বাংলাদেশ এগোচ্ছে, কিন্তু ঠিক কতটা এগোচ্ছে সেটা জানার জন্য তার আগের অবস্থার সঙ্গে পরের অবস্থার তুলনা করা যেমন জরুরি, তেমনি ওই একই সময়পর্বে অন্য দেশগুলো কেমন বা কতদূর এগিয়েছে তা জানাটা সহায়ক হতে পারে। প্রসংগ সূত্রে আজকাল প্রায়ই ভারতের সঙ্গে প্রতিতুলনা চলে আসে। জনমনে সেটা অনেককাল ধরে চলছিলই, কিন্তু অর্থশাস্ত্রে এর সূত্রপাত করেন জঁ দ্রেজ। ২০০৪ সালে একটি নিবন্ধে তিনি বাংলাদেশের হঠাৎ-উত্থান প্রত্যক্ষ করে লিখেছিলেন :’বাংলাদেশ শোজ দ্য ওয়ে’। ভারত বাংলাদেশের কাছ থেকে বেশ কিছু বিষয়ে শিখতে পারে এই আইডিয়াটা তারই। সেই প্রবন্ধে তিনি বলেন:
‘Bangladesh is no paradise to human development…It is still one of the most deprived countries in the world. However, social indicators in Bangladesh are improving quite rapidly. Whether one looks at infant mortality, or vaccination rates, or school participation, or child nutrition, or fertility rates, the message is similar: living conditions are rapidly improving not just for a privileged elite but also for the population at large.’
এর ৯ বছর পরে অমর্ত্য সেনের সঙ্গে লেখা ‘এন আনসারটেইন গ্লোরি :ইন্ডিয়া অ্যান্ড ইটস কন্ট্রাডিকশনস্’ বইটিতে জঁ দ্রেজ ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের জিডিপি-সূচক, শিক্ষা-স্বাস্থ্য প্রভৃতি মানদণ্ডে জীবনযাত্রার মানের মধ্যে একটি পরিসংখ্যানগত পর্যালোচনা উত্থাপন করেন। ২০১১ সালের পরিসংখ্যান দিয়ে সে বইয়ে তারা দেখান যে মাথাপিছু আয়ে ভারতের অর্থনীতি বাংলাদেশের চেয়ে এগিয়ে থাকলেও স্বাস্থ্য ও শিক্ষা সূচকে বাংলাদেশ ইতোমধ্যেই ভারতকে পেছনে ফেলে দিয়েছিল। মাথাপিছু জাতীয় আয়ই জীবনযাত্রার মানের একমাত্র বা প্রধান নির্দেশক নয়, একথা অমর্ত্য সেন অতীতে বহুবারই উল্লেখ করেছেন। কখনও শ্রীলঙ্কার প্রসংগ টেনেছেন, কখনও ভারতের কেরালা রাজ্যের উদাহরণ তুলে ধরেছেন। ইদানীং বাংলাদেশের প্রসঙ্গ আনছেন। ২০১৩ সালের ওই বইতে দ্রেজ-সেন লিখেছেন:
‘Bangladesh has overtaken India in terms of a wide range of basic social indicators, including life expectancy, child survival, enhanced immunization rates, reduced fertility rates, and even some (not all) schooling indicators… Most social indicators now look better in Bangladesh than in India, despite Bangladesh having less than half of India’s per capita income.’
এখন এই শেষোক্ত অবস্থারও পরিবর্তন ঘটেছে। এখন অবশ্য মাথাপিছু জিডিপিতে ভারত বাংলাদেশের তুলনায় বেশ কিছুটা এগিয়ে। কিন্তু সেই ব্যবধানও দ্রুত কমে আসছে। আগে (অর্থাৎ ২০১০ সালে) বাংলাদেশের মাথাপিছু জিডিপির পরিমাণ ছিল ২৮৮৩ পিপিপি ডলার (২০১৭ সালের স্থিরীকৃত মূল্যে), আর ভারতের মাথাপিছু জিডিপির পরিমাণ ছিল ৪২৩৭ পিপিপি ডলার। অর্থাৎ ভারতের মাথাপিছু আয় ২০১০ সালে বাংলাদেশের থেকে ৪৭ শতাংশ বেশি ছিল। ২০১৯ সালে (কভিডের আগেই) অবস্থাটা কিছুটা বদলে যায়। দুই দেশের মধ্যে মাথাপিছু আয়ের ব্যবধান (পিপিপি ডলারে) নেমে গিয়েছিল ৪১ শতাংশে। মাথাপিছু জাতীয় আয় বা জিএনআই-এর সূচকে তুলনামূলক ব্যবধান ছিল আরও কম- মাত্র ২২ শতাংশ (২০২০ সালে ভারতে মাথাপিছু জিএনআই ছিল ৬০৬০ পিপিপি ডলার, আর বাংলাদেশে ৪৯৭৬ পিপিপি ডলার)। অর্থাৎ, আমি বলতে চাইছি, পিপিপি ডলারের মাপকাঠিতেও ভারতের মাথাপিছু জাতীয় আয় এখন আর বাংলাদেশের মাথাপিছু জাতীয় আয়ের তুলনায় দ্বিগুণ এগিয়ে নেই। বাংলাদেশের জাতীয় আয় দ্রুত বৃদ্ধি পেয়ে ক্রমেই ভারতের সঙ্গে তার ব্যবধান কমিয়ে এনেছে এবং আনছে। এর কারণ বোঝাও দুস্কর নয়। ২০১০-১৫ কালপর্বে বাংলাদেশ ও ভারতের মাথাপিছু জাতীয় আয় বা জিএনআই-র গড় বার্ষিক প্রবৃদ্ধি হার ছিল যথাক্রমে ৫ দশমিক ২৬ শতাংশ এবং ৫ দশমিক ৭৯ শতাংশ। কিন্তু ২০১৬-২০ পর্বে বাংলাদেশে এই প্রবৃদ্ধি হার বেড়ে দাঁড়ায় ৬ দশমিক ৭ শতাংশে, পক্ষান্তরে ভারতে তা দাঁড়ায় মাত্র ১ দশমিক ৪ শতাংশে। অর্থাৎ ভারতে লক্ষণীয়ভাবে কমে গেছে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির হার, আর বাংলাদেশে লক্ষণীয়ভাবে বেড়ে গেছে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির হার। এর ফলে মাথাপিছু জাতীয় আয়ের ক্ষেত্রে দুই দেশের মধ্যে ব্যবধান ক্রমেই সংকুচিত হয়ে এসেছে। এটাই সাম্প্রতিক অর্থনৈতিক বাস্তবতা।
ক্রমশ যে বাংলাদেশ শুধু সামাজিক সূচকে নয়, মাথাপিছু জাতীয় আয়ের নিরিখেও ভারতের সঙ্গে এক কদমে পা ফেলছে, তার কারণ কী? আমি তিনটি উপাদানের দিকে দৃষ্টি আকর্ষণ করতে পারি। প্রথমত, বাংলাদেশ ক্রমেই একটি ‘ম্যানুফ্যাকচারিং ন্যাশনে’ পরিণত হচ্ছে। ১৯৯০ সালে জিডিপিতে ম্যানুফ্যাকচারিং খাতের অনুপাত ছিল ১৩ দশমিক ২ শতাংশ; সেটা বছর বছর বেড়ে ২০১৯ সালে গিয়ে দাঁড়িয়েছে ১৮ দশমিক ৯ শতাংশে। ডানি রডরিকের ভাষায় বলতে হয়, ভারতে গত তিন দশকে ‘প্রি-ম্যাচিউর ডি-ইন্ডাস্ট্রিয়ালাইজেশন’ হয়েছে। অর্থাৎ শিল্পায়নের চাহিদা পূরণ না করেই এটি তড়িঘড়ি করে সার্ভিস সেক্টরের দিকে ঝুঁকছে। এর ফলে কৃষিখাতে ‘উদ্বৃত্ত শ্রমশক্তি’ তুলনামূলকভাবে অধিক হারে বিরাজ করছে ভারতে বাংলাদেশের তুলনায়। বাংলাদেশে ২০১৯ সালে কৃষিতে মোট শ্রমশক্তির শতকরা ৩৮ ভাগ নিয়োজিত ছিল; ভারতে এই হার ছিল ৪৩ শতাংশ। একই কারণে, বাংলাদেশের নগরকেন্দ্রিক জনগোষ্ঠী তুলনামূলকভাবে বেশি ভারতের তুলনায়। ২০২০ সালে জনসংখ্যার মধ্যে নগরের অংশ শতকরা ৩৫ ভাগ, আর বাংলাদেশে ৩৮ ভাগ। অথচ ১৯৯০ সালে ভারতে নগর-জনসংখ্যার অনুপাত বাংলাদেশের চেয়ে বেশিই ছিল (যথাক্রমে ২৬ ভাগ ও ২০ ভাগ)। অর্থাৎ, গত তিন দশকে ভারত ডি-ইন্ডাস্ট্রিয়ালাইজড হয়েছে শুধু নয়, এটি নগরায়ণের ক্ষেত্রেও বাংলাদেশের তুলনায় পিছিয়ে পড়েছে।
দ্বিতীয়ত, শ্রমের বাজারে নারীর অংশগ্রহণের ক্ষেত্রেও বাংলাদেশ ভারতের থেকে এগিয়ে। ১৯৯০ সালে বাংলাদেশ এক্ষেত্রে ভারতের তুলনায় পিছিয়েই ছিল: তখন নারীদের ক্ষেত্রে শ্রমশক্তিতে অংশগ্রহণের হার ছিল বাংলাদেশে ২৫ শতাংশ এবং ভারতে ৩০ শতাংশ। ২০১৯ সালে পাই এর বিপরীত চিত্র। শ্রমশক্তিতে নারীর অংশগ্রহণের হার বাংলাদেশে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩৬ শতাংশে, আর ভারতে বাড়ে তো নাই, বরং কমে গেছে ২১ শতাংশে। মোটা দাগে বলা যায়, বাংলাদেশে নারীর ‘অর্থনৈতিক ক্ষমতায়ন’ বেড়েছে ভারতের তুলনায়। এর সুফল পড়েছে চারদিকে। মাধ্যমিক পর্যায়ে নারীর স্কুলগামিতার হার এতে করে উৎসাহিত হয়েছে। ভাবা যায় যে ১৯৯০ সালে বাংলাদেশে এই হার ছিল মাত্র ১৪ শতাংশ (ভারতে তখন ৩৫ শতাংশ)? এর পরবর্তী তিন দশকে দুই দেশেই ‘ছাত্রী উপবৃত্তি’ ও ‘সর্বশিক্ষা-অভিযান’ জাতীয় কর্মসূচি বাস্তবায়িত হয়েছে। কিন্তু ফলাফলে এখন এগিয়ে আছে বাংলাদেশ। ২০১৯ সালে মাধ্যমিক পর্যায়ে ছাত্রীদের স্কুলগামিতার হার ৭৮ শতাংশ, ভারতে যেখানে ৭৪ শতাংশ। একই কথা খাটে শিশু পুষ্টির ক্ষেত্রেও। ১৯৯০ সালে পাঁচ বছরের কম বয়েসী শিশুদের মধ্যে খর্বতার হার বাংলাদেশে ছিল ৬৩ শতাংশ আর ভারতে ৬২ শতাংশ। ২০১৯ সালে এই হার ভারতের চেয়ে তুলনামূলক ভাবে কম (বাংলাদেশে ২৮ শতাংশ, আর ভারতে ৩৫ শতাংশ)। নারীর অর্থনৈতিক ক্ষমতায়নের প্রতি সংবেদনশীল আরও নানা সূচকে বাংলাদেশ প্রথম দিকে ভারতের চেয়ে পিছিয়ে থেকেও বর্তমানে এগিয়ে গেছে।
তৃতীয়ত, তথ্য-উপাত্ত বিচার করে একথা নিঃসন্দেহে বলা যায় ভারতের পতনশীল সূচক-প্রবণতার শুরু ২০১৪ সালের পর থেকে। অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি বা সামাজিক অগ্রগতি যেকোনো মানদণ্ডেই ২০১০-এর দশকের দ্বিতীয়ার্ধ ভারতের জন্য সন্তোষজনক ছিল না। বরং কোনো কোনো ক্ষেত্রে- যেমন ম্যানুফ্যাকচারিং জিডিপির অনুপাত, নগরায়ণ, বা শ্রমশক্তিতে নারীর অংশগ্রহণের ক্ষেত্রে লক্ষণীয় (এবং কিছুটা অপ্রত্যাশিত) অধোগমন হয়েছে। এর প্রধান কারণ মনে হয় রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক সূত্রে নিহিত। বিগত বছরগুলোয় অবিমৃষ্যকারী কিছু পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে ভারতের অর্থনীতিতে (যার মধ্যে সবার আগে আসে ‘ডিমনিটাইজেশন’ বা হঠাৎ করে পাঁচশ টাকার নোট বাতিল করে দেওয়ার হঠকারী সিদ্ধান্ত)। বিনিয়োগকারীদের আস্থা ক্ষুণ্ণ হয়েছে কিছু কিছু রাজনৈতিকভাবে অস্থিরতা বৃদ্ধিকারী পদক্ষেপে (৩৭০ ধারা বিলোপ; ‘অনুপ্রবেশকারী খেদাও’ আন্দোলন; ‘সিএএ বিল’ ঘিরে অসহিষ্ণুতা)। সামগ্রিকভাবে, ‘হিন্দুত্ব’-এর চড়া সুরের রাজনীতি অর্থনীতির জন্যে অতিপ্রয়োজনীয় শান্তি, স্থিতিশীলতা ও ‘সামাজিক পুঁজিতে’ অবক্ষয় ধরিয়েছে। রাজনৈতিকভাবে ‘ক্ষতিকর স্থিতাবস্থা’ থেকে অর্থনীতির জন্য ‘সহায়ক স্থিতাবস্থায়’ পৌঁছানো না গেলে অর্থনৈতিক-সামাজিক সূচকে অধোগমন ঠেকানো কঠিন।
এখানে গোড়ায় একটা আপত্তি উঠতে পারে। কেউ বলতে পারেন যে ভারত এত বড় দেশ এবং তার মধ্যে এত রাজ্যের সমাহার। তার সঙ্গে বাংলাদেশের প্রতিতুলনা করা কতটা যুক্তিযুক্ত। তারচেয়ে বরং বাংলাদেশের তুলনা সাজে ভিয়েতনামের সঙ্গে। সেক্ষেত্রে বলতে হয় বাংলাদেশ ভৌগোলিক মানদণ্ডে ছোট হলেও জনসংখ্যার মানদণ্ডে ছোট নয়। এটি বিশ্বের সপ্তম বৃহৎ জনসংখ্যার দেশ। তাছাড়া, জনঘনত্বের বিচারে এটি বিশ্বের সবচেয়ে ঘন-জনবসতির দেশ। সেদিক থেকেও দেখা দরকার যে বাংলাদেশ প্রতিকূল ঘন-জনবসতির চাপ সহ্য করেও কীভাবে অন্য দেশের সঙ্গে পাল্লা দিচ্ছে অর্থনীতির বা জীবনযাত্রার মান উন্নয়নের প্রতিযোগিতায়। সেক্ষেত্রে আমাদের শুধু তুলনামূলক মাথাপিছু জাতীয় আয়ের দিকে তাকানোই যথেষ্ট নয়। দেখতে হবে অন্যান্য সামাজিক সূচকের দিকেও। ২০১১ সালের দিকে ভারতের তুলনায় বাংলাদেশের পাল্লা ঝুঁকে ছিল অনেক সূচকে। প্রশ্ন হচ্ছে, সে অবস্থা কি এখনও আছে? যদি থাকে, তাহলে এর কারণ কী?
এই সাফল্যের অংশীদার সকলেই : রাষ্ট্র, ব্যক্তি খাত, এনজিও ও মানুষের নিজস্ব উদ্যোগ। জিডিপির আন্তঃকালীন ও তুলনামূলক তুলনায় যাদের আপত্তি (আপত্তিটা অবশ্য সংগত কারণেই) তাদের বলি, এই সাফল্য দৃশ্যমান নানা সূচকেই। দ্রেজ-সেন যেসব সূচকের কথা বলেছিলেন তার প্রায় প্রতিটিতেই বাংলাদেশ ভারতের তুলনায় এগিয়ে আছে। ১.৯০ পিপিপি ডলারের আন্তর্জাতিক দারিদ্র্যরেখা অনুযায়ী বাংলাদেশে ২০১৬ সালে দারিদ্র্যের মাত্রা ছিল ১৪ শতাংশ; ভারতে তা ছিল ২০ শতাংশ। ভারতে প্রবৃদ্ধি শুধু ২০১০ দশকের দ্বিতীয়ার্ধে তুলনামূলকভাবে শ্নথতর হয়েছে তা-ই নয়, এর গুণগত মান বরাবরই ছিল বাংলাদেশের তুলনায় কিছুটা খারাপ। যেমন, ‘গ্রোথ ভলাটাইলিটি’ বা প্রবৃদ্ধির বছর-বছর অস্থিরতা বা উঠানামার সূচকে বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধির ধারা ছিল ভারতের তুলনায় অনেক বেশি স্থিতিশীল। অস্থিরতার সূচক ২০১০ দশকের প্রথমার্ধে বাংলাদেশে ছিল ০ দশমিক ৩৫, আর ভারতে ১ দশমিক ২৩। ২০১০ দশকের দ্বিতীয়ার্ধে এটি দু’দেশেই বেড়েছে, তবে ভারতে বেড়েছে আরও বেশি হারে। ২০১৬-২০ কালপর্বে বাংলাদেশে এই সূচক গিয়ে হয়েছে ২ দশমিক ১, আর ভারতে এই সূচক পৌঁছেছে ৫ দশমিক ৮-এ। প্রবৃদ্ধির অস্থিরতা বাড়লে সমাজ-জীবনেও অস্থিরতা বাড়ে এবং সামাজিক সূচকের অগ্রগতিও আড়ষ্ট হয়ে যায়।
তাছাড়া, এটাও লক্ষ্য করার মতো ভারতে বৈষম্যের হার আমাদের দেশের তুলনায় বেশ উঁচুতে এবং এটি বরাবরের একটি প্রবণতা। ১৯৯২ সালে ভোগ-ব্যয়ের ক্ষেত্রে বৈষম্য পরিমাপের জিনি-সহগ ছিল ভারতের ক্ষেত্রে ৩১ দশমিক ৭ শতাংশ, আর বাংলাদেশের ক্ষেত্রে ২৭ দশমিক ৬ শতাংশ। ২০১১ সালে ভারতের ক্ষেত্রে এই জিনি সূচকের পরিমাপ হচ্ছে ৩৫ দশমিক ৭ শতাংশ, আর বাংলাদেশের ক্ষেত্রে ৩২ দশমিক ১ শতাংশ। ২০১৬ সালে বাংলাদেশের ক্ষেত্রে এটি বাড়েনি। ভারতের ক্ষেত্রে কোনো তথ্য নেই। কোনো অব্যাখ্যাত কারণে ২০১১ সালের পর থেকে ভারত তার ‘দারিদ্র্য পরিস্থিতি’ রিপোর্ট করা বন্ধ রেখেছে। বৈষম্যের মাত্রা বেশি থাকলে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির আবেদন কমে যায়। এর ফলে সমাজে অন্যান্য বৈষম্য (জাত-পাত, ধর্মভেদ, জাতিভেদ এ জাতীয় ‘হরাইজন্টাল ইনইকুয়ালিটি’) প্ররোচিত হয়ে থাকে। বিভেদকামী রাজনীতি ও সামাজিক শক্তির বিস্তার ঘটে। ভারতের উন্নয়ন-অভিজ্ঞতায় আমরা এর চিহ্ন খুঁজে পাই। উন্নয়নের এসব পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া সম্পর্কে বাংলাদেশকেও অবশ্য সতর্ক থাকতে হবে এবং অগ্রিম সতর্কতামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। উন্নয়নের প্রতিযোগিতায়-অন্য সব প্রতিযোগিতার মতই-একবার অবতীর্ণ হলে কেউ কাউকে ছেড়ে কথা কয় না।
লেখক
প্রাবন্ধিক
অর্থনীতি বিশ্নেষক