পর্ব ::১০১
[পূর্বে প্রকাশিতের পর]
শোষণমুক্ত সমাজের জন্য পূর্বাপর আকাঙ্ক্ষা এবং সে ধরনের সমাজ গড়ার জন্য একটি প্রায়োগিক ও বাস্তবোচিত দৃষ্টিভঙ্গি থেকে একথা বলা চলে যে শেখ মুজিব পুঁথিপড়া মার্কসবাদ বা রাশিয়া-চীন-পূর্ব ইউরোপের প্রথাগত সমাজতন্ত্রের ছকের বাইরে অন্য ধরনের সমাজতন্ত্র, সমাজবাদ বা সামাজিক ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার কথা ভেবেছিলেন। ‘বাংলাদেশের বৈশিষ্ট্যমণ্ডিত সমাজতন্ত্র’ এই কথাটা মুজিব বলেছিলেন অস্টিন রবিনসনের প্রশ্নের প্রত্যুত্তরে। এই কথাটি তিনি আরও অনেক ভাষণে উল্লেখ করেছিলেন। যেখানে ঘুরে-ফিরে এসেছে ক্রমান্বয়ে চলার নীতি বা গ্রাজুয়ালিজম। দেশের মানুষের মন-মানসিকতা ও সমসাময়িক উন্নয়ন-সমস্যার সঙ্গে মানানসই অর্থনৈতিক কাঠামোয় সমতামুখী আকাঙ্ক্ষাকে বাস্তবায়ন করার তাগিদ। এক্ষেত্রে কোনো আগাম ব্লু-প্রিন্ট তার সামনে সেদিন ছিল না। সে ধরনের কোনো নকশা বা রোডম্যাপ সেদিন কেউই দিতে পারেননি। না দার্শনিকেরা, না অর্থনীতিবিদেরা, না রাজনীতিবিদেরা। যারা সেদিন সরকারের বাইরে থেকে ‘আরও সমাজতন্ত্র’, ‘বৈজ্ঞানিক সমাজতন্ত্র’, ‘মার্কসবাদী-লেনিনবাদী সমাজতন্ত্র’ এসব স্লোগান তুলে চারদিক প্রকম্পিত করছিলেন-কোনো বিশেষ দল, ব্যক্তি বা ধারার নাম না ধরেই বলছি-তারাও বস্তুতপক্ষে জানতেন না ১৯৭২-৭৫ পর্বে তারা আসলে কী চান এবং কীভাবে তাদের আরাধ্য সমাজ-অর্থনীতি প্রতিষ্ঠা পাবে।
এই প্রেক্ষাপটেই দেখতে হবে ১৯৭২-৭৫ কালপর্বে অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার প্রচেষ্টা এবং দ্বিতীয় বিপ্লবের সূচনাকে। এই কালপর্বের মূল্যায়ন করা এই রচনার পরিধির বাইরে। অর্থনীতিবিদদের মধ্যে অনেকেই ইতোপূর্বে লিখে গেছেন, যার মধ্যে প্রথমেই আসবে অধ্যাপক নুরুল ইসলামের পথিকৃৎধারার গ্রন্থসমূহ-যার মধ্যে রয়েছে ‘ডেভেলপমেন্ট প্লানিং ইন বাংলাদেশ :এ স্টাডি ইন পলিটিক্যাল ইকোনমি’ (১৯৭৯); ‘মেকিং অফ এ নেশন, বাংলাদেশ :অ্যান ইকোনমিস্ট’স টেল’ (২০০৩)। অধ্যাপক রেহমান সোবহান ও অধ্যাপক মোজাফফর আহমদ যৌথভাবে লিখেছিলেন ‘পাবলিক এন্টারপ্রাইজ ইন অ্যান ইন্টারমিডিয়েট রিজিম :এ স্টাডি ইন দ্য পলিটিক্যাল ইকোনমি অফ বাংলাদেশ’ (১৯৮০); ‘আনট্রাংকুইল রিকালেকশনস :নেশন বিল্ডিং ইন পোস্ট-লিবারেশন বাংলাদেশ’ (২০২১)। অধ্যাপক আনিসুর রহমান ও অধ্যাপক আজিজুর রহমান খান ১৯৭২-৭৫ পর্ব নিয়ে বিভিন্ন সময়ে লিখে গেছেন যার থেকে তৎকালীন সময়ের একটি প্রতিচ্ছবি খুঁজে পাওয়া যায়। এছাড়াও বিদেশি অর্থনীতিবিদেরা সে সময়ের বাংলাদেশের উন্নয়ন-সমস্যা নিয়ে লিখে গেছেন। তাদের মধ্যে যারা বই লিখেছেন বা বই সম্পাদনা করেছেন সেই কাতারে আগে উল্লিখিত ই.এ.জি. রবিনসন ও কীথ গ্রিফিনের সম্পাদিত বই, ইউস্ত ফাল্যান্ড ও জে.আর. পারকিনসনের ‘বাংলাদেশ :দ্য টেস্ট কেইস অব ডেভেলপমেন্ট’; ফেল্ডম্যানের ‘আনহ্যাপি ইস্ট পাকিস্তান :এ সার্ভে অফ ইন্টার-রিজিওনাল ইনইকুয়ালিটি ইন পাকিস্তান (১৯৭১); ওয়াল্টার ফেলকন ও গুস্তাভ পাপানেকের সম্পাদিত ‘ডেভেলেপমেন্ট পলিসি-দ্য পাকিস্তানি এক্সপেরিয়েন্স’ (১৯৭১), ইত্যাদি। এর সঙ্গে অবশ্যই বিবেচনায় নিতে হবে ‘প্রথম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনার দলিল’ (১৯৭৩) এবং সমসাময়িক পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত অভিমত। এসবের সার-সংক্ষেপ করে একটি চমকপ্রদ পুস্তক রচিত হতে পারে, কিন্তু সেটা করা বর্তমানে আমার উদ্দেশ্য নয়। আমি শুধু তৎকালীন কয়েকটি ইস্যুর মধ্যেই আমার আলোচনা সীমাবদ্ধ রাখব।
বঙ্গবন্ধুর ‘দ্বিতীয় বিপ্লব’ কর্মসূচি দিয়েই আমি এই পর্বের আলোচনা শুরু করতে চাই। ১৯৭৫ সালের ২৫ জানুয়ারি বাহাত্তরের সংবিধানে চতুর্থ সংশোধনী আনা হয়। এর সুবাদে সংসদীয় পদ্ধতির সরকারের পরিবর্তে রাষ্ট্রপতি শাসিত ব্যবস্থা প্রবর্তন করা হয় (দল হিসেবে বাংলাদেশ কৃষক শ্রমিক আওয়ামী লীগ বা বাকশাল গঠিত হয় আরও কয়েক মাস পরে-১৯৭৫ সালের ৭ জুন)। এই পরিবর্তন সম্পর্কে বঙ্গবন্ধু ২৫ জানুয়ারির ভাষণে বলেছিলেন যে, পুরো ব্যবস্থাকে ঢেলে সাজাতে এবং একটি সঠিক দিকনির্দেশনা দিয়ে দ্রুতগতিতে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য এই পদ্ধতিগত পরিবর্তন তখন আবশ্যক হয়ে পড়েছিল। এটা শুধু রাজনৈতিক শক্তির সুবিধের জন্য নয়-কেননা সংসদে তখন আওয়ামী লীগেরই দুই-তৃতীয়াংশের বেশি সংখ্যাগরিষ্ঠতা। মুজিব চাইলে সংসদের মাধ্যমে সেদিন ব্রুট মেজরিটি প্রতিষ্ঠা করতে পারতেন। এটা ছিল রাষ্ট্রের সক্ষমতা-অর্জনের প্রয়োজনে এবং সমাজকে অবক্ষয়ের দ্বারপ্রান্ত থেকে ফিরিয়ে আনার জন্যে একটি জরুরি উদ্যোগ। বঙ্গবন্ধু ২৫ জানুয়ারির ভাষণে বারবার শাসন-পদ্ধতির ‘সাময়িক পরিবর্তনের’ জন্য দুঃখ প্রকাশ করেছেন। বাধ্য হয়ে দেশের বৃহত্তর স্বার্থেই এটা করতে হচ্ছে- এটা সকলকে মনে করিয়ে দিয়েছেন। ১৯৭৫ সালের ২৫ জানুয়ারির ভাষণে মুজিব সমাজ-রাষ্ট্রের নানা উপসর্গের কথা তুলেছেন। তার সোজা-সাপ্টা কথা-এ ব্যবস্থা আর চলতে দেওয়া যায় না। একটি পরিবর্তন আসন্ন। হয় প্রগতিশীলেরা এই পরিবর্তন করবে, নয়তো প্রতিক্রিয়াশীলেরা পরিবর্তন আনতে চাইবে। বঙ্গবন্ধুর বয়ানেই সেটা শোনা যাক।
“এই ‘করাপশন’ যারা করে, তারা কারা? আমরা ৫ পারসেন্ট শিক্ষিত সমাজ। আমরা হলাম দুনিয়ার সবচেয়ে বেশি করাপ্ট ‘পিপ্ল’। আর আমরাই করি বক্তৃতা। আমরা লিখি খবরের কাগজে।…আজ আমি যা করেছি, তা বহু দুঃখে করতে হয়েছে। বহুদিন পর্যন্ত বিবেকের দংশনে জ্বলেছি। আপোষ করি নাই কোন অন্যায়ের সাথে। মাথা নত করি নাই কোন অন্যায়ের কাছে।…অর্থ আনবো, সেই অর্থ চুরি করে খাবে। টাকা আনবো, তা বিদেশে চালান দেবে। এ আর সহ্য করা যায় না। এসব যারা করে, বাংলার মাটি থেকে তাদের উৎখাত করতে হবে। এর জন্য আমি ওয়াদাবদ্ধ।…স্পিকার সাহেব, আজ আমাদের কি অবস্থা! আজ আমাদের পপুলেশন কন্ট্রোল করে উৎপাদন বৃদ্ধি করতে হবে। ভিক্ষুকের জাতের কোন ইজ্জত আছে? দুনিয়ায় জীবনভর ভিক্ষা পাওয়া যায়? আমাদের স্বয়ংসম্পূর্ণ হতে হবে। সেজন্য কঠোর পরিশ্রমের প্রয়োজন রয়েছে। কাজ করবো না, ফাঁকি দেব। অফিসে যাব না, ফাঁকি দেব। ফ্রি স্টাইল। কিন্তু ফ্রি স্টাইল মানে গণতন্ত্র নয়। অফিসে ১০টার সময় যাওয়ার কথা বলে ১২টার আগে যাব না। পাঁচটায় ছুটি হলে ৩টায় ফিরে আসতে হবে। কারখানায় কাজ করবো না, কিন্তু পয়সা দিতে হবে। আমাদের শ্রমিকরা খারাপ নয়। আমাদের শ্রমিকরা কাজ করতে চায়। আমাদের কৃষকরাও আজকে কাজ করছে। ফুড প্রোডাকশন এগিয়ে গেছে। অথচ আমরা ব্যাঘাত সৃষ্টি করি, আমরা ষড়যন্ত্র করি। আমরাই ধোকা দেই। আমরাই লুট করে খাই। জমি দখল করে নেই। এসকল কাজ করে কারা? আমরা, এই দেশের তথাকথিত লেখাপড়া জানা মানুষ।…কলে কারখানায়, খেত-খামারে আমাদের প্রোডাকশন বাড়াতে হবে। তা না হলে দেশ বাঁচতে পারে না। কি করে আমরা বাঁচবো, যদি ধরুন, বছরে ২০ লক্ষ টন খাবার ডেফিসিট হয়? এই তিন বৎসর পর্যন্ত গড়ে এর চেয়ে অনেক বেশি খাবার আনতে হয়েছে। প্রথম আনতে হয়েছে ত্রিশ লক্ষ টন। ধরুন, যদি প্রত্যেক বৎসর গড়ে ৫৪০ লক্ষ মণ খাদ্য আনতে হয় বিদেশ থেকে, কোথায় পাওয়া যাবে, কে দেবে? জাহাজ ভাড়া কোথায়? বিশ থেকে ত্রিশ লক্ষ টন প্রতি বছর আমাদের আনতে হয়েছে বিদেশ থেকে এই তিন বৎসরে।…কিন্তু বন্ধু রাষ্ট্ররা কতকাল দেবে? এদেশে মানুষ বাড়ছে। বৎসরে ত্রিশ লক্ষ লোক বাড়ে। আজকে আমাদের তাই ‘পপুলেশন প্ল্যানিং’ করতে হবে। ‘পপুলেশন কন্ট্রোল’ করতে হবে। না হলে বিশ বৎসর পরে ১৫ কোটি লোক হবে যাবে। আর পঁচিশ বৎসর পরে? চুয়ান্ন হাজার স্কোয়ার মাইল জায়গায় এত লোক বাঁচতে পারবে না। যত ক্ষমতাই থাকুক, বাঁচার উপায় নাই। অতএব, ‘পপুলেশন কন্ট্রোল’ আমাদের করতেই হবে। সেজন্য ডেফিনিট স্টেপ আমাদের নিতেই হবে বাংলাদেশে।…আমরা কলোনি ছিলাম। আমরা কোন জিনিসে ‘সেল্ফ সাফিসিয়েন্ট’ নই। আমরা খাবারে ‘সেল্ফ সাফিসিয়েন্ট নই, কাপড়ে ‘সেল্ফ সাফিসিয়েন্ট’ নই, তেলে ‘সেল্ফ সাফিসিয়েন্ট’ নই, ঔষধে আমরা ‘সেল্ফ সাফিসিয়েন্ট’ নই। আমাদের ‘মেটিরিয়ালস্’ কিনতে হবে। আমরা কলোনি ছিলাম পাকিস্তানিদের। আমাদের সব কিছু প্রতিষ্ঠা করতে হবে, সব কিছু বিদেশ থেকে আনতে হবে। কোথায় পাবেন বৈদেশিক মুদ্রা আপনারা? ভিক্ষার ঝুলি নিয়ে দুয়ারে দুয়ারে ঘুরতে হবে? ইনকাম করতে হবে। স্বয়ংসম্পূর্ণ হতে হবে।…স্পিকার সাহেব, আজকের এই সংশোধন কম দুঃখে করি নাই। আমরা জীবনভর সংগ্রাম করেছি। কেউ যদি মনে করেন যে, জনগণের ভোটের অধিকার আমরা কেড়ে নিয়েছি, তাহলে আমি বলবো, না। আজকে এখানে যে সিস্টেম করা হয়েছে, তাতে পার্লামেন্ট-এর মেম্বাররা জনগণের দ্বারা ভোটে নির্বাচিত হবে। যিনি প্রেসিডেন্ট হবেন, তাঁকেও জনগণের ভোটে নির্বাচিত হতে হবে। জনগণের ভোটাধিকার আছে।…এই সিস্টেমের মধ্যে পরিবর্তন করতে হবে, মানুষ যাতে সহজে বিচার পায় এবং সঙ্গে সঙ্গে বিচার পায়। ব্যাপক পরিবর্তন দরকার। ‘কলোনিয়াল পাওয়ার’ এবং রুল নিয়ে দেশ চলতে পারে না। নতুন স্বাধীন দেশ, স্বাধীন মতবাদ, স্বাধীনভাবে দেশ শাসন করতে হবে। এখানে ‘জুডিশিয়াল সিস্টেম’ এর অনেক পরিবর্তন দরকার।….জানি, আমাদের অসুবিধা আছে। আমাদের বন্যা নিয়ন্ত্রণ হয় নাই। আমাদের দেশে বন্যা হয় প্রত্যেক বৎসর, সাইক্লোন হয় প্রত্যেক বৎসর, ন্যাচারাল ক্যালামিটি হয়। সে সবের বিরুদ্ধে আমাদেরই লড়তে হবে। আজ আমাদের কথা হল, শোষণহীন সমাজ গড়তে হবে। আমরা এর জন্য প্রতিজ্ঞাবদ্ধ।…যদি আমি মনুষ্যত্ব হারিয়ে ফেলি, তাহলে মানুষ থাকি কোথায়? প্রথমেই আমাকে মনুষ্যত্ব আনতে হবে, তবে আমি মানুষ হবো। মানুষ কেন আমাকে বলা হয়। কারণ আমার মধ্যে মনুষ্যত্ব আছে। যখন মনুষ্যত্ব আমরা হারিয়ে ফেলি, তখন তো মানুষ থাকি না। আমরা মনুষ্যত্ব হারিয়ে ফেলেছি। আমি সকলের কাছে আবেদন করব, আমি দেশবাসীর কাছে আবেদন করব, আজ শাসনতন্ত্রের যে সংশোধন হল, তার কথা যেন সকলে ভেবে দেখেন।…আমার ক্ষমতা তো কম ছিল না। প্রাইমমিনিস্টার হিসাবে সমস্ত ক্ষমতা আপনারা আমাকে দিয়েছেন। আমার টু-থার্ড’স মেজরিটি, তবু আপনারা শাসনতন্ত্র অ্যামেন্ডমেন্ট করে আমাকে প্রেসিডেন্ট করেছেন।…তবু আজকে আমূল পরিবর্তন করেছি শাসনতন্ত্রের। কারণ, একটা সুষ্ঠু শাসন কায়েম করতে হবে। যেখানে মানুষ শান্তিতে ঘুমাতে পারে, যেখানে মানুষ অত্যাচার-অবিচার থেকে বাঁচতে পারে। চেষ্টা নতুন। আজ আমি বলতে চাই, দিস ইজ আওয়ার সেকেন্ড রিভলিউশন। এই রিভলিউশন-এর অর্থ দুঃখী মানুষের মুখে হাসি ফোটানো। এর অর্থ অত্যাচার, অবিচার নির্যাতন বন্ধ করতে হবে।”
উপরের দীর্ঘ উদ্ধৃতির থেকে দুটি প্রবণতা স্পষ্ট। প্রথমত, সমাজ-জীবন, রাষ্ট্র-জীবন বা অর্থনৈতিক জীবনের নানা ক্ষেত্রেই বেশ কিছু উপসর্গ দানা বাঁধছিল। এইড, বিশেষত ফুড এইড-এর ক্ষেত্রে নির্ভরতা একটা চিরস্থায়ী ঝুঁকির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছিল। এর জন্যে দরকার ছিল খাদ্য-উৎপাদন বাড়ানোর জরুরি প্রস্তুতি। তাছাড়া, নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দুষ্প্রাপ্যতা ও দাম-বৃদ্ধি প্রায়ই হেডলাইন হয়ে দাঁড়াচ্ছিল। ফলে কারখানায় শ্রমিক অসন্তোষও বাড়ছিল; উঠতি মধ্যবিত্তের মনেও দেখা দিচ্ছিল উদ্বেগ, এর জন্যে প্রয়োজন হয়ে পড়েছিল শিল্প-কারখানায় ‘উৎপাদন বাড়ানোর’ ব্যাপক আয়োজন। কৃষিতে বা শিল্পে উৎপাদন বাড়ানোর পরিকল্পনা সত্ত্বেও দেশের সমস্যা পর্বতাকার ধারণ করত যদি-না ‘পপুলেশন প্লানিং’কে বাস্তবায়ন করা যায়। জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণের সঙ্গে জড়িত ছিল জনস্বাস্থ্য, পুষ্টি ও জনশিক্ষার বিষয়সমূহ। ফি বছর বন্যার ঝুঁকি মোকাবিলা করা বাড়তি দুশ্চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছিল। এর সঙ্গে যুক্ত হয় সামাজিক দুর্বিপাক-আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি, হঠাৎ-বিত্তের এক ক্ষুদ্র কিন্তু দাপুটে গোষ্ঠীর আবির্ভাব, দুর্নীতির বিস্তার। পুনর্গঠনের প্রাথমিক পর্যায়ে এই সবই প্রত্যাশিত সমস্যা। দরকার ছিল গোটা সমাজ-জাতিকে একসূত্রে বাঁধা। ব্যক্তিস্বার্থকে এক্ষেত্রে অনেকটাই বিসর্জন দিতে হয় সামষ্টিক অর্থনৈতিক-সামাজিক স্বার্থে।
[ক্রমশ]