বঙ্গবন্ধুর গণতান্ত্রিক সমাজতন্ত্র: বাহাত্তরের সংবিধান ও সমতামুখী সমাজের আকাঙ্ক্ষা

পর্ব :: ৭৯
[পূর্বে প্রকাশিতের পর]


নিজস্ব উদ্যোগে বা শ্রমে উৎপাদিত পণ্য ও সেবার ওপরে ব্যক্তিগত অধিকারের স্বীকৃতি এবং সাধারণভাবে সম্পত্তির অধিকারে স্বীকৃতি লিবারেটারিয়ান ও অন্যবিধ ‘বুর্জোয়া’ গণতান্ত্রিক ধারার চিন্তাবিদদের মধ্যে একটি মৌলিক ও সার্বিক বৈশিষ্ট্য হিসেবে প্রত্যক্ষ করা যায়। এই ধারা পুঁজিবাদের উন্মেষ পর্ব থেকে আজ পর্যন্ত চলছে। এ জন্যই পুঁজিবাদকে ব্যক্তিমালিকানানির্ভর বাজার-অর্থনৈতিক ব্যবস্থা হিসেবে সংজ্ঞায়িত করা হয়ে থাকে। সম্পত্তির অধিকার শুধু উৎপাদনের উপায় (Means of Production)-এর ক্ষেত্রেই প্রসারিত হয়নি, কোনো কোনো দেশে ও কালে তা ব্যক্তি ও সমাজজীবনের নানা ক্ষেত্রেই প্রসারের চেষ্টা চলেছে। মার্কিন সংবিধানের সেকেন্ড এমেন্ডমেন্ট অনুসারে  ‘Right to carry guns’ একটি স্বীকৃত ধারণা, যদিও বিতর্কিত ধারণা ও মৌলিক অধিকার হিসেবে চিহ্নিত। মিশিগান প্রভৃতি অঙ্গরাজ্যে ডানপন্থি লিবারটারিয়ানরা সম্পত্তির ওপরে অধিকারের যুক্তিতে ইচ্ছেমতো প্রকাশ্যে অস্ত্র নিয়ে ঘোরাফেরার অধিকার রক্ষায় সাংঘাতিকভাবে সোচ্চার (এই বিশেষ ক্ষেত্রে তালিবানদের সঙ্গে তাদের সাদৃশ্য চোখে পড়ার মতো)। সন্দেহ কী আমাদের দেশেও সেই সুদূর বাহাত্তর সালেই ‘সম্পত্তির অধিকার’কে একপ্রকার ধরাছোঁয়ার ঊর্ধ্বে অবশ্য পালনীয় এক নীতি হিসেবেই দেখা হবে। অন্তত এটাই ছিল স্বাভাবিক প্রত্যাশা। স্বাধীন প্রকাশভঙ্গি, বাক-স্বাধীনতা, চিন্তার স্বাধীনতা, পেশা-বৃত্তি বা বাছাইয়ের ধর্ম-বর্ণ নিরপেক্ষ স্বাধীনতা যেমন গণতন্ত্রের জন্য গুরুত্বপূর্ণ, ব্যক্তিগত স্বাধীনতাকে সংরক্ষিত করা তেমনি গণতান্ত্রিক উপায়ে অর্থনীতি পরিচালনা করার জন্য সমানভাবে গুরুত্বপূর্ণ- এরকম যুক্তি দেওয়াটাই ছিল স্বাভাবিক। কিন্তু না, বাস্তবে বাহাত্তরের সংবিধান সে পথে এগোলো না। সম্পত্তির পূর্ণ অধিকারে বাদ সাধল ৪৭নং অনুচ্ছেদ। ব্যক্তিগত সম্পত্তির অধিকার বা ব্যক্তিমালিকানা সম্পর্কিত ‘বুর্জোয়া’ বা লিবারটারিয়ান অধিকার সে যে নামেই তাকে অভিহিত করি না কেন, সেখানে নিরঙ্কুশ থাকল না। ৪৭নং অনুচ্ছেদ নিয়ে সে জন্যই তুলকালাম বিতর্ক হলো বাহাত্তরের গণপরিষদে (এটি এবং পরবর্তীতে আলোচ্য ৭০ নম্বর অনুচ্ছেদ নিয়েই সবচেয়ে বেশি তীব্র বিতর্ক হয়েছিল সেদিন)।
কী বলেছিল ৪৭নং অনুচ্ছেদ? এতে লেখা ছিল যে, রাষ্ট্রের চার মূলনীতি কার্যকর করার জন্য সংসদ প্রয়োজন হলে ব্যক্তিগত সম্পত্তির অধিকারেও হস্তক্ষেপ করতে পারবে। এই হস্তক্ষেপের ধারাটি সংবিধানের তৃতীয় পরিচ্ছেদ ‘মৌলিক অধিকার’-এর মধ্যে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে- এটি বিশেষভাবে উল্লেখ করার মতো। অর্থাৎ এটিকে কেবল সংসদেই পরিবর্তন করা যাবে- কোনো সুপ্রিম কোর্ট বা হাইকোর্টে এই বিধান চ্যালেঞ্জ করা যাবে না। লিবারটারিয়ানরা যদি ‘মানুষের স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ করা হচ্ছে’ এই যুক্তিতে সম্পত্তির স্বাধীনতাকে সংরক্ষণ করতে চান- আর দশটা ‘হিউম্যান রাইটস’ জাতীয় বিষয়ের মতো সেটি আইনত গ্রাহ্য করা হবে না। ব্যক্তি স্বাধীনতা বা অন্য কোনো ব্যক্তি অধিকারের সঙ্গে সাংঘর্ষিক হলেও রাষ্ট্রের মূলনীতিসমূহের কোনো একটিকে (অর্থাৎ সমাজতন্ত্রকে) সমুন্নত করার স্বার্থে রাষ্ট্র যদি সম্পত্তির অধিকারে হস্তক্ষেপ করাকে আবশ্যিক মনে করে, তবে তাকে কোনো বিচারালয়ের কাঠগড়ায় দাঁড় করানো যাবে না। এ জন্যেই ৪৭নং অনুচ্ছেদের শুরুতেই বলে দেওয়া হয়েছে, রাষ্ট্রীয় হস্তক্ষেপের প্রয়োজনে জারিকৃত কোনো আইন ‘মৌলিক অধিকার’ অধ্যায়ে বর্ণিত কোনো গণতান্ত্রিক অধিকারের সঙ্গে সাংঘর্ষিক হচ্ছে বলেই তা বাতিলযোগ্য বলে গণ্য করা হবে না। আইনি ভাষায় বক্তব্যটি এভাবে পেশ করা হয়েছে : ‘সংসদ যদি স্পষ্টরূপে ঘোষণা করেন যে, এই সংবিধানের দ্বিতীয় ভাগে বর্ণিত রাষ্ট্র-পরিচালনার মূলনীতিসমূহের কোনো একটিকে কার্যকর করিবার জন্য অনুরূপ বিধান করা হইল, তাহা হইলে অনুরূপ আইন এইভাগে নিশ্চয়কৃত কোনো অধিকারের সহিত অসামঞ্জস্য কিংবা অনুরূপ অধিকার পূরণ বা খর্ব করিতেছে, এই কারণে বাতিল বলিয়া গণ্য হইবে না।’
অর্থাৎ চার মূলনীতিকে রক্ষা করার জন্য সংসদ দেশের প্রচলিত আইনে যে কোনো সংশোধনী আনতে পারবে এবং সেই সংশোধনকৃত আইনকে কতকগুলো বিশেষ ক্ষেত্রের জন্য বিচার বিভাগে চ্যালেঞ্জ করা যাবে না। সেটা যদি গণতান্ত্রিক অধিকার বা বিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক হয়ও, তাহলেও সেটা চ্যালেঞ্জের ঊর্ধ্বে থাকবে। কী সেই বিশেষ ক্ষেত্র যেখানে লিবার্টি প্রিন্সিপলকে মান্য করা হবে না দেশের চার মূল স্তম্ভকে কার্যকর করার জন্য? এর মধ্যে রয়েছে মূলত শিল্প-কলকারখানা, ব্যবসা-বাণিজ্য, কারবার প্রভৃতি অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে ব্যক্তিগত মালিকানার ((Private Property) ক্ষেত্রে প্রয়োজনে রাষ্ট্রের তরফে হস্তক্ষেপের অধিকার। ৪৭নং ধারায় ক্ষেত্রগুলো সুনির্দিষ্টভাবে চিহ্নিত করা হয়েছে। যেখানে রাষ্ট্র তার অধিকার প্রয়োগ করতে পারবে ব্যক্তিগত সম্পত্তি অধিগ্রহণ, রাষ্ট্রায়ত্তকরণ, সাময়িক অথবা স্থায়ীভাবে নিয়ন্ত্রণ ও ব্যবস্থাপনা করার ক্ষেত্রে। গুরুত্বপূর্ণ মনে করে আমি নিচে উপধারাগুলোকে হুবহু তুলে দিচ্ছি :
‘(ক) কোন সম্পত্তি বাধ্যতামূলকভাবে গ্রহণ, রাষ্ট্রায়ত্তকরণ বা দখল কিংবা সাময়িকভাবে বা স্থায়ীভাবে কোন সম্পত্তির নিয়ন্ত্রণ বা ব্যবস্থাপনা;
(খ) বাণিজ্যিক ও অন্যবিধ উদ্যোগসম্পন্ন একাধিক প্রতিষ্ঠানের বাধ্যতামূলক সংযুক্তকরণ;
(গ) অনুরূপ যে কোন প্রতিষ্ঠানের পরিচালক, ব্যবস্থাপক, এজেন্ট ও কর্মচারীদের অধিকার এবং (যে কোনো প্রকারের) শেয়ার ও স্টকের মালিকদের ভোটাধিকার বিলোপ, পরিবর্তন, সীমিতকরণ বা নিয়ন্ত্রণ;
(ঘ) খনিজদ্রব্য বা খনিজ তৈল-অনুসন্ধান বা লাভের অধিকার বিলোপ, পরিবর্তন, সীমিতকরণ বা নিয়ন্ত্রণ;
(ঙ) অন্যান্য ব্যক্তিকে অংশত বা সম্পূর্ণত পরিহার করিয়া সরকার কর্তৃক বা সরকারের নিজস্ব, নিয়ন্ত্রণাধীন বা ব্যবস্থাপনাধীন কোন সংস্থা কর্তৃক যে কোন কারবার, ব্যবসায়, শিল্প বা কর্মবিভাগ-চালনা, অথবা
(চ) যে কোন সম্পত্তির স্বত্ব কিংবা পেশা, বৃত্তি, কারবার বা ব্যবসায়-সংক্রান্ত যে কোনো অধিকার কিংবা কোন সংবিধিবদ্ধ সরকারি প্রতিষ্ঠান বা কোন বাণিজ্যিক বা শিল্পগত উদ্যোগের মালিক বা কর্মচারীদের অধিকার বিলোপ, পরিবর্তন, সীমিতকরণ বা নিয়ন্ত্রণ।’
এসব খাতে রাষ্ট্রীয় হস্তক্ষেপকে আইনগত বৈধতা দেওয়ার জন্য আরও বলা হয়েছে যে, এসব বিধান (বা তার সংশোধনী) ‘পূর্ণভাবে বলবৎ ও কার্যকর হইতে থাকিবে এবং অনুরূপ যে কোনো আইনের কোনো বিধান কিংবা অনুরূপ কোনো আইনের কর্তৃত্বে যাহা করা হইয়াছে বা করা হয় নাই, তাহা এই সংবিধানের কোনো বিধানের সহিত অসামঞ্জস্য বা তাহার পরিপন্থী এই কারণে বাতিল বা বেআইনী বলিয়া গণ্য হইবে না।’ অবশ্য সংসদ আগামীতে ইচ্ছে করলে রাষ্ট্রীয় হস্তক্ষেপের এসব বিধি-বিধানের ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় সংশোধনী আনতে পারে- এই বিধানও সেখানে রাখা হয়েছিল। কিন্তু সেইসঙ্গে এটাও যোগ করা হয়েছিল যে, সম্পত্তির অধিকারে রাষ্ট্রীয় হস্তক্ষেপের আইনে বিধি অথবা বিধানে কোনো সংশোধনী আনতে হলে ‘সংসদের মোট সদস্য সংখ্যার অনূ্যন দুই-তৃতীয়াংশের ভোটে গৃহীত না হইলে সম্মতির জন্য তাহা রাষ্ট্রপতির নিকট উপস্থাপিত হইবে না।’ অর্থাৎ সেটা বিল আকারে আইনি অনুমোদনের পর্যায়ে যেতে পারবে না। স্পষ্টতই দেখা যাচ্ছে ব্যক্তিগত (পুঁজিবাদী) সম্পত্তির ওপরে মালিকানা-অধিকারে রাষ্ট্রের হস্তক্ষেপকে অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করা হয়েছিল বাহাত্তরের সংবিধানে এবং হস্তক্ষেপ করার এই রাষ্ট্রীয় অধিকারকে আইনি ও সাংবিধানিক রক্ষাকবচ দেওয়া হয়েছিল। এক কথায় বললে, ‘লিবার্টি প্রিন্সিপলের’ ওপরে স্থান দেওয়া হয়েছিল ‘সোশ্যালিস্ট প্রিন্সিপলকে’। রাষ্ট্রের মূলনীতি রক্ষার প্রয়োজনে ব্যক্তিগত মালিকানা অধিকারের ‘বুর্জোয়া-গণ্ডি’কে সংকুচিত করা হয়েছিল ইচ্ছে করেই। লিবারটারিয়ানদের মানব-স্বাধীনতার (Human Freedom) বা ব্যক্তিস্বাধীনতার (ersonal Freedom) যুক্তিকে সেদিন শিরোধার্য করা হয়নি মালিকানা সম্পর্ক নির্ধারণের ক্ষেত্রে। সমাজতন্ত্রের প্রয়োজনে মালিকানা সম্পর্কে রদবদল করা যাবে- এই মৌলিক সমতাবাদী চিন্তা থেকে (কোনো কোনো মহলের প্রবল আপত্তি সত্ত্বেও) টলানো যায়নি বঙ্গবন্ধুকে এবং তার নিকটতম সহকর্মীদের, যারা সংবিধান প্রণয়নের সঙ্গে সরাসরিভাবে যুক্ত ছিলেন পূর্বাপর। লিবারটারিয়ান মানব স্বাধীনতার যুক্তিকেই শুধু অগ্রাহ্য করা হয়নি, যারা সামগ্রিক জিডিপি প্রবৃদ্ধিতে সামষ্টিক ইউটিলিটির সম্প্রসারণ দেখেন, সেইসব উপযোগিতাবাদী বা ইউটিলিটারিয়ান আর্গুমেন্টকেও চূড়ান্ত বলে মেনে নিতে রাজি ছিলেন না বঙ্গবন্ধু ও তার নিকটতম সহকর্মীরা। এ জন্যই রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতিসংবলিত সংবিধানের দ্বিতীয় অধ্যায়ের ১০ম অনুচ্ছেদে শ্রীবৃদ্ধি (Affluence, Opulence বা Growth) নয়, শ্রীবৃদ্ধির ‘পরিণামের’ ওপরে জোর দেওয়া হয়েছিল। এবং প্রবৃদ্ধি নয়, সাম্যবাদী সমাজলাভ করাকেই অর্থনৈতিক উন্নয়নের মূল লক্ষ্য হিসেবে শনাক্ত করা হয়েছিল। অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অবশ্যই চাই, কিন্তু সেরকমের প্রবৃদ্ধি চাই, যা সামাজিক ন্যায় ও শোষণমুক্তির লক্ষ্যকে ত্বরান্বিত করবে। যে কোনো প্রকারের, যেনতেন প্রকারের প্রবৃদ্ধি অর্জন বাহাত্তরের সংবিধানের মূল লক্ষ্য ছিল না। উপযোগিতাবাদী ইউটিলিটারিয়ানরা অনেক সময়ে যুক্তি দিয়ে থাকেন যে, ধনীদের ওপরে করারোপ করে গরিবদের ভাগ্য পরিবর্তন করতে চাওয়া ঠিক হবে না। কেননা এতে করে উৎপাদনে বা ব্যবসায় ধনী উদ্যোক্তাদের আগ্রহ কমে যাবে। ফলে উৎপাদন ব্যাহত হবে, উৎপাদনশীলতা কমবে, বেকারত্ব বাড়বে, এতে করে আখেরে ক্ষতি হবে গরিবদেরই। উপযোগিতাবাদীদের দৃষ্টিতে এ ধরনের করারোপ স্পষ্টতই বিকৃতি-উৎপন্নকারী (distortionary) পদক্ষেপ। ‘বিকৃতি’-র মানে হচ্ছে- কোনো কর বসানো না হলে বিভিন্ন খাতে সম্পদ যেভাবে বিনিয়োজিত হতো, তা থেকে করারোপের কারণে এতটাই সরে আসতে হচ্ছে যে, এর ফলে অর্থনৈতিক বিনিয়োগ ও প্রবৃদ্ধি সামগ্রিকভাবে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। লক্ষ্য করুন, ইউটিলিটারিয়ানরা যখন এ যুক্তি রাখছেন তারা incentive-এর ওপরে করের সম্ভাব্য কুপ্রভাবকে জোরেশোরে তুলে ধরছেন। তারা লিবের্টারিয়ানদের মতো মানব স্বাধীনতা বা ব্যক্তি স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ করা হচ্ছে এরকম নীতিবাদী যুক্তি প্রদর্শন করছেন না। বঙ্গবন্ধু ও বাহাত্তরের সংবিধানের প্রণেতাগণ লিবের্টারিয়ানদের ‘ব্যক্তি স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপের’ ফলে বেইনসাফের যুক্তি যেমন মানেননি, উপযোগিতাবাদীদের ‘বিকৃতি-উৎপন্নকারী’ যুক্তিও মানতে রাজি ছিলেন না। উৎপাদনের উপায়ের ওপরে ব্যক্তিমালিকানার স্বভাবজ ‘বুর্জোয়া’ অধিকারের ক্ষেত্রে রাষ্ট্রীয় হস্তক্ষেপকে ৪৭নং অনুচ্ছেদে সাংবিধানিক বৈধতা দিতে গিয়ে  Freedom বা Distortion কোনো যুক্তিকেই প্রশ্রয় দিতে রাজি ছিলেন না। এটা তো তাদের জানাই ছিল যে করারোপের মতোই মালিকানা সম্পর্কে রাষ্ট্রীয় হস্তক্ষেপকে অবাধ অনুমোদন দেওয়ার অর্থ হচ্ছে হয় পুঁজিপতিদের ব্যক্তি স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ করার শামিল (যেটা লিবের্টারিয়ানদের সওয়াল জবাব ছিল), অথবা তা ছিল বাজার অর্থনীতির ‘স্বাভাবিক’ ক্রিয়াকলাপের ক্ষেত্রে বিকৃতি সৃষ্টির নামান্তর (যেটা উপযোগিতাবাদীদের সওয়াল জবাব ছিল)। এসব জেনেও তারা ৪৭ অনুচ্ছেদ রাখতে পিছু পা হননি, তার কারণ- রাষ্ট্রের চার মূলনীতির একটি প্রধান নীতি সমাজতন্ত্র তথা সামাজিক ন্যায় ও শোষণমুক্তির প্রতিশ্রুতিকে তারা রক্ষা করতে চেয়েছিলেন ও বাস্তবে তা প্রয়োগ করতে চেয়েছিলেন। এ সম্পর্কে সেদিনের সংসদে যে আত্ম-সমর্থনমূলক বিবৃতি তারা দিয়েছিলেন, তা বঙ্গবন্ধুর গণতান্ত্রিক সমাজতন্ত্রকে বোঝার জন্য অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ তাফসির। কয়েকটি উল্লেখযোগ্য উদাহরণ এখানে শুধু তুলে ধরছি।
মধ্যপন্থি রাজনৈতিক নেতা ময়মনসিংহের আছাদুজ্জামান খান ৪৭নং অনুচ্ছেদ বাস্তবায়নের মাধ্যমে পূর্ণ সমাজতন্ত্রের দিকে শান্তিপূর্ণ উপায়ে যাওয়ার রাস্তা দেখেছিলেন। তিনি বলেছিলেন :’আমরা রক্তের মাধ্যমে সমাজতন্ত্র চাই না। বঙ্গবন্ধু এ কথা বলেছেন এবং তার চার মূলনীতির মধ্যে এ কথা রয়েছে। শান্তিপূর্ণভাবে জনগণের রায়ের মাধ্যমে সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হবে। … এখানে গণতন্ত্রের মাধ্যমে সমাজতন্ত্র আসবে। … যারা সম্পত্তির ব্যক্তিগত মালিকানা সম্পূর্ণভাবে বিলোপ করতে চান, তাদের বলব, সংবিধানের অনুচ্ছেদের মাধ্যমে সেটা আসতে পারে। ৪২ এবং ৪৭ অনুচ্ছেদে এ বিষয়ে সুস্পষ্ট বিধান আছে। সর্বপ্রকার ব্যক্তিগত সম্পত্তি নেওয়া চলবে। রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতি রয়েছে।
[ক্রমশ]

Leave a Reply

Fill in your details below or click an icon to log in:

WordPress.com Logo

You are commenting using your WordPress.com account. Log Out /  Change )

Twitter picture

You are commenting using your Twitter account. Log Out /  Change )

Facebook photo

You are commenting using your Facebook account. Log Out /  Change )

Connecting to %s