বঙ্গবন্ধুর গণতান্ত্রিক সমাজতন্ত্র: বাহাত্তরের সংবিধান ও সমতামুখী সমাজের আকাঙ্ক্ষা

পর্ব ::৯০
[পূর্বে প্রকাশিতের পর]
বাংলাদেশের সংবিধানে ‘ধর্মনিরপেক্ষতা’র আসল অর্থ হচ্ছে মুসলমান, হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিষ্টান- এরা সবাই মানুষ। ধর্মনিরপেক্ষতাবাদ হচ্ছে প্রকৃতপক্ষে মানবিকতাবাদ (হিউম্যানিজম)। এটা বোঝার জন্য ইউরোপীয় রেনেসাঁর মানবিকতাবাদী দর্শন বোঝার দরকার নাই। আমাদের সমাজের ইতিহাসের গভীরে প্রোথিত জনজীবনের মৌলিক মানবিকতাবাদকে উপলব্ধি করাই যথেষ্ট। এ জন্যই আমাদের পূর্বপুরুষেরা তাদের নিজ নিজ ধর্মে বিশ্বাসী হয়েও অন্য ধর্মের লোককে আপনার আত্মীয় ও প্রতিবেশী বলে জ্ঞান করেছেন। রাজনৈতিক মতাদর্শ ও অর্থনৈতিক স্বার্থের টানাপোড়েন সেই দৃষ্টিভঙ্গিকে সময় সময় আচ্ছন্ন করেছে বটে, কিন্তু আমাদের ধর্ম-সম্প্রদায়ে মিলনের ইতিহাসই হচ্ছে মৌলিক ধারক। এ কথা রবীন্দ্রনাথও গভীরভাবে অনুভব করেছিলেন। মনসুরউদ্দীনের ‘হারামণি’ বইটির ভূমিকায় রবীন্দ্রনাথ লিখেছেন, ‘আমাদের দেশে যাঁরা নিজেদের শিক্ষিত বলেন, তাঁরা প্রয়োজনের তাড়নায় হিন্দু-মুসলমানের মিলনে নানা কৌশল খুঁজে বেড়াচ্ছেন। … বাউল সাহিত্যে বাউল সম্প্রদায়ের সেই সাধনা দেখি- এ জিনিস হিন্দু-মুসলমান উভয়েরই একত্র হয়েছে, অথচ কেউ কাউকে আঘাত করেনি। … এই গানের ভাষায় ও সুরে হিন্দু-মুসলমানের কণ্ঠ মিলেছে। কোরানে-পুরাণে ঝগড়া বাধেনি। এই মিলনই ভারতের সভ্যতার সত্য পরিচয়। বিবাদে বিরোধে বর্বরতা।’ এই মানবিকতাকে তুলে ধরতেই সংবিধানে গণতন্ত্র ও সমাজতন্ত্রের পাশাপাশি ধর্মনিরপেক্ষতাকে আলাদা করে তুলে ধরার প্রয়োজন হয়েছিল।
আজকে কালক্রমে আইডেন্টিটি পলিটিক্সের প্লাবনে ধর্মনিরপেক্ষতার আদি-প্রতিশ্রুতি অনেকটাই সাইডলাইনে চলে গেছে বলে মনে হতে পারে। এক সময় (১৯৬৬ সালে) বদরুদ্দীন উমর লিখতে পেরেছিলেন অবলীলায় ‘স্বাধীনতার পর থেকে আজ পর্যন্ত পাকিস্তানের বাস্তব জীবনক্ষেত্রে যা কিছু লক্ষণীয় পরিবর্তন এসেছে তাদের কোনোটিই কিন্তু ধর্মচিন্তার ফল নয়। … এ দেশের মুখ্য রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক আন্দোলনসমূহ- যেমন রাষ্ট্রভাষা আন্দোলন, শাসনতান্ত্রিক আন্দোলন, বন্দীমুক্তি আন্দোলন, শিল্পোন্নয়ন ও সমতা রক্ষার আন্দোলন ইত্যাদি ধর্মীয় প্রেরণায় উদ্বুদ্ধ নয়। উপরন্তু অনেক ক্ষেত্রে এগুলির আবেদন প্রায় ধর্মবিরোধী। ধর্মীয় আন্দোলনের প্রচেষ্টা যে ইদানীং কিছু কিছু হয়নি তা নয়। কিন্তু এ আন্দোলনের মধ্যে আগেকার সেই জৌলুস এবং মোহমুগ্ধতা আর থাকেনি। জীবনের সাথে এ জাতীয় আন্দোলনের যোগাযোগ যেন আজ অনেকাংশে বিচ্ছিন্ন। এ কারণেই এ দেশে ধর্মীয় বাধানিষেধ এবং নানা সংস্কার সত্ত্বেও নতুন মধ্যবিত্ত শ্রেণি এবং বুদ্ধিজীবী সম্প্রদায়ের কাছে ধর্মীয় চিন্তার সে পূর্ব আবেদন আর নেই।’
ওপরের কথাগুলো লিখিত হয়েছে ১৯৬৬ সালে। সেদিনের তুলনায় আজকের অবস্থা অনেকটাই বদলে গেছে ঘরে-বাইরে। সম্প্রতি স্বয়ং বদরুদ্দীন উমরও আবার ‘সাম্প্রদায়িকতা’ বইটি আজকের প্রেক্ষিতে লিখলে কথাগুলো অন্যভাবে বলতেন।
ধর্মবিশ্বাসী হয়ে ধর্মনিরপেক্ষতার পক্ষে শক্ত অবস্থানে দাঁড়ানোর আরো একটি উদাহরণ মওলানা ভাসানী। সময় সময় রাজনৈতিক কোন কোন অব্যাখ্যাত স্ব-বিরোধিতা বলে মনে হতে পারে ভাসানীর কিছু কিছু পদক্ষেপ। কিন্তু সামগ্রিক বিচারে কোন সন্দেহ নেই যে মওলানা ভাসানী ছিলেন এদেশের ইতিহাসে অসাম্প্রদায়িক, সামন্তবাদ-বিরোধী, সাম্রাজ্যবাদ-বিরোধী, গণতন্ত্রের পক্ষে দাঁড়ানো, সাধারণ খেটে-খাওয়া মানুষের স্বার্থের জন্যে নিরবচ্ছিন্নভাবে লড়াই করা এক ব্যতিক্রমী ও বর্ণিল রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব। ভাসানীর সুদীর্ঘ ও বিচিত্র অভিজ্ঞতা-সমৃদ্ধ রাজনৈতিক জীবনের এবং জীবন-দর্শনের মূল্যায়ন করার স্থান এখানে সীমিত। এ নিয়ে একটি বড় পরিসরের বিশ্নেষণমূলক কাজ হওয়া দরকার। আমি এখানে ধর্মনিরপেক্ষতা প্রসঙ্গে তার দৃষ্টিভঙ্গির সাপেক্ষে কয়েকটি মন্তব্য রাখছি কেবল।
প্রথমত, মওলানা ভাসানীর মানস-গঠনে বিভিন্ন উৎস থেকে প্রভাব এসেছিল। রাজনৈতিক জীবনের সূচনা পর্বেই তিনি ভিন্ন ধারার পথিক ছিলেন। দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাশ তাকে প্রভাবিত করেছিলেন, এটা জানা যায়। কংগ্রেস বা মুসলিম লীগ কোন দলের সাথেই তিনি ঘনিষ্ঠ হতে চাননি। চরমপন্থি বিপ্লববাদীদের দলেও তিনি নিজেকে দেখতে চাননি। ইসমাইল হোসেন সিরাজীর সাম্রাজ্যবাদবিরোধী আলোচনা তাকে টানত, কিন্তু তার অবস্থানও তাকে কাছে টানতে পারেনি। এ প্রসঙ্গে গবেষক সৈয়দ আবুল মকসুদ বলেছেন :
“ইসমাইল হোসেন সিরাজীর ‘সাহস ও আপসহীনতা এবং সাম্রাজ্যবাদবিরোধিতা পছন্দ হয়, কিন্তু সমস্যা হলো, তিনি শুধু মুসলমানদের জন্যেই কথা বলেন এবং উগ্র হিন্দু জাতীয়তাবাদীদের নিন্দা করেন। যে-সকল হিন্দু জাতীয়তাবাদী নেতা শুধু হিন্দুদের জন্যে কথা বলে যে-ভুলটা করেছেন; সিরাজীও শুধু তার নিজ সম্প্রদায়ের পক্ষে কথা বলে সেই ভুলেরই পুনরাবৃত্তি করছেন। যদিও মুসলমানদের পক্ষেও তখন কথা বলার লোকের প্রয়োজন ছিল। আবদুল হামিদ [ভাসানী] অত্যাচারিত ও দরিদ্রের পক্ষেু সেই অত্যাচারিত ও দরিদ্রের মধ্যে হিন্দু ও মুসলমান দু’সম্প্রদায়েরই মানুষ আছে, তবে ঘটনাক্রমে মুসলমানের সংখ্যাই বেশি।”
মওলানা ভাসানী আজীবন ধর্মান্তরের বিরোধিতা করে এসেছেন। এ প্রসঙ্গে সৈয়দ আবুল মকসুদ একটি তথ্য উল্লেখ করেছেন : ‘পীর হিসেবে তাঁর মুরিদান ও ভক্তের মধ্যে হিন্দু মুসলমান নানা সম্প্রদায়ের মানুষই ছিল। ১৯৬৯-এ আইয়ুবের পতনের পর ইয়াহিয়ার সামরিক শাসনের মধ্যে একদিন সন্তোষে রমেশ দেবনাথ নামে এক দরিদ্র হিন্দু সস্ত্রীক গিয়ে ভাসানীর কাছে ইসলাম ধর্ম গ্রহণের প্রস্তাব করেন। তিনি জানতে চান, তাদের কী পেশা। তারা জানান যে, তারা জাতে যোগী (নিম্নবর্ণের হিন্দু) কিন্তু এক সময় স্বর্ণকার ছিলেন। এখন আর সোনা-রূপার অলংকার কেউ বানাতে আসে না। জমিজমা তেমন নেই। অনেক ছেলেমেয়ে নিয়ে বড় কষ্টে দিন যাচ্ছে। মওলানা তাদের জিজ্ঞেস করেন, মুসলমান হলে তাদের আয় বাড়বে কিনা, আল্লাহ খুশি হয়ে তাদের ধনদৌলত দেবেন কিনা? তারা মাথা নিচু করে নিরুত্তর থাকেন। ভাসানী তাদের বলেন, ধর্মান্তরিত হওয়ার কোনো প্রয়োজন নেই। পাকিস্তানে অধিকাংশ মুসলমান কী সুখে আছে দেখছো না? পড়ালেখা কিছু জানলে বাড়িতে গিয়ে নিজের ধর্মগ্রন্থ গীতা পড়ো গিয়ে; দুনিয়াতে কোনো ধর্মই খারাপ নয়। গুরুকে প্রণাম করে দেবনাথ দম্পতি বিদায় নেন।’
সৈয়দ আবুল মকসুদের বয়ানে ভাসানীর ধর্মান্তরের বিরোধিতা প্রসঙ্গে আরও একটি ঘটনার কথা জানা যায় কাজী আনোয়ার-উল-হকের কাছে। ‘৫২-র ভাষা আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়ার কারণে ভাসানী কারারুদ্ধ থাকা অবস্থায় একবার গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়লে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য আনা হয়। সেখানে তার খোঁজ নেওয়ার জন্য যান আনোয়ার-উল-হক, তখন তিনি পুলিশের ডিআইডি (বিশেষ শাখা)। হাসপাতালের কেবিনে ভাসানী তার কাছে অতীত দিনের স্মৃতিচারণে বসেন। তিনি আসামের আন্দোলন সম্পর্কে বলতে গিয়ে বলেন, ‘আসামে আমার মুরিদদের মধ্যে হিন্দুও ছিলো, মুসলমানও ছিলো। আমি ধর্মান্তর পছন্দ করি না। অনেক মুসলমান নেতা আমাকে ধর্মান্তরের জন্য পরামর্শ দিতেন। আমি রাজি হইনি। ১৯৩৫ থেকে ‘৪৭ পর্যন্ত বারো বছরে যদি আমি চাইতাম তবে লাখ লাখ আদিবাসী ও হিন্দুকে আমি ইসলাম ধর্মে দীক্ষিত করতে পারতাম। আসামকে পূর্ব বাংলার মতোই মুসলমান মেজরিটি প্রভিন্স বানাতে পারতাম। জীবনে একজন হিন্দু বা অন্য কোনো ধর্মাবলম্বীকে আমি মুসলমান করিনি। তাতে লাভ কী? আমার হিন্দু শিষ্যদের ঠিকমতো তাদের ধর্মকর্ম করার পরামর্শ দিতাম।’
ভাসানী প্রায়ই বলতেন, ‘দুনিয়ায় মানুষ দুই ভাগে বিভক্ত- শোষক আর শোষিত, জালেম আর মজলুম। জালেম হিন্দু হোক, খ্রিষ্টান হোক, মুসলমান হোক; তার বিরুদ্ধে আমার সংগ্রাম চলবেই।’
দ্বিতীয়ত, সুবিদিত যে ভাসানীই ছিলেন পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগের প্রতিষ্ঠাতা-সভাপতি। আবার তারই সভাপতিত্বে ১৯৫৫ সালের ২১-২৩ অক্টোবর ঢাকার রূপমহল সিনেমা হলে অনুষ্ঠিত পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগের দ্বিবার্ষিক কাউন্সিল অধিবেশনে দলের নামকরণ বদলের প্রস্তাব গৃহীত হয়। সেই কাউন্সিল অধিবেশনে অসাম্প্রদায়িক রূপান্তরের লক্ষ্যে মওলানা ভাসানীর প্রস্তাবেই ‘মুসলিম’ শব্দটি বাদ দিয়ে দলের নাম হয় আওয়ামী লীগ। সেই অধিবেশনেই, যেখানে দলের সাধারণ সম্পাদক শেখ মুজিবুর রহমান গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন- গৃহীত হয় প্রস্তাব, যেখানে বলা হয়েছিল :’পাকিস্তান সরকার গত কয়েক বছর পাক-মার্কিন সামরিক চুক্তি, বাগদাদ চুক্তি, সিয়াটো চুক্তি প্রভৃতি এমন সব চুক্তিতে আবদ্ধ হইয়াছে, যেসব চুক্তির দ্বারা দেশের সার্বভৌমত্ব এবং দেশের অর্থনৈতিক, ব্যবসায়িক ও বাণিজ্যিক স্বাধীনতা ক্ষুণ্ণ হইয়াছে।’ অর্থাৎ অসাম্প্রদায়িকতার পাশাপাশি সাম্রাজ্যবাদ-বিরোধিতা পূর্বাপর বহমান ছিল। সেই অধিবেশনে সভাপতির ভাষণে ভাসানী বলেন :’এই দুই বছরের ভেতর আমি ইউরোপের নানান দেশ ভ্রমণ করিয়া বিভিন্ন গণতান্ত্রিক দেশের রাজনৈতিক-সামাজিক ও অর্থনৈতিক জীবনব্যবস্থার সঙ্গে ঘনিষ্ঠ ও নিবিড়ভাবে পরিচিত হইবার ও নানা প্রকারের তথ্য সংগ্রহ করিবার সুযোগ পাইয়াছি এবং সেই অভিজ্ঞতার পরিপ্রেক্ষিতে পাকিস্তানের বর্তমান অবস্থায় এই অভিজ্ঞতা আমাদের ভবিষ্যৎ কর্মপন্থা গ্রহণের পথে সহায়তা করিবে বলিয়া আমি বিশ্বাস করি।
পাকিস্তান অর্জনের সময় যে বিরাট উন্মাদনা আট কোটি মানুষের জীবনকে নবচেতনা ও বিরাট সম্ভাবনার আশায় উদ্বুদ্ধ করিয়াছিল, সে আশা-আকাঙ্ক্ষা মানুষের অবসন্ন ও হতাশ প্রাণে এক রঙিন স্বপ্নের সৃষ্টি করিয়াছিল, নবলব্ধ পাকিস্তানের প্রত্যেকটি নর-নারীর প্রাণ অপেক্ষা প্রিয়তর দেশকে সুখী সমৃদ্ধশালী করিয়া স্বর্গরাজ্য করিবার দৃঢ় সংকল্প গ্রহণ করিয়াছিল। আট বছরের লীগশাহির কুশাসন ও অমানুষিক অত্যাচার, অবিচার, দুর্নীতি, বেইমানি, দাগাবাজি সেই আশা-আকাঙ্ক্ষা ও সম্ভাবনার স্বপ্নকে ভাঙিয়া চুরমার করিয়া দিল।….আমরা মুসলমানু পাকিস্তানকে ইসলামী রাষ্ট্র বলিয়া ঘোষণা করা হইবে এই চিৎকার উঠিতেছে কিন্তু ইসলামী জীবন-যাপন করিবার কথা কাহারও মনে হইতেছে না। দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি, অত্যাচার, অবিচার অবাধে চলিতেছে। ঘোড়দৌড়, বেশ্যাবৃত্তি, মদ্যপান, জুয়া প্রভৃতি অন্যায় কার্য দেশে কেবল চলিতেছেই না; সরকারও যেন ইহার পৃষ্ঠপোষকতা করিতেছেন। পাপের ভারে দেশ ধ্বংসের পথে।… দ্বিজাতিতত্ত্বের ভিত্তিতে শাসনতন্ত্র গঠনের কথা বলা হইতেছে। পাকিস্তানে শুধু মুসলমানই পাকিস্তানি নহে; বৌদ্ধ, খ্রিষ্টান, হিন্দু সকলেই পাকিস্তানি জাতি। পাকিস্তানে চারি জাতির বাস যাহারা কল্পনা করেন তাহারা ভবিষ্যতে পাকিস্তানকে চতুষ্পদের স্থান বলিয়া ছাড়িবেন, এই ভয় হয়। পাকিস্তানে মুসলমান শতকরা আশিজন, এমতাবস্থায় পৃথক নির্বাচনের দাবি আমাদের পক্ষে অযৌক্তিক। দুই জাতির ভিত্তিতে আমরা পাকিস্তান সংগ্রাম করিয়াছিলাম এই যুক্তির ভিত্তিতে- হিন্দুরা যদি হিন্দু পাকিস্তান বা পাক হিন্দুস্তান নামে ভিন্ন প্রদেশের দাবি করিয়া বসেন তাহা হইলে কোন যুক্তি দ্বারা তাহার প্রতিবাদ করিতে পারি। এই প্রসঙ্গে আমরা কায়েদে আযমের বাণীর কথা উল্লেখ করিতে চাই। তিনি বলিয়াছিলেন, পাকিস্তানে রাজনৈতিক ভিত্তিতে মুসলমান ও হিন্দু নিজেদের জাতীয়তা ভুলিয়া শুধু পাকিস্তানিই হইবেন। দক্ষিণ আফ্রিকা ছাড়া আর অন্য কোনো দেশ নাগরিকদের মধ্যে ভেদাভেদ সৃষ্টি করে নাই। ইহা সভ্যতার পরিপন্থি। যুক্ত নির্বাচন প্রথা না হইলে চেকোশ্নোভাকিয়ার ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি হইবে। …বন্ধুগণ, আওয়ামী লীগকে অসাম্প্রদায়িক করার একটা প্রশ্ন দুই বছর পূর্বেই উঠিয়াছে এবং বিগত কাউন্সিল অধিবেশনে শাসনতন্ত্র [গঠনতন্ত্র] গৃহীত হওয়ার সময় আওয়ামী লীগের নাম সম্বন্ধে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত করিবার ভার আমার উপর ন্যস্ত করা হইয়াছিল। আমি ভিন্ন ভিন্ন জেলা, মহকুমা আওয়ামী লীগ কর্মীদের সাথে আলাপ-আলোচনা করিয়া এই সিদ্ধান্ত করিয়াছি যে, দেশের অধিকাংশ লোকই, বিশেষত কর্মীদের বহুলাংশই প্রতিষ্ঠানকে অসাম্প্রদায়িক করার শুধু পক্ষপাতীই নন; জোর দাবিও জানাইয়াছেন।’
তৃতীয়ত, পূর্ব বাংলায় অসাম্প্রদায়িক চেতনার বিকাশে ভাসানীর আহ্বানে আয়োজিত ‘কাগমারী সম্মেলন’ একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
[ক্রমশ]

Leave a Reply

Fill in your details below or click an icon to log in:

WordPress.com Logo

You are commenting using your WordPress.com account. Log Out /  Change )

Twitter picture

You are commenting using your Twitter account. Log Out /  Change )

Facebook photo

You are commenting using your Facebook account. Log Out /  Change )

Connecting to %s