পর্ব ::৩২
১. অভিজিৎ ব্যানার্জি ও তার ‘পভার্টি ট্র্যাপের’ তত্ত্ব
২০১৯ সালের অর্থনীতিতে নোবেলজয়ী অধ্যাপক অভিজিৎ ব্যানার্জি ও তার সহকর্মীদের গবেষণার একটি মূল বিষয় ছিল ‘পভার্টি ট্র্যাপের’ তত্ত্ব। দরিদ্ররা কী করে দীর্ঘকালের জন্য দারিদ্র্যের ‘ফাঁদে’ পড়ে যান- অনেক ক্ষেত্রে বংশানুক্রমিকভাবেই সেই ফাঁদে জীবন কাটান- এ কথা অভিজিৎ ব্যানার্জি, এস্থার ডুফলো ও মাইকেল ক্রেমারের আগে অনেকেই বলেছিলেন। কিন্তু তাদের বক্তব্যের বিশেষত্ব হলো যে, তারা দেখিয়েছেন এই ফাঁদ থেকে উত্তরণও সম্ভবপর, তবে তার জন্য সামান্য প্ররোচনা বা উদ্বুদ্ধকরণের প্রয়োজন। এটা ‘বাইরের থেকে’ দিতে পারলে দরিদ্ররা ফাঁদ সম্পর্কিত জড় নিশ্চল অবস্থা কাটিয়ে উঠে উপরে ওঠার প্রেরণা পাবেন এবং এতে করে তাদের অবস্থানের নাটকীয় পরিবর্তন করা সম্ভব। ব্যানার্জি ও তার সহকর্মীদের পভার্টি ট্র্যাপ ও তার উত্তরণে ‘সামান্য প্ররোচনা’র তত্ত্ব দরিদ্র জনগোষ্ঠীর মন-মানসিকতাকে উপজীব্য করে গড়ে উঠেছে। মনের জড়তা কাটিয়ে ওঠা গেলে দারিদ্র্যের জড়তাও দ্রুত কাটিয়ে ওঠা সম্ভব। অভিজিৎ ব্যানার্জি ও তার সহকর্মীরা যুক্তি দেখিয়েছেন যে, মনের জড়তা কোনো মনোবিকলনের বিষয় নয়। বিভিন্ন ‘প্রতিষ্ঠানের’ বা ইনস্টিটিউশনের অনুপস্থিতির কারণে এই জড়তা স্থায়ী আকার ধারণ করে। এক্ষেত্রে তারা নানা উদাহরণ দেখিয়েছেন। দরিদ্ররা সঞ্চয় কম করে তা এই কারণে নয় যে, তাদের আয় কম বা সঞ্চয়ের তাৎপর্য তারা বোঝে না। কিন্তু তারা যেটুকু সঞ্চয় করতে পারে তা এতই সামান্য যে, কোনো ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান সেই সঞ্চয় আমানত হিসেবে নিতে আগ্রহী থাকে না। ফলে, হয় তাকে সেই ক্ষুদ্রতম সঞ্চয়কে বাঁশের খুঁটিতে রেখে দিতে হবে (চুরি যায় কি-না এ রকম নিত্য অনিশ্চয়তার মধ্যে), নতুবা তাকে সেই সঞ্চয় অতি তাড়াতাড়ি ভেঙে ফেলে ‘খেয়ে’ ফেলতে হবে। বিদ্যা-অর্জনের ক্ষেত্রেও এই যুক্তি খাটে। অতিদরিদ্ররা অক্ষরজ্ঞান, ধর্মীয় শিক্ষা ও প্রাথমিক শিক্ষার বাইরে তাদের ছেলেমেয়েদের পড়াতে চায় না তার কারণ বেশি ক্লাসে পড়ানোর ইচ্ছার সঙ্গে প্রাইভেট মাস্টারের কাছে পড়ানোসহ ‘বাড়তি খরচের’ বোঝা এসে পড়ে। তারা ছেলেমেয়েদের সম্ভাব্য যেসব স্কুলে পাঠাতে পারত, সেসব বিদ্যালয়ে শিক্ষাও এমন কোনো গুণে-মানের নয়। ফলে চাকরি ক্ষেত্রে শহরের অপেক্ষাকৃত ধনী ঘরের ছেলেমেয়েদের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় টেকার সম্ভাবনা গরিবদের ক্ষেত্রে খুবই কম। আর তাই গরিবদের প্রায়ই আগে বলতে শুনেছি, এত পড়িয়ে কী হবে, তার চেয়ে ক্ষেত-কৃষি বা নিদেনপক্ষে ছোটখাটো ব্যবসাটাই ভালো করে করুক। এইভাবে কম ও নিচু মানের শিক্ষাগ্রহণের মাধ্যমে বংশানুক্রমিকভাবে দারিদ্র্যে থেকে যাওয়ার ‘ফাঁদ’-এর সৃষ্টি হয়।
অভিজিৎ ব্যানার্জি ও তার সহকর্মীদের আগে এমনকি সমাজতত্ত্ববিদ অর্জুন আপ্পাদুরাই-এরও আগে (‘যিনি ক্যাপাসিটি টু এসপায়ার’ এই শব্দবন্ধটি চয়ন করেছিলেন এবং যাকে ভিত্তি করে দেবরাজ রায় প্রমুখেরা ‘এসপিরেশন ট্র্যাপ’ এর প্রবন্ধ লিখেছিলেন)- পভার্টি ট্র্যাপের অন্য একটি উৎসের প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করেছিলেন রবীন্দ্রনাথ। সেটি হচ্ছে ‘আকাঙ্ক্ষার দারিদ্র্য’ বা পভার্টি অব এসপিরেশন। এই চিন্তাটি তিনি দুই অর্থে ব্যক্ত করেছিলেন। একটি হচ্ছে, দরিদ্ররা দরিদ্র থেকে যাচ্ছে ‘ভরসার’ অভাবে, অনেক ক্ষেত্রে তার ‘আত্মশক্তি’র চিন্তাকে ভরসার দারিদ্র্য হিসেবেও পাঠ করা যেতে পারে। এ বিষয়ে তিনি লিখেছিলেন, ‘আমি একদিন একটি গ্রামের উন্নতি করতে গিয়েছিলুম। গ্রামের লোকদের জিজ্ঞাসা করলুম, ‘সেদিন তোদের পাড়ায় আগুন লাগল, একখানা চালাও বাঁচাতে পারলি নে কেন?’ তারা বলল, ‘কপাল!’ আমি বললেম, ‘কপাল নয় রে, কুয়োর অভাব। পাড়ায় একখানা কুয়ো দিস নে কেন?’ তারা তখনি বললে, ‘আজ্ঞে, কর্তার ইচ্ছে হলেই হয়।’ একথা বলার পর রবীন্দ্রনাথ আক্ষেপ করেছেন, ‘যাদের ঘরে আগুন লাগাবার বেলায় থাকে দৈব তাদেরই জল দান করবার ভার কোনো-একটি কর্তার।’ অর্থাৎ নিজের ওপরে ভরসা নেই লোক সাধারণের। সেখানে রয়েছে ‘কালেটিভ অ্যাকশনের’ সমস্যা। তার পেছনে রয়েছে ভরসার অভাব, যার মূলে উচ্চাকাঙ্ক্ষার দারিদ্র্য।
সিলেটে রবীন্দ্রনাথের ভাষণে আমরা স্পষ্ট করে ‘আকাঙ্ক্ষার দারিদ্র্য’-এর কথা শুনতে পাই- কিন্তু নিজের প্রতি ভরসা বা আত্মশক্তির থেকে ভিন্নতর অর্থে। আমি সেই ধরনেরই মানুষ হই বা হয়ে পড়তে পারি যেরকম মানুষ হওয়ার আকাঙ্ক্ষা করি। তাই ইংরেজি প্রবাদকে মাথায় রেখে বলা যায়, স্বপ্ন দেখার আগে দেখে নিতে হবে কীসের স্বপ্ন দেখব। কেননা বলা তো যায় না স্বপ্নটা সত্যও হয়ে যেতে পারে! রবীন্দ্রনাথ শিক্ষাগ্রহণের ক্ষেত্রে সেরকম একটি ‘স্বপ্ন দেখার’ সংকট দেখতে পাচ্ছেন। একেই তিনি আকাঙ্ক্ষার দারিদ্র্য বলছেন সিলেটে শ্রীহট্ট কলেজের ছাত্রদের সমাবেশে এক তাৎপর্যপূর্ণ ভাষণে। এই নিয়েই আজকের আলোচনা।
২. আজি হতে শতবর্ষ আগে
রবীন্দ্রনাথ সিলেট আসেন ১৯১৯ সালের ৪ নভেম্বর (১৯ কার্তিক) বুধবার সকালে। ৮ নভেম্বর সিলেট থেকে ত্রিপুরা রাজ-পরিবারের আমন্ত্রণে আগরতলা যান। সিলেটে অবস্থানকালে তিনি তিনটি বক্তৃতা দেন। প্রথমটি ৬ নভেম্বর সকালে টাউন হল প্রাঙ্গণে; প্রায় পাঁচ হাজার লোকের উপস্থিতিতে গণসংবর্ধনায়। সেখানে কবি যে ভাষণ দেন, তা ‘বাঙ্গালীর সাধনা’ নামে পরে ‘প্রবাসী’ পত্রিকায় প্রকাশিত হয়। একই দিন সন্ধ্যা ৭টায় টাউন হলের একটি সমাবেশে রবীন্দ্রনাথ আরো একটি বক্তৃতা দেন। ‘শ্রীহট্টে রবীন্দ্রনাথ’ প্রবন্ধের লেখক সুধীরেন্দ্রনারায়ণ সিংহ এ বিষয়ে লিখেছেন, সিলেটে ‘কবি যে-সমস্ত বক্তৃতা করেছিলেন তন্মধ্যে এইটিই সবচেয়ে উদ্দীপনাপূর্ণ এবং প্রাণস্পর্শী হয়েছিল। দুঃখের বিষয় অনুলিখিত না হওয়ার দরুন কবির এই অমূল্য বক্তৃতাটি চিরস্থায়ীরূপে রক্ষিত হল না।’ রবীন্দ্রনাথের তৃতীয় বক্তৃতাটি অনুষ্ঠিত হয় ৭ নভেম্বর শুক্রবার। সমাবেশটি হয় শ্রীহট্ট কলেজে। ছাত্ররা শোভাযাত্রা করে তাকে নিয়ে আসে সেখানে। উপস্থিত প্রায় চার হাজার লোকের অর্ধেকই ছিল ছাত্র। সেখানে রবীন্দ্রনাথ যে-ভাষণ দিয়েছিলেন সেটি পরে ‘আকাঙ্খা’ নামে ওই বছরেই ‘শান্তিনিকেতন’ পত্রিকায় (পৌষ ১৩২৬) প্রকাশিত হয়। এ ছাড়া আরো কয়েকটি স্থানে কবি সংক্ষিপ্ত ভাষণ দিয়েছিলেন। কিন্তু তা এখানে আমার মনোযোগের বিষয়বস্তু নয়। আমি এখানে মূলত শ্রীহট্ট কলেজে তার ভাষণের সুবাদে রবীন্দ্রনাথের উন্নয়ন-চিন্তার কয়েকটি দিকের প্রতি পাঠকের দৃষ্টি আকর্ষণ করব।
৩. মৌমাছির চাক
মার্কসের একটি কথা ছিল যে, অতি-দক্ষ মৌমাছির চাকের চেয়ে একজন স্বল্প-দক্ষ স্থপতিও অনেক বেশি সৃষ্টিশীল। কেননা, একজন স্থপতি গৃহ-নির্মাণের আগে একটি ছক এঁকে নেয়। সেই ছকটি আগে তার মাথায় আসে, তারপরেই কেবল সেই ছকটি বাস্তবায়ন করে। এই যে প্রথমে কল্পনা-শক্তির ফলে নির্মিত ডিজাইন, সেটি একটি ‘অ্যাবস্ট্রাকশন’ কেবল। কিন্তু এই বিমূর্ত চিন্তা করার সামর্থ্যের ভিত্তিতেই পরে ‘কনক্রিট’-এর ইমারত গড়ে ওঠে। অতি-দক্ষ চাক-নির্মাণে নিপুণ মৌমাছির দলের সেই অ্যাবস্ট্রাকশনের শক্তি নেই-তারা একই পথ দিয়ে ঘুরে-ফিরে একই ধরনের মৌচাক বানিয়ে থাকে একে অপরের দেখাদেখি। এখানে মৌমাছির শ্রম হচ্ছে পুনরাবৃত্তিমূলক শ্রম বা ‘রিপিটেটিভ লেবর’। পক্ষান্তরে, একজন স্থপতির শ্রম হচ্ছে ‘নন-রিপিটেটিভ লেবর’ :একেকটি নকশা অপরের থেকে আলাদা, এবং সেই অর্থে অভিপ্রায়ে-ডিজাইনে-পরিণামে যেকোন স্থপতির শ্রমই সৃষ্টিশীল চরিত্রের বা ‘ক্রিয়েটিভ’। মার্কসের মত রবীন্দ্রনাথও চেয়েছিলেন যাতে করে বিদ্যাপীঠগুলো সৃষ্টিশীলতার বিকাশের ক্ষেত্র হয়ে ওঠে। মার্কসের মতই তার এক্ষেত্রে মৌমাছির তুলনাই মনে এল :’যে সমাজে কিছুই ভাববার নেই, কিছুই করবার নেই, সমস্তই ধরাবাঁধা, সে সমাজ কি বুদ্ধিমান শক্তিমান মানুষের বাসের যোগ্য? সে সমাজ ত মৌমাছির চাক বাঁধবার জায়গা।’
আমাদের মনে, আমাদের বিদ্যায়তনে অসংখ্য এমন মৌমাছির চাক বাসা বেঁধেছে। এর মূলে রয়েছে ‘আকাঙ্খার দারিদ্র্য’। এটাই শ্রীহট্ট কলেজের সমাবেশে রবীন্দ্রনাথের ভাষণের মূলকথা। সেখানে কবি ইউরোপের সভ্যতার সাথে আমাদের সভ্যতার তুলনা করে বলেছেন, ইউরোপ-যে ইউরোপ হতে পেরেছে তা মুখস্থ বা মনস্থ বিদ্যার জোরে নয়, কেবল মাত্র আকাঙ্খার জোরে। সে আকাঙ্খা কিসের তাড়নায়? সে কি কেবল শুধু পরীক্ষায় পাস করে একটা উন্নত মানের চাকুরি জোগাড়ের জন্যে? নাকি, আরো বৃহত্তর কিছু অর্জনের আশায়? এখানে রবীন্দ্রনাথের উত্তর হলো, শুধু মানব-পুঁজি বা হিউম্যান-ক্যাপিটাল আহরণের মাধ্যমে ইউরোপ আজকের পর্যায়ে পৌঁছায় নি :
‘এই যুগে সমস্ত পৃথিবীতে য়ুরোপ শিক্ষকতার ভার পেয়েছে। কেন পেয়েছে? গায়ের জোরে আর সব হতে পারে কিন্তু গায়ের জোরে গুরু হওয়া যায় না। যে মানুষ গৌরব পায় সেই গুরু হয়। যার আকাঙ্খা বড় সেই ত গৌরব পায়। য়ুরোপ বিজ্ঞান ভূগোল ইতিহাস প্রভৃতি সম্বন্ধে বেশি খবর রেখেছে বলেই আজকের দিনে মানুষের গুরু হয়েছে এ-কথা সত্য নয়। তার আকাঙ্খা বৃহৎ, তার আকাঙ্খা প্রবল; তার আকাঙ্খা কোন বাধাকে মানতে চায় না, মৃত্যুকেও না। মানুষের যে বাসনা ক্ষুদ্র স্বার্থ সিদ্ধির জন্যে, সেটাকে বড় করে তুলে মানুষ বড় হয় না, ছোটই হয়ে যায়। সে যেন খাঁচার ভিতরে পাখীর ওড়া, তাতে পাখার সার্থকতা হয় না।’
৪. বৃহত্তর আকাঙ্ক্ষার উৎস :ইউরোপ বনাম উপনিবেশ
প্রশ্ন হচ্ছে, ইউরোপের মধ্যে এই বৃহত্তর ওড়ার আকাঙ্ক্ষা জাগল কেন? এর একটি সহজ উত্তর হতে পারত- ইউরোপ তার নিজের প্রয়োজনে পৃথিবীকে তার পদানত করতে চেয়েছিল। আর সে কারণেই সে ছুটে গেছে অনির্দিষ্ট গন্তব্যের সন্ধানে বিপদ-সংকুল সমুদ্র যাত্রায়, কখনো কলম্বাসের মত ভারত-আবিস্কারে বেরিয়ে উপনীত হয়েছে আমেরিকা মহাদেশে। কখনো ভাস্কো দা গামার মত উত্তমাশা অন্তরীপ পেরিয়ে কোচিনের উপকূলে। এলিজাবেথীয় যুগে স্যার ওয়াল্টার র্যালে প্রমুখ পরিব্রাজনার জন্য পুরস্কৃত হয়েছেন রাজ-তরফে। লক্ষ্য একটাই- বাণিজ্যের সম্প্রসারণ, আর সম্প্রসারণের আড়ালে উপনিবেশের স্থাপনা তথা সাম্রাজ্যের বিস্তার। ইউরোপে যখন এনলাইটেনমেন্টের দার্শনিকেরা প্রগতির মশাল জ্বেলেছেন, তা অন্তত :স্বল্প মেয়াদে মানব-মুক্তির জন্যে যতটা কাজ করেছে, তারচে বেশি করে ‘নিউ ওয়ার্ল্ডে’ উপনিবেশ স্থাপন করে ‘ওল্ড ওয়ার্ল্ড’-কে সমৃদ্ধশালী করার জন্যে। ‘আকাঙ্খা’ প্রবন্ধে ইউরোপের উচ্চকাঙ্ক্ষা ও বৃহত্তর জ্ঞানান্বেষণের পেছনে ক্ষমতালিপ্সুতার অন্তর্লীন যোগাযোগ রবীন্দ্রনাথের চোখে বড় হয়ে দেখা দেয়নি। সেটা হবে আরো পরে- দ্বিতীয় মহাযুদ্ধের প্রাক্কালে। ‘কালান্তর’-এর প্রবন্ধমালায় তার স্বীকৃতি রয়েছে। ১৯৩৭ সালে এসে কবি বলেছেন :
‘বর্তমান যুগ য়ুরোপীয় সভ্যতা-কর্তৃক সম্পূর্ণ অধিকৃত এ কথা মানতেই হবে। এই যুগ একটি বিশেষ উদ্যমশীল চিত্তপ্রকৃতির ভূমিকা সমস্ত জগতে প্রবর্তিত করেছে।’ এ কথা বলেই তিনি লক্ষ্য না করে পারলেন না :’আমি জানি, য়ুরোপীয় শিক্ষা ও সভ্যতার মহত্ত্ব সম্বন্ধে সুতীব্র প্রতিবাদ জানাবার দিন আজ এসেছে। এই সভ্যতা বস্তুগত ধন-সঞ্চয়ে ও শক্তি-আবিস্কারে অদ্ভুত দ্রুতগতিতে অগ্রসর হচ্ছে। …মানুষের দুরাকাঙ্খাকে এমন বৃহৎ আয়তনে, এমন প্রভূত পরিমাণে, এমন সর্ববাধাজয়ী নৈপুণ্যের সঙ্গে জয়যুক্ত করতে কোন দিন কোন মানুষ সক্ষম হয় নি।’ আবার এ-ও ঠিক যে, ‘হিংস্ট্রতা, লুব্ধতা, রাষ্ট্রিক কূটনীতির কুটিলতা পাশ্চাত্য মহাদেশ থেকে যেরকম প্রচণ্ড মূর্তি ধরে মানুষের স্বাধিকারকে নির্মমভাবে দলন করতে উদ্যত হয়েছে ইতিহাসে এমন আর কোন দিন হয় নি।’ ১৯৩৭ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তনী ভাষণে রবীন্দ্রনাথ এই কথাগুলো বলেছিলেন। তাতে দেখা যাচ্ছে, আকাঙ্ক্ষার নেশার ইতিবাচক ও নেতিবাচক দুই দিক সম্পর্কেই রবীন্দ্রনাথ সমানভাবে সজাগ ছিলেন।
[ক্রমশ]