বঙ্গবন্ধুর গণতান্ত্রিক সমাজতন্ত্র: বাহাত্তরের সংবিধান ও সমতামুখী সমাজের আকাঙ্ক্ষা

পর্ব :: ১০৯
[পূর্বে প্রকাশিতের পর]


কর্নেল হামিদ এ রকম একটি নির্মম ঘটনার অনুপুঙ্খ বিবরণ দিয়েছেন ১৯৭৭ সালের বগুড়া সেনানিবাসের বিদ্রোহকে উপলক্ষ করে। আমি সেটি তুলে ধরছি-
”এবার শুরু হলো জিয়ার শুদ্ধি অভিযান। বিদ্রোহী বিমান ও সৈনিকদের পাকড়াও করে তাদের নির্মমভাবে ঢালাও শাস্তি প্রদানের ব্যবস্থা করা হলো। সংক্ষিপ্ত বিচারের সুবিধার্থে মার্শাল ল’ আইন করে বিশেষ সামরিক আদালত গঠন করা হলো। এই সময় জেনারেল এরশাদ ছিলেন ডেপুটি চিফ। তারই তত্ত্বাবধানে এসব সংক্ষিপ্ত ট্রায়াল সুষ্ঠুভাবে দ্রুতগতিতে সম্পন্ন করার ব্যবস্থা করা হয়। শুরু হলো ত্বরিতগতিতে বিচারের নামে প্রহসনের পালা। মাত্র কয়েক দিনের মধ্যে কয়েক শত সৈনিক ও বিমান সেনাদের ফাঁসির আদেশ দেওয়া হলো। সেনা বা বিমানবাহিনীর কোনো প্রতিষ্ঠিত আইনকানুন এ ক্ষেত্রে মেনে চলা হয়নি। পাঁচটি কারাগারে একসঙ্গে ৮-১০ জন করে পর্যায়ক্রমে ফাঁসিতে ঝোলানো হয়। ফাঁসি ছাড়াও এলোপাতাড়ি ফায়ারিংয়ে মারা যায় শত শত। ফায়ারিং স্কোয়াডেও বহুজনকে গুলি করে হত্যা করা হয়। এ ছাড়া ঢালাওভাবে গ্রেপ্তারের পর বহু সৈনিকের মৃত্যু ঘটে অমানবিক নির্যাতনে। ৩ থেকে ৫ অক্টোবর পর্যন্ত প্রতি রাতে সেনা ও বিমানবাহিনী ব্যারাক থেকে সৈনিকদের ধরে ধরে নিয়ে যাওয়া হয় নির্যাতন ক্যাম্পে, তারা আর ফিরে আসেনি। ক্যান্টনমেন্টজুড়ে হাহাকার। কান্নার রোল। কত সৈনিক, বিমান সেনা ফাঁসির কাষ্ঠে ঝুলল, কতজন প্রাণ হারাল, ‘গুপ্তহত্যার’ শিকার হলো, এর কোনো হিসাব নেই। বিমানবাহিনীর কার্যক্রম ক্ষমতা নেমে আসে প্রায় শূন্যের কোঠায়। সরকারি হিসাব মতেই শুধু দুই মাসে ফাঁসিতে লটকানো হয় ১১৪৩ জন সৈন্যকে, যার মধ্যে বিমান সেনাই ছিল ৫৫১ জন। হতভাগ্য সৈনিকদের লাশ পর্যন্ত তাদের আত্মীয়স্বজনকে দেওয়া হয়নি। তারা আজও খুঁজে ফিরে তাদের প্রিয়জনকে। কোথায় যে এত লাশ গুম করা হলো, তাও এক রহস্য। এটা ছিল একটি পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড, নাকি অভ্যুত্থান, তা এখনও নির্ণয় করা সম্ভব হয়নি। অনেকেরই ধারণা, এটা ছিল পূর্বপরিকল্পিত এক নিধনযজ্ঞ। মধ্যরাতে সিগন্যাল লাইন্স ও কুর্মিটোলা এয়ারফোর্স ব্যারাকে কে বা কারা স্লোগান দিয়ে আহক্ষান জানিয়ে শুরু করে বিদ্রোহ, তা আজও রহস্য।
পাক-ভারতের ইতিহাসে কোনো সামরিক অভ্যুত্থানে এত লোকের ফাঁসি, হত্যা, প্রাণহানি, জেল আর কখনও ঘটেনি। কী আশ্চর্য! এতবড় মর্মান্তিক ঘটনার কখনও নিরপেক্ষ তদন্ত হয়নি। কেউ দাবিও করেনি। কী বিচিত্র এই দেশ!”

আগেই বলেছি, বঙ্গবন্ধু ও তার বাকশালের শত্রুদের কয়েকটি ভাগে বিভক্ত করা যায়। অতিদক্ষিণপন্থি স্বাধীনতাবিরোধী, অতিবামপন্থি নকশাল ধারার, জাসদ-গণবাহিনী, জাতীয়করণের ফলে ক্ষিপ্ত ধনিকগোষ্ঠী, সুবিধাবঞ্চিত মধ্যবিত্ত, পাকিস্তানপন্থি, চীনপন্থি, মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের অনুসারী-বিশাল একটি স্পেকট্রাম বঙ্গবন্ধু ও তার সরকারের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত ছিল। এর মধ্যে সবার আগে ছিল মুক্তিযুদ্ধের শত্রুপক্ষ, যারা কোনোমতেই বাংলাদেশের সৃষ্টিকে মেনে নিতে পারে নি। এর সঙ্গে যুক্ত হয় ইসলামিক রিপাবলিকের বদলে ধর্মনিরপেক্ষতার নীতির ঘোষণা। এর গুরুত্ব শুধু দক্ষিণপন্থি পত্রিকা ইত্তেহাদ থেকেই উচ্চারিত হয়নি, এর সঙ্গে কোরাস মিলিয়েছিল বিলেত-আমেরিকার মেইনস্ট্রিম পত্রিকারাও। কর্নেল ফারুকের বয়ান দিয়ে ১৯৭৯ সালের ১৫ আগস্টে প্রকাশিত ‘ইত্তেহাদ’ পত্রিকায় বঙ্গবন্ধুকে সরাসরি ইসলামবিরোধী হিসেবে অভিহিত করা হয়েছিল :’সবশেষে মুজিব তাহার ঈমান অর্থাৎ পবিত্র ইসলামের সাথে বেঈমানী করেন।’ ফার ইস্টার্ন ইকোনমিক রিভিয়্যুর ২৯ আগস্ট ১৯৭৫-এর সংখ্যায় যা লেখা হয়েছে তার মানে দাঁড়ায় যে মুজিবের ‘সাম্প্রদায়িক’ কর্মকাণ্ডের জন্যই পাকিস্তান ভেঙে যায়। উদ্ধৃতিটির কুযুক্তিটি একটু শোনা যাক আবার :’পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রিত্ব লাভের জন্য সূক্ষ্ণ পদক্ষেপ নিতে শেখ ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছেন… তিনি বিশ্বাস করতেন না যে, পাকিস্তানের ভাঙন অবশ্যম্ভাবী ছিল। দেশের ভাঙনকে ঠেকানোর কোনো পদক্ষেপ নিতে তিনি যেমন ব্যর্থ হয়েছেন, তেমনি ব্যর্থ হয়েছেন এমন কোনো সদিচ্ছা দেখাতে, যা পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর ২৫ মার্চের আকস্মিক অভিযান নিবৃত্ত করতে পারত। এরপর যে ট্র্যাজেডি শুরু হলো তার জন্য পাকিস্তান সামরিক বাহিনী ও ভুট্টো নিঃসন্দেহে দায়ী। তাহলেও বলতে হবে যে, শেখের বাগ্মিতার ফলেই সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা ও রক্তপাত শুরু হয় এবং তাতেই পশ্চিম পাকিস্তানের একান্ত অনুগতরা নৃশংস অভিযান আরম্ভ করার অজুহাত পায়।’ দক্ষিণপন্থি সমালোচনার আরেকটি ধারা সরাসরি ধর্মনিরপেক্ষতাকে সংবিধানের অংশ করাকে বঙ্গবন্ধুর মৃত্যুর কারণ হিসেবে দাঁড় করায়। ১৭ আগস্ট ১৯৭৫-এর সানডে টাইমস পত্রিকায় এন্থনি মাসকারেনহাস এরকম যুক্তিজাল বিস্তার করেছেন :
‘মুজিবের পতনের দ্বিতীয় প্রধান কারণ হচ্ছে ১৯৭২ সালে রচিত বাংলাদেশ শাসনতন্ত্রে ইসলামকে রাষ্ট্রীয় ধর্মের মর্যাদা থেকে সরিয়ে দেওয়া। ইসলামের মর্যাদার এই অবমাননা অনিশ্চয়তাসূচক প্রমাণিত হয়েছে।…এই পটভূমিতে মুজিবের অনুসৃত ধর্মনিরপেক্ষতার নীতি বাংলাদেশের জনগণের বৃহত্তম অংশকে আহত করেছিল। তাই নতুন প্রেসিডেন্ট খন্দকার মুশতাক আহমেদ বাংলাদেশকে ইসলামিক রিপাবলিক ঘোষণা করে রাতারাতি জনসমর্থন লাভ করেছেন।’
বিলেতের গার্ডিয়ান পত্রিকা ১৬ আগস্ট ১৯৭৫-এর সংখ্যায় একই অভিমত তুলে ধরেছিল। মার্টিন ওয়ালকট সেখানে লিখেছেন :”তাছাড়া আদর্শগত প্রশ্নও ছিল। মুজিব নতুন জাতীয় দলের কেন্দ্রীয় কমিটিতে অনেক মস্কোপন্থি রাজনীতিবিদকে স্থান দিয়েছিলেন, ফলে আওয়ামী লীগের ভেতরে ও বাইরে প্রাচীনপন্থি মুসলমানগণ বিক্ষুব্ধ হয়ে পড়েন। এটা তাৎপর্যপূর্ণ যে, নতুন শাসকরা বাংলাদেশকে ‘ইসলামিক রিপাবলিক’ ঘোষণা করেছেন।” বস্তুত, দলিল-পত্র ঘাটলে দেখা যায় যে দেশের ভেতরে ও বাইরের চরম দক্ষিণপন্থি ও চরম বামপন্থি শক্তি অবশেষে কৌশলগত একবিন্দুতে মিলিত হয়েছিল-সেটা হলো তীব্র ভারত ও রাশিয়ার বিরোধিতা। তাদের যুক্তি ছিল :বঙ্গবন্ধু ১৫ আগস্টে নিহত হয়েছেন তার কারণ তিনি নিজেই; তার সরকার এবং তার প্রস্তাবিত বাকশাল ব্যবস্থা ছিল ঘোরতরভাবে রুশ-ভারতপন্থি। এই ‘ডিসইনফরমেশন ওয়ার’ আমাদের দৃষ্টি আকর্ষণ না করে পারে না। বঙ্গবন্ধুর মৃত্যুর পর এনায়েতুল্লাহ খান ‘শেখ মুজিবের উত্থান পতন’ প্রবন্ধে তার ভাষায় বাংলাদেশের ‘মধ্যবিত্ত মানসের স্বাভাবিক প্রতিক্রিয়া’ ব্যক্ত করেছেন নিল্ফেম্নাক্ত ভাবধারায়:
”বিগত সাড়ে তিন বছর বাংলাদেশের দুঃখী জনগণ এই অবাক প্রদর্শনীর মৌন দর্শক ছিলেন। তাদের নিঃশব্দ আর্তিতে ধ্বনিত হচ্ছিল কতিপয় লুটেরার অট্টরোল। আর তাতে ইন্ধন যুগিয়েছে একটি জাতীয় ও আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্রকারী চক্র-যারা সমাজতন্ত্রের ছলে, মৈত্রীর ছদ্মবেশে এবং আন্তর্জাতিকতাবাদের আবডালে বাংলাদেশকে বৈদেশিক স্বার্থের অবারিত লীলাক্ষেত্রে পরিণত করবার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত ছিল। অন্যদিকে বাঙালি বুর্জোয়ার নিকৃষ্টতম মেরুদণ্ডবিহীন মুৎসুদ্দীকুল দেশের অর্থনৈতিক ও সামাজিক ভিত্তি ধ্বংসকল্পে পরদেশী বাণিজ্যিক পুঁজির সেবা-দানের ভূমিকায় নিয়োজিত ছিল। এরই সাংগঠনিক রূপ ছিল ‘দেশপ্রেমিক'(?)দের ত্রিদলীয় ঐক্যজোট। এই ঐক্যজোটের নীলনকশা পরিশেষে একদলীয় শাসন প্রবর্তনের মাধ্যমে রূপায়িত হয়। ফলতঃ বাংলাদেশ একদিকে সামাজিক সাম্রাজ্যবাদের প্রভাববলয়ে আবর্তিত হয় এবং অন্যদিকে পূর্ব ভারতের ধ্বংসোন্মুখ শিল্পকেন্দ্রের প্রায় ঔপনিবেশিক পশ্চাদভূমিতে পরিণত হয়। দেশের উৎপাদিকা শক্তিকে সুপরিকল্পিতভাবে ধ্বংস করবার ইতিহাস বিংশ শতাব্দীতে বিরল। অষ্টাদশ শতকের ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির আমলের লুটেরা বাণিজ্যিক পুঁজির অবাধ লুণ্ঠনের সঙ্গে এই প্রক্রিয়ার সাদৃশ্য লক্ষণীয়।”
বাংলাদেশ সম্পর্কে এনায়েতুল্লাহ খানের উপসংহার ছিল যে এটি নিক্ষিপ্ত হয়েছে যুগপৎ ‘সামাজিক সাম্রাজ্যবাদের’ (অর্থাৎ রুশ প্রভাববলয়ের) এবং ভারতীয় ‘সম্প্রসারণবাদের’ ফাঁদে। মার্কিনপন্থি লিবারেল ও চীনপন্থি অতিবাম মহলে সে সময়ে এটি চালু থিসিস ছিল। এই মূল্যায়ন সমর্থন করেছিল কলকাতা থেকে প্রকাশিত চীনঘেঁষা বামপন্থি পত্রিকা ফ্রনটিয়ার। এর ১৯৭৫ সালের ১ ফেব্রুয়ারি সংখ্যায় দেখতে পাই অনুরূপ প্রচারণা :’…ভারতীয় হস্তক্ষেপের ফলে যারা বাংলাদেশে ক্ষমতায় আসীন হলো তাদের মতো স্বার্থপর নেতৃত্ব কোনো দেশে সত্যিকার জাতীয় মুক্তি আন্দোলনের পর আর দেখা যায়নি। দেশটি যে অর্থনৈতিক ধ্বংসের দিকে এগিয়ে যাবে, তা অবশ্যম্ভাবী ছিল। বন্ধু রাষ্ট্রগুলোর সাহায্য-সহায়তা বাংলাদেশের কোনো কাজে আসেনি। আরামদায়ক বন্দিদশা থেকে শেখ মুজিব প্রত্যাবর্তনের পর দেশের অবস্থা মন্দ থেকে মন্দতর হয়েছে।’ ফ্রন্টিয়ার যে এরকম অভিমত রাখবে তাতে বিস্ময়ের কিছু নেই। সমর সেন সম্পাদিত পত্রিকাটির মতাদর্শ ছিল তখনকার মাওবাদ তথা নকশালবাড়ির পথ। এজন্যেই ১৯৭৫ সালের বাকশাল প্রবর্তনকে তারা মনে করেছেন প্রকৃত বিপ্লবীদের বিরুদ্ধে নেওয়া পদক্ষেপ বলে :’ইতিমধ্যে দ্বিতীয় বিপ্লবের রাজনীতি স্পষ্টতর হয়ে উঠেছে। এর প্রধান দিক হচ্ছে বাংলাদেশের বামপন্থি বিপ্লবীদের বিরুদ্ধে সর্বাত্মক সংগ্রাম।’ অতিডানপন্থি ইত্তেহাদ গ্রুপ, এনায়েতুল্লাহ খানের লিবারেল সুরের হলিডে, আর অতিবামপন্থি ফ্রন্টিয়ার একই সুরে তখন কথা বলেছে। তিন ধারাই তখন মিলে যাচ্ছিল মুজিব-সরকার উৎখাতের যৌথ প্রযোজনায়। ১৯৭৪-৭৫ সালে পাশ্চাত্য থেকে প্রকাশিত মূলধারার পত্র-পত্রিকা ঘাঁটলে আজকের যুগে যেটা ‘হাইব্রিড ওয়ার’ বলে অভিহিত হচ্ছে (যেখানে প্রথাগত যুদ্ধের সঙ্গে অপপ্রচার ও মনস্তাত্ত্বিক যুদ্ধ জড়িত থাকে) তার প্রাথমিক লক্ষণগুলো পাওয়া যায়। এই মনস্তাত্ত্বিক যুদ্ধ চালানোর জন্য পূর্ণ সত্য বা পূর্ণ মিথ্যা কোনোটিই বলার দরকার নেই। এর জন্য ‘অর্ধ-সত্য’ বলাই যথেষ্ট-তাতে করে সত্য বলার ভানও করা যায়, আবার ডিসইনফরমেশন ক্যামপেইনও দিব্যি চালানো যায়। এনায়েতুল্লাহ খান-ফ্রন্টিয়ার বলছিলেন যে মুজিব বামপন্থি বিপ্লবীদের ধ্বংস করতে চাচ্ছেন। এবার আগস্ট অভ্যুত্থানের কারণ বলতে গিয়ে গার্ডিয়ান (১৬ আগস্ট ১৯৭৫) লিখল যে, বঙ্গবন্ধুকে আসলে হত্যা করা হয়েছে তার বামপন্থি বিপ্লবী আদর্শের কারণেই। উদ্ধৃতিটি মনোযোগের দাবি রাখে। প্রগতির পথে চলার একপর্যায়ে তিনি শহরের মধ্যবিত্ত শ্রেণি ও সেনাবাহিনীকে চটিয়ে দিয়েছিলেন-সেটাই তার নিহত হওয়ার কারণ। ‘মুজিব নিজেই দায়ী’-অন্য কাউকে এর জন্য দায়ী করা চলে না : ‘কিন্তু নিজের ক্ষমতা বজায় রাখার জন্য এবং দেশে কিছুটা প্রগতি আনার জন্য তার শেষ পদক্ষেপেই তার পতন ডেকে এনেছে। বামপন্থি আদর্শে তিনি একনায়কতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেছিলেন, যার ফলে মধ্যবিত্ত শ্রেণি ও সেনাবাহিনী তার প্রতি বিরুদ্ধভাবাপন্ন হয়ে পড়েছিল। অথচ তাদের সমর্থনেই তিনি প্রথম ক্ষমতায় এসেছিলেন। এ অবস্থায় মুজিব নতুন ব্যবস্থা গ্রহণের পথ খুঁজছিলেন। তাতে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি ও অন্য মস্কোপন্থি দলগুলোও উৎসাহ জুগিয়েছিল।’
যুক্তি হিসেবে বলা হলো যে, গ্রামে বহুমুখী সমবায় করার সমাজতান্ত্রিক নীতিই মুজিবের সর্বনাশ ডেকে এনেছে:
‘মে মাসে মুজিব ঘোষণা করলেন যে, গ্রামে গ্রামে বাধ্যতামূলকভাবে কৃষি সমবায় গঠন করা হবে, গ্রামাঞ্চলে প্রশাসনিক পরিবর্তন করা হবে এবং জাতীয় দল গ্রাম পর্যন্ত সম্প্রসারণ করা হবে। সংক্ষিপ্ত হলেও এ কর্মসূচি আওয়ামী লীগ, সেনাবাহিনী, পেশাদার ও মধ্যবিত্ত শ্রেণির অনেককেই আতঙ্কিত করে তোলার পক্ষে যথেষ্ট ছিল।’
অর্থাৎ দেখা যাচ্ছে, গার্ডিয়ানের প্রবন্ধ অনুযায়ী বঙ্গবন্ধুর বামপন্থি হয়ে ওঠাই শেষ পর্যন্ত তার কাল হয়ে দাঁড়িয়েছিল।
[ক্রমশ]

Leave a Reply

Fill in your details below or click an icon to log in:

WordPress.com Logo

You are commenting using your WordPress.com account. Log Out /  Change )

Twitter picture

You are commenting using your Twitter account. Log Out /  Change )

Facebook photo

You are commenting using your Facebook account. Log Out /  Change )

Connecting to %s