বঙ্গবন্ধুর গণতান্ত্রিক সমাজতন্ত্র: বাহাত্তরের সংবিধান ও সমতামুখী সমাজের আকাঙ্ক্ষা

পর্ব ::৯৭
[পূর্বে প্রকাশিতের পর]
বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের পর আবুল ফজল একটি পুস্তিকা প্রকাশ করেছিলেন, যার নাম ‘শেখ মুজিব :তাঁকে যেমন দেখেছি’। এটি প্রকাশিত হয়েছিল ১৯৭৮ সালে, কিন্তু মূল লেখাগুলো রচিত হয়েছে বেশ আগেই। লেখাগুলো স্মৃতিচারণমূলক- অনেকক্ষেত্রে ‘রোজনামচা’ থেকে সরাসরি উদ্ধৃতি দেওয়া। ১৯৭৬ সালের ২৬ আগস্ট একটি রোজনামচায় তিনি লিখেছেন:
‘নিঃসন্দেহে শেখ ছিলেন এ যুগের সর্বপ্রধান বাঙালী। যে সর্বপ্রধান বাঙালীকে আমরা বাঙালীরাই কি না নিজের হাতে হত্যা করলাম! আশ্চর্য, এমন অবিশ্বাস্য ঘটনাও সত্য হলো। বাঙালীকে বাঙালী বলে পরিচয় দিতে কে জুগিয়েছিল সাহস? শেখ মুজিব নয় কি? বজ্রগর্ভ আর অমিত প্রেরণার উৎস ‘জয় বাংলা’ শ্নোগান কে তুলে দিয়েছিল বাঙালীর মুখে? শেখ মুজিব নয় কি? জিন্দাবাদে সে জোর, সে চেতনা, সে উদ্দীপনা কোথায়? জয় বাংলা প্রদীপ্ত শিখা, জিন্দাবাদ ধার করা এক মৃত বুলি। গ্রাম বাংলার শতকরা নব্বইজন যার অর্থই বুঝে না। এ যুগের শ্রেষ্ঠ বাঙালী মুসলমান শেখ মুজিব- এ কথা বল্লে কিছুমাত্র অত্যুক্তি করা হয় না। হিন্দু বাঙালীয়ানা আর মুসলমান বাঙালীয়ানায় কিছুটা পার্থক্য আছে। তাই মুসলমান কথাটা যোগ করলাম। তবে এ পার্থক্য সবসময় বিরোধমূলক নয়। শেখ মুজিবের বেলায় যেমন তা ছিল না। তাঁর সমগ্র মুসলমানিত্ব নিয়েই তিনি এক পরিপূর্ণ বাঙালী ছিলেন। এমন বাঙালী বিরল। এ বিরল বাঙালীটিকেই কি না হত্যা করা হয়েছে। আমরা নিজেরাই করেছি। এ যেন নিজের অঙ্গ নিজে ছেদন করা।’
এই অনুশোচনা ও পিতৃহত্যার গ্লানি জাতির বিবেককে প্রতি মুহূর্ত দংশন করছে এটা বারবার ওই পুস্তকে উচ্চারিত হয়েছে। এটা কাকতালীয় নয় যে প্রবাসী বাংলাদেশ সরকারের রাজধানীর নাম ‘মুজিব নগর’ করা হয়েছিল- সেটা আর কারও নামে নয়, শেখ মুজিবের নামেই। অন্যত্র আবুল ফজল লিখেছেন: ‘এ স্বাধীনতার জন্য আমরা শেখ মুজিবের কাছে ঋণী। তিনি সশরীরে উপস্থিত না থাকলেও তাঁর নাম যাদুমন্ত্রের মতো কাজ করেছে। তাঁর ইচ্ছা-অনিচ্ছা ব্যতিরেকে এবং অনুপস্থিতিতে যে অস্থায়ী বাংলাদেশ সরকার গঠিত হয়েছিল তাঁকেই করা হয়েছিল সে সরকারের রাষ্ট্রপতি এবং সে সরকারই নিয়ন্ত্রণ করেছে আমাদের স্বাধীনতা আন্দোলনকে, সে সরকারের বাস্তব বা কাল্পনিক রাজধানীর নাম ‘মুজিব নগর’ হয়েছিল। অন্য নাম কারো মাথায় আসেনি।’ ১৯৭৫ সালের ৪ অক্টোবরের রোজনামচায় তিনি আরও লিখেছেন:
‘সাম্প্রতিক ঘটনায় শেখ সাহেবের হত্যা সম্পর্কে আমি অনবরত বিবেকের একটা দংশন অনুভব করছি। এত বড় একটা দ্বিতীয় কারবালা ঘটে গেল দেশে, নির্মমতায় যে ঘটনার জুড়ি নেই ইতিহাসে। সে সম্পর্কে দেশের সর্বাপেক্ষা সচেতন অংশ শিক্ষিত আর বুদ্ধিজীবী সমাজ কিছুমাত্র বিচলিত বোধ করছেন না, এ ভাবা যায় ন। আশ্চর্য, মননশীল লেখক-শিল্পীদের মধ্যেও তেমন একটা সাড়া দেখা যায়নি এ নিয়ে।… এত বড় একক ট্র্যাজিক ঘটনা তাঁরা আর কোথায় খুঁজে পাবেন লেখার জন্য?’
আবুল ফজল বারে বারে এটাই বলতে চেয়েছেন, বাঙালিদের জন্য একটি নিজস্ব স্বাধীন আবাসভূমি শেখ মুজিবই দিয়ে গেছেন, অথচ তাকেই আমরা কী অবহেলাই না করেছি তার মৃত্যুর পর- অনেক অনেক দিন পর্যন্ত! প্রশ্ন উঠতে পারে, শেখ মুজিবের নেতৃত্বে গড়া ‘বাঙালিদের’ জন্য এক স্বতন্ত্র স্বাধীন আবাসভূমি তার মধ্যে কি ‘অন্য জাতি-উপজাতি’ও পড়েন? এ নিয়ে কিছুটা ধূম্রজাল সৃষ্টি হয়েছে গত তিন দশকে। সে বিষয়ে দ্রুত আলোকপাত করতে চাই।
এর আগে এ বিষয়ে ইংগিত দেওয়ার চেষ্টা করেছি যে বঙ্গবন্ধুর ‘বাঙালি’ ও ‘বাংলার মানুষ’ এই শব্দযুগলের মধ্যে বৃহত্তর পরিচিতির আভাস পাই। এই পরিচিতিকে (আইডেনটিটি) কেবল নিছক ‘সংখ্যাগরিষ্ঠ’ (মেজোরিটারিয়ান) জনগোষ্ঠীর পরিচয় হিসেবে নির্দিষ্ট করা চলে না। এর মধ্যে প্রথাগত-অর্থে যারা বাঙালি তারাও আছেন, আবার যারা মাতৃভাষা হিসেবে বাঙালি নন, তারাও অন্তর্ভুক্ত রয়েছেন। রবীন্দ্রনাথ যে ধরনের ‘মহাজাতি’ গঠনের কল্পনা করেছিলেন, শেখ মুজিবের কাছে ‘বাঙালি’ ছিল তেমনি এক মহাজাতিক প্রকল্প। যার মধ্যে বাঙালি হিন্দুরাও পড়েন, বাঙালি মুসলিমও পড়েন। কারও কারও কানে এটা কষ্টকল্পিত দাবি বলে মনে হতে পারে, সে জন্যে বাহাত্তরের সংবিধান নিয়ে গণপরিষদ বিতর্কে অংশ নেওয়া এএইচএম কামারুজ্জামান সাহেবের বক্তব্যের একটি অংশ তুলে ধরছি। এই ভাষণের প্রেক্ষাপটটি বলি। এর একদিন আগেই নির্দলীয় সদস্য মানবেন্দ্র নারায়ণ লারমা তার ‘ডিসেন্ট’ ব্যক্ত করেছেন। তিনি গুরুতর অভিযোগ তুলেছেন:
‘এই খসড়া সংবিধান প্রণয়ন কমিটি আমাদেরকে সমাজতন্ত্রের পথে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য এই খসড়া সংবিধান প্রণয়ন করেছেন। এই খসড়া সংবিধানে আমাদের অবহেলিত অঞ্চলের কোন কথা নাই।… পার্বত্য চট্টগ্রাম হল বিভিন্ন জাতি-সত্তার ইতিহাস। কেমন করে সেই ইতিহাস আমাদের সংবিধানের পাতায় স্থান পেল না, তা আমি ভাবতে পারি না। সংবিধান হচ্ছে এমন একটা ব্যবস্থা, যা অনগ্রসর জাতিকে, পিছিয়ে-পড়া, নির্যাতিত জাতিকে অগ্রসর জাতির সঙ্গে সমানতালে এগিয়ে নিয়ে আসার পথ নির্দেশ করবে। বস্তুতপক্ষে এই পেশকৃত সংবিধানে আমরা সেই রাস্তার সন্ধান পাচ্ছি না।’ এর কিছু পরে লারমা যোগ করলেন- ‘পার্বত্য চট্টগ্রামের একটা ইতিহাস আছে এবং সেই ইতিহাসকে কেন এই সংবিধানে সংযোজিত করা হল না?… এই সংবিধানে মানুষের মনের কথা লেখা হয়নি। কৃষক, শ্রমিক, মেথর, কামার, কুমার, মাঝি-মাল্লার জন্য কোন অধিকার রাখা হয়নি। পার্বত্য চট্টগ্রামের উপজাতীয় জনগণের অধিকারের কথাও সংবিধানে লেখা হয়নি।’ এর পর সভা পরদিন সকাল পর্যন্ত মুলতবি হয়ে যায়।
মানবেন্দ্র নারায়ণ লারমার সেদিনের বক্তব্য পুনরুক্তিমূলক ও আবেগ-আক্রান্ত ছিল। কিন্তু আবেগের আতিশয্যের কারণেই এই কথাগুলোকে তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করার কোনো হেতু নেই। রাজনীতিতে ‘পার্সেপশন’ একটি গুরুত্বপূর্ণ চালিকাশক্তি। এটা ভেবেই তৎকালীন ত্রাণ ও পুনর্বাসন মন্ত্রী এ. এইচ. এম. কামারুজ্জামান এর পরের দিন একটি পরিশীলিত প্রত্যুত্তর দিলেন লারমার বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে। প্রথমেই তিনি লক্ষ্য করলেন যে, ‘সংবিধানে সবকিছু লেখা থাকে না এবং সব কথা লিখেই শুধু মানুষের কল্যাণ সাধন করা যায় না। সংবিধানের পরে আসে আইন, আসে আরও অনেক কর্তব্য।’ দ্বিতীয়ত, তিনি লারমাকে ‘আঞ্চলিকতার’ কথা স্মরণ করিয়ে দিলেন। লারমাকে উদ্দেশ করে তিনি বললেন যে, ‘আমার বন্ধু পার্বত্য চট্টগ্রাম থেকে নির্বাচিত সদস্য গণপরিষদে তাঁর অঞ্চলের কথা বলেছেন। তাতে আপত্তি নাই। কথা বলা খারাপ নয়। তবে আঞ্চলিকতা পরিহার করা অত্যন্ত প্রয়োজন, যে আঞ্চলিকতা মানুষের মধ্যে বিদ্বেষ সৃষ্টি করে।’
তৃতীয়ত, কামারুজ্জামান বললেন যে, জাতীয় পরিকল্পনার চৌহদ্দি গোটা বাংলাদেশ জুড়েই। সেই পরিকল্পনা পার্বত্যবাসীদের বাদ দিয়ে নয়। তাদের উন্নতির রাস্তা ঐ জাতীয় পরিকল্পনার নির্দেশিত পথেই নিহিত। তিনি বললেন, ‘কিন্তু সেই সঙ্গে এ কথাও সত্য যে, এই সমাজের কোনো অংশ অবহেলিত ও উপেক্ষিত হলে ক্ষমতাসীন সরকার যদি সেই অবহেলিত, উপেক্ষিত মানুষের জন্য কোন কিছু না করে, তাহলে তা হবে অন্যায়। আমরা কল্পনা করেছি সমস্ত অঞ্চলকে একটা অঞ্চল হিসাবে। তাই আগামী দিনে আমাদের [পার্বত্য] বন্ধুদের পরিস্কার নিশ্চয়তা দিয়ে বলতে পারি, এই বাংলাদেশের অভ্যন্তরে কোন আঞ্চলিকতা থাকবে না। এই বাংলাদেশের প্রতিটি অঞ্চলকে একটি অঞ্চল হিসাবে পরিকল্পনা করে বাংলাদেশের সাড়ে সাত কোটি মানুষকে একটি সামাজিক জীব হিসেবে কল্পনা করে উন্নত করা হবে।’
চতুর্থত, লারমাকে আশ্বস্ত করে তিনি বললেন যে, ‘ইতিহাস আমরা জানি, ইতিহাস আমরা অস্বীকার করি না।’ এদিকে ‘আমাদের সুতীক্ষষ্ট দৃষ্টি আছে’ এবং এটাও ঠিক যে ‘বাংলাদেশের অভ্যন্তরে কোন অঞ্চলের প্রতি যদি অবজ্ঞা প্রদর্শন করা হয়, তাহলে অন্যায় করা হবে’। কেননা, তাতে করে ‘সেই ব্যাধি শুধু সেই অঞ্চলেই থাকবে না- সেই ব্যাধি বাংলাদেশের প্রতিটি স্তরে, সারা বাংলাদেশেই ছাড়িয়ে পড়বে।’
সবশেষ, তিনি মহাজাতির মধ্যে বিভিন্ন জাতির সহাবস্থানের ইনোভেটিভ যুক্তিটি পেশ করলেন। এটি হচ্ছে ‘সেলিব্রেটিং ডাইভার্সিটির’ যুক্তি :’আমার পার্বত্য চট্টগ্রামের ভাইরাও অধিকার পাবেন। কোন অংশ হতেই তাঁরা বঞ্চিত হবেন না। বাঙালী হিসাবে আমরা বেঁচে থাকব। একটা জাতির অভ্যন্তরে বিভিন্ন জাতির সংমিশ্রণে বৈচিত্র্য অনেক বেশী, মাধুর্য অনেক বেশী। এই বাংলাদেশের প্রতিটি মানুষের মধ্যে শুধু এক জাতি, এক কৃষ্টি, এক সংস্কৃতি- তা নয়। বহু অঞ্চলের বহু মানুষ আছে, তাদের নিজস্ব অনেক কিছু আছে। শত বৈচিত্র্য নিয়ে আমরা আমাদের মধ্যে বেঁচে থাকব। কিন্তু সর্বোপরি থাকবে আমাদের বাঙালী জাতীয়তাবাদ। সেই জাতীয়তাবাদ অক্ষুণ্ণ রেখে সেই জাতির অভ্যন্তরের প্রতিটি মানুষের প্রতি আমরা সম-দৃষ্টি রেখে আমাদের জাতীয়তাবাদ সুপ্রতিষ্ঠিত করব।’
এর থেকে কি কোনোভাবে এই অনুমান করা চলে যে বঙ্গবন্ধু ও তার নিকটতম সহকর্মীরা পার্বত্যবাসীকে সমতলবাসী হয়ে যেতে বলেছেন, বা পাহাড়ি জনগণকে ‘বাঙালি’ হয়ে যেতে বলেছেন? অথচ এরকমই অবাস্তব অভিযোগ তোলা হয়েছে পরবর্তীকালে কোনো কোনো মহল থেকে। এমনকি শেখ মুজিবকেও এ পরিপ্রেক্ষিতে কাঠগড়ায় দাঁড় করাতে তারা দ্বিধাগ্রস্ত হননি। সেটা করা যেতেই পারে যদি তার পেছনে জোরালো যুক্তি থাকে। দুঃখের বিষয়, অতীতে এই বিষয়ে যথেষ্ট সতর্কতার পরিচয় দেওয়া হয়নি। যেমন, পার্বত্য ইস্যুতে একজন বিশেষজ্ঞ হিসেবে সুপরিচিত লেখিকা তার কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ে সম্পন্ন পি,এইচ,ডি অভিসন্দর্ভে এই মর্মে অভিযোগ তুলেছেন যে শেখ মুজিব পাহাড়ি জনগণকে তাদের পৃথক পরিচিতি/আত্মসত্তা (আইডেনটিটি) ‘ভুলে গিয়ে বাঙালি’ হয়ে যেতে বলেছেন। মূল ইংরেজিতে বিবরণটি এই রকম: ‘He therefore asked the Hill people to forget about their separate identity and to become Bengalis’ এর সপক্ষে লেখিকা আমেনা মোহসীন সমর্থন হিসেবে দেখিয়েছেন একটি মাত্র তথ্যসূত্রের উৎস। সেটি হচ্ছে, অনন্ত বিহারী খীসার সঙ্গে সাক্ষাৎকার (যেটি ১৯৯৩ সালের অক্টোবর মাসে নেওয়া)। লেখিকা আমাদের জানিয়েছেন যে, ১৯৭২ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি মানবেন্দ্র নারায়ণ লারমার নেতৃত্বে যে প্রতিনিধি দল বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন, তার অন্যতম সদস্য ছিলেন অনন্ত বিহারী খীসা। স্বাধীনতার আগে ও পরে বঙ্গবন্ধুর অসংখ্য বক্তৃতা-বিবৃতি বিচার করেও অনন্ত বিহারী খীসার বক্তব্যের সমর্থনে কোনো লাইন আমি অদ্যাবধি খুঁজে পাইনি। এমনকি এই মর্মে কোনো ইংগিতও পাইনি। এটি যদি শেখ মুজিবের চিন্তার একটি ‘স্তম্ভ’ হতো তাহলে কোথাও না কোথাও এর চিহ্ন (ঃৎধপব) থাকত। বরং এর বিপরীতেই তথ্য-প্রমাণের পাল্লা ভারী। শেখ মুজিব পূর্বাপর দেশের অনগ্রসর জাতি-গোষ্ঠী ও নৃগোষ্ঠী নিয়ে তার উন্নয়ন-বাসনা ব্যক্ত করেছেন, এবং আন্তরিক উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। কয়েকটি উদাহরণ।
প্রথমত, যে সভার বরাত দিয়ে কথিত ‘বাঙালি হয়ে যেতে’ বলা হয়েছে তা অনুষ্ঠিত হয় ১৯৭২ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি। অর্থাৎ বঙ্গবন্ধু দেশে ফেরার এক মাস পরে। এর পরে ১১ এপ্রিল ‘খসড়া সংবিধান প্রণয়ন কমিটি’ গঠন করা হয়। কয়েক মাস কাজের পরে কমিটি তৎকালীন বাংলাদেশ গণপরিষদে ১৯৭২ সালের ১২ অক্টোবর খসড়া সংবিধানটি উত্থাপন করে এবং অনেক আলাপ-আলোচনার পর সেটি ৪ নভেম্বর সংশোধিত হয়ে গৃহীত হয়। এখন দেখা যাক যে খসড়া সংবিধানে, গণপরিষদ বিতর্কে বা চূড়ান্তভাবে গৃহীত সংবিধানের পাঠে কোথাও পাহাড়ি জনগণকে ‘বাঙালি’ হয়ে যেতে বলা হয়েছিল কিনা বা সেরকম ইংগিত দেওয়া হয়েছিল কিনা। বা কেউ সেরকম ইংগিত দিয়ে থাকলেও তা গণপরিষদের অনুমোদন পেয়েছিল কিনা। সেরকম কিছু সংবিধানে থাকলে বা গণপরিষদ বিতর্কের প্রধান সুর হয়ে দাঁড়ালে মানবেন্দ্র নারায়ণ লারমার কথায় ও কাজে তা প্রতিফলিত হতো নিশ্চয়ই। কিন্তু তা কি আমরা দেখতে পাই? মানবেন্দ্র নারায়ণ লারমা বাহাত্তর সালের সংবিধানের গৃহীত চূড়ান্ত পাঠে সই করেছিলেন। শুধু সই করা নয়, এই সংবিধানের বিভিন্ন অধ্যায়ের সঙ্গে তিনি সহমতও ছিলেন। বঙ্গবন্ধুর সাথে গভীর বোঝাবুঝির কারণে তিনি আস্থা রাখতে পেরেছিলেন যে শেখ মুজিবের নেতৃত্বে যে সংবিধান তৈরি হয়েছে তারই পথরেখা ধরে লারমার স্বপ্নেরও বাস্তবায়ন ঘটবে তথা পাহাড়ি জনগণের জীবনের আমূল উন্নয়নও ঘটবে।

[ক্রমশ]

Leave a Reply

Fill in your details below or click an icon to log in:

WordPress.com Logo

You are commenting using your WordPress.com account. Log Out /  Change )

Facebook photo

You are commenting using your Facebook account. Log Out /  Change )

Connecting to %s