পর্ব :: ৮৩
[পূর্বে প্রকাশিতের পর]
কিন্তু দেখা গেল এই ঘোষণার পরেও দরিদ্র শ্রেণি থেকে আসা এবং অপুষ্টিতে ভোগা জনগোষ্ঠী সামরিক বাহিনীতে যোগদানের পরীক্ষায় কৃতকার্য হতে পারল না। সামরিক দক্ষতা অর্জনের জন্য শারীরিক সক্ষমতা ও পারঙ্গমতা একটি অত্যাবশ্যকীয় গুণ- যেটা অপুষ্টি ও অসুখে ভোগা জনগোষ্ঠীর পক্ষে অর্জন করা স্বাভাবিকভাবেই দুঃসাধ্য হয়ে পড়ে। এর ফলে সুযোগের সমতা নীতি ঘোষণার আগে ও পরে সামরিক বাহিনীতে সর্বস্তরের জনগণের অংশগ্রহণ করাকে নিশ্চিত করা গেল না। বাহিনীটি মূলত অবস্থাপন্ন শ্রেণি বা গোত্রের মধ্যেই সীমিত হয়ে থাকল। বার্নার্ড উইলিয়ামস এখানে যে উদাহরণ টেনেছেন তা একেবারে বিরল নয়। ১৮৫৭ সালের সিপাহি বিদ্রোহ দমনে পাঞ্জাবের যোদ্ধা-শ্রেণিকে ব্যবহার করা হয়েছিল দিল্লি ও উত্তর প্রদেশের নানা এলাকায়। এর পুরস্কারস্বরূপ সেন্ট্রাল পাঞ্জাবে সেনা সদস্যদের মধ্যে ভূমি বণ্টন করা হয় এবং এর মধ্য দিয়ে একটি নতুন ধরনের ভূস্বামী তথা সামরিক শ্রেণি বা গোত্রের জন্ম হয় পাঞ্জাব প্রদেশে ঔপনিবেশিক পরিচর্যায়। এই শ্রেণিটিই পরবর্তীতে পাকিস্তানের সামরিক বাহিনীতে দেশভাগের পর থেকে প্রধান ভূমিকা পালন করে আসছে। সমাজতাত্ত্বিক হামজা আলাভী এদিকটির প্রতি দৃষ্টিপাত করেছিলেন। এখনও সেন্ট্রাল পাঞ্জাবের অবস্থাপন্ন ঘরের এক ভাই যায় কৃষি ব্যবস্থাপনায়, আরেক ভাই যায় সামরিক বাহিনীতে এবং অন্য কোনো ভাই যায় বেসামরিক সরকারি চাকরিতে।
শিক্ষা, চিকিৎসা ও চাকরি ক্ষেত্রে ‘সুযোগের সমতা’ ঘোষিত হয়ে আসছে প্রায় প্রতিটি দেশেই। বিলেতে-আমেরিকায় বিভিন্ন করপোরেট সেক্টরের বিজ্ঞাপনে এখন লেখা থাকে ‘আমরা সুযোগের সমতার নীতিতে বিশ্বাসী’। কিন্তু সমস্যার গভীরে না পৌঁছানোর কারণে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই এই সুযোগের সমতার নীতি পর্যবসিত হয় ‘প্রতীকী সমতার’ নীতিতে। যাকে সমতার সাহিত্যে বলা হয়েছে formal equality of opportunity বলে। এর বিপরীতে ন্যায়বাদী দার্শনিকেরা প্রস্তাব করেছেন ‘প্রকৃত সমতা’ বা substantive equality of opportunity-র কথা। এবং খুঁটিয়ে দেখলে দেখা যাবে বাহাত্তরের সংবিধানে প্রতীকী সমতা নয়, প্রকৃত সমতার কথাই বোঝানো হয়েছে। এর প্রমাণ হচ্ছে ১৯নং অনুচ্ছেদের ২নং ধারা, যেখানে অবস্থাজনিত কারণে সৃষ্ট অসাম্যকে দূর করার জন্য সুষম সুযোগ-সুবিধা দান নিশ্চিত করার কথা বলা হয়েছে। পুরো উদ্ৃব্দতিটি প্রণিধানযোগ্য :
‘মানুষে মানুষে সামাজিক ও অর্থনৈতিক অসাম্য বিলোপ করিবার জন্য, নাগরিকদের মধ্যে সম্পদের সুষম বণ্টন নিশ্চিত করিবার জন্য এবং প্রজাতন্ত্রের সর্বত্র অর্থনৈতিক উন্নয়নের সমান স্তর অর্জনের উদ্দেশ্যে সুষম সুযোগ-সুবিধা দান নিশ্চিত করিবার জন্য রাষ্ট্র কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করিবেন।’
বাংলাদেশের ক্ষেত্রে শিক্ষা, চাকরি এবং চিকিৎসার ক্ষেত্রে সুযোগের ‘প্রকৃত সমতা’ অর্জনের চ্যালেঞ্জটি আরও ঘনিষ্ঠভাবে উপলব্ধি করা দরকার। কতটুকু বৈষম্য আমরা স্বীকার করে নিতে পারি? নৈয়ায়িক দার্শনিকদের জন্য এটা একটা বড় প্রশ্ন। সুযোগের সমান অধিকার প্রতিষ্ঠা পেলেই বৈষম্য দূরীভূত হয়ে যাবে না। একটি সবার জন্য উন্মুক্ত দৌড় প্রতিযোগিতায় কেউ প্রথম হয়, কেউ লক্ষ্যে পৌঁছায় সবার শেষে। এ ধরনের বৈষম্যকে প্রকৃত অর্থে অনাকাঙ্ক্ষিত বৈষম্য বলা চলে না। নৈয়ায়িকেরা সেই বৈষম্যকেই স্বীকার করতে রাজি যেটুকু মানুষে মানুষে ‘উদ্যমের ফারাকের’ কারণে সৃষ্টি হয়। যে-বৈষম্য ‘অবস্থার চাপে’ পড়ে সৃষ্টি হয় সেটি নিরসনযোগ্য বৈষম্য। যদি গ্রামের স্কুল থেকে আগত একজন শিক্ষার্থীকে (যার পরিবারে বা যার স্কুলে ইংরেজি শেখার কোনো আয়োজন বা পরিস্থিতি নেই) শহরের স্কুল থেকে আগত একজন শিক্ষার্থীর সঙ্গে ভর্তি পরীক্ষায় প্রতিযোগিতা করতে হয় এমন এক পরীক্ষায় যেখানে ইংরেজিতেই কেবল পরীক্ষাপত্র করা হয়েছে, সে ক্ষেত্রে গ্রামের স্কুলের শিক্ষার্থীর হেরে যাওয়ার সম্ভাবনাই বেশি। কেননা জন রোমার (Roemer) যাকে বলেছেন ‘লেভেল প্লেইং ফিল্ড’, বা এলিজাবেথ এন্ডারসন যাকে বলেছেন ‘লাক্ ইগালিটারিয়ানিজম (Luck egalitarianism), সেটি এ ক্ষেত্রে রক্ষিত হয়নি।
‘লাক্ ইগালিটারিয়ানিজম’-এর মূল কথা হলো নিম্নরূপ :’While inequalities are unjust if they derive from differences in people’s circumstances-because circumstances are a matter of brute luck– they are just if the are the product of people’s voluntary choice.’
অর্থাৎ শুধুমাত্র নিজস্ব নির্বাচন বা পছন্দের কারণে অথবা উদ্যমের তারতম্যের কারণে যদি কোনো ক্ষেত্রে বৈষম্যের সৃষ্টি হয় তাহলে তা মেনে নেওয়া সম্ভব। তবে সে ক্ষেত্রেও কথা থাকে। অবস্থাপন্ন ঘরের ছেলেমেয়েরা শিক্ষাক্ষেত্রে অনেকটাই এগিয়ে থাকে স্কুলের বাইরে ‘প্রাইভেট ক্লাস’ করার কারণে। গরিব ঘরের ছেলেমেয়েদের সে-সংগতি নেই। জেরাল্ড কোহেন (G. A. Cohen) এরকম ক্ষেত্রে যুক্তি দেখিয়েছেন যে, ‘লাক্ ইগালিটারিয়ানিজম’-র নীতি দাবি করে যে রাষ্ট্র এ ধরনের সমস্যা সুরাহা করার চেষ্টা করবে বা অন্তত সমাধান করতে সচেষ্ট হবে। যেমন, এই উদাহরণের ক্ষেত্রে রাষ্ট্র গরিব ছেলেমেয়েদের জন্য স্কুল ছুটির পরে নিখরচায় বাড়তি কোচিং ক্লাসের ব্যবস্থা করবে এবং এর জন্য যে বাড়তি ব্যয় হবে তার দায়িত্ব নেবে। এখানে প্রশ্ন উঠেছে, মোটিভেশন বা অনুপ্রেরণার তারতম্যের কারণে যে-বৈষম্যের সৃষ্টি হয়ে থাকে শিক্ষা ক্ষেত্রে, তার বেলায় কী করা হবে? দেখা গেছে, উচ্চশিক্ষিতের পরিবারের ছেলেমেয়েরা বাবা-মার অনুপ্রেরণা ও পরিবারের কারণে পড়াশোনায় অনেক বেশি তৎপর হয়ে থাকে। খেটে-খাওয়া মজুর পরিবারের বাবা-মা উভয়েই হাড়ভাঙা খাটুনির সঙ্গে জড়িত। সারাদিনের শেষে সন্তানদের ‘হোমওয়ার্ক’ দেখার সামর্থ্য তাদের নেই বললেই চলে। লাক্-ইগালিটারিয়ানিজম বলে যে এ ক্ষেত্রেও রাষ্ট্রের অনেক কিছু করার আছে। ধনী-গরিব নির্বিশেষে সকলের জন্য প্রি-স্কুল বা কিন্ডারগার্টেন শিক্ষা চালু করলে অনুপ্রেরণা বা উৎসাহের ক্ষেত্রে খামতি অনেকটুকু কমে আসবে। পাড়ায় পাড়ায় সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের বিস্তৃতি ধনী-গরিব নির্বিশেষে প্রতিভা বিকাশে সহায়ক এবং আত্মবিশ্বাস জোগায় যেটা স্কুলের পারফরম্যান্সেও প্রতিফলিত হতে বাধ্য। কভিডের সময় আমরা বিশেষভাবে লক্ষ্য করেছি যে, অনলাইন এডুকেশনের ক্ষেত্রে ধনী-গরিবের বৈষম্য আসলেই প্রকট। করোনার সময়ে যখন লকডাউনের কারণে স্কুলে পাঠদান বন্ধ রইল, ধনী পরিবারের ছেলেমেয়েরা অনলাইনে ঠিকই ক্লাস করতে পারল। ও-লেভেল এ-লেভেল পরীক্ষা দিতে পারল। গরিব পরিবারে একটি করে মোবাইল আছে বটে, কিন্তু স্মার্টফোনের সুবিধা এখনও অত্যন্ত কম। শহর এলাকার বাইরে ইন্টারনেট স্পিডও তুলনামূলকভাবে কম। এ ক্ষেত্রে রাষ্ট্রের বিনিয়োগ করা প্রয়োজন যাতে করে ধনী-গরিব নির্বিশেষে সকলের সুযোগের সমান অধিকার নিশ্চিত হয় শিক্ষার মতো অধিকারের ক্ষেত্রে। অর্থাৎ আমি বলতে চাচ্ছি, নৈয়ায়িক দার্শনিকদের সূত্র ধরে- ‘সুযোগের সমতা’ বাহাত্তরের সংবিধানের ১৯তম অনুচ্ছেদে কোনো প্রতীকী অর্থে বলা হয়নি। এর পেছনে রয়েছে রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকার স্বীকৃতি। যেটি সুযোগের সমতা বিধানে অবস্থার চাপে সৃষ্ট বৈষম্য বা ‘নির্দয় দুর্ভাগ্য’ (Brute luck) জনিত বৈষম্যকে দূরীভূত করে সবার জন্য সুযোগের দ্বার সমানভাবে খোলা রাখতে বদ্ধপরিকর। এক কথায়, ১৯নং অনুচ্ছেদ শুধু non-discrimination principle-এর ঘোষণাতেই আটকে থাকেনি। ১৯ নং অনুচ্ছেদের ১ নং ধারায় বলা হয়েছে ‘সুযোগের সমতার’ কথা, আর এর ২ নং ধারায় বলা হয়েছে ‘সুষম বণ্টনের কথা’। ১নং ধারায় বলা হয়েছে : ‘সকল নাগরিকের জন্য সুযোগের সমতা নিশ্চিত করিতে রাষ্ট্র সচেষ্ট হইবেন।’ আজকে যেটা সাসটেইনেবল ডেভেলপমেন্ট গোলস-এর ১নং (No Poverty) ২নং (Zero Hunger), ৩নং (Good Health & Well-being), ৪নং (Quality Education),
, ৫নং (Gender Equality), ৬নং (Clean Water and Sanitation), ৭নং (Affordable & Clean Energy), এবং ৮নং (Decent Work & Economic Growth) লক্ষ্যমাত্রা হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে তা পুনরুজ্জীবিত আওয়ামী লীগের মেনিফেস্টো, ‘৭০ সালের নির্বাচনী ইশতেহার এবং ৭২ সালের সংবিধানের ১৫নং অনুচ্ছেদে প্রতিফলিত হয়েছে। ১৫নং অনুচ্ছেদে নাগরিকদের ‘মৌলিক প্রয়োজনের ব্যবস্থা’ পূরণের অঙ্গীকার করা হয়েছিল। তাতে বলা হয়েছিল ‘পরিকল্পিত অর্থনৈতিক বিকাশের মাধ্যমে’ প্রবৃদ্ধি অর্জনের কথা এবং এর মাধ্যমে ‘অন্ন, বস্ত্র, আশ্রয়, শিক্ষা ও চিকিৎসাসহ জীবনধারণের মৌলিক উপকরণের ব্যবস্থা’ করার কথা। শুধু বিষয়টাকে মৌলিক প্রয়োজনের মধ্যেই সীমিত রাখা হয়নি। সেখানে আরও বলা ছিল ‘কর্মের অধিকার’ নিশ্চিত করার কথা এবং ‘যুক্তিসংগত বিশ্রাম, বিনোদন ও অবকাশের অধিকার’ প্রদানের গুরুত্ব। যারা পিছিয়ে পড়ে থাকবেন দারিদ্র্যের বিষ-বৃত্তের ভেতরে, তাদের প্রতি রাষ্ট্র সহায়তার হাত বাড়িয়ে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। হাল-আমলের তথাকথিত ‘সোশ্যাল প্রটেকশন’ কর্মসূচির বহু আগেই বঙ্গবন্ধু ও তার নিকটতম সহকর্মীদের চিন্তায় এসেছিল পিছনে-পড়ে থাকা জনগোষ্ঠীর অধিকার নিশ্চিত করার কথা, যার সংজ্ঞা ছিল নিম্নরূপ:
‘সামাজিক নিরাপত্তার অধিকার, অর্থাৎ বেকারত্ব, ব্যাধি বা পঙ্গুত্বজনিত কিংবা বৈধব্য, মাতাপিতৃহীনতা বা বার্ধক্যজনিত কিংবা অনুরূপ অন্যান্য পরিস্থিতিজনিত আয়ত্তাতীত কারণে অভাবগ্রস্ততার ক্ষেত্রে সরকারি সাহায্য লাভের অধিকার।’
শুধু ‘সুযোগের সমতার’ অধিকার নয়, আরও বেশি কিছু ছিল বঙ্গবন্ধুর অর্থনৈতিক দর্শনে। তিনি বুঝেছিলেন যে ইক্যুয়ালিটি অব অপরচুনিটি সুষম বণ্টনের সমাজের দিকে এগোনোর একটি প্রয়োজনীয় পূর্বশর্ত বটে, কিন্তু যথেষ্ট পূর্বশর্ত নয়। সমাজের একটি মুষ্টিমেয় অংশই উচ্চতর শিক্ষার সুযোগ লাভ করে দরিদ্র দশা থেকে সচ্ছল দশায় উন্নীত হতে পারবে। সকলের ক্ষেত্রে অদৃষ্ট সমান প্রসন্ন হয় না, সকলের ন্যাচারাল বুৎপত্তি বা প্রতিভাও সমান নয়। কিন্তু তাই বলে কি যারা দীনের চেয়ে দীন, যারা আজীবন কায়িক শ্রমের ভেতরে, খেটে-খাওয়া মানুষ যাদের বলি, তাদের কাজের কি মূল্যায়ন করা হবে না? তারা কি ফ্রন্টলাইন বা এসেনসিয়াল ওয়ার্কার্স হিসেবে স্বীকৃত ও সম্মানিত হবেন না? তাদের কি সমান নূ্যনতম সুযোগ-সুবিধা (Common Good) পাওয়ার অধিকার নেই? বঙ্গবন্ধু এই লক্ষ্যে বিশেষ করে ১৪ নং অনুচ্ছেদের প্রস্তাব করেছিলেন:
‘রাষ্ট্রের অন্যতম মৌলিক দায়িত্ব হইবে মেহনতি মানুষকে- কৃষক ও শ্রমিককে, এবং জনগণের অনগ্রসর অংশসমূহকে সকল প্রকার শোষণ হইতে মুক্তিদান করা।’
এবং তার জন্য রাষ্ট্রের তরফ থেকে মেহনতি মানুষকে সহায়তা করতে হবে, দেখভাল করতে হবে। আজকের Universal Basic Income-র ধারণার পূর্বছায়াও আমরা এখানে দেখতে পাই। অন্যত্র- ১৯৭২ সালের ২৬শে মার্চ জাতির উদ্দেশে প্রদত্ত ভাষণে প্রকারান্তরে তিনি উল্লেখ করলেন ‘equality of outcomes’-এর কথা। এটি এসডিজির ১০নং লক্ষ্যমাত্রা ‘বৈষম্য হ্রাস করা’র সঙ্গে সরাসরি সম্পর্কিত। সেদিন তিনি বলেছিলেন:
‘এই সরকার ন্যায়ভিত্তিক ও গ্রামীণ জীবনের মধ্যকার বৈষম্য সম্পর্কে সচেতন। সেইসব ডাক্তার ও ইঞ্জিনিয়ার যারা পাটচাষিদের উপার্জিত অর্থ দিয়ে মানুষ হয়েছেন, তাদেরকে গ্রামে ফিরে যেতে হবে। আমি ইতোমধ্যে প্রাথমিক পদক্ষেপ হিসেবে গ্রামে কাজ করার জন্য ৫০০ ডাক্তারকে নিযুক্ত করেছি। বাংলাদেশে মানুষ মানুষে, ব্যক্তিত্বে বৈষম্য থাকবে না। সম্পদের বণ্টন ব্যবস্থায় সমতা আনতে হবে। এবং উচ্চতর আয় ও নিম্নতর উপার্জনের ক্ষেত্রে যে আকাশচুম্বী বৈষম্য এতদিন ধরে বিরাজ করছিল সেটা দূর করার ব্যবস্থাদি উদ্ভাবনের জন্য আমি একটি বিশেষ কমিটি গঠন করার কথা বিবেচনা করছি।’
বঙ্গবন্ধুর এই উপলব্ধিই বাহাত্তরের সংবিধানের ১৯(২) ধারায় প্রকাশিত হয়েছিল ‘মানুষে মানুষে সামাজিক ও অর্থনৈতিক অসাম্য বিলোপ’ করার জন্য এবং নাগরিকদের মধ্যে ‘সম্পদের সুষম বণ্টন নিশ্চিত’ করার জন্য ‘সর্বত্র সুষম সুযোগ-সুবিধাদান’ প্রদানে রাষ্ট্রের তরফে ‘কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ’ করার কথা। পরিশেষে, ২০ নং অনুচ্ছেদে বলা হয়েছিল শ্রম অনুযায়ী বণ্টনের কথা:
‘প্রত্যেকের নিকট হইতে যোগ্য অনুসারে এবং প্রত্যেককে কর্মানুযায়ী’ এই নীতির ভিত্তিতে ‘প্রত্যেকে স্বীয় কর্মের জন্য পারিশ্রমিক লাভ করবেন।’
[ক্রমশ]