বঙ্গবন্ধুর গণতান্ত্রিক সমাজতন্ত্র: বাহাত্তরের সংবিধান ও সমতামুখী সমাজের আকাঙ্ক্ষা

পর্ব ::৭৩

৩. গণতন্ত্রের হাত ধরে এই সমাজতন্ত্রের দিকে যাত্রা করা শক্ত- এটা স্বীকার করে নেওয়া হচ্ছে : ‘সমাজতান্ত্রিক অর্থব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার সঙ্গে সঙ্গে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতেও আমরা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। আমাদের স্বাধীনতাপ্রিয় জনগণ দীর্ঘকাল ধরে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার আশায় রয়েছেন। সংবিধানে গণতান্ত্রিক সমাজব্যবস্থার ভিত্তি রচিত হয়েছে।’ কিন্তু ‘সমাজতান্ত্রিক অর্থব্যবস্থা’ আর ‘গণতান্ত্রিক সমাজব্যবস্থা’ এ দুটো লক্ষ্য পরস্পরবিরোধী হয়ে উঠবে না তো? এই সম্ভাবনা স্বীকার করে বলা হচ্ছে : ‘গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে সমাজতন্ত্রের দিকে যাত্রা করতে গিয়ে আমরা যে নতুন পথে চলেছি, সে বিষয়ে আমরা সচেতন। সমাজতন্ত্রের দিকে পরিকল্পিত অগ্রগতির পথে যাতে কোনো বাধা সৃষ্টি হতে না পারে, সেজন্য সংবিধানে কয়েকটি বিশেষ বিধান রাখা হয়েছে।’ এর মধ্যে একটি হলো, সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য প্রয়োজনে ‘সম্পত্তির অধিকারকে’ সীমাবদ্ধ করা। উদ্ৃব্দতিটি তাৎপর্যপূর্ণ :

‘সম্পত্তির অধিকার বা ব্যবসা ও বাণিজ্যের অধিকার কোনো কোনো রাষ্ট্রে রাষ্ট্রায়ত্তকরণ, ভূমি-সংস্কার ও অন্যান্য ব্যবস্থার পক্ষে বাধাস্বরূপ হয়ে দাঁড়িয়েছিল। আমরা তাদের তিক্ত অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা গ্রহণ করেছি। এই জন্যে আমরা বলেছি যে, আইন সাপেক্ষে এইসব অধিকার ভোগ করা হবে। অর্থাৎ সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য প্রয়োজন মনে করলে সংসদ এই সব অধিকার হরণ করতে বা সীমাবদ্ধ করতে পারবেন। সংসদ যদি সেরকম কোনো আইন প্রণয়ন করেন, তাহলে আদালত তা নাকচ করতে পারবেন না। নাগরিকদের অধিকার রক্ষার পূর্ণ ক্ষমতা আদালতকে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু সমাজতান্ত্রিক অর্থব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার জন্য প্রয়োজনীয় বলে ঘোষণা করে সম্পত্তি ও ব্যবসা সংক্রান্ত যেসব আইন সংসদ তৈরি করবেন, আদালত সেগুলো নাকচ করতে পারবেন না।’

অর্থাৎ সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য নাগরিক অধিকার হরণ করা হচ্ছে এমন ধুয়া তুলে কালক্ষেপণ করা যাবে না। এখানে লিবারেল প্রিন্সিপলকে অতিক্রম করে সোস্যালিস্ট প্রিন্সিপলকে অধিকতর গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। এক হিসাবে, মিলকে ছাড়িয়ে এখানে বেশি গুরুত্ব পেয়েছে মার্কসের উত্তরাধিকার। এই সমাজতন্ত্র উন্নত পুঁজিবাদী দেশের ‘ওয়েলফেয়ার স্টেট’ ধারণার চেয়ে স্পষ্টতই আরও বেশি কিছু। এ কথা স্পষ্ট করে উচ্চারিত হয় সৈয়দ নজরুল ইসলামের ১৯ অক্টোবরের ভাষণে। সেই ভাষণে তিনি যা বলেছিলেন, তা পূর্ববর্তী অধ্যায়ে আমার দালিলিক আলোচনাকে সমর্থন করে :

‘আমার বন্ধু যারা অনেক সময় ইতিহাসের বাস্তব সত্যকে অস্বীকার করেন, তারা পর্যালোচনা করে অনেক সময় দেখতে চান না যে, যেদিন সমাজতন্ত্রের প্রোগ্রাম আওয়ামী লীগ গ্রহণ করেছিল, সেদিন আজকের অনেক দল শুধুমাত্র welfare state-এর প্রোগ্রাম নিয়ে উপস্থিত হয়েছিলেন। ১৯৬২ সালে যখন আমরা গণতন্ত্রের সংগ্রাম করতে করতে মানুষের অধিকার এবং সম্পদের সুষম বণ্টনের পন্থাকে চিন্তা করে সমাজতন্ত্রের কর্মসূচি গ্রহণ করেছিলাম, তার পূর্ব হতেই আওয়ামী লীগ সমাজতন্ত্রের সংগ্রাম করে আসছিল।’

তারপরও গণতন্ত্রের পথ ধরে সমাজতন্ত্রে পৌঁছনো যাবে কিনা সে বিষয়ে সংশয় ছিল অনেকের মনেই। ওই একই বক্তৃতায় সৈয়দ নজরুল ইসলাম বলেছেন : ‘গণতন্ত্রের মাধ্যমে সমাজতন্ত্রে উত্তরণ সম্ভব কি সম্ভব নয়, সেই বিতর্কে আমি যাব না। তবে আমরা বিশ্বাস এবং আস্থার সঙ্গে সেই পথ বেছে নিয়েছি। বেছে নিয়েছে সারা জাতি গণতান্ত্রিক পদ্ধতি, একনায়কত্ব নয়।’ সমাজতন্ত্রের দিকে চলার পথে গণতন্ত্র বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে কিনা সে সম্পর্কে সাংবিধানিক ধারা সংযোজন করা দরকার এই মর্মে ড. কামাল হোসেন যে কথা ইতোপূর্বে বলেছিলেন, এবার তার দিকে দৃষ্টি আকর্ষণ করলেন তিনি। গণতান্ত্রিক সব অধিকারই থাকবে, শুধু একটি জায়গায় ছাড়া। সেটি হলো শাসনতন্ত্রের তৃতীয় ভাগের ৪৭ নম্বর অনুচ্ছেদ। সৈয়দ নজরুল বললেন :

‘যারা মনে করেন গণতন্ত্রের মাধ্যমে সমাজতন্ত্রে উত্তরণ সম্ভব নয়, তারা যে প্রশ্নটি করেন সেটা হলো এই যে, সম্পত্তির মৌলিক অধিকার যদি স্বীকার করা হয়, তাহলে রাষ্ট্রায়ত্ত করা অথবা সম্পদের সুষম বণ্টনের জন্য রাষ্ট্রের যদি যে কোনো সময় সম্পত্তির অধিকার করা অথবা রাষ্ট্রায়ত্ত করার প্রয়োজন পড়ে, তাহলে তার প্রতি সেটা বাধা হয়ে দাঁড়ায় কিনা… আমাদের প্রতিবেশী রাষ্ট্র ভারতেও এই প্রশ্ন এসেছিল। যেদিন ইন্দিরা গান্ধীর সরকার ব্যাংক, ইনসিওরেন্স জাতীয়করণ করার জন্য আইন পাস করেছিল, সেদিন ভারতের সুপ্রিম কোর্টের চিফ জাস্টিস জনাব হেদায়েতুল্লাহ তাকে নাকচ করেছিলেন এই বলে যে, সম্পত্তির মৌলিক অধিকারের প্রশ্নের এটা বিরোধী। সেজন্য আমাদের খসড়া শাসনতন্ত্র প্রণেতাগণ অত্যন্ত সজাগ ও সচেতন ছিলেন বলে এই শাসনতন্ত্রের তৃতীয় ভাগে ৪৭ নম্বর অনুচ্ছেদ প্রযোজিত হয়েছে। অর্থাৎ রাষ্ট্রের প্রয়োজনে এবং মৌলিক আদর্শের প্রয়োজনে রাষ্ট্রায়ত্ত করার আদর্শকে অত্যন্ত সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ করা হয়েছে।’

গণতান্ত্রিক সমাজতন্ত্রের প্রতি কমিটমেন্টের পূর্ব ইতিহাস রয়েছে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগের- এ কথা সেদিনের গণপরিষদের বক্তৃতায় ব্যাখ্যা করেছেন তৎকালীন অর্থ ও পরিকল্পনামন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদ। তার বক্তব্য পরিস্কার- গণতন্ত্রের প্রতি অঙ্গীকার যেমন দীর্ঘদিনের, সমাজতান্ত্রিক অর্থনীতি গড়ার প্রতিও দলটির রাজনৈতিক প্রতিশ্রুতি বহু বছর আগে থেকেই চলে আসছে। সেটা মুক্তিযুদ্ধের নয় মাস সংগ্রামে আরও বেশি করে গুরুত্ব পেয়েছে। কিন্তু এর উৎপত্তি আরও আগে। এ বিষয়ে পূর্ববর্তী অধ্যায়ে ১৯৬৪ সালের পুনরুজ্জীবিত আওয়ামী লীগের ঘোষণা ও কর্মসূচির আলোচনায় আমি কিছুটা আলোচনা করেছি। কিন্তু তার একটি সাক্ষ্য পাচ্ছি স্বয়ং তাজউদ্দীন আহমদের সেদিনের ভাষণেও। সেটি এবার শুনে নেওয়া যাক। ৩০ শে অক্টোবরের এই ভাষণে তাজউদ্দীন সংসদে বলেছিলেন :

‘অর্থনৈতিক অধিকারের কথা বলতে গেলে আজকে গর্বের সঙ্গে এই পরিষদে ঘোষণা করতে চাই, আমার দল আওয়ামী লীগ ১৯৬৪ সালের মার্চ মাসের ৬, ৭, ৮ তারিখে ঢাকার গ্রিন রোডের আমবাগানে যে কাউন্সিল অধিবেশন করেছিলেন, তাতে আওয়ামী লীগের মেনিফেস্টোতে পরিস্কার ভাষায় এ দেশের সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করার কথা ঘোষণা করা হয়েছিল। এই সমাজতন্ত্রে উত্তরণের জন্য বিভিন্ন ধাপে জাতীয়করণের মাধ্যমে অগ্রসর হওয়ার বিধান আওয়ামী লীগের ম্যানিফেস্টোতে গৃহীত হয়। তারপর থেকে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ নিরবচ্ছিন্নভাবে এ দেশে সমাজতন্ত্রের কথা বলে এসেছেন। আগে সমাজতন্ত্রের কথা মানুষ পরিস্কারভাবে বুঝত না। যারা সমাজতন্ত্রের বিরোধী ছিল তারা মানুষের মনে বিভ্রান্তির সৃষ্টি করত। সমাজতন্ত্রের কথা বললে সমাজতন্ত্রকে ধর্মের সঙ্গে জড়িত করে তাকে ধর্মবিরোধী বলে আখ্যায়িত করা হতো এবং মানুষের এক অংশকে এ ব্যাপারে দায়ী করা যেত। আজকে আওয়ামী লীগ বলিষ্ঠ পদক্ষেপ নিয়ে পরিস্কারভাবে সমাজতন্ত্র কী, তা বলে দিয়েছে।’

এরপর তাজউদ্দীন রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতি হিসেব সমাজতন্ত্রের কথা তুললেন : ‘সমাজতান্ত্রিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থা কায়েম করার জন্য এই রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতিতে আইন প্রণয়নের অবাধ ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে। এই প্রসঙ্গে উল্লেখ করা যায় ৪৭ অনুচ্ছেদের কথা।’ এরপর ‘প্রগতিবাদী’ সমালোচকদের উদ্দেশ করে তিনি বললেন : ‘যারা প্রগতিবাদী বলে দাবি করেন, তারা সমালোচনা করছেন এই সংবিধান সমাজতান্ত্রিক সংবিধান নয় বলে। আমি জানি না, সমাজতান্ত্রিক সংবিধান কীভাবে হয়। সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্রব্যবস্থা কীভাবে হতে পারে, সে পরিকল্পনা কেউ যদি দিতে পারতেন, তাহলে এই পরিষদ তা অত্যন্ত সতর্কতা ও শ্রদ্ধার সঙ্গে গ্রহণ করতেন। আমি সমাজতান্ত্রিক দেশের বিভিন্ন সংবিধান- ২৫ বছর আগের, ৩০ বা ৫০ বছর আগের সংবিধান দেখেছি। তাতে যে বিধান রয়েছে সে বিধান আজকে বাংলাদেশের সংবিধানের চাইতে যে উন্নত, সে কথা বলা চলে না … তবে বাস্তব ভিত্তিতে এই অবস্থায় এ দেশে সম্পূর্ণ সমাজতন্ত্র করা যাবে কিনা, সেটা দেখতে হবে।’

এটা বলেই তাজউদ্দীন লক্ষ্য করেন যে, সেদিনের বাংলাদেশে সম্পূর্ণ সমাজতন্ত্র দূরে থাক, পূর্ণ গণতন্ত্রও বাস্তবে প্রতিষ্ঠিত করা কঠিন : ‘আজকে আমাদের সামনে সবচাইতে বড় যে কর্তব্য রয়েছে, সেটা হচ্ছে আমাদের সমাজের অবস্থা লক্ষ্য করা। … আজকে আমাদের সমাজের যে অবস্থা, তাতে সমাজতন্ত্র দূরের কথা- পূর্ণ গণতন্ত্রের অবস্থাও আসতে পারে না।’ তাজউদ্দীনের গোটা ভাষণে তার স্বভাবসুলভ বিশ্নেষণী মনের ছাপ আগাগোড়া ফুটে উঠেছে। প্রথমত, ‘কৃষিনির্ভর অর্থনীতিকে পুনর্বিন্যস্ত করতে হবে’ এবং এই লক্ষ্যে সংবিধানের দ্বিতীয় ভাগের ১৬ নম্বর অনুচ্ছেদে ‘কৃষি বিপ্লবের বিকাশ, গ্রামাঞ্চলে বৈদ্যুতীকরণের ব্যবস্থা, কুটির শিল্প ও অন্যান্য শিল্পের বিকাশ এবং শিক্ষার উন্নয়নের মাধ্যমে গ্রামাঞ্চলের আমূল রূপান্তর সাধনের জন্য’ রাষ্ট্রের কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ করা দরকার- এ কথা বলা হয়েছে। এর সঙ্গে তিনি যোগ করলেন ‘সমবায় ভিত্তিতে যৌথ কৃষি খামার’ করার কথাও, কেননা এ ব্যাপারে (সমবায়ী মালিকানা স্বীকার করে নেওয়ার পর) ‘এই সংবিধানে (আর) কোনো বাধা নেই।’

তাজউদ্দীনের সেদিনের ভাষণের একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক ছিল ব্যক্তি-পুঁজির প্রতি সঠিক দৃষ্টিভঙ্গি গ্রহণ করার আবশ্যকতা নিয়ে। রাষ্ট্রায়ত্ত ও ব্যক্তিখাতের মধ্যে সুসামঞ্জস্য অনুপাত থাকা দরকার এটা ব্যাখ্যা করে তিনি যা বললেন তার সরলার্থ হলো বাস্তবের নিরিখে ও কালক্রমে এই অনুপাত পরিবর্তিত হতে পারে। প্রথমত, ‘উঠতি পুঁজিবাদ সম্পর্কে আমরা ব্যবস্থা করেছি’; এই উঠতি পুঁজিবাদ যাতে বিধ্বংসী ভূমিকায় অবতীর্ণ না হতে পারে সেদিকে রাষ্ট্রের সজাগ দৃষ্টি থাকবে। পুরো উদ্ৃব্দতিটি প্রণিধানযোগ্য :’আজকে ব্যক্তিগত মালিকানা, ব্যক্তিগত পুঁজিতে যে সংশয়ভাব দেখা দিয়েছে, তাতে শুধু এটাই আমরা বলতে পারি, আইনের বিধান মোতাবেক ব্যক্তিগত মালিককে যেটা দেওয়া হবে, সেটার মালিকানা সে নিশ্চয়ই আইনের বিধান-অনুযায়ী নির্বিঘ্নে ভোগ করতে পারবে। আইনের বিধান-অনুযায়ী কোনো অবস্থাতেই অর্থনৈতিক বিকাশের পথে বাধা সৃষ্টি হতে পারে না। কিন্তু পুঁজিপতিদেরকে তাদের রাজনৈতিক প্রভাব ও অর্থনৈতিক প্রভাবের দ্বারা সমাজতান্ত্রিক অর্থ-ব্যবস্থায় বিঘ্ন সৃষ্টি করতে দেওয়া হবে না। কাজেই, … আজকে ব্যক্তিগত মালিকানায় উৎসাহ আমরা ততটুকুই দেব, যতটুকু উৎসাহ দিলে ব্যক্তিগত শোষণ, ব্যক্তিগত বঞ্চনা এবং ব্যক্তিগত রাজনৈতিক প্রভাব ঘটাবার সুবিধা ব্যক্তি মালিকানায় থাকে না। এটা পরিস্কার থাকা ভালো।’

দ্বিতীয়, ব্যক্তিগত পুঁজিকে যদি নিয়ন্ত্রণে রেখেই বিকাশ করতে দেওয়া হয়, তাহলে সংবিধানে এর নিম্নসীমা-ঊর্ধ্বসীমা বেঁধে দেওয়া হলো না কেন? কেন ব্যাপারটাকে অনংঃৎধপঃ রাখা হলো কেবল ১৩ নম্বর অনুচ্ছেদের ত্রিবিধ মালিকানার কথা বলে? এ বিষয়ে তাজউদ্দীনের সুচিন্তিত উত্তর হচ্ছে, পরিবর্তনশীল বাস্তবতাকে মাথায় রাখতে হবে :

“ব্যক্তিগত মালিকানা অবশ্য আইনের বিধান মোতাবেক হবে এবং ব্যক্তিগত মালিক যাতে করে সম্পত্তি বৃদ্ধি করে, মুনাফা বৃদ্ধি করে, সম্পদ বৃদ্ধি করে তার ‘প্রফিট’ দিয়ে আমার সমাজতান্ত্রিক অর্থ-ব্যবস্থাকে বানচাল করতে না পারে, তার ব্যবস্থা আইন অবশ্যই করবে। বলা হয়েছে, তা হলো সেই বিধান সংবিধানে কেন করা হলো না? আমি আগেই বলেছি, সংবিধানে সব আইন, চুলচেরা আইন বিশদভাবে লিপিবদ্ধ করা যায় না, করা বাঞ্ছনীয় নয়। কতটুকু করা হবে, সেটার উচ্চসীমা, নিম্নসীমা কতটুকু থাকবে, সেগুলি সংবিধানে বেঁধে দেওয়া যায় না। ভবিষ্যৎ সংসদ সে উচ্চসীমা বা নিম্নসীমা, কোন সময় তার কতটুকু সীমা নির্ধারণ করা উচিত, তা বিবেচনা করে দেখতে পারবেন।”

অর্থাৎ ভবিষ্যৎ সংসদে যারা আসবেন, তারা সে সময়ের পরিস্থিতি বিচার করে ব্যক্তিগত পুঁজির চৌহদ্দি নির্ধারণ করবেন। তবে পাকিস্তানের বাইশ পরিবারের মতো একচেটিয়া পুঁজির বিকাশ যে স্বাধীন বাংলাদেশে করতে দেওয়া হবে না, তা নিয়ে কোনো প্রশ্ন তোলার অবকাশ নেই সংবিধান প্রণেতাদের মনে।

তৃতীয়ত, অনেকে বলেছেন যে, ব্যক্তিগত মালিকানা রয়েছে বলে সমাজতন্ত্র আর থাকে না। এরও উত্তর দিলেন তাজউদ্দীন। তিনি দেখালেন যে, সমাজতান্ত্রিক এমন অনেক দেশ, রয়ে গেছে যেখানে ব্যক্তিমালিকানা সাংবিধানিকভাবে স্বীকৃত। যেমন- ‘গণপ্রজাতন্ত্রী চীনের সংবিধানের ৯১ অনুচ্ছেদে দেখতে পাবেন সেখানে তারা ৪ প্রকারের মালিকানা দিয়েছে।’

[ক্রমশ]

Leave a Reply

Fill in your details below or click an icon to log in:

WordPress.com Logo

You are commenting using your WordPress.com account. Log Out /  Change )

Facebook photo

You are commenting using your Facebook account. Log Out /  Change )

Connecting to %s