পর্ব ::৩৫
২. এদোয়ার্দো গালিয়েনোর জীবন
পলিটিক্স অ্যান্ড প্রোজ-এ সেদিন ছিল এদোয়ার্দো গালিয়েনোর ‘মিররস্’ বই নিয়ে ভাষণ; গালিয়েনোর গল্প বলার ধরনে এক ‘রহস্যময় জাদু’ থাকে- এরকম একটি আপ্তবাক্য বলেছিলেন ঔপন্যাসিক ইসাবেলা আয়েন্দে। গালিয়েনো কাজ করতে চান ভাস্করের মতো। প্রথমে তিনি ইতিহাস, প্রবন্ধ বা লোককাহিনি ঘেঁটে ‘তথ্য’ আহরণ করেন, তারপর তিনি তৈরি করেন এর প্রথম-পাঠ। সেই পাঠের ওপরে তিনি অনেক বছর ধরে কাজ করতে থাকেন যতক্ষণ-না এর বর্ণনাভঙ্গি, বক্তব্য, বক্তব্যের প্রধান ও অপ্রধান মুহূর্ত তার মনোমত হয়ে দাঁড়ায়। তার অনু-রচনাগুলো অনেকটা গানের মতো- স্থায়ী, অন্তরা, সঞ্চারী ও আভোগ- পর্যায়ক্রমে তা ধ্বনি থেকে কবিতায় পরিণত হয়। একজন প্রাবন্ধিককে প্রথমাবধি একজন ‘স্টাইলিস্ট’ হতেই হয়। রিল্ক্কের মতো তিনিও লিখে রেখে যেতে পারতেন- ‘একজন তরুণ প্রাবন্ধিকের প্রতি’ কোনো গাঢ় উপদেশাবলি। যেমন, ধরা যাক, তিনি লিখতে চান স্পেনের দোর্দণ্ড প্রতাপ জেনারেল ফ্রাংকো সম্পর্কে। স্পেনের বিখ্যাত রক্তক্ষয়ী সিভিল ওয়ারে রিপাবলিকপন্থিদের হারিয়ে জেনারেল ফ্রাংকো ক্ষমতায় এসেছিলেন ১৯৩৯ সালে, এবং ১৯৭৫ সালে মৃত্যুবরণ করা পর্যন্ত ক্ষমতায় ছিলেন নিরঙ্কুশ ডিক্টেটরশিপ অব্যাহত রেখে। না-প্রাচ্য না-পাশ্চাত্য কোনো শক্তিই তাকে ক্ষমতা থেকে সরাতে পারেনি। এহেন প্রতাপশালী জেনারেল ফ্রান্সিসকো ফ্রাংকোকে নিয়ে এক পাতার মধ্যে কী লেখা যায়, যা হবে তার নিষ্ঠুর চরিত্রের ইঙ্গিতবাহী, আবার একই সঙ্গে কালোত্তীর্ণ সাহিত্য? গালিয়েনো এ নিয়ে অনেক ভেবেছেন, তারপর তার মনে হয়েছে জেনারেল ফ্রাংকোর পক্ষীশিকার নিয়েই বরং লেখা যাক। বিবরণীটি অনেকটা এরকম, তার মৃত্যুর পরে প্রকাশিত ‘হান্টার অব স্টোরিস্’ থেকে সংগৃহীত :
‘বধ করার মধ্যে একটা নিষ্ঠুর আনন্দ রয়েছে। তা সে নোংরা ঘেঁটে বেড়ানো কাক বা সরোবরের রাজহংসী বা একজন গণতন্ত্রী প্রজাতন্ত্রী যে-ই হোক না কেন। তবে কোয়েল পাখি শিকারে ফ্রান্সিসকো ফ্রাংকোর বিশেষ আগ্রহ ছিল বরাবর। ১৯৫৯ সালের অক্টোবরের এক দিনে জেনারেল ফ্রাংকো ৪ হাজার ৬০০টি কোয়েল পাখি বধ করেছিলেন, তারই করা পূর্বতন সব রেকর্ড ভেঙে।
আলোকচিত্রী শিল্পীরা সেই ঐতিহাসিক মুহূর্তকে অমর করে রেখেছিলেন। ছবিতে দেখা যাচ্ছে যে বিজয়ী বেশে তিনি দাঁড়িয়ে আছেন, আর তার পায়ের নিচে লুটোপুটি খাচ্ছে তার যুদ্ধজয়ের সামগ্রী- মৃত চোখ-উল্টে পড়া অসংখ্য কোয়েল পাখি।’
এসব ক্ষেত্রে এদোয়ার্দো গালিয়েনো যেটা করে থাকেন, তিনি যুক্ত করেন অনেক প্রাসঙ্গিক-অপ্রাসঙ্গিক অনুষঙ্গ। যেমন ডিক্টেটরদের মধ্যে অপেক্ষাকৃত খাটো ছিলেন ফ্রাংকো- পাঁচ ফুট চার ইঞ্চি, যেখানে হিটলার ছিলেন পাঁচ ফুট নয় ইঞ্চি, আর মুসোলিনি- পাঁচ ফুট ছয় ইঞ্চি। ফটোগ্রাফাররা এমনভাবে ছবি তুলতেন যাতে করে এই অপেক্ষাকৃত খর্বকায় একনায়কদের বেশি খাটো না দেখায়। আমাদের দেশেও অনেক খর্বকায় জেনারেল ছিলেন- যারা সময় সময় ডিক্টেটরের ভূমিকায় অবতীর্ণ হতে চেয়েছেন- তারাও অত্যন্ত ক্যামেরা সচেতন ছিলেন। ‘তৃতীয় মাত্রা’য় একবার এক-এগারোর অন্যতম নায়ক জেনারেল মইন-এর দীর্ঘ সাক্ষাৎকার নেওয়া হয়েছিল। তখন দেখে মনেই হয়নি যে তিনি এতটা খর্বকায়। আসলে ক্ষমতার লেন্স আর ফটোগ্রাফারদের লেন্স দুই-ই এই জেনারেলদের সুউচ্চ মহিমায় প্রতিষ্ঠিত করায়।
অন্যত্র, গালিয়েনো এক ‘আলোকপ্রাপ্ত’ সামরিক ডিক্টেটরের কথা বলেছেন, যার নাম আউগুস্তো পিনোচেট বা পিনোশে। চিলির এই নির্মম মিলিটারি ডিক্টেটর তার জীবদ্দশায় হাজার হাজার বই সংগ্রহ করেন তার ব্যক্তিগত লাইব্রেরির জন্য। রাজকোষের অনেক অর্থ আত্মসাৎ করেছেন তিনি, সেসবের অনেকটাই সময়মতো আমেরিকার রিগস ব্যাংকের ডলার-অ্যাকাউন্টে পাচার করেছেন তিনি। তবে জনতার অর্থ নিয়ে তিনি প্রচুর বইও কিনেছেন। তিনি বই কিনতেন পড়ার জন্য নয়, শুধু ‘সংগ্রহ’ করার জন্য। কে জানে এই ডিক্টেটরের বুকের ভেতরে বইয়ের জন্য হাহাকার কী কারণে বাসা বেঁধেছিল! পিনোশের ব্যক্তিগত লাইব্রেরিতে শুধু নেপোলিয়ন বোনাপার্টের ওপরেই ৮৮৭টি বই ছিল। মূল্যবান চামড়ায় বাঁধানো সেসব খণ্ড। আর গ্রন্থাগারের বইয়ের তাকে তাকে বোনাপার্টের অনেক মূর্তি সসম্মানে রাখা হয়েছিল। সংগৃহীত প্রতিটি বইয়ে পিনোশের ব্যক্তিগত মোড়ক বসানো। যেন ভাবীকাল তাকে এভাবেই মনে রাখে। জেনারেল পিনোশে-র এই কখনোই না-পড়া গ্রন্থরাজি এখন বিরাজ করছে চিলির সামরিক বাহিনীর ওয়ার কলেজের ‘প্রেসিডেন্ট আউগুস্তো পিনোশে উগার্তে লাইব্রেরি’তে। এই লাইব্রেরিটি পিনোশে নিজেই তৈরি করেছিলেন- ভবিষ্যতের সামরিক শাসকদের ‘আলোকপ্রাপ্তি’র জন্য।
এদোয়ার্দো গালিয়েনো কাউকেই কোনো কিছুকেই তার ক্ষুরধার বিশ্নেষণের জরিপ থেকে বাদ দেননি। ‘মিররস্’ গ্রন্থে তিনি লিখেছেন ইংরেজ দার্শনিক জন লক-এর কথা। ‘স্বাধীনতা’র দার্শনিক বললে লক-এর কথাই প্রথমে মনে পড়বে। তার লেখায় তিনি অবাধ বাণিজ্য, কারখানা, অবাধ প্রতিযোগিতা, ‘অবাধ নিয়োগ ও ছাঁটাই’ এসবের প্রয়োজনীয়তা অবাধে লিখে গেছেন। সেই সাথে বলেছেন অবাধে বিনিয়োগ করার স্বাধীনতার কথাও। তিনি যখন ‘এন এসে কনসার্নিং হিউম্যান আন্ডারস্ট্যান্ডিং’-এর মতো দার্শনিক গ্রন্থ লিখছেন, সে সময়েই ‘রয়াল আফ্রিকান কোম্পানি’র স্টক কেনার ক্ষেত্রে তার সঞ্চয়কে ব্যয় করেন। গালিয়েনো লিখছেন, এই কোম্পানির যৌথ মালিকানায় ছিলেন ব্রিটিশ রাজপরিবার এবং মুক্ত-বাণিজ্যপন্থি ‘ইন্ডাস্ট্রিয়াস অ্যান্ড র্যাশনাল’ বণিকগোষ্ঠী। এই কোম্পানির মূল কাজ ছিল আফ্রিকার দেশগুলো থেকে কালো মানুষদের ক্রীতদাস হিসেবে কিনে আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রে বিক্রি করা।
এ রকম দ্বিচারিতা আরেকজন ইংরেজ দার্শনিক জন স্টুয়ার্ট মিল-এর মধ্যেও ছিল। সারাজীবন তিনি ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানিতে কাজ করে গিয়েছেন; একপর্যায়ে কোম্পানির সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ নীতিনির্ধারকও হন। কোম্পানির চাকরি থেকে অবসর নেওয়ার পরও এর নীতি নির্ধারণে মিলের পরোক্ষ ভূমিকা অব্যাহত ছিল। ১৮৬০-এর দশকে অন লিবার্টি, অন রিপ্রেজেন্টেটিভ গভর্নমেন্ট, ‘নারীমুক্তি’, এমনকি ‘সমাজতন্ত্র’ ইত্যাদি নানা বিষয়ে তার গুরুত্বপূর্ণ রচনা প্রকাশিত হতে থাকে। সারা বিশ্বে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির শাসনকে একটা ‘সভ্য চেহারা’ দেওয়া ছিল তার অন্যতম বড় কীর্তি। ঔপনিবেশিক দ্বিচারিতার অনেকগুলো উদাহরণ দিয়েছেন গালিয়েনো। ক্রীতদাসের প্রথা একসময় ইংল্যান্ডে এবং তার দেখাদেখি সারা ইউরোপেই নিষিদ্ধ ঘোষিত হয়ে গেল। রোমক সাম্রাজ্যের পতনের একটি কারণ ছিল ক্রীতদাসের বিদ্রোহ। চার্চ ঘোষণা দিয়েছিল, যে কাউকে ক্রীতদাস করা ঈশ্বরের চোখে ঘোরতর অন্যায় কাজ। ইউরোপের শ্রেষ্ঠ বিচারকেরা রায় দিলেন, ক্রীতদাস নিয়ে বাণিজ্য (স্লেভ-ট্রেড) করা আইনত গর্হিতকর অপরাধ। মনে হতে পারে যে, এর পর ‘ক্রীতদাস-বাণিজ্য’ উঠে যাওয়ার কথা। কিন্তু এই বাণিজ্য থামল না। ষোড়শ, সপ্তদশ, অষ্টাদশ, এমনকি উনিশ শতকেও এই বাণিজ্য শুধু-ই থেমে থাকেনি তা-ই নয়, আফ্রিকায় উপনিবেশ সম্প্রসারণের সাথে সাথে ক্রীতদাসের বাণিজ্য নজিরবিহীনভাবে বেড়ে গেল। আগে ক্রীতদাস কেনা হতো কেবল উপকূলীয় বন্দর এলাকা থেকে। আফ্রিকার ভেতর প্রদেশে যাওয়ার ফলে উন্মোচিত হলো তার সমৃদ্ধ খনিজসম্পদ, তাতে করে স্থানীয় অধিবাসীদের দ্রুত পরিণত করা হলো ক্রীতদাসে, যাদের জোরপূর্বক খাটানো হতো খনিগুলোতে। এই ক্রীতদাসদের একটা অংশকে আবার ‘আন্তঃমহাদেশীয়’ স্লেভ-ট্রেডে ব্যবহার করা হতো : লাভজনকভাবে খনিও চলত, আমেরিকার সাথে বহির্বাণিজ্যও নির্বিঘ্নে চলত ক্রীতদাস ক্রয়-বিক্রয়ের সুবাদে।
১৮৮৫ সালে বার্লিনে অনুষ্ঠিত হলো বিশ্বজুড়ে উপনিবেশ ভাগাভাগির সম্মেলন। ইংরেজ, ফরাসি, বেলজীয়, ওলন্দাজ, জার্মান প্রভৃতি পরাশক্তির মধ্যে ঔপনিবেশিক লুণ্ঠনের ভাগবাটোয়ারার সম্মেলন ছিল এটিই। এই সম্মেলনে বেলজিয়ামের রাজা লিওপোল্ডের সম্মানে তাকে উপহার দেওয়া হলো ‘কঙ্গো’ নামক দেশটি- তার ‘ব্যক্তিগত সম্পত্তি’ হিসেবে। অচিরেই তিনি দুর্গম কঙ্গোকে একটি বাণিজ্য-ক্ষেত্র করে তুললেন। কঙ্গো হয়ে দাঁড়াল ‘হাতির দাঁতের’ সবচেয়ে বড় রপ্তানির উৎস; কঙ্গো থেকে সুলভে এবং প্রচুর পরিমাণে আসতে থাকল ‘রাবার’, যেটি সদ্য-আবিস্কৃত মোটরগাড়ির টায়ার হিসেবে বিশ্বজুড়ে ব্যবহূত হতে থাকে; কঙ্গো থেকে অবাধে আমদানি হতে থাকল রক্তমুখী হীরে- আমেরিকা-ইউরোপে বিয়ের অনুষ্ঠানের জন্য আংটি একটি অত্যাবশ্যকীয় উপকরণ। এসবই হলো কঙ্গোর জনসাধারণকে ক্রীতদাস বানিয়ে অর্থাৎ ক্রীতদাস শ্রমের সুবাদে। ইতিহাসের বইপত্রে ১৮৮৫ সাল থেকে ১৯১৪ পর্যন্ত তিরিশ বছরকে বলা হয়ে থাকে ‘নিখিল বিশ্ব-শান্তির যুগ’, যা কেবল ভেঙে যায় প্রথম মহাযুদ্ধের পরেই। জার্মানি তার আফ্রিকার উপনিবেশগুলো হারায়, আর ইংল্যান্ড-ফ্রান্স-বেলজিয়াম তাদের উপনিবেশের সংখ্যা বাড়াতে সক্ষম হয়।
কীভাবে সম্ভব হলো উনিশ শতকের পটভূমিতে সভ্য ইউরোপ, আধুনিক ইউরোপ, বিজ্ঞানমনস্ক ইউরোপ, শিল্পোন্নত ইউরোপের দ্বারা এই ‘ক্রীতদাস-নির্ভর’ অর্থনীতির পরিচালনা? এর অন্তর্নিহিত যুক্তি-জাল পাওয়া যায় জন স্টুয়ার্ট মিলের রচনায়। তিনি সারাবিশ্বের মানবগোষ্ঠীকে তিন ভাগে বিভক্ত করেন : সভ্য, আধাসভ্য ও অসভ্য। ‘সভ্য’ হচ্ছে ইউরোপ, সমগ্র বিশ্ববাসীকে সভ্য করার দায়িত্ব তার। ‘আধাসভ্য’ হচ্ছে ভারতবর্ষ- সেখানে ‘সংহত’ ধরনের নীতি প্রয়োগ করার পক্ষপাতী মিল। আর ‘অসভ্য’ হচ্ছে আফ্রিকা ও লাতিন আমেরিকার আদিবাসী স্থানীয় জনগোষ্ঠী- তাদের ক্ষেত্রে প্রয়োজনে রূঢ় ও কর্কশ আচরণে পিছু-পা না হতে বলছেন মিল। তার আগে অবশ্য এ রকম কথা আরো কেউ কেউ বলেছেন। দার্শনিক হেগেল লক্ষ্য করেছিলেন যে, আফ্রিকার কোনো ‘ইতিহাস নেই’, একে শুধু ‘বর্বরতা আর নৃশংসতার’ কেস-স্টাডি হিসেবে পড়া চলে। দার্শনিক জীবতাত্ত্বিক, নৃতত্ত্ববিদ এবং উনিশ শতকের ‘ভিক্টোরিয়ান যুগের’ অন্যতম প্রধান লিবারেল তাত্ত্বিক হার্বার্ট স্পেন্সার অনেকটা ভেবে এই সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছিলেন যে, সভ্যতার উচিত হবে ‘পৃথিবীর মানচিত্র থেকে সব অনগ্রসর জাতিকে মুছে ফেলা’, প্রগতির রথের নিচে এসব বাধাকে চূর্ণ না করতে পারলে সভ্যতাকে অগ্রসর করা যাবে না।
বেলজিয়ামের রাজা লিওপোল্ডকে নিয়ে কঙ্গোর গল্প বলতে গিয়ে অবধারিতভাবে একসময় চলে এসেছে ঔপন্যাসিক জোসেফ কনরাডের ‘হার্ট অব ডার্কনেস’-এর কথা। এই উপন্যাসের কেন্দ্রীয় চরিত্র হচ্ছে কুর্টজ, যার সাইড-পেশা হচ্ছে হাঁতির দাঁতের ব্যবসা করা। কনরাড নিজে কঙ্গোতে গিয়েছিলেন। ঔপনিবেশিক বাহিনীতে কর্মরত অফিসার ক্যাপ্টেন লিওন রোম-কে মনে রেখে তিনি গড়ে তুলেছিলেন কুর্টজ-এর চরিত্র। কুর্টজ-এর শাসনে কোনো নেটিভই সোজা দাঁড়িয়ে থাকতে পারত না- চারপেয়ে জন্তুর মতো অবস্থানে থেকে নেটিভরা কুর্টজ-এর আদেশ গ্রহণ করত। তার প্রাসাদোপম গৃহে প্রবেশের মুখে ফুল দিয়ে সাজানো ছিল পর পর বিশটি ধাপ, প্রতিটি ধাপের মধ্যে থাকত একটি কালো মানুষের বিদ্রোহী কাটামুণ্ডু। যখন তিনি ক্রীতদাস বা হাতি শিকার না করতেন, অর্থাৎ অবসর সময়ে, ক্যাপ্টেন কুর্টজ আঁকতেন নিসর্গ-চিত্র, রচনা করতেন কবিতা, সংগ্রহ করতেন প্রজাপতি। এইভাবে সভ্যতা আর অসভ্যতা শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান করত তার মধ্যে। কনরাডের চোখে, কুর্টজই ইউরোপের সাম্রাজ্যবাদ, রবীন্দ্রনাথ যাকে বলছেন- ‘ছোট ইংরেজ’।
[ক্রমশ]