পর্ব ::৮৮
[পূর্বে প্রকাশিতের পর]
এর সারার্থ :বাজেটের যত ভর্তুকি, যত সহায়তা তার লক্ষ্য হবে সর্বপ্রথমে অতিদরিদ্র ও দরিদ্র জনগোষ্ঠীর কাছে পৌঁছে যাওয়া। স্পষ্টতই এটি প্রথাগত পুঁজিবাদের ধারণার বাইরে, যেখানে ধনী ক্রমেই ধনী হচ্ছে আর গরিব আরও গরিব হচ্ছে বা গরিবী যেখানে সেভাবে হটছে না। রাউলসের বণ্টননীতি মানলে সমাজে আয়-বৈষম্য, সম্পদ-বৈষম্য এবং সুযোগ-বৈষম্য ক্রমান্বয়ে কমে আসার কথা। সেজন্যই তাকে যথার্থভাবে পুঁজিবাদের উদারনৈতিক সমালোচক বলে অভিহিত করা হয়ে থাকে। কিন্তু রাউলসের Maximin প্রিন্সিপালের ছায়াপাত দেখি বাহাত্তরের সংবিধানের মধ্যেও, যেমন এর ১৪নং ধারায়। এটি সরাসরিভাবে ১৯৬৪ সালের পুনরুজ্জীবিত আওয়ামী লীগের ‘ঘোষণা ও কর্মসূচি’ এবং ১৯৭০ সালের ‘নির্বাচনী ম্যানিফেস্টো’ থেকে নেওয়া :’রাষ্ট্রের অন্যতম মৌলিক দায়িত্ব হইবে মেহনতী মানুষকে- কৃষক ও শ্রমিককে এবং জনগণের অনগ্রসর অংশসমূহকে সকল প্রকার শোষণ হইতে মুক্তি দান করা।’
এখানে Maximin প্রিন্সিপালের সাথে মিল এড়িয়ে যাওয়ার মতো নয়। এটা আরও স্পষ্ট হয় বঙ্গবন্ধুর ভাষণ থেকে। ১৯৭২ সালের ৪ঠা নভেম্বর সংবিধান গৃহীত হওয়ার পর সমাপনী ভাষণে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব তার মতো করে রাউলসের লিবার্টি ও ইক্যুইটি প্রিন্সিপালকে সমন্বয় সাধন করলেন। পাশ্চাত্যের গণতন্ত্রের সাথে আমাদের সমাজের গণতন্ত্রের পার্থক্য কোথায় তা নির্দেশ করলেন এবং সেই গণতন্ত্রে যেন দেশের সবচেয়ে বঞ্চিত দুঃখী মানুষ সর্বাগ্রে রাষ্ট্রের তরফে সুরক্ষা পায় সেদিকটি তুলে ধরলেন। সেই প্রথম যেখানে তিনি ‘শোষিতের গণতন্ত্র’ প্রকল্পটি তত্ত্বগত দৃষ্টিতে তাৎপর্যপূর্ণভাবে তুলে ধরেছিলেন। পুরো উদ্ৃব্দতিটি তুলে দেওয়ার মতো- পাঠকই রাউলসের তত্ত্বের আলোকে তা বিচার করুন:
‘আমরা গণতন্ত্রে বিশ্বাস করি। গণতন্ত্র সেই গণতন্ত্র; যা সাধারণ মানুষের কল্যাণ সাধন করে থাকে। মানুষের একটা ধারণা এবং আগেও আমরা দেখেছি যে, গণতন্ত্র যেসব দেশে চলেছে দেখা যায়, সেসব দেশে গণতন্ত্র পুঁজিবাদীদের Protection দেওয়ার জন্য কাজ করে এবং সেখানে শোষকদের রক্ষা করার জন্যই গণতন্ত্র ব্যবহার করা হয়। সে গণতন্ত্রে আমরা বিশ্বাস করি না। আমরা চাই শোষিতের গণতন্ত্র এবং সেই শোষিতের গণতন্ত্রের অর্থ হলো, আমার দেশে যে গণতন্ত্রের বিধিলিপি আছে তাতে যেসব Provision করা হয়েছে, যাতে এ দেশের দুঃখী মানুষ Protection পায়, তার জন্য বন্দোবস্ত আছে- ওই শোষকরা যাতে Protection পায়, তার ব্যবস্থা নাই। সেজন্য আমাদের গণতন্ত্রের সঙ্গে অন্যের [গণতন্ত্রের] পার্থক্য আছে। সেটা আইনের অনেক ঝপযবফঁষব-এ রাখা হয়েছে, অনেক বিলে রাখা হয়েছে… শোষিতকে রক্ষা করার জন্য এই গণতন্ত্র ব্যবহার করা হবে। সেজন্য এখানের গণতন্ত্রের, আমাদের সংজ্ঞার সঙ্গে অন্য অনেকের সংজ্ঞার পার্থক্য হতে পারে।’
বঙ্গবন্ধুর ‘শোষিতের গণতন্ত্র’ ধারণাটি বাকশাল কর্মসূচি ঘোষণার তিন বছর পূর্বেই তার চিন্তার মধ্যে প্রবেশ করেছিল। ‘শোষিতের গণতন্ত্র’ যেমন ‘বুর্জোয়া গণতন্ত্রের’ থেকে আলাদা, তেমনি প্রথাগত সমাজতান্ত্রিক দেশসমূহের ‘প্রলেতারীয় গণতন্ত্র’ থেকেও আলাদা। শেষের বিচারে, মানুষের সবকিছুই চাই। শুধু অন্ন-বস্ত্র-বাসস্থান-কর্মসংস্থান-শিক্ষা-স্বাস্থ্য পেলেই তার চলে না, তার চাই ইচ্ছেমতো লেখার কবিতার খাতা, দেশ-পরিচালনায় প্রত্যক্ষ অংশগ্রহণ, কারখানা ব্যবস্থাপনায় অংশগ্রহণের অধিকার, তার চাই স্বাধীনতা ও ভোটের অধিকার। যেটি না থাকলেু বঙ্গবন্ধু নয়াচীন ভ্রমণের কালে বুঝতে পেরেছিলেন, মানুষের মন ‘পাথরের মতো শুস্ক হয়ে যায়’। সেজন্যই সমাজতান্ত্রিক দেশসমূহের ব্যবস্থাপত্রকে তিনি ছক বা ‘মডেল’ হিসেবে অনুসরণ করতে চাননি। তার শোষিতের গণতন্ত্র যে ধরনের অর্থনৈতিক সমাজতন্ত্রের ভিত্তিতে গড়ে উঠবে সেটাও একান্ত ভাবেই বঙ্গবন্ধুর নিজস্ব রাজনৈতিক উপলব্ধিজাত। সেদিনের সমাপনী বক্তৃতায় বঙ্গবন্ধু তার সহকর্মীদের স্মরণ করিয়ে দিচ্ছেন যে, বাংলাদেশে সমতাবাদী বিকাশের পথ অন্য সব দেশের অনুসরণে নির্মিত হবে না : গণতন্ত্রের মতোই ‘সমাজতন্ত্র আমরা দুনিয়া থেকে হাওলাত করে আনতে চাই না। এক এক দেশ, এক এক পন্থায় সমাজতন্ত্রের দিকে এগিয়ে চলেছে। সমাজতন্ত্রের মূল কথা হলো শোষণহীন সমাজ। সেই দেশের কী climate, কী ধরনের অবস্থা, কী ধরনের মনোভাব, কী ধরনের আর্থিক অবস্থা, সবকিছু বিবেচনা করে step by step এগিয়ে যেতে হয় সমাজতন্ত্রের দিকে এবং তা আজ স্বীকৃত হয়েছে। রাশিয়া যে পন্থা অবলম্বন করেছে, চীন তা করে নাইু সে অন্যদিকে চলেছে। রাশিয়ার পাশে বাস করেও যুগোস্লাভিয়া, রোমানিয়া, বুলগেরিয়া তাদের দেশের environment নিয়ে, তাদের জাতির background নিয়ে সমাজতন্ত্রের অন্য পথে এসেছে। …বিদেশ থেকে হাওলাত করে এনে কোনোদিন সমাজতন্ত্র হয় না, তা যাঁরা করেছেন, তাঁরা কোনোদিন সমাজতন্ত্র করতে পারেন নাই। …সেজন্য দেশের environment, দেশের মানুষের অবস্থা, তাদের মনোবৃত্তি, তাদের ‘কাস্টম’, তাদের আর্থিক অবস্থা, তাদের মনোভাব, সব কিছু দেখেstep by step এগিয়ে যেতে হয়। একদিনে সমাজতন্ত্র হয় না। কিন্তু আমরা নয় মাসে যে পদক্ষেপগুলো নিয়েছি, তা আমার মনে হয়, দুনিয়ার কোনো দেশ, যারা বিপ্লবের মাধ্যমে socialism করেছে, তারাও আজ পর্যন্ত তা করতে পারে নাইু আমি চ্যালেঞ্জ করছি। কোনো কিছু করলে কিছু অসুবিধার সৃষ্টি হয়ই। সেটা process-র মাধ্যমে আস্তে আস্তে ঠিক হয়ে যায়।’
এই যে দেশের মানুষের মনোভাব, পরিবেশ, প্রকৃতি, ‘কাস্টম’, অর্থনৈতিক অবস্থা, ‘কালচার’ এসব শুধু সমাজতন্ত্রের আদি রূপকল্পকেই প্রভাব করবে তা-ই নয়, এটি দেশের মানদণ্ডে ‘শোষিতের গণতন্ত্র’ কী, এদেশের মতো করে ‘ধর্মনিরপেক্ষতা’, এবং এদেশের সাথে মানানসই ‘জাতীয়তাবাদ’ নির্মাণেও অভিঘাত ফেলবে। একজন সফল রাষ্ট্রনায়ক, রূপান্তরবাদী দল ও রাজনৈতিক মতাদর্শের কাজ হবে বিকাশের প্রতিটি পর্যায়ে গণতন্ত্র, সমাজতন্ত্র, ধর্মনিরপেক্ষতা ও জাতীয়তাবাদকে step by step এগিয়ে নিয়ে যাওয়া সব কিছু বিবেচনা করে। ধর্মনিরপেক্ষতা বা সেক্যুলারিজম নিয়ে বঙ্গবন্ধুর আলোচনা পদ্ধতিগতভাবে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং সমতামুখী সমাজের চিন্তার ক্ষেত্রেও প্রাসঙ্গিক।
‘ধর্মনিরপেক্ষতা’ শব্দটি বাহাত্তরের সংবিধানেই প্রথম আসেনি। মুক্তিযুদ্ধের সময়ে প্রকাশিত ‘জয় বাংলা’ পত্রিকায় অনেকবারই এই শব্দটি ব্যবহূত হয়েছে। কিন্তু কথাটির উৎপত্তি মুক্তিযুদ্ধেরও আগে। সেক্যুলারিজমের বাংলা হিসেবে ধর্মনিরপেক্ষতা শব্দটি চালু হয়েছিল মুক্তিযুদ্ধের কালেই, তবে পূর্ব বাংলার রাজনৈতিক ডিসকোর্সে ‘সেক্যুলারিজম’ শব্দটি প্রবেশ করেছিল ষাটের দশকেই। একটি উদাহরণ দিই। ১৯৭০ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের ভূমিধস জয়ের পর আবুল মনসুর আহমদ ১৯৭০ সালে ‘ইত্তেফাক’ পত্রিকায় ২৫শে ডিসেম্বর সংখ্যায় একটি নিবন্ধ প্রকাশ করেন। এর নাম ছিলু ‘সাধারণ নির্বাচনে সেক্যুলারিজমের জয়’। তার বিশ্নেষণের সমস্ত দিকের সাথে একমত হওয়ার দরকার নেই। কিন্তু স্বঘোষিত ‘ইসলাম পছন্দ’ দলগুলোর বিপরীতে আওয়ামী লীগের জয়কে তিনি দেখছেন সেক্যুলারিজমের বিজয় হিসেবেু এটাই এখানে তাৎপর্যপূর্ণ। ধর্মনিরপেক্ষ ও ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দুই মূল ধারার লড়াইয়ে ধর্মনিরপেক্ষ শক্তির বিজয়কে তিনি সমগ্র পাকিস্তানের জন্যই আধুনিক প্রগতিবাদের বিজয় হিসেবে দেখছেন। এমনকি দেশভাগ-উত্তর জিন্নাহকেও তিনি সেক্যুলারিজমের পথিকৃৎ বা স্থপতি হিসেবে দেখতে চেয়েছেন। পুরো উদ্ৃব্দতিটি প্রাসঙ্গিক বিধায় তুলে দিচ্ছি :
‘সাম্প্রতিক নির্বাচন ছিল একাধিক দিক হইতে গুরুত্বপূর্ণ। এর ফলাফল পাকিস্তানের জাতীয় জীবনে তাই একাধিক শুভ সূচনা করিয়াছে। তার মধ্যে অন্যতম প্রধান এই যে, এই নির্বাচনে সেক্যুলারিজমের জয় হইয়াছে। সেক্যুলারিজমই ছিল জাতির পিতার নসিহত ও ওসিয়ত। কাজেই এই নির্বাচনে কায়েদের জয় হইয়াছে। জনমতের দিক হইতে আধুনিক প্রগতিবাদী রাষ্ট্র হিসাবে পাকিস্তান টিকিয়া গিয়াছে।’
এই আশ্চর্যজনক দাবির সপক্ষে আবুল মনসুর আহমদ যুক্তি দিচ্ছেন এভাবে:
‘এই নির্বাচনের ফলাফল আমাদের রাষ্ট্রীয় জীবন দর্শনের শুভ সূচনার যে তাৎপর্য বহন করিতেছে, সে কথাই আজ আমি বলিতেছি। পূর্ব পাকিস্তানে আওয়ামী লীগের ও পশ্চিম পাকিস্তানের পিপল্স পার্টির বিরুদ্ধে যাঁরা নির্বাচনে লড়াই করিয়াছেন, তাঁদের মধ্যে এই একটি বাদে আর সবাই ইসলামী শাসনতন্ত্রের দাবিকেই নির্বাচনের ইস্যু করিয়াছিলেন। নিজেদের তাঁরা ‘ইসলাম পছন্দ’ আখ্যা দিয়াছেন। …আওয়ামী লীগ, ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি, পিপলস পার্টি, জাতীয় লীগ, কৃষক শ্রমিক পার্টি ইত্যাদি রাজনৈতিক দল রাজনীতিতে ধর্মের আমদানী সমর্থন করে না বলিয়াই ‘ইসলাম-পছন্দেরা’ ইহাদিগকে ইসলামবিরোধী আখ্যায়িত করিয়াছেন। এই সব দলকে ভোট দিলে পাকিস্তানে ইসলাম থাকিবে না, পাকিস্তান কুফরের মুল্লুক হইয়া যাইবে, এই ধরনের সাংঘাতিক সাংঘাতিক কথা বলিয়া ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের ধর্মোন্মাদনা সৃষ্টির চেষ্টা করিয়াছেন। এইভাবে তাঁরা দেশে এমন অবস্থার সৃষ্টি করিয়াছিলেন যে, নির্বাচনটা যেন ইসলাম ও কুফরের মধ্যে একটা জেহাদ। একটা ধর্মযুদ্ধ। …’ইসলাম-পছন্দরা’ সত্যই হারিয়া গিয়েছেন। পূর্ব পাকিস্তানে তাঁরা কার্যত নিশ্চিহ্ন হইয়া গিয়েছেন। পশ্চিম পাকিস্তানেও তাঁরা নগণ্য হইয়া পড়িয়াছেন।’
এরপর আবুল মনসুর আহমদ সেক্যুলারিজমের বঙ্গানুবাদ হিসেবে ‘ধর্মনিরপেক্ষতা’ শব্দটি ব্যবহার করলেন। আবারও তার লেখাটিতে ফিরে যেতে হয় :
‘কিন্তু আসল সত্য কথা কি? পাকিস্তানে ইসলাম সগৌরবে বহাল আছে। মুসলিম দেশবাসী সামগ্রিকভাবে আওয়ামী লীগকে এবং বিপুলভাবে পিপলস পার্টিকে ভোট দিয়াও ধর্ম হিসাবেও ঈমান আমানে সহিসালামতে আগের মতো ঈমানদার মুসলমান রহিয়াছেন। আওয়ামী লীগসহ সকল ধর্ম নিরপেক্ষতাবাদী রাজনৈতিক দলই বলিয়াছেন, তাঁরা ধর্ম বিরোধী নন, তাঁরাও পাক্কা ঈমানদার মুসলমান। তাঁরা নির্বাচিত হইয়া ক্ষমতায় গেলে ধর্মবিরোধী কোনো আইন রচনা ও কাজ সম্পাদন করিবেন না। ‘ইসলাম পছন্দ’রা ধর্মনিরপেক্ষ রাজনীতিবাদীদের এসব কথা বিশ্বাস না করিবার জন্য মুসলমান ভোটারদের তাগিদ দিয়াছেন। মুসলিম ভোটাররা তাদের নির্দেশ অমান্য করিয়াছেন। তাঁদের কথিত ইসলামবিরোধীদের জিতিয়াই দিয়াছেন। তাতেও ইসলাম খতম হয় নাই, হইবার কোনো সম্ভাবনাও দেখা যায় নাই। বরঞ্চ এটাই প্রমাণিত হইল যে, ‘ইসলাম পছন্দরাই’ মুসলিম ভোটারদের ধোঁকা দিয়াছিলেন, আর আওয়ামীসহ অন্যান্য সেক্যুলারিস্ট পার্টিরাই সত্য কথা বলিয়াছিলেন। ফলে এই দাঁড়াইল যে, নির্বাচনে ইসলামকে ইস্যু খাড়া করিয়াও ধর্মীয় রাজনীতিবিদদের কোনো লাভ হয় নাই। খামাখা তাঁরা পবিত্র ধর্মের অমর্যাদা করিলেন।’
এটাই হচ্ছে ধর্মনিরপেক্ষতা শব্দটির একটি ব্যাখ্যা। এ কথাটাই প্রথমে এসেছে বঙ্গবন্ধুর সেদিনের সমাপনী ভাষণে:
‘ধর্মনিরপেক্ষতা মানে ধর্মহীনতা নয়। মুসলমানরা তাদের ধর্ম পালন করবেু তাদের বাধা দেওয়ার ক্ষমতা এই রাষ্ট্রে কারও নাই। হিন্দু তাদের ধর্ম পালন করবেু কারও বাধা দেওয়ার ক্ষমতা নাই। বৌদ্ধরা তাদের ধর্ম পালন করবেু তাদের কেউ বাধাদান করতে পারবে না। খ্রীস্টানরা তাদের ধর্ম পালন করবেু কেউ তাদের বাধা দিতে পারবে না। আমাদের শুধু আপত্তি হল এই যে, ধর্মকে কেউ রাজনৈতিক অস্ত্র হিসাবে ব্যবহার করতে পারবে না। ২৫ বৎসর আমরা দেখেছি ধর্মের নামে জুয়াচুরী, ধর্মের নামে শোষণ, ধর্মের নামে বেইমানী, ধর্মের নামে অত্যাচার, ধর্মের নামে খুন, ধর্মের নামে ব্যাভিচারু এই বাংলাদেশের মাটিতে এসব চলেছে। ধর্ম অতি পবিত্র জিনিস। পবিত্র ধর্মকে রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসাবে ব্যবহার করা চলবে না। যদি কেউ বলে যে, ধর্মীয় অধিকার খর্ব করা হয়েছে, আমি বলব, ধর্মীয় অধিকার খর্ব করা হয়নি। সাড়ে সাত কোটি মানুষের ধর্মীয় অধিকার রক্ষা করার ব্যবস্থা করেছি।’
ধর্মকে সংকীর্ণ স্বার্থ সিদ্ধির উদ্দেশ্যে রাজনীতির সাথে জড়িত না করা এটি ধর্মনিরপেক্ষতার একটি দিক। আরেকটি দিক হলো, সর্বপ্রকার সাম্প্রদায়িকতা পরিহার করা এবং তার বিরুদ্ধে অবস্থান নেওয়া। এটি পুনরুজ্জীবিত আওয়ামী লীগের মেনিফেস্টো এবং ১৯৭০ সালের নির্বাচনী ইশতেহারে বড় আকারে বলা ছিল।
[ক্রমশ]