পর্ব :: ৯৬
[পূর্বে প্রকাশিতের পর]
এ জন্যই ‘আমার সোনার বাংলা’ হয়েছে তার প্রিয় গান, যেখানে রয়েছে প্রকৃতি আর প্রকৃতি : আকাশ, বাতাস, বাঁশি, বটমূল, খেলাধুলা, মায়ের কোল প্রভৃতি শব্দাবলি। অন্যান্য দেশের জাতীয় সংগীতে যেমন বাজে রণ-দুন্দুভি, জাতীয় শৌর্য-বীর্যের কথা, এখানে তেমনটা নয়। আমাদের জাতীয় সংগীত যে জাতীয়তাবাদকে ধারণ করে আছে, তাতে রয়েছে স্বদেশ-জননী তথা ভূ-প্রকৃতির কাছে ফিরে যাওয়ার আকুতি। বঙ্গবন্ধু বলছেন যে, এই অনুভূতিটাই জাতীয়তাবাদের অন্যতম প্রধান প্রেরণা।
ইকোলজিক্যাল এই অনুভূতির পাশাপাশি রয়েছে পূর্ববাংলার জনগণের একত্র-সংগ্রামের ইতিহাস, যার কথা আমি পূর্বেই বলেছি। এই সংগ্রাম ১৯৪৭ থেকে ১৯৭১ অবধি বিভিন্ন পর্যায়ের আন্দোলনে জাতি-ধর্ম নির্বিশেষে সকল বাঙালির অংশগ্রহণের স্মৃতি। তার একটি মর্মন্তুদ বিবরণ দিয়েছেন বঙ্গবন্ধু ১৯৭২ সালের ১২ অক্টোবরের বক্তৃতায় :
‘জনাব স্পিকার সাহেব, সত্য আজ বলতে গিয়ে দুইটা জিনিস আমার সামনে আসে। একদিকে দুঃখ-ভারাক্রান্ত মন, আর একদিকে আমার মনে আনন্দের বান বয়ে যায়। দুঃখ-ভারাক্রান্ত মন এইজন্য বলি যে, আপনারা জানেন- জনাব স্পিকার সাহেব, আপনি আমার সঙ্গে বিশ বছর থেকে রাজনীতি করছেন, অন্তত বিশ বছরের ইতিহাস আপনি জানেন যে, দীর্ঘ বিশ বছর পর্যন্ত এদেশের জনসাধারণ শাসনতন্ত্রের জন্য সংগ্রাম করেছে। অনেক উত্থান-পতন হয়েছে, অনেক ঝড়-ঝঞ্ঝা বয়ে গেছে, অনেক রক্তের খেলা হয়েছে বাংলার মাটিতে। বাংলার ঘরে-ঘরে আজ মাতৃহারা, পুত্রহারার আর্তনাদ। লক্ষ লক্ষ বোন আজ বিধবা। হাজার হাজার গৃহ আজ ধূলিসাৎ। কত রক্ত বাংলার মানুষকে দিতে হয়েছে, স্পিকার সাহেব, সে কথা চিন্তা করলে বক্তৃতা করতে আমি পারি না।’
আমি জানি না, আমাদের memory short কিনা! বাংলার মানুষ ভুলে যায় কিনা! কিন্তু এমন ইতিহাস আমরা পেয়েছি। একটা ঘটনা মনে আছে। এক ছেলেু সে আমার কর্মী। মিলিটারি তাকে ধরে বলল : ‘জয় বাংলা’ বলতে পারবি না। সে বলল : “জয় বাংলা!” তখন তার একটা হাত কেটে দেওয়া হলো। বলল : আর ‘জয় বাংলা’ বলবি? সে বলল: “জয় বাংলা!” তখন তার বাম হাতটি কেটে দেওয়া হলো। তার দুইখানা হাত কেটে দেওয়া হলেও সে বলল : “জয় বাংলা!” তার একখানা কান কেটে দিল। বলল : আর বলবি ‘জয় বাংলা’? সে বলল : “জয় বাংলা!” তার আর একখানা কান কেটে দিল। বলল : বলবি ‘জয় বাংলা’? ছেলেটি বলল : “জয় বাংলা!” তারপর তার একখানা পা কেটে দিল। বলল : বলবি ‘জয় বাংলা’? ছেলেটি বলল : “জয় বাংলা!” তার বাম পা কেটে ফেলে দিল। তখন তার জ্ঞান প্রায় শেষ হয়ে এসেছে। তাকে বলল : বলবি ‘জয় বাংলা’? সে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করতে করতে বলল : “জয় বাংলা! জয় বাংলা!”
‘আমার সোনার বাংলা’ গানে প্রতিফলিত নিসর্গ-স্বদেশ-জননী নিয়ে সংবেদনবোধ বা ওপরে বর্ণিত অংশে দেশের জন্য প্রাণ উৎসর্গ করার কাহিনি উভয়েই ‘দেশপ্রেম’-এর অনুভূতির দৃষ্টান্ত। সূক্ষ্ণভাবে দেখলে এ কথাও বলতে হয় যে, ‘দেশপ্রেম’ আর ‘জাতীয়তাবাদ’ এক নয়, কাছাকাছিও নয়। নেশন, ন্যাশনালিটি, নেশন-স্টেট ও ন্যাশনালিজমু এই চারটি ধ্যান-ধারণা একই পরিবারভুক্ত। উনিশ শতকের ইউরোপীয় জাতীয়তাবাদের ইতিহাসেু নেশন-স্টেট গড়ার পর্বেু আমরা এসব ধারণার উত্থান দেখতে পাই। যখন নেশন-স্টেট ধারণার জন্মই হয়নি, তখনও দেশের মানুষের মধ্যে ‘দেশপ্রেম’ ছিল। দেশচিন্তা করার জন্য কাউকে কোনো-না-কোনো জাতীয়তাবাদের আশ্রিত হতে হবে- ব্যাপারটা আদৌ তা নয়। রবীন্দ্রনাথ কখনোই ‘জাতীয়তাবাদ’ শব্দটি ব্যবহার করতে চাননি। যখনই এর মুখোমুখি হয়েছেন, তখনই তিনি ন্যাশনালিজম বা নেশন শব্দ ব্যবহার করেছেন। তিনি মনে করতেন এই উপমহাদেশ কখনোই ‘নেশন’ ছিল নাুন্যাশনালিজমের পথে হাঁটেনি। প্রাচীন বা মধ্যযুগে অনেকবারই এই ভূভাগ বাইরের শত্রু দ্বারা আক্রান্ত হয়েছে এবং সেটা প্রতিহত করতে দেশের মানুষেরা সেকালের রাজাদের পেছনে সমর্থন নিয়ে দাঁড়িয়েছেন। সেটা কোনো ন্যাশনালিজমের কারণে নয়ু নিখাদ দেশপ্রেমের কারণে। প্রকৃতপক্ষে দেশপ্রেমিক হওয়ার জন্য ‘বাইরের শক্তি’ দ্বারা আক্রান্ত হওয়ার দরকার নেই। প্রতিরোধ যুদ্ধে অংশ নেওয়া দেশপ্রেমিকদের স্বাভাবিক প্রতিক্রিয়া, কিন্তু দেশপ্রেম আরও বড় জাগতিক বোধ যাকে শুধু প্রতিরোধ বা যুদ্ধের ভাষায় সীমাবদ্ধ করা চলে না। নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তীর কবিতায় যেমন ‘গুরুমশাই, দেশ দেখাচ্ছ অন্ধকারে’, যেখানে নৈশ পাঠশালায় মাস্টারমশাই দেশের মানচিত্র ছাত্র-ছাত্রীদের বোঝাচ্ছেন। দেশের মানচিত্র হচ্ছে ভৌগোলিক জাতীয়তাবাদ, আর মানচিত্রের ভেতরের অদৃশ্য মানুষেরা হচ্ছে দেশপ্রেম। রবীন্দ্রনাথের ‘আমার সোনার বাংলা’ যেমন নিত্যদিনের এবং চিরকালের পরিবেশ-প্রকৃতি, জীবনানন্দের ‘রূপসী বাংলার’ সনেটগুচ্ছ, তেমনি বাংলার নিসর্গ, নদী ও ইতিহাস। কিন্তু কোনো চিহ্ন নেই তাতে জাতীয়তাবাদের, অন্তত ইউরোপীয় জাতীয়তাবাদ-এর অর্থে। ‘রূপসী বাংলা’ কোনো নেশন-স্টেট গড়ে তুলতে চায়নিু তবে এটা পড়তে থাকলে আমরা আবহমান বাংলা ও তার নিসর্গে আচ্ছন্ন হয়ে যাই। এবং এ কারণেই কবি বলতে পারেন ‘বাংলার মুখ আমি দেখিয়াছি, তাই আমি পৃথিবীর মুখ খুঁজিতে চাই না আর।’ এটা দেশপ্রেমু কোনো জাতীয়তাবাদী স্টম্ফুরণ নয়। তারপরও মুজিবকে বাঙালি ‘জাতীয়তাবাদ’ শব্দটি ব্যবহার করতে হয়েছে। কেননা তিনি রাজনীতির ক্ষেত্রে বিচরণ করছেন এবং অন্য কোনো শব্দবন্ধ তার ও তার পরিপার্শ্বের রাজনীতিকদের জানা নেই বলে। কিন্তু শব্দটি ব্যবহার করলেও তার অভিপ্রায় ভিন্ন। সে জন্যই তিনি অনায়াসে বলতে পারেন জাতীয়তাবাদ মানে ‘আমার বাংলা’, ‘বাংলার মাটি’, বাংলার মানুষ’। এর বেশি কিছু তিনি দাবি করেননি। তার কাছে বাংলার মানুষই সব; এমনকি ‘বাঙালি’ এই আত্মপরিচয়ের চেয়েও বেশি গুরুত্বপূর্ণ ‘বাংলা’ শব্দটি, এবং এই বাংলায় বসবাসরত মানুষেরা। সংবিধানের প্রস্তাবনা অংশ এই আবহমান বাংলার মধ্যে একটি নির্দিষ্ট টাইম-লাইন বেঁধে দিয়েছেু বলেছে ‘জাতীয় মুক্তির জন্য ঐতিহাসিক সংগ্রামের মাধ্যমে স্বাধীন ও সার্বভৌম’ রাষ্ট্র-প্রতিষ্ঠার কথা ও তার মৌলিক চারটি আদর্শের কথা। কিন্তু জাতীয়তাবাদ এসেছে ‘জাতীয় মুক্তির সংগ্রাম’-এর অধীনস্থ ধারণা হিসেবেইু কোনো আলাদা রাজনৈতিক ‘আইডিওলজি’ হিসেবে নয়। ‘National liberation struggle’ শব্দবন্ধটি জাতীয়তাবাদের আগে স্বীকৃত হয়েছে সংবিধানের Preamble-র প্রথম স্তবকেই; জাতীয়তাবাদ এসেছে কেবল এর দ্বিতীয় স্তবকে। অন্য তিনটি আদর্শু সমাজতন্ত্র, গণতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষতা বলতে গিয়ে জাতীয়তাবাদের প্রসঙ্গ এসেছে, এবং জাতীয়তাবাদের চৌহদ্দিও বেঁধে দেওয়া হয়েছে ওই তিনটি আদর্শের দ্বারা। অর্থাৎ ইচ্ছা করলেই উগ্র-জাতীয়তাবাদ বা কেবল বুলি-কপচানো বাঙালি/বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদ হওয়ার উপায় আর থাকছে না। কেননা, এদেশের জাতীয়তাবাদের যে-নামকরণই হোক না কেন, তাকে শেষ পর্যন্ত সামঞ্জস্যপূর্ণ হতে হবে অন্য তিনটি আদর্শের সাথে। স্পষ্টতই উনিশ শতকের ইউরোপীয় নেশন-স্টেট ধারণা থেকে এই জাতীয়তাবাদের পরিসর মৌলিকভাবে ভিন্নতর। ইউরোপে যখন জাতি-রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত হয়েছে, তখন সর্বজনীন গণতন্ত্র, সমাজতন্ত্র বা ধর্মনিরপেক্ষতা এসব ধ্যান-ধারণা সমাজে প্রতিষ্ঠা পায়নি। এসব ধারণা ইউরোপে এসেছে আরও অনেক পরে। কিন্তু বাংলাদেশে জাতি-রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার ঊষালগ্নেই সর্বাধুনিক আদর্শসমূহ স্বীকৃত হয়েছিল এবং সেসব আদর্শ উঠে এসেছিল জাতীয় মুক্তি সংগ্রামের নানা পর্যায়ে প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে। রাজনৈতিক দর্শন-গ্রন্থের পাতা থেকে সেসব কপি করা হয়নি- এটাই এখানে বলার কথা।
‘ইকোলজিক্যাল ন্যাশনালিজম’ অর্থাৎ বাংলার ভূ-প্রকৃতির নৈসর্গিক অনুভূতিসঞ্জাত জাতীয়তাবাদ বঙ্গবন্ধুর জাতীয়তাবাদ সম্পর্কিত ধারণার একটি বৈশিষ্ট্যপূর্ণ দিক। বাঙলা-বাঙালি এই শব্দযুগলকে ঘিরে ‘অসাম্প্রদায়িক জাতীয়তাবাদ’ বঙ্গবন্ধুর জাতীয়তাবাদ ধারণার আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক। কিন্তু এর বাইরেও জাতীয়তাবাদ ধারণাকে ব্যক্ত করেছেন বঙ্গবন্ধু। সেটি হচ্ছে ‘শোষিতের জাতীয়তাবাদ’। ১৯৭২ সালের ডিসেম্বর মাসে খোন্দকার মো. ইলিয়াসকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বঙ্গবন্ধু এর সবিস্তারে ব্যাখ্যা দিয়েছেন। পুরো উদ্ধৃতিটি এখানে আমি গুরুত্বপূর্ণ বিধায় তুলে দিতে চাই। ইলিয়াস তাঁকে প্রশ্ন করেছিলেন :
‘জাতীয়তাবাদ আপনার মতবাদের অন্যতম প্রধান স্তম্ভ। কিন্তু আপনি তো জানেন জাতীয়তাবাদ উগ্রতা কিংবা সংকীর্ণতায় পর্যবসিত হলে ফ্যাসিবাদের জন্ম দেয়? তা সত্ত্বেও জাতীয়তাবাদের প্রতি আপনি এত গুরুত্ব দিচ্ছেন কেন?’
বঙ্গবন্ধু উত্তর দিলেন : ‘আপনি ঠিক বলেছেন যে, জাতীয়তাবাদ উগ্রতা কিংবা সংকীর্ণতায় পর্যবসিত হলে হিটলারের জার্মানি, মুসোলিনির ইতালি, ডক্টর ভেরউর্ডের দক্ষিণ আফ্রিকা, পাঞ্জাবি খানদের পাকিস্তান বা ইসরায়েলের ইহুদিবাদের মতো অতি জঘন্যরূপ ধারণ করতে পারে। সে জাতীয়তাবাদ দক্ষিণপন্থি ও প্রতিক্রিয়াশীল জাতীয়তাবাদ। কিন্তু আমার জাতীয়তাবাদ বামপন্থি ও প্রগতিশীল জাতীয়তাবাদ। নাৎসি জার্মানি, ফ্যাসিবাদী পাঞ্জাব, বর্ণবাদী দক্ষিণ আফ্রিকা ও ইহুদিবাদের মতো উগ্র ও সংকীর্ণ জাতীয়তাবাদের চরিত্র ও তার বিকাশ ধারা লক্ষ্য করলে দেখতে পাবেন যে, একচেটিয়া পুঁজিবাদ, সামন্তবাদ, সাম্রাজ্যবাদ, উপনিবেশবাদ ও নয়া উপনিবেশবাদ এবং আমলাতন্ত্রবাদ ও জঙ্গিবাদ উগ্র ও সংকীর্ণ জাতীয়তাবাদের মূলশক্তি। তারা গণতন্ত্রের শত্রু, সমাজতন্ত্রেরও শত্রু। তাদের জাতীয়তাবাদ শোষকদের জাতীয়তাবাদ। আমার জাতীয়তাবাদ শোষিতের জাতীয়তাবাদ। কারণ আমার জাতীয়তাবাদের নেতৃত্বে রয়েছেন কৃষক, শ্রমিক, ছাত্র ও বুদ্ধিজীবী শ্রেণির সমন্বয়ে গঠিত আওয়ামী লীগ। কাজেই যে জাতীয়তাবাদ আমার মতবাদের অন্যতম প্রধান অঙ্গ, সেই বিপ্লবী ও প্রগতিশীল জাতীয়তাবাদ ফ্যাসিবাদে রূপান্তরিত হবার কোনো ঐতিহাসিক, অর্থনৈতিক সামাজিক ও বাস্তব কারণ নেই।’
ইলিয়াসের দ্বিতীয় প্রশ্ন ছিল : ‘বিশ্ব সমাজকে একটি সমাজ এবং বিশ্ব মানবকে যদি একটি গোষ্ঠী ধরে নিই, তবে কি জাতীয়তাবাদের চেয়ে আন্তর্জাতিকতাবাদ উন্নতির পর্যায়ে নয়?’
বঙ্গবন্ধু এ প্রশ্নের উত্তর এভাবে দিলেন : ‘সাম্প্রদায়িকতাবাদ এদেশের মাটিতে গভীর শিকড় গেড়ে বসে আছে। তাকে নির্মূল করে তবেই এদেশের শ্রেণি চেতনার বিকাশ সাধন সম্ভবপর। আর একমাত্র শ্রেণি চেতনাই আন্তর্জাতিকতাবাদী দৃষ্টিভঙ্গির পূর্বশর্ত। এ দেশের অভিজ্ঞতা থেকে বলছি যে, শ্রেণি চেতনা বিকাশের পথে সাম্প্রদায়িকতাবাদ প্রধান অন্তরায়। আর সাম্প্রদায়িকতাবাদ নির্মূল করার রণকৌশল হিসেবেই আমি জাতীয়তাবাদী দর্শন অনুসরণ করেছি। এই মতবাদ কার্যকরী হলে, আমার বিশ্বাস, এ দেশের ভাবীকালের মানুষ ক্রমে ক্রমে জাতীয়তাবাদের গণ্ডি পার হয়ে উত্তীর্ণ হবে বিশ্বমানবতাবাদী উদার দৃষ্টিভঙ্গিতে।’
এখানে আমরা দেখতে পাচ্ছি যে মুজিব জাতীয়তাবাদকে অবিমিশ্র মঙ্গল হিসেবে দেখছেন না। সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে সংগ্রামে পরাধীন জাতি একসময় জাতীয়তাবাদের আশ্রয় নেয়। সেই অধস্তন জনগোষ্ঠীর লড়াকু জাতীয়তাবাদকেই ‘শোষিতের জাতীয়তাবাদ’ বলছেন তিনি। কিন্তু বিকাশের ধারা সেখানেই থেমে থাকছে না। যখন শ্রেণিচেতনার বিকাশ হবে, তখন শোষিতের জাতীয়তাবাদ আন্তর্জাতিকতাবাদের রূপ নেবে। কিন্তু শ্রেণিচেতনার বিকাশ অতটা সহজসাধ্য নয় যখন কিনা ‘আইডেনটিটি পলিটিক্স’ প্রাধান্যে চলে আসে। আইডেনটিটি তথা জাত-পাত, রেস, ধর্ম, সাম্প্রদায়িকতা যখন আবেগের প্রধান উৎস হয়ে দাঁড়ায়, তখন শ্রেণিচেতনা পিছু হটতে থাকে রাজনীতির মাঠ থেকে। সে অবস্থায় ‘সাম্প্রদায়িকতাবাদ নির্মূল করার’ একটি রণকৌশল হতে পারে শোষিতের জাতীয়তাবাদ।
[ক্রমশ]