পর্ব :: ৮১
[পূর্বে প্রকাশিতের পর]
সমাজতন্ত্রকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে সমস্ত বাধা অপসারণের জন্য তারা বুর্জোয়া উদারনৈতিক গণতন্ত্র বা লিবারেল ডেমোক্রেসির গণ্ডি ছাড়িয়ে এক র্যাডিকেল ধারার গণতন্ত্রের (Radical Democracy) জন্ম দিচ্ছেন। একেই বঙ্গবন্ধু অভিহিত করেছিলেন ‘শোষিতের গণতন্ত্র’ বলে। পরবর্তী অধ্যায়ে- বাকশালের আলোচনায়, এ নিয়ে সমাজতন্ত্রের পথে উৎক্রমণের আরও কিছু উদাহরণ ও সমস্যার প্রতি দৃষ্টিপাত করা হবে।
যে যুক্তির বলে ভারতে ব্যাংক ন্যাশনালাইজেশনকে নাকচ করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল, যাকে তিক্ত অভিজ্ঞতা বলেছেন সৈয়দ নজরুল ইসলাম- সেটি ৪৭নং অনুচ্ছেদের অনুপস্থিতিতে বাংলাদেশের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য হতে পারত। বিদেশে বসে পরিত্যক্ত শিল্পকারখানার অবাঙালি মালিকেরা দিন গুনছিলেন কবে তারা বাংলাদেশে এসে সুপ্রিম কোর্টের কাছে আর্জি পেশ করবেন ভারতীয় রায়ের যুক্তি দেখিয়ে। বঙ্গবন্ধু ও তার নিকটতম সহকর্মীরা এই বিপদের সম্পর্কে সচেতন ছিলেন। এই বিপদ শুধু অবাঙালি মালিকদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়, দেশি শিল্প-মালিকদের নিয়েও উৎকণ্ঠার কারণ ছিল। এর একটি পরোক্ষ প্রমাণ পাই ঐক্য ন্যাপের সভাপতি পঙ্কজ ভট্টাচার্যের স্মৃতিচারণায়। তিনি লিখেছেন:’১৯৭৩ সালের শেষের দিকে মুজিব ভাইয়ের সাথে দেখা করি। তখন জাতীয়করণকৃত জুটমিলগুলোতে সাবেক মালিকদের প্রশাসক হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল, সাবেক মালিকরা ১৮টি মিলের যাবতীয় অর্থ একই দিনে উঠিয়ে মিলগুলো দেউলিয়া করার উদ্যোগ নেন। পূর্ব রাতে এ সংবাদ নিয়ে ফরাসউদ্দিন (বঙ্গবন্ধুর পিএস এবং পরবর্তীকালে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর)-এর সাথে দেখা করে তাকে ঘটনা খুলে বলি। তিনি ডিসিকে টেলিফোন করে, ঐ সকল জুটমিলের অ্যাকাউন্ট জব্দ করার ব্যবস্থা করেন।’ এতে করে অ্যান্টি-ন্যাশনালাইজেশন লবির অপতৎপরতা সম্পর্কে একটা ধারণা পাওয়া যায়। সন্দেহ কী, এসব ঝুঁকি এড়াতেই সেদিন ৪৭নং অনুচ্ছেদের সংযোজন করতে হয়েছিল বাহাত্তরের সংবিধানে।
ইন্দিরা গান্ধীর ব্যাংক ন্যাশনালাইজেশন সম্পর্কিত ‘তিক্ত অভিজ্ঞতা’ নিয়ে আরও কিছু তথ্য যোগ করা দরকার এখানে। জাস্টিস হেদায়েতুল্লাহর ভূমিকা সম্পর্কে সৈয়দ নজরুল সেদিন যা বলেছিলেন তার সবটাই সত্য নয়। আসলে যা হয়েছিল তা ঘটনা প্রবাহের কাছাকাছি- কিন্তু খানিকটা অন্যরকম। ১৯৬৯ সালের ১৭ জুলাই তৎকালীন অর্থমন্ত্রী মোরারজি দেশাই ইস্তফা দিলেন। এর দু’দিনের মাথায় ঘোষিত হলো ব্যাংক ন্যাশনালাইজেশনের নীতি। এই নীতির ঘোষণা পেয়ে তৎকালীন অস্থায়ী প্রেসিডেন্ট জাস্টিস মো. হেদায়েতুল্লাহ (তিনি ততদিনে প্রধান বিচারপতির পদ ছেড়ে দিয়েছেন) পার্লামেন্টের বর্ষাকালীন অধিবেশন শুরুর ঠিক দু’দিন আগে একটি অর্ডিন্যান্স জারি করলেন। এই অর্ডিন্যান্সে জাতীয়করণের ফলে গৃহীত ব্যাংকসমূহের মালিকদের ‘পর্যাপ্ত ক্ষতিপূরণ’ দেওয়ার প্রভিশন রাখা ছিল না। এই অধ্যাদেশকে মৌলিক অধিকারের পরিপন্থি বলে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে সেন্ট্রাল ব্যাংক অব ইন্ডিয়া ও ব্যাংক অব বরোদার মেজরিটি শেয়ারহোল্ডার রুস্তম কুপার সাহেব সুপ্রিম কোর্টে একটি রিট পিটিশন করেন। এর ওপরে ১৯৭০ সালের ২ ফেব্রুয়ারি ‘কুপার বনাম ইউনিয়ন অব ইন্ডিয়া :ব্যাংক ন্যাশনালাইজেশন কেইস’ মর্মে এক ঐতিহাসিক রায় হয়। ১১ জন বিচারপতির বেঞ্চ এই রায় প্রদানে অংশগ্রহণ করেন এবং ১০ :১ রায়ে তারা অধ্যাদেশটি বহাল রাখেন। কিন্তু বহাল রাখলেও তারা কতকগুলো মন্তব্য করেন, যার ফলে পরবর্তী সময়ে কিছু জরুরি পরিবর্তন আনতে হয়েছিল ভারতীয় সংবিধানে। যেমন সুপ্রিম কোর্টের রায়ে কুপারের মৌলিক অধিকার লঙ্ঘিত হয়নি এ কথা বলা হলেও পর্যবেক্ষণ করা হয়েছিল যে সাধারণভাবে ‘ ‘It was not binding upon the Supreme court to reject the claim for enforcement of a shareholder’s fundamental rights, if in the process of violaton of his rights, the rights of his company were also being violated.’ ভারতীয় সংবিধানে বহুদিন পর্যন্ত জরমযঃ : Right to Property-কে 19(1)(F) ) ধারা অনুসারে ‘মৌলিক অধিকার-র অন্তর্ভুক্ত করা ছিল। পরবর্তীকালে বিশেষ করে ‘কেশবানন্দ ভারতীর’ রায়ের পরে- এই ধারাটিকে বাদ দিতে হয় ভারতীয় সংবিধান থেকে। একইভাবে আগে Article 31 অনুযায়ী কোনো ব্যক্তিমালিকানাধীন সম্পত্তির বাধ্যতামূলক অধিগ্রহণের ব্যবস্থা ছিল, কিন্তু তা করতে গেলে যথাযথ ক্ষতিপূরণ দিতে হতো যার কাছ থেকে সম্পদ অধিগ্রহণ করা হচ্ছে তাকে। সুপ্রিম কোর্ট এক্ষেত্রে পর্যবেক্ষণ করেন যে, যার সম্পত্তি গ্রহণ করা হচ্ছে তা কোনো ব্যক্তিবিশেষের সম্পত্তি নয়। এখানে ‘কোম্পানিকে’ অধিগ্রহণ করা হচ্ছে, আর ভারতীয় সম্পত্তি আইন বলে ‘কোম্পানি’ কোনো নাগরিক নয়, এবং সেহেতু কোম্পানির কোনো প্রচলিত নাগরিক অধিকার এ ক্ষেত্রে ব্যাহত হয়নি। এর অর্থ- অন্য কোনো ক্ষেত্রে যদি ব্যক্তিবিশেষের সম্পত্তি জাতীয়করণ করার প্রশ্ন দেখা দেয়, তবে তা মৌলিক অধিকারের পরিপন্থি কাজ বলে পরিগণিত হবে। এসব আশঙ্কা এড়ানোর জন্য ভারতীয় সংবিধানে সম্পত্তির ওপরে ব্যক্তিগত অধিকারকে নিয়ন্ত্রণের জন্য ‘মৌলিক অধিকার’-এর অধ্যায় থেকে 19(1)(F) ধারা বাদ দেওয়া হয়। এরকম আরো কিছু পরিবর্তন আনা হয় সংবিধানের ২৫তম সংশোধনীর মাধ্যমে। এটাকেই ড. কামাল হোসেন ও সৈয়দ নজরুল ইসলাম ভারতের ‘তিক্ত অভিজ্ঞতা’ বলেছেন, এবং এ লক্ষ্যে বাহাত্তরের সংবিধানে শুরু থেকেই ব্যক্তিগত সম্পত্তির ক্ষেত্রে ৪২(১) ধারা রেখেও ৪২(২) ধারা সঙ্গে সঙ্গে যুক্ত করা হয় এবং আলাদা করে গুরুত্ব সহকারে ৪৭নং অনুচ্ছেদ সংযোজন করা হয়।
ব্যাংক ন্যাশনালাইজেশন রায়ের সময় ভারতের সরকার পক্ষ থেকে এ যুক্তি দেখানো হয়েছিল যে, এ রকম জাতীয়করণ চাইলে রাষ্ট্র করতেই পারে, কেননা ‘There was an obligation upon the state to achieve a socialistic society with principles of egelitarianism’। যদিও ভারতীয় সংবিধানে সমাজতন্ত্র শব্দটি যুক্ত হয় ১৯৭৬ সালে, এর পরিস্কার উল্লেখ পাওয়া যায় ১৯৬৪ সালের ভুবনেশ্বর কংগ্রেসে। সেই কংগ্রেসে ‘ডেমোক্রেসি অ্যান্ড সোশ্যালিজম’ নামে একটি প্রস্তাব গ্রহণ করে তৎকালীন কংগ্রেস পার্টি। তার পর থেকেই এর পক্ষে ও বিপক্ষে বিভক্তি দেখা দিতে শুরু করে। ভারতীয় সুপ্রিম কোর্টের রায়ে এই সমতাবাদী সমাজ প্রতিষ্ঠার যুক্তিটি তেমন গুরুত্ব পায়নি, বরং যুক্তি দেওয়া হয়েছিল ব্যক্তি স্বাধীনতা রক্ষার নিমিত্তে সম্পত্তির অধিকারকে সংরক্ষণ করার প্রতি। ‘উদ্দেশ্য’ (Objective)-র বদলে জোর দেওয়া হয়েছিল ‘পরিণাম’ (Effect)-র প্রতি : ‘The court struck down the ‘object’ test and laid down the ‘effect’ test. The effect test would now look into the effect of any particular legislative Act, rather than looking at the objective with which it had been formulated. Thes, if any Act of the legislature, even at a remote stage, violated the Fundamental Rights of the citizens, then, it was liable to be struck down.’ বাংলাদেশেও বাহাত্তরের সংবিধানের প্রণেতাগণ এ রকমটাই ভেবেছেন- শুধু একটি মাত্র ক্ষেত্রকে তারা ব্যতিক্রমের তালিকায় রেখেছেন। সমাজতন্ত্রের নির্মাণের জন্য তারা প্রয়োজনে ব্যক্তিমালিকানায় হস্তক্ষেপ করতে পারেন। এরকম বিষয়টি ‘মৌলিক অধিকারের’ অধ্যায়ে ৪২(২) এবং ৪৭ অনুচ্ছেদের মধ্য দিয়ে নিশ্চিত করা হয়েছে। পরবর্তীতে, ভারতীয় সংবিধানও 19(1)(F) এবং Article 31 বাদ দিয়ে বাংলাদেশের পথই অনুসরণ করেছে। এই প্রেক্ষিতেই ড. কামাল হোসেন তার ৩০ অক্টোবরের ভাষণে বলেছিলেন ভারতের তিক্ত অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা নেওয়ার কথা :
‘মাননীয় স্পিকার সাহেব, আপনি নিশ্চয় জানেন আমাদের বন্ধু রাষ্ট্রের ইতিহাস। যখন তারা জমিদারি আইন সংশোধন করতে যান, তখন সেখানকার সুপ্রিম কোর্ট সেটাকে নাকচ করে দেন। তারপর, তাদের সংবিধানের পঞ্চম সংশোধনী বলবৎ করতে হয়। … যখন ব্যাংক রাষ্ট্রায়ত্ত হয়েছিল, তখনও সুপ্রিম কোর্ট তা নাকচ করে দেন। … তারপর ২৬ নম্বর সংশোধনীতে এসে তারা মোটামুটি বলে দিয়েছেন যে, সংসদ আইন করে সেখানে মূলনীতি ঘোষণা করে দিতে পারবেন। মূলনীতি বাস্তবায়নের জন্য এটা করা হয়েছে। এটা আদালতের বিবেচনার বাইরে। এই অভিজ্ঞতা থেকে আমাদের একটা সুবিধা হয়েছে এবং অন্যান্য অভিজ্ঞতা থেকেও আমরা শিক্ষা গ্রহণ করতে পেরেছি। বহু তিক্ত অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে পঁচিশ বছর পরে ভারতকে যেটা সংবিধানের ২৬তম সংশোধনীর মাধ্যমে করতে হয়েছে, আমরা সেটা এখনই সঙ্গে সঙ্গে করে নিতে পেরেছি।’
এখানে বলা দরকার, ব্যক্তিস্বাধীনতার ক্ষেত্রে ‘যুক্তিসংগত বাধানিষেধ’-র কথা পৃথিবীর অন্য অনেক দেশের সংবিধানে রয়েছে। ভারতে ১৯৬৩ সালের ১৬তম সংশোধনীর মাধ্যমে ‘reasonable restrictions on the exercise of the right’ বিষয়টিকে আরও জোরদার করা হয়েছিল এবং ১৯৭১ সালের ২৬তম সংশোধনীর মাধ্যমে এটাকে আরও বেশি করে মূলনীতি সমতাবাদী লক্ষ্যের অধীনস্থ করা হয়। এই সংশোধনী বলে কোন কিছু যদি ‘egalitarian social order’ -এর মূলনীতির পরিপন্থী হয় তবে তা বাতিলযোগ্য হবে। দেশজ রাজ্যসমূহের স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপকে যুক্তিযুক্ত করা হয়েছে এই বলে যে, এ ধরনের স্বাধীন রাজ্য ব্যবস্থা- : the concept of rulershi-সমতাবাদী তথা সমাজতান্ত্রিক মূল্যবোধের সাথে সংগতিপূর্ণ নয় :’The concept of rulership, with privy purses and special privileges unrelated to any current functions and social purposes, is incompatible with an egalitarian social order’, এবং সে কারণে এসব বাড়তি সুবিধাভোগের অধিকার- তা ‘ব্যক্তিগত অধিকার’ বলে আগে ভাবা হলেও এখন থেকে প্রত্যাহূত হলো। ভারতীয় সংবিধানের এই অভিজ্ঞতা ঐতিহাসিক বিবেচনায় প্রাসঙ্গিক মনে হয়েছিল সংবিধান প্রণেতাদের কাছে। বোঝাই যাচ্ছে, বঙ্গবন্ধু ও তার নিকটতম সহকর্মীরা কোনো অ্যাবস্ট্রাক্ট ব্যক্তি স্বাধীনতার ডিসকোর্সের ভেতরে আবদ্ধ ছিলেন না বা থাকতে চাননি। তারা গণতান্ত্রিক অধিকারের পক্ষে ছিলেন কিন্তু যতক্ষণ পর্যন্ত সেটা সমাজতান্ত্রিক তথা সমতাবাদী মূল্যবোধের সঙ্গে সাংঘর্ষিক না হয়। এ দুইয়ের মধ্যে সংঘর্ষ বাধলে তাদের পক্ষপাতিত্ব ছিল সমাজতন্ত্রের প্রতিই। তাজউদ্দীন আহমদও ড. কামালের মতোই- এমনকি আরও এগিয়ে গিয়ে ভেবেছেন। এজন্যই তার ৩০ অক্টোবরের বক্তৃতাতে উঠে এসেছে ৪৭ অনুচ্ছেদের কথা :
‘আওয়ামী লীগ বলিষ্ঠ পদক্ষেপ নিয়ে পরিস্কারভাবে সমাজতন্ত্র কী, তা বলে দিয়েছে … সেই সমাজতান্ত্রিক অর্থনীতি আমরা করতে যাচ্ছি, যা এই সংবিধানে রয়েছে। … সমাজতান্ত্রিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থা কায়েম করার জন্য এই রাষ্ট্রপরিচালনার মূলনীতিকে আইন প্রণয়নের অবাধ ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে। এই প্রসঙ্গে উল্লেখ করা যায় ৪৭ অনুচ্ছেদের কথা, যাতে … মৌলিক অধিকার … এতে অন্তরায় সৃষ্টি না করে। যারা প্রগতিবাদী বলে দাবি করেন, তারা সমালোচনা করছেন এই সংবিধান সমাজতান্ত্রিক সংবিধান নয় বলে। আমি জানি না, সমাজতান্ত্রিক সংবিধান কীভাবে হয়। সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্রব্যবস্থা কীভাবে হতে পারে, সে পরিকল্পনা কেউ যদি দিতে পারতেন, তাহলে এই পরিষদ তা অত্যন্ত সতর্কতা ও শ্রদ্ধার সঙ্গে গ্রহণ করতেন।’
এই চ্যালেঞ্জের পাশাপাশি ড. কামাল হোসেন সংবিধানের লিবার্টি প্রিন্সিপাল ও সোশ্যালিস্ট প্রিন্সিপলকে একত্রিত করে ছুড়ে দিয়েছেন আরও একটি চ্যালেঞ্জ। তবে সেটা গণতন্ত্রীদের প্রতি :
‘সমাজতন্ত্রের পথে যাতে কোনোরূপ অন্তরায় সৃষ্টি না হয়, তার ব্যবস্থা আমরা ৪২ এবং ৪৭ অনুচ্ছেদে করেছি। যুক্তিসংগত বাধানিষেধ করে মৌলিক অধিকার দেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে। এর চেয়ে কম সীমাবদ্ধতা পৃথিবীর আর কোনো দেশের সংবিধানে আছে বলে আমি জানি না। যদি কেউ আমাদের দেখাতে পারেন, তাহলে আমরা উপকৃত হব। কেবল দুই-একটা ক্ষেত্রে দাঁড়ি-কমার কমবেশি হতে পারে। বাধানিষেধ ছাড়া কোনো দেশে মৌলিক অধিকার দেওয়া হয়নি, হতে পারে না।’
এ-ই হচ্ছে গণতান্ত্রিক সমাজতন্ত্রে ‘গণতন্ত্র’ ও ‘সমাজতন্ত্র’ এ দুই মৌলিক মূল্যবোধের মধ্যে ভারসাম্যতা অর্জনের ও তা গতিশীলভাবে রক্ষা করে অগ্রসর হওয়ার প্রতিশ্রুতি। বাহাত্তরের সংবিধানের ঠিক এক বছর আগে দার্শনিক জন রাউলস ১৯৭১ সালে লিখেছিলেন তার দিকনির্দেশকারী বই- ‘এ থিওরি অব জাস্টিস’। ন্যায়ানুগ ও গরিবমুখিন সমাজের ন্যায়বাদী তত্ত্ব রচনার সময় তিনি লিবার্টি প্রিন্সিপালকে সোশ্যাল জাস্টিস তথা বণ্টনগত ন্যায় (Distributive Justice)-র প্রিন্সিপলের তুলনায় বেশি গুরুত্ব দিয়েছিলেন।
[ক্রমশ]