বঙ্গবন্ধুর গণতান্ত্রিক সমাজতন্ত্র: বাহাত্তরের সংবিধান ও সমতামুখী সমাজের আকাঙ্ক্ষা

পর্ব ::৭২

পূর্বে প্রকাশিতের পর

তাদের মধ্যে অগ্রগণ্য ছিলেন সৈয়দ নজরুল ইসলাম, তাজউদ্দীন আহমদ, এ এইচ এম কামারুজ্জামান, আমীর-উল ইসলাম, আছাদুজ্জামান খান, আবু সাইয়িদ প্রমুখ। সংবিধান রচনা কমিটির প্রথম বৈঠক হয় ১৯৭২ সালের ১৭ এপ্রিল। কয়েক মাসের কাজের পর ১৯৭২ সালের ১২ অক্টোবর সংবিধানের পূর্ণাঙ্গ খসড়াটি সংসদে ‘বিল আকারে’ উত্থাপন করেন ড. কামাল হোসেন। উল্লেখ্য, ১৭ এপ্রিল থেকে ১১ অক্টোবর পর্যন্ত ড্রাফটিং কমিটির ‘৭৪টি বৈঠক’ অনুষ্ঠিত হয়। এছাড়াও ৮ মে’র মধ্যে সমাজের বিভিন্ন অংশ থেকে ‘৯৮টি প্রস্তাব’ জমা পড়ে ড্রাফটিং কমিটির কাছে। অবশ্য এই ৯৮টি প্রস্তাব ভালোভাবে সংরক্ষিত হয়নি ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য। এমনকি ড্রাফটিং কমিটির সভার বিবরণীও পরবর্তীকালে পাওয়া সম্ভব হয়নি। কিন্তু ৭৪টি সভা অনুষ্ঠিত হওয়ার তথ্যে ধারণা করা যায় যে, ড্রাফটিং কমিটিতে বিভিন্ন ধারা ও উপধারার সংযোজন-বিয়োজন নিয়ে প্রচুর তর্ক-বিতর্ক হয়েছিল। বিশেষ বিশেষ শব্দের ব্যবহার নিয়ে মতানৈক্য ঘটেছিল। শেষ পর্যন্ত যে খসড়াটি উত্থাপিত হয় তাতে ৩৪ জনের সবাই একমত হননি। খসড়াতে সুরঞ্জিত সেনগুপ্তসহ আপত্তি জানিয়েছিলেন মোট ৬ জন সদস্য। ১২ অক্টোবরে সংসদে উত্থাপনের পর খসড়া সংবিধানের ওপরে গণপরিষদ সদস্যদের আলাপ-আলোচনা শুরু হয়। এটাও জানানো দরকার যে, সংবিধানটি প্রথমে ইংরেজিতে রচনা করা হয়, এবং পরে তা বাংলায় অনুবাদ করা হয়। বস্তুত ইংরেজিতে লেখা এবং বাংলায় অনুবাদ-কর্ম পাশাপাশি চলছিলো। খসড়া সংবিধানটি সংসদে উত্থাপিত হয় বাংলা ভাষায়। এ ক্ষেত্রে ইংরেজি থেকে ভাষান্তরের জন্য গঠিত কমিটির আহ্বায়ক ছিলেন ড. আনিসুজ্জামান ও কমিটির অন্য দু’জন সদস্য ছিলেন অধ্যাপক সৈয়দ আলী আহসান ও ড. মজহারুল ইসলাম। ইংরেজি থেকে অনূদিত হলেও এটা পরিস্কার হয়েছিল যে, যদি কখনও ইংরেজি পাঠের অর্থ-উদ্ধার বা ব্যাখ্যা নিয়ে সংশয় দেখা দেয়, তবে সে ক্ষেত্রে ‘বাংলা পাঠকেই’ চূড়ান্ত পাঠ বা মানদণ্ড হিসেবে ধরা হবে। এজন্য সংবিধানের ‘বাংলা পাঠ’-এর গুরুত্ব অপরিসীম।

উত্থাপিত খসড়ার প্রতিটি ধারা-উপধারার শব্দগত, ব্যুৎপত্তিগত ও তাৎপর্যগত বিচার-বিশ্নেষণ করা হয়। বলা যায়, দীর্ঘ এক মাসব্যাপী উত্তপ্ত তর্ক-বিতর্কের মধ্য দিয়েই কেবল সংবিধানটি সংশোধিত ও পরিমার্জিত হয়ে শেষ পর্যন্ত ১৯৭২ সালের ৪ নভেম্বর সর্বসম্মতিক্রমে গৃহীত হয়। সৌভাগ্য ক্রমে, এই সংসদীয় বিতর্কের প্রসেডিংস পরবর্তী প্রজন্মের জন্য সংরক্ষিত হয়েছে। ভারতের সংবিধান নিয়ে গণপরিষদে বিতর্ক চলেছিল ১১৪ দিন, বাংলাদেশের ক্ষেত্রে এটা চলেছিল ২৪ দিন। আপাতদৃষ্টিতে ওই তুলনামূলক কম সময়ের মধ্যে বিতর্ক সমাপ্ত হওয়ার একটি বড় কারণ ছিল, রাষ্ট্রের মূল মূল পরামর্শ ও নীতিমালার বিষয়ে সেদিনের গণপরিষদে ব্যাপক ঐকমত্যের উপস্থিতি। এই সীমিত বিভেদের পেছনে প্রধান কারণ ছিল, মুক্তিযুদ্ধের আগে ও পরে আন্দোলন-সংগ্রামের ভেতর দিয়ে অর্জিত সার্বিক রাজনৈতিক উপলব্ধি যা নিয়ে সেদিন গভীর ঐকমত্য বিরাজ করছিল (যার ওপরে পূর্ববর্তী অধ্যায়ে বিস্তৃত দালিলিক আলোচনা করা হয়েছে)।

যেহেতু আমাদের আলোচনার মূল সূত্র আবর্তিত হচ্ছে বঙ্গবন্ধুর গণতান্ত্রিক সমাজতন্ত্র ও সংবিধানের সমতামুখীন আকাঙ্ক্ষাকে ঘিরে, সেহেতু আমরা এখানে বিশেষভাবে নজর দেব কয়েকটি বিশিষ্ট সাংবিধানিক ধারার প্রতি। অর্থাৎ সংবিধানের পূর্ণাঙ্গ আলোচনা না করে এর অর্থনৈতিক রূপকল্পের মধ্যে আমাদের মনোযোগ সীমিত থাকবে। এই অর্থনৈতিক ধারাগুলোর রাজনৈতিক-দার্শনিক তাৎপর্য নিয়ে অতীতে সেভাবে আলোচনা হয়নি। এসব ধারার বিচার-বিশ্নেষণ করলে বঙ্গবন্ধুর গণতান্ত্রিক সমাজতন্ত্রকে অনেক কাছে থেকে অনুধাবন করা যায়। এক্ষেত্রে আপাতত আমার হাতের কাছে তথ্য-উৎস চারটি : ক. ড্রাফটিং কমিটির রিপোর্ট (যেটি, ১০ জুন ‘খসড়া সংবিধান’ তৈরি হওয়ার সময় একটি আলাদা ডকুমেন্ট হিসেবে প্রস্তুত করা হয়); খ. কমিটি কর্তৃক প্রস্তুতকৃত খসড়া সংবিধান; গ. এই খসড়া সংবিধানের ওপরে বাহাত্তরের গণপরিষদে আলোচনার প্রসেডিংস, এবং ঘ. সংসদে অনুমোদিত চূড়ান্ত সংবিধান। সমকালীন পত্র-পত্রিকায় সংবিধান সম্পর্কিত অনেক বিচার-বিশ্নেষণ নিশ্চয়ই প্রকাশিত হয়েছিল সে সময়ে। কিন্তু সেসব খুঁটিয়ে দেখার সুযোগ আমার এখনও হয়নি। তাছাড়া সেদিনের অনেক ব্যক্তিই আর জীবিত নেই। ফলে অনেক প্রাসঙ্গিক ‘ইন্টারভিউ’ থেকে বঞ্চিত হয়েছি। এসব সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও উপরোক্ত তথ্য-উৎসসমূহের ঘনিষ্ঠ পাঠে বঙ্গবন্ধুর ‘গণতান্ত্রিক সমাজতন্ত্র’ সম্পর্কে কয়েকটি প্রবণতা স্পষ্ট হয়ে বেরিয়ে আসে।

আমার কাছে প্রথমেই যেটা চোখে পড়েছে তা হলো গণতান্ত্রিক সমাজতন্ত্রের লক্ষ্য ও আদর্শে পৌঁছানোর চ্যালেঞ্জ। সংবিধানের কাঠামোয় গণতন্ত্রের উদারনৈতিকতার নীতি (যাকে আমি বলছি- ‘লিবার্টি প্রিন্সিপল’), আর শোষণমুক্ত সমাজ গড়ার নীতি (যাকে আমি বলছি- ‘সোশ্যালিস্ট প্রিন্সিপল’)- এ দুইয়ের মধ্যে সমন্বয় করার দুরূহ কাজে হাত দেওয়া হয়েছিল সেদিন। এই চ্যালেঞ্জটাই বঙ্গবন্ধু সংবিধান-বিশেষজ্ঞদের কাছে তুলে ধরেছিলেন। ড্রাফটিং কমিটির প্রতিবেদনে বলা হয়েছিল :

‘The Committee has also been conscious that at least in one major aspect it would be breaking new ground in making promises which would fulfill the pledge embodied in the preamble that ‘It shall be a fundamental aim of the state to realise through the democratic proces a socialist society, free from exploitation.’

অর্থাৎ শুধু চার মূলস্তম্ভকে- গণতন্ত্র, জাতীয়তাবাদ, সমাজতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষতা- সংবিধানের বিভিন্ন দফা-উপদফার মধ্যে প্রতিফলিত করাই নয় ড্রাফটিং কমিটির কাজ (সেটা তো একটা প্রাথমিক কর্তব্য বটেই)। এর সামনে আরও বড় চ্যালেঞ্জ হচ্ছে, গণতান্ত্রিক কাঠামোর মধ্যে একটি শোষণমুক্ত সমাজতান্ত্রিক সমাজ গড়ে তোলার জন্য উপযুক্ত সাংবিধানিক নিরাপত্তা-কবচ (safe-guards) তৈরি করা। কেননা, তৃতীয় বিশ্বের পটভূমিতে এরকম গণতান্ত্রিক সমাজতন্ত্রের সাংবিধানিক রূপ- অন্তত আগে থাকতেই ঠিক করে নিয়ে বা পূর্ব-নির্ধারিতভাবে-এর আগে কখনও রচিত হয়নি। এমন এক সংবিধান হতে হবে যেখানে গণতন্ত্র ও সমাজতন্ত্র এ দুইয়ের মধ্যে কোনোটিকেই ভারসাম্যহীনভাবে ভারী করে তোলা হবে না। দুইয়ের মধ্যে সমন্বয়সাধনের চেষ্টা করা হবে সচেতনভাবে- যাতে করে কোনো একটি আদর্শের প্রতি দেশের ভবিষ্যৎ উন্নয়নের গতিমুখ একপেশেভাবে ঝুঁকে না যায়।

এরকম সমন্বয়ের সমাজ তথা গণতান্ত্রিক সমাজতন্ত্রের ধারা সামাজিক-রাজনৈতিক দ্বন্দ্ব-সংঘাত ছাড়াই বাস্তবে অব্যাহত রাখা যাবে কিনা আগামী দিনগুলোয়- বাহাত্তর সালেই সে প্রশ্ন উঠেছিল। অবস্থার দুর্বিপাকে, দেশি-বিদেশি শত্রুর চাপে, লিডারশিপের দৃষ্টিভঙ্গি বদলের কারণে, বা অন্য কোনো অপ্রত্যাশিত ঝুঁকির কারণে গণতন্ত্র ও সমাজতন্ত্রের মধ্যে সমন্বয়হীনতা দেখা দিতে পারে- এ বিষয়ে সংবিধান প্রণেতারা (এবং বঙ্গবন্ধু) অত্যন্ত সজাগ ছিলেন। তারপরও একটাকে বিসর্জন দিয়ে অন্যটিকে আঁকড়ে ধরতে চাননি তারা। কয়েকটি উদাহরণ।

খসড়া সংবিধান নিয়ে গণপরিষদে আলোচনা করতে গিয়ে ১৯৭২ সালের ১২ অক্টোবর বঙ্গবন্ধু তার সূচনা বক্তব্যে বললেন, ‘শাসনতন্ত্র ছাড়া কোনো দেশ- তার অর্থ মালিকবিহীন নৌকা, হালবিহীন নৌকা। শাসনতন্ত্রে মানুষের অধিকার থাকবে, শাসনতন্ত্রে মানুষের অধিকারের সঙ্গে সঙ্গে কতর্ব্যও থাকবে।’ এখানে বলা দরকার, গান্ধী Universal Declaration of Human Rights-এর পাশাপাশি Universal Declaration of Human Duties-এর ঘোষণা চেয়েছিলেন। অধিকার ও কর্তব্য-এ দুইয়ের অন্তর্লীন যোগাযোগ স্মরণ করার পাশাপাশি বঙ্গবন্ধু সংবিধানের মূল আদর্শকে আবারও তুলে ধরলেন সংসদ সদস্যদের সামনে:

‘এবং যতদূর সম্ভব, যে শাসনতন্ত্র পেশ করা হয়েছে, সেটা যে জনগণের আশা-আকাঙ্ক্ষার মূর্ত প্রতীক হয়ে থাকবে, তা সম্বন্ধে আমার কোনো সন্দেহ নেই। আমাদের আদর্শ পরিস্কার হয়ে রয়েছে। এই পরিস্কার আদর্শের ভিত্তিতে বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছে। এবং সে আদর্শের ভিত্তিতে এদেশ চলবে। জাতীয়তাবাদ- বাঙালি জাতীয়তাবাদ- এই বাঙালি জাতীয়তাবাদ চলবে বাংলাদেশে। বাংলার কৃষ্টি, বাংলার ঐতিহ্য, বাংলার আকাশ-বাতাস, বাঙালির রক্ত দিয়ে বাঙালির জাতীয়তাবাদ। আমি গণতন্ত্রে বিশ্বাসী, জনসাধারণের ভোটের অধিকারকে বিশ্বাস করি। আমরা বিশ্বাস করি সমাজতন্ত্রে। যেখানে শোষণহীন সমাজ থাকবে। শোষক শ্রেণি আর কোনোদিন দেশের মানুষকে শোষণ করতে পারবে না। এবং সমাজতন্ত্র না হলে সাড়ে সাত কোটি মানুষ ৫৪,০০০ বর্গমাইলের মধ্যে বাঁচতে পারবে না। সে জন্য অর্থনীতি হবে সমাজতান্ত্রিক। আর হবে ধর্মনিরপেক্ষতা। ধর্মনিরপেক্ষতা মানে ধর্মহীনতা নয়। … কেউ কারও ধর্মে হস্তক্ষেপ করতে পারবে না, বাংলার মানুষ ধর্মের ব্যাপারে হস্তক্ষেপ চায় না। রাজনৈতিক কারণে ধর্মকে ব্যবহার করা যাবে না। রাজনৈতিক উদ্দেশ্য হাসিলের জন্য ধর্মকে বাংলার বুকে ব্যবহার করতে দেওয়া হবে না। … এই চারটি আদর্শের ভিত্তিতে বাংলার শাসনতন্ত্র তৈরি হবে। এটা জনগণ চায়, জনগণ এটা বিশ্বাস করে। জনগণ এজন্য সংগ্রাম করেছে। লক্ষ লক্ষ লোক এই জন্য জীবন দিয়েছে। এই আদর্শ নিয়েই বাংলার নতুন সমাজ গড়ে উঠবে।’

এর পরে ভাষণ দিতে উঠলেন তৎকালীন আইনমন্ত্রী ড. কামাল হোসেন। সেখানে তিনি প্রথমে সমাজতন্ত্রকে ব্যাখ্যা করলেন এবং পরে গণতন্ত্রকে রেখে সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠার সমস্যা সম্পর্কে ইঙ্গিত করলেন। উদ্ৃব্দতিটি বড়, কিন্তু গণতান্ত্রিক সমাজতন্ত্র সম্পর্কে সেদিনের সংসদের Pulse বোঝার জন্য তা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এর বিশেষ বিশেষ দিকটি নিচে তুলে ধরা হলো।

১. অনুন্নত দেশের পটভূমিতে ‘সমাজতন্ত্র’ আর উন্নত পুঁজিবাদী দেশের ‘ওয়েলফেয়ার স্টেট’-এর মধ্যে পার্থক্য আছে : ‘আমাদের কাছে সমাজতন্ত্র বলতে বোঝায় অর্থনৈতিক শোষণ থেকে মুক্তি। সমাজতান্ত্রিক সমাজ বলতে আমরা বুঝি এমন এক সমাজ ব্যবস্থা, যেখানে জাতিকে এবং জাতীয় অর্থব্যবস্থা গড়ে তোলার জন্য যে আত্মত্যাগের প্রয়োজন, সকলে তা ভাগ করে নেবে। আবার সকলের প্রচেষ্টায় যে সম্পদ গড়ে উঠবে, তাও সকলে সুষমভাবে ভাগ করে নেবে। আমাদের সংবিধানে তাই সমাজতান্ত্রিক অর্থব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা রাষ্ট্র পরিচালনার একটা মূলনীতি বলে ঘোষিত হয়েছে। সঙ্গে সঙ্গে মালিকানার নীতিতে বলা হয়েছে যে, প্রধান প্রধান অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে জনগণের পক্ষে রাষ্ট্রের মালিকানা থাকবে। আর আইন যে সীমা নির্ধারণ করবে, সেই সীমার মধ্যে সমবায়গত বা ব্যক্তিগত মালিকানা থাকবে।’ অর্থাৎ সমাজতান্ত্রিক অর্থনীতির চরিত্র হবে মালিকানা-সম্পর্কের দিক থেকে ‘মিশ্র চরিত্রের’, যদিও Mixed Economy শব্দটি সেদিন ব্যবহূত হয়নি।

২. শুধু রাষ্ট্রীয় মালিকানা নয়, এই সমাজতন্ত্রের মূল লক্ষ্য মানুষকে শোষণ থেকে মুক্তি দেওয়া এবং তাকে জীবনধারণের মৌলিক উপকরণ ও সুযোগের অধিকার দেওয়া : ‘সর্বপ্রকার শোষণ থেকে কৃষক ও শ্রমিককে এবং জনগণের অনগ্রসর অংশকে মুক্তিদানের দায়িত্ব রাষ্ট্রের ওপর অর্পণ করা হয়েছে। জীবনধারণের মৌলিক উপকরণ যাতে সকল নাগরিক লাভ করতে পারেন, সেই দায়িত্বও রাষ্ট্রের ওপর ন্যস্ত হয়েছে। সকল নাগরিক যাতে সমান সুযোগ পেতে পারেন এবং রাষ্ট্রের সর্বত্র যাতে সমান স্তরের অর্থনৈতিক উন্নয়ন লাভ করা যায়, রাষ্ট্র তা নিশ্চিত করবেন।’ অর্থাৎ, বঙ্গবন্ধুর গণতান্ত্রিক সমাজতন্ত্রে নাগরিকেরা দার্শনিক জন রাউলস (Rawls) এর ভাষায় শুধু Formal Equality of Opportunity নয়, তারা Substantive Equality of Opportunity-রও অধিকারী হবেন। এর অর্থ, এটা শুধু যেনতেনভাবে পাওয়া মৌলিক সুযোগের সমতা বিধান নয়। এখানে গুণে-মানের সমতারও (Equality of Standards) কথাও থাকছে। দ্বিতীয়ত, এখানে শুধু  Equality of Opportunity বা সুযোগের সমতার মধ্যেই আলোচনা সীমিত রাখা হয়নি। Equality of Outcomes-র কথাও অনুমিত থাকছে। সুযোগের সমতার পাশাপাশি নাগরিকেরা যাতে করে সর্বত্র ‘সমান স্তরের অর্থনৈতিক উন্নয়ন’ লাভ করেন, রাষ্ট্র তা ‘নিশ্চিত করবে’- এটার ওপরে বিশেষ জোর দেওয়া হচ্ছে।

[ক্রমশ]

1 thought on “বঙ্গবন্ধুর গণতান্ত্রিক সমাজতন্ত্র: বাহাত্তরের সংবিধান ও সমতামুখী সমাজের আকাঙ্ক্ষা

  1. Pingback: বঙ্গবন্ধুর গণতান্ত্রিক সমাজতন্ত্র: বাহাত্তরের সংবিধান ও সমতামুখী সমাজের আকাঙ্ক্ষা — Dr. Binayak Sen – C

Leave a comment