) আইয়ুববিরোধী আন্দোলনে সম্মুখসারিতে থেকে নেতৃত্ব দিতে দেখা যায়। ১৯৬৯ সালে আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা থেকে শেখ মুজিবকে ‘জেলের তালা ভেঙে’ কারামুক্ত করার ক্ষেত্রে এবং আইয়ুবশাহি পতনের ক্ষেত্রে তার অবিশ্রান্ত ভূমিকা ভুলে যাবার নয়। আইয়ুবের পতনের পর সাপ্তাহিক টাইম তাকে ‘পোয়েট অব ভায়োলেন্স’ আখ্যা দিয়ে লিখেছিল:
“Wreathed by a wispy beard, his face reflects an almost otherworldly serenity. As he plays with his grandchildren in a tiny village 60 miles north of the East Pakistan capital of Dacca, Abdul Hamid Bhashani, 86, looks the part of a Moslem maulana or guru, and to millions of Bengali peasants, he is. But the kindly grandfather is also Pakistan’s most outspoken advocate of violence. As much as any one man, Bhashani inspired the riots that last month forced President Ayub Khan to step down from the presidency. Now Bhashani is the most severe single threat to a fragile peace brought to the troubled and geographically divided land by the imposition of martial law. Under fear of harsh penalties, Pakistan’s other politicians, including Bhashani’s chief Bengali rival, moderate Sheikh Mujibur Rahman, have kept silent. Not Bhashani, who continues to receive newsmen and followers at his bamboo-walled hut.”
১৯৬৯ সালের ১৮ই এপ্রিল শুক্রবার সংখ্যার সাপ্তাহিক টাইম সাময়িকীর রিপোর্টার ডেন কগিন যেটা বুঝতে পারেননি যে, এই আপাত-মডারেট বঙ্গবন্ধুর মধ্যে তখন ব্যাপক প্রস্তুতি চলছে এক সুদূরপ্রসারী রাজনৈতিক জাতীয় মুক্তি সংগ্রামের। ধাপে ধাপে ক্রেসেন্ডোর মতো উচ্চতায় তিনি নিয়ে যাবেন এই সংগ্রামকে তার অন্তিম লক্ষ্যের দিকে। এই যাত্রায় মাঝে মাঝে পিছিয়ে পড়লেও তার হাত ছাড়বেন না মওলানা ভাসানী, কেননা তিনি জানেন যে তার দল ন্যাপের ইয়াং টার্কস্রা নয়, তার সুদীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনের সকল সহযোদ্ধার মধ্যে কেবল অনুজপ্রতিম মুজিবই পারেন এই বিপুল চড়াই-উৎরাইয়ের সংগ্রামে লক্ষ্য না হারিয়ে নেতৃত্ব দিতে। বলেছিলেনও ভাসানী এ নিয়েু বঙ্গবন্ধুর মতো জন-উদ্দীপক সাংগঠনিক প্রতিভা তার পরবর্তী প্রজন্মের আর কারো মধ্যে তিনি খুঁজে পাননি। ভাসানীকে বিদেশিরা নাম দিয়েছিল প্রফেট অব ভায়োলেন্স, আর বঙ্গবন্ধুকে তারা নাম দিয়েছিল পোয়েট অব পলিটিক্স বলে।
কেউ কেউ বলে থাকেন যে, মওলানা ভাসানী নাকি বঙ্গবন্ধু ও তার দলকে প্রায় শতভাগ জয়ী করার জন্যই ১৯৭০ সালের পাকিস্তানের প্রথম সাধারণ নির্বাচনে ন্যাপকে অংশগ্রহণ করতে দেননি। ইতোপূর্বেই আমি উল্লেখ করেছি যে, এ নিয়ে কমরেড হায়দার আকবর খান রনোকে আমি প্রশ্ন করেছিলাম। তারা তখন ভাসানী ন্যাপের মধ্যেই ছিলেন। রনো আমাকে বলেছেন যে, ভাসানীর এই অংশগ্রহণ না করার সিদ্ধান্ত ছিল তার ‘গ্রেটেস্ট পলিটিক্যাল ব্লান্ডার’। পরবর্তী ঘটনাপ্রবাহ অনুসরণ করে আমারও সে কথা মনে হয়েছে। ভাসানীর ন্যাপ অংশ নিলেও বঙ্গবন্ধু ও তার আওয়ামী লীগের তৎকালীন বিপুল ও অপ্রতিরোধ্য জনপ্রিয়তার মুখে সর্বোচ্চ ১৫-২০টির বেশি সিট পাওয়া সম্ভব ছিল না ১৯৭০-র নির্বাচনে। কিন্তু পরবর্তীকালের স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম গণপরিষদে সংবিধান ও অন্যান্য পলিসি ডিবেটে ভাসানীর নেতৃত্বাধীন ন্যাপের থেকে নির্বাচিত ‘প্রগতিশীল’ সদস্যরা গঠনমূলক কিন্তু সক্রিয় বিরোধী ভূমিকা রাখতে পারতেন। শুধু ন্যাপের (মোজাফ্ফর) সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত বা পার্বত্য অঞ্চল থেকে নির্বাচিত মানবেন্দ্র লারমার ওপরে নির্ভর করতে হতো না ‘বিরোধী কণ্ঠস্বরের’ জন্য।
[ক্রমশ]