বঙ্গবন্ধুর গণতান্ত্রিক সমাজতন্ত্র: বাহাত্তরের সংবিধান ও সমতামুখী সমাজের আকাঙ্ক্ষা

পর্ব ::৯৯
[পূর্বে প্রকাশিতের পর]
পরবর্তী সময়ে সৈয়দ নজরুল ইসলাম এ নিয়ে বক্তব্য রাখেন-কিন্তু তিনিও লারমার ‘মানসিক ব্যবধান’ পুরোপুরি ঘোচাতে পারেননি। বরং তার কিছু কথায় বাড়তি ভুল বোঝাবুঝির অবকাশ থেকে গিয়েছিল। সৈয়দ নজরুল সেদিন শুরু করেছিলেন এভাবে-
‘বাঙালী হিসাবে পরিচয় দিতে রাজী না হয়ে বাবু মানবেন্দ্র নারায়ণ লারমা এই পরিষদ্‌-কক্ষ ত্যাগ করেন। আমরা শুধু পরিষদ্‌-সদস্যবৃন্দই নই- আমি মনে করি, সারা বাঙালী জাতি এতে মর্মাহত হয়েছে। আমি এটা না বললে পাছে ভুল বোঝাবুঝি হয়, সেজন্য আমি দাঁড়িয়েছি।
সেজন্য বলতে চাই, তিনি যাঁদের প্রতিনিধিত্ব করেন, তাঁদের প্রস্তাব উত্থাপন না করে, বাঙালী-পরিচয়ের প্রতিবাদে যাঁদের নাম করে এই পরিষদ্‌-কক্ষ পরিত্যাগ করে চলে গেছেন, তাঁরা বাঙালী জাতির অঙ্গ। পার্বত্য চট্টগ্রামে যে ৫ লক্ষ উপজাতি রয়েছে, তারা বাঙালী। তারা সাড়ে সাত কোটি বাঙালীর অঙ্গ বলে আমরা মনে করি। বাবু মানবেন্দ্র নারায়ণ লারমা বাংলা ভাষায় বক্তৃতা করেছেন। তিনি বলেছিলেন, তিনি বাংলা বলতে দ্বিধাবোধ করেন না। এ কথা স্বীকার করার পরেও কেন তিনি চলে গেলেন, তা যদি তিনি বলতেন, তাহলে আমি এই পরিষদে তার জবাব দিতে পারতাম। তাঁর অনুপস্থিতিতে বলছি বলে এ কথা আমাকে বলতে হচ্ছে। ঐ পার্বত্য চট্টগ্রামের যারা অধিবাসী, তাঁরা এই স্বাধীন, সার্বভৌম রাষ্ট্রেরই অঙ্গ। বিশেষ করে কালকে আমাদের আইন-মন্ত্রী বলেছেন যে, তাঁদের প্রতি দীর্ঘকাল যাবৎ তৃতীয় শ্রেণীর নাগরিকের মতো ব্যবহার করা হয়েছে। তাঁদের সংসদীয় আইনের আওতা এবং বাইরের সভ্য জগতের আইনের আওতার বাইরে রেখে বিচ্ছিন্ন মনোভাবের সুযোগ বিদেশী সাম্রাজ্যবাদীরা দিয়েছিল। আমরা তা চাই না, আমরা চাই, পার্বত্য চট্টগ্রামের নাগরিকরা সারা বাংলাদেশের প্রথম শ্রেণীর নাগরিকের সমমর্যাদাসম্পন্ন হবে। তা নিয়ে পার্বত্য চট্টগ্রামের ৫ লক্ষ অধিবাসী বাঙালী জাতির গর্ব হিসাবে থাকবে। শিক্ষা এবং অর্থনৈতিক দিক দিয়ে অনুন্নত এলাকা পার্বত্য চট্টগ্রাম। যদি কেউ মনে করেন যে, পার্বত্য চট্টগ্রামের যে অনুন্নত অবস্থা, তার চেয়ে তুলনামূলকভাবে বাংলার অন্যান্য এলাকা অধিক অনুন্নত তাহলে তাঁর স্মরণ রাখা উচিত যে, বাংলাদেশ পৃথিবীর মধ্যে অন্যতম দরিদ্র দেশ এবং বাংলাদেশে শিক্ষার হার কম। যে দেশের শিক্ষার হার কম, সে দেশ স্বভাবতই অনুন্নত হয়ে থাকে। এই অনুন্নতিই সাড়ে সাত কোটি বাঙালীকে সংগ্রামে উদ্বুদ্ধ করেছিল অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য। ত্রিশ লক্ষ বাঙালী প্রাণ দিয়েছে সেই অধিকারের সংগ্রামে এবং সেই সংগ্রামের সঙ্গে পার্বত্য চট্টগ্রামের অধিবাসীরা যে একাত্মতা অনুভব করে করে নাই, এ কথা আমি বিশ্বাস করি না। আমি মনে করি, বাবু মানবেন্দ্র নারায়ণ লারমা আজকে যে উদ্দেশ্যে পরিষদ্‌-কক্ষ ত্যাগ করেছেন, তিনি যাদের প্রতিনিধিত্ব করছেন, তাদের জন্য তিনি সেটা করতে পারেন নাই-যদিও তিনি গর্ব করে বলে থাকেন, আমি বাঙালী। আমি বলব, যাদের ভোটে তিনি পার্বত্য চট্টগ্রাম থেকে নির্বাচিত হয়েছেন, তাদের সহযোগিতা থেকে এ হাউস বঞ্চিত হয়েছে।’
সৈয়দ নজরুল এখানে বাঙালীকে ‘রাষ্ট্র-জাতি’ হিসেবে দেখেছেন এবং এর অংশ হিসেবে পার্বতবাসীকে অন্তর্ভুক্ত করেছেন। লারমা-প্রসঙ্গের উপসংহারের দিকে আমরা এখন যেতে পারি। পার্বত্য-প্রশ্নে গণপরিষদের মধ্যে একাধিক প্রবণতা কাজ করছিল। একটি প্রবণতা ছিল ‘বাঙালী’ প্রশ্নে তর্ক-বিতর্ক এড়ানো। একই দেশে নানা জাতির অস্তিত্ব স্বীকার করে নিলে এর রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়া কী দাঁড়াবে তা নিয়ে ভাবিত ছিলেন সদস্যরা। বাঙালী-অবাঙালী, বাঙালীর মধ্যে বাঙালী হিন্দু-বাঙালী মুসলিম এসব সংখ্যাগুরু-সংখ্যালঘু ‘আইডেনটিটি’ ঘিরে যদি পাছে বিচ্ছিন্নতাবাদের জন্ম হয়, একারণে শঙ্কিত হচ্ছিলেন তারা। পাশের দেশ ভারতে তখন চলছিল মিজো বিদ্রোহের রেশ। সদ্যস্বাধীন দেশের যুদ্ধবিধ্বস্ত পরিবেশে এরকম আশঙ্কা করা পুরোপুরি অমূলক ছিল না সেদিন। লারমা যখন ১৪ক-র পূর্বে-আলোচিত সংশোধনী প্রস্তাব আনলেন, তখন কুমিল্লা-৫ আসন থেকে নির্বাচিত সদস্য আহম্মদ আলী বলেছিলেন : ‘এখানে আমার একটি সুস্পষ্ট বক্তব্য হল এই যে, যে সংশোধনী আনা হয়েছে, সেটা আমাদের মূল নীতির বিরুদ্ধে। আমার মনে হয়, ‘সংখ্যালঘু জাতিসমূহ’, ‘অনগ্রসর জাতিসমূহ’-এসব উক্তি যথার্থ নয়। আমরা জাতি হিসেবে বাঙালী, আমাদের জাতীয়তাবাদ বাঙালী-আমরা শুধু এইটুকুই জানি। এখানে সংখ্যালঘু জাতি এবং অনগ্রসর জাতির যে অবতারণা করা হয়েছে, এতে বরং আমাদের জাতীয়তাবাদের বিরুদ্ধে হুমকি দেখানো হয়েছে।’
লারমা কখনও পার্বত্যবাসীকে বলেছেন ‘উপজাতি’, কখনও বলেছেন ‘অনগ্রসর জাতি’। আহম্মদ আলীর বক্তব্যের ৬ দিন আগে লারমা তার সূচনা বক্তব্যে বলেছিলেন : ‘আমার পার্বত্য চট্টগ্রামের সমস্যা নিয়ে আমাদের জাতির পিতা শ্রদ্ধেয় বঙ্গবন্ধুর কাছে যুক্ত স্মারকলিপি দিয়েছিলাম। এই স্মারকলিপিতে পার্বত্য চট্টগ্রামের উপজাতিদের জন্য গণতান্ত্রিক শাসনের কথা বলেছিলাম। আমাদের উপজাতিদের জন্য পার্বত্য চট্টগ্রামের আঞ্চলিক স্বায়ত্তশাসনের কথা বলেছিলাম।’ তখনই প্রতিবাদের রব উঠেছিল। জনৈক সদস্য বলেছিলেন: ‘মিস্টার লারমা একটি পৃথক স্বায়ত্তশাসিত এলাকার দাবী জানাচ্ছেন। এইভাবে এক দিক দিয়ে বাংলাদেশের স্বাধীনতার উপর আঘাত হানা হচ্ছে বলে আমি মনে করি।’
কিন্তু সবাই এতটা তীব্র প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেননি। কামারুজ্জামান সাহেবের বক্তব্য ইতিপূর্বেই আমি আলোচনা করেছি। তিনি এক মহাজাতির ভেতরে নানা জাতির সহাবস্থান দেখেছেন। অর্থাৎ এক বাঙালী পরিচিতির মধ্যেই নানা জাতির বসবাস হতে পারে, নানা জাতি-উপজাতির বিকাশ হতে পারে এমন যুক্তি দেওয়ার চেষ্টা করেছেন। অন্যদিকে, ড. কামাল হোসেন যুক্তি দেখিয়েছেন গণতান্ত্রিক সেক্যুলার কাঠামোর। বলেছেন যে বিশেষ সংরক্ষণের ঘেরাটোপ থেকে বেরিয়ে এসে অভিন্ন নাগরিক অধিকার বোধে একত্র হতে। অনগ্রসর এলাকার বিশেষ উন্নয়ন-চাহিদা পূরণের কথাও তিনি লারমাকে স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন। শিক্ষামন্ত্রী অধ্যাপক মো. ইউসুফ আলী বলেছেন- একই বাঙালী জাতির মধ্যে বিচিত্র নৃগোষ্ঠীর মিশ্রণের কথা বা ‘ইউনিটি ইন ডাইভার্সিটির’ কথা। উদ্ধৃতিটি তাৎপর্যপূর্ণ:
‘জনাব স্পীকার সাহেব, আমার বন্ধু লারমা সাহেব যে কথা বলেছেন, আমি তার পরিপ্রেক্ষিতে সংক্ষেপে বিনীতভাবে তাঁকে জানাতে চাই, আমরা জানি বাঙালী জাতির কথা এবং আরও জানি যে, বাংলার সাড়ে সাত কোটি মানুষ বাংলাদেশের ৫৪ হাজার বর্গমাইল এলাকায় ছড়িয়ে আছে। আমরা বিশ্বাস করি, বাংলার যে সংস্কৃতি, বাংলার যে সাহিত্য, বাংলার যে ইতিহাস, তা হচ্ছে বৈচিত্র্যময় এবং সেই বৈচিত্র্য আমাদের মধ্যে ঐক্য এনেছে। Unity in diversity. . আজকে ঢাকা শহরে যখন কোন একটা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হয়, সেখানে যাঁরা নিজেদের উপজাতীয় বলে পরিচয় দিতে চান, তাঁদের বাংলাদেশের এই সাংস্কৃতিক অঙ্গনে সংস্কৃতজ্ঞ বলে তুলে ধরা হয়। আমরা বিশ্বাস করি, বাংলাদেশের প্রাকৃতিক বৈচিত্র্য, বাংলাদেশের চেহারায় বৈশিষ্ট্য, বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক বৈশিষ্ট্যকে নিয়ে যে মহৎ ‘কোরাস্‌’ গীত হয়, সেই গীতই হল বাংলার সংস্কৃতি। এই কারণে বৃটিশ যুগের মতো কাউকে উপজাতীয় হিসাবে চিহ্নিত করে divide and rule policy অবলম্বন করতে চাই না এবং সেই নীতিতে আমরা বিশ্বাসী নই। আমরা বিশ্বাস করি, বাংলার মানুষ সবাই এক।
এই প্রসঙ্গে আঞ্চলিকতার কথাও এসেছে। আমরা জানি, আইয়ুবের আমলে দেশের সংহতির যে সংজ্ঞা ছিল, তার সঙ্গে আমরা একমত হতে পারিনি। আওয়ামী লীগ বিশ্বাস করে, দেহের একটা অঙ্গকে আলাদা বা দুর্বল করে রেখে গোটা দেহকে সবল করা যায় না। তেমনি দেশের একটি অঙ্গকে দুর্বল করে গোটা দেশকে সবল করা যায় না।’
শেখ মুজিব গণপরিষদের ভেতরের এসব প্রবণতা জানতেন। তিনি লারমাকেও জানতেন এবং পার্বত্যবাসীর মনোকষ্টের বিষয়টিও বুঝতেন। তিনি যখন ‘বাঙালী’ বলতেন তখন তিনি বাংলার জনপদ ও তার অধিবাসীকেই মাথায় রাখতেন- যে-অধিবাসীরা পশ্চিম পাকিস্তানের ‘কলোনী-মাত্র’ ছিল। সেখানে তিনি সমতল ও পাহাড়ের সকল নৃতাত্ত্বিক ভাষাভিত্তিক জাতিকেই অন্তর্ভুক্ত করে কথাগুলো বলেছিলেন। তিনি বারবার বলেছেন, ‘অনেক জাতি দুনিয়ায় আছে, যারা বিভিন্ন ভাষাবলম্বী হয়েও এক-জাতি হয়েছে। অনেক দেশে আছে, একই ভাষা, একই ধর্ম, একই সবকিছু নিয়ে বিভিন্ন জাতি গড়ে উঠেছে- তারা এক জাতিতে পরিণত হতে পারে নাই। জাতীয়তাবাদ নির্ভর করে অনুভূতির উপর।’ আর সেই অনুভূতির অভিন্ন ভিত্তি হলো বাঙালীর মুক্তিযুদ্ধ : ”বাঙালী জাতি যে রক্তক্ষয়ী সংগ্রামের মাধ্যমে স্বাধীনতা নিয়েছে, যার উপর ভিত্তি করে আমরা স্বাধীনতা নিয়েছি, যার উপর ভিত্তি করে আমরা সংগ্রাম করেছি, সেই অনুভূতি আছে বলেই আজকে আমি বাঙালী, আমার ‘বাঙালী জাতীয়তাবাদ’।” এই রক্তক্ষয়ী সংগ্রামের অভিন্ন অনুভূতির মধ্যে লারমাও পড়েন। এই জাতীয় মুক্তি সংগ্রামের শরিক বাংলার সবাই-বাঙালী-অবাঙালী নির্বিশেষে সমতল ও পার্বত্য এলাকার অধিবাসী সকলেই যারা অন্যায়ের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছে একাত্তরে।
প্রকৃত পক্ষে, বাঙালী জাতীয়তাবাদের পক্ষে দাঁড়ানোর মানে এই নয় যে পার্বত্যবাসীর অধিকারের বিপক্ষে দাঁড়ানো। ১৯৭০ সালের নির্বাচনী ইশতেহারে মুজিব বলেছিলেন: ‘উপজাতীয় এলাকা যাতে অন্যান্য এলাকার সাথে পুরাপুরি সংযোজিত হতে পারে, তারা যাতে জীবনের সবক্ষেত্রে অপর নাগরিকদের মতোই সমান সুযোগ-সুবিধা ভোগ করে, এই জন্য উপজাতীয় এলাকা উন্নয়নের ব্যাপারে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালাতে হবে। পার্বত্য চট্টগ্রাম, উপকূলীয় দ্বীপসমূহ এবং উপকূলবর্তী এলাকার বসবাসকারীরা যাতে জাতীয় জীবনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে, সেজন্যে তাদের সম্পদের সদ্ব্যবহারের উদ্দেশ্যে বিশেষ উদ্যোগ গৃহীত হওয়া প্রয়োজন।’ ১৯৭৩ সালে গৃহীত আওয়ামী লীগের ‘ঘোষণাপত্রে’ আলাদা করে বলা ছিল ‘পশ্চাৎপদ অঞ্চলসমূহ’-এর কথা: ‘আমাদের দেশের অবহেলিত পাহাড়ী অঞ্চলসমূহকে দেশের অন্যান্য অঞ্চলের সমপর্যায়ে উন্নীত করার জন্য সর্বাত্মক প্রচেষ্টা গ্রহণ করা হইবে। যাহাতে এইসব অঞ্চলের মানুষ দেশের অন্যান্য অঞ্চলের বাসিন্দাদের মতই সর্বক্ষেত্রে সমভাবে সমুদয় সুযোগ-সুবিধা উপভোগ করিতে পারে।’ এরকম উদাহরণ আরও দেওয়া যায়। সন্দেহ নেই, লারমা বঙ্গবন্ধুর এসব প্রতিশ্রুত রূপকল্পে-যা গণতান্ত্রিক কাঠামোয় সমাজতন্ত্র নির্মাণের আবশ্যকীয় অংশ-আস্থা রেখেছিলেন। এবং আস্থা রেখেছিলেন বলেই লারমা ও বঙ্গবন্ধু তাঁদের জীবদ্দশায় পরস্পরের হাত ছেড়ে দেননি। আগেই বলেছি, লারমা বাহাত্তরের সংবিধানে সই করেছিলেন এবং ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধুর দ্বিতীয় বিপ্লবের কর্মসূচি বাকশালেও যোগ দিয়েছিলেন। বঙ্গবন্ধু হত্যার পরে মানবেন্দ্র নারায়ণ লারমা ও তার সহযোগীদের ওপরে নির্যাতন নেমে আসে। প্রতিবাদে তারাও গঠন করেন ‘শান্তি বাহিনী’। সামরিক শাসনামলে পার্বত্যবাসীর ওপরে যে অবিচার-নির্যাতন হয়েছিল সেকথা নিয়ে নতুন করে আর কিছু আজ যোগ করবার নেই।

১৩. ১৯৭২-৭৫: পুনর্গঠন ও দ্বিতীয় বিপ্লবের সূচনা
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সমতাবাদী চিন্তার মূল বৈশিষ্ট্য ছিল ক্রমাগতভাবে জাতীয় মুক্তি সংগ্রামকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া। যদি কিছু দূর গিয়ে দেখা যায় আর এগোনো যাচ্ছে না, পথ রুদ্ধ হয়ে গেছে কোনো অপ্রত্যাশিত বিপর্যয়ে বা ব্যারিকেডের কারণে, তাহলে বেশির ভাগ মানুষই যা করেন হতোদ্যম হয়ে পড়েন। কিন্তু নিরাশ হয়ে হাল ছেড়ে দেওয়া মুজিবের স্বভাবে ছিল না। সংকটের মুখে তিনি সবসময় নতুন পথ খুঁজতেন: এভাবে না হলে ওভাবে, সোজা পথে না হলে ঘুর পথে। ১৯৪০-এর দশকে একসময় মুজিব ‘স্বাধীন স্বার্বভৌম সমাজতান্ত্রিক বাংলা’ রিপাবলিকের স্বপ্ন দেখতেন। ১৯৪৬ সালের সাধারণ নির্বাচনে জয়লাভের মধ্য দিয়ে বাংলায় হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর নেতৃত্বে মুসলিম লীগ সরকার গঠিত হয়। তখন সোহরাওয়ার্দী আন্দামানসহ দেশের বিভিন্ন কারাগার থেকে রাজবন্দিদের মুক্তি দেন, যার অধিকাংশই ছিলেন বামপন্থি ভাবাদর্শে বিশ্বাসী। বাংলার আসন্ন স্বাধীনতার প্রশ্নে এ পর্যায়ে আবুল হাশিম ও শহীদ সোহরাওয়ার্দী কমিউনিস্ট নেতা বঙ্কিম মুখার্জী ও সোমনাথ লাহিড়ী প্রমুখের সঙ্গে কয়েক দফা বৈঠক করেন। দেশ ভাগ হলে পাকিস্তান ও ভারতের পাশাপাশি বৃহত্তর সমাজতান্ত্রিক সার্বভৌম বাংলার বিষয়ে তারা আলোচনা করেন। এই স্বাধীন সমাজতান্ত্রিক বাংলা প্রজাতন্ত্র প্রতিষ্ঠার বিষয়ে উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে সেটা মুজিব জানতেন।

[ক্রমশ]

Leave a Reply

Fill in your details below or click an icon to log in:

WordPress.com Logo

You are commenting using your WordPress.com account. Log Out /  Change )

Facebook photo

You are commenting using your Facebook account. Log Out /  Change )

Connecting to %s