পর্ব ::৬৪
[পূর্বে প্রকাশিতের পর]
যেটা লক্ষণীয় ‘পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগ’ থাকার কালেই প্রগতিশীল (এবং আজকের বিচারে এক-অর্থে ‘র্যাডিকেল’) কর্মসূচি গৃহীত হয়েছিল। যদিও দলিলটিতে ভাষা বা প্রতীকের ব্যবহার ছিল ধর্মীয় ‘টেক্সট’-এর আবরণে, এর মর্মবস্তু ছিল সমতাবাদী। উদাহরণত, ‘ধন-সম্পদের অধিকারকে’ মৌলিক অধিকারের (Fundamental Rights) বিষয়বস্তু করা হয়েছিল, যা এমনকি পরবর্তীকালের সেক্যুলার ঘোষণাতেও পরিদৃষ্ট হয় না। এ ক্ষেত্রে যা বলা হয়েছিল তা নিম্নরূপ :
‘দুনিয়ার সব ধন-সম্পদের স্রষ্টা ও মালিক এক আল্লাহ। আসমান-জমিনে যাহা কিছু রহিয়াছে সবই আল্লাহর। সুতরাং আল্লাহ তালার প্রতিনিধিত্বমূলক রাষ্ট্র বা খেলাফত হইবে সমস্ত ধনসম্পদের মালিক। কোনো কিছুর উপরই ব্যক্তিবিশেষের অধিকার থাকিবে না। সে শুধু আল্লাহর খলিফা হিসেবে দুনিয়ার উপর তাহার ব্যাষ্টি ও সমষ্টিগত কল্যাণের জন্য এই ধনসম্পদ সাময়িকভাবে রাষ্ট্র বা খেলাফতের নির্দেশ ও সত্তানুযায়ী ভোগদখল করিতে পরিবে। এই মূলনীতিকে ভিত্তি করিয়াই ভূমি সংস্কার ও শিল্পের উন্নতি সাধন করিতে হইবে।’
শুধু অ্যাবস্ট্রাক্ট সমতার নীতি ঘোষণা করেই বক্তব্য সীমিত রাখা হয়নি। ‘ভূমি সংস্কার’ প্রসঙ্গে জমিদারি প্রথা ও তার আনুষঙ্গিক সামন্তবাদী শোষণ ব্যবস্থা তথা ‘মহাজনী প্রথা, ‘মজুতদারী’, ‘মুনাফাখোরী বাজারের অস্থিরতা’ প্রভৃতি দূরীভূত করার কথা বলা হয়েছিল। শুধু যে ‘জমিদারী প্রথা অবিলম্বে বিনা খেসারতে উচ্ছেদ’ করার কথা বলা হয়েছিল তা-ই নয়। এমন সব দাবিকে দলের ম্যানিফেস্টোতে অন্তর্ভুক্ত করার প্রস্তাব হয়েছিল যাকে শুধু প্রগতিশীল রূপান্তরের কর্মসূচি বললে কম বলা হয়। বুর্জোয়া-গণতন্ত্রের চৌহদ্দি পেরিয়ে প্রায় র্যাডিকেল ধারার সমাজতান্ত্রিক কর্মসূচির মতো শোনাবে সেগুলো আজ। যেমন, ‘জমির পুনর্ব্যবস্থার পরিকল্পনা’ শীর্ষক অধ্যায়ের দ্বিতীয় দাবি ছিল- ‘সমস্ত কর্ষিত ও কৃষি উপযোগী অকর্ষিত জমি কৃষক মধ্যে সমানভাবে বণ্টন করিয়া দিতে হইবে।’ ৩য় দাবি ছিল- ‘রাষ্ট্রের তত্ত্বাবধানে অবিলম্বে সমবায় ও যৌথ কৃষিপ্রথা প্রতিষ্ঠা করিতে হইবে। এই সব সমবায় ও যৌথ খামারের পরিচালনার ভার স্থানীয় কৃষকদের গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানের উপর ন্যস্ত থাকিবে।’ ৯ম দাবি ছিল আরও বেশি র্যাডিকেল- অক্টোবর-বিপ্লব পরবর্তী ডিক্রির অনুরূপ :’কালে সমস্ত ভূমিকে রাষ্ট্রের জাতীয় সম্পত্তিতে পরিণত করিতে হইবে। এবং সরকারের তত্ত্বাবধানে যৌথ ও সমবায় কৃষি প্রথার প্রতিষ্ঠা করিতে হইবে।’ সুতরাং দেখা যাচ্ছে যে, সেই সুদূর ১৯৪৯ সালেই আওয়ামী লীগের প্রাক-জন্মলগ্ন থেকেই গণতান্ত্রিক ভূমি-সংস্কার, সমবায়, যৌথ কৃষি প্রভৃতি ধারণার পত্তন হয়েছিল এ দেশে। পরবর্তীকালে, বাহাত্তরের সংবিধানে ও বাকশালের কর্মসূচিতে সমবায় ও গ্রাম-জীবনের পুনর্গঠনের কথা আবারও ফিরে আসবে। এসব ধারণা ১৯৭১-এর মুক্তিযুদ্ধে সোভিয়েত সাহায্য দেওয়ার বা ইন্দিরা কংগ্রেসের সোভিয়েতের দিকে ঝুঁকে পড়ার সাথে সম্পর্কিত নয়। পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগের ম্যানিফেস্টো প্রণেতারা বহু আগেই গ্রামজীবনের প্রগতিশীল রূপান্তরের প্রয়োজনীয়তার কথা অনুধাবন করেছিলেন এবং সেই ডিসকোর্স তরুণ শেখ মুজিবের চেতনায়- অবচেতনায় সে সময় থেকেই অন্তর্লীন হয়ে থাকবে।
এ তো গেল কৃষি ও গ্রাম-অর্থনীতির প্রসঙ্গ। শিল্প খাত নিয়েও পাই যুগের তুলনায় এগিয়ে থাকা প্রগতিশীল চিন্তাভাবনা। ১৯৪৯ সালের এই ম্যানিফেস্টোতেই প্রথম শিল্প খাতে ‘জাতীয়করণের’ দাবি তোলা হয়। বাঙালির সাম্যচিন্তায় এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক। ষাটের দশকের রাজনৈতিক আন্দোলনের আগেই- এমনকি যুক্তফ্রন্টের ২১ দফা কর্মসূচির মধ্যে যা সেভাবে আসেনি- ১৯৪৯ সালে একটি প্রগতিশীল কিন্তু বাস্তবোচিত শিল্প-উন্নয়নের কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়। এতে মূল ও জরুরি শিল্পগুলো রাষ্ট্রের পরিচালনায় রেখে এবং ‘অতিরিক্ত মুনাফাখোরী প্রবৃত্তি’ নিয়ন্ত্রণে এনে জাতীয় শিল্প পুঁজির বিকাশের প্রসঙ্গ তোলা হয়েছিল দলিলে। সাম্রাজ্যবাদী নির্ভরতা ছেড়ে দেশীয় শিল্পপণ্যের জন্য ‘সংরক্ষণমূলক’ নীতিমালা করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল এবং ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্পের ব্যাপক বিকাশ চাওয়া হয়েছিল। এসবের লক্ষ্য ছিল একটাই- ‘শিল্প ও ব্যবসায় একচেটিয়া অধিকার’ বন্ধ করা, অর্থাৎ, মনোপলি পুঁজির বিকাশকে প্রতিহত করা। অন্যদিকে, শ্রমিকদের নাগরিক সকল অধিকার-কর্মসংস্থান, ন্যায্য মজুরি, শ্রমিক সন্তানদের জন্য অবৈতনিক ও বাধ্যতামূলক প্রাথমিক শিক্ষা ও সুলভ কারিগরি শিক্ষার প্রচলন, বিনাব্যয়ে চিকিৎসার ব্যবস্থা, শ্রমিক পরিবারের জন্য বাসযোগ্য গৃহের বন্দোবস্ত করা ইত্যাদি দাবি অন্তর্ভুক্ত ছিল। পাছে আমার কথাগুলো মূল বক্তব্যের ইচ্ছাকৃত ইন্টারপ্রিটেশন বলে মনে হয়। ইস্যুগুলোর গুরুত্ব বিবেচনা করে আমি সরাসরি উদ্ৃব্দতিতে যাচ্ছি। ‘শিল্প পুনর্গঠনের পরিকল্পনা’ অধ্যায়ে প্রথম দফা হিসেবেই তোলা হয়েছিল বৃহৎ শিল্প কলকারখানা ‘জাতীয়করণ’-এর কথা :
‘শিল্পগুলোকে জাতীয়করণ করিতে হইবে, যথা :খনিজ শিল্প, যুদ্ধ শিল্প, ব্যাংক, বীমা, যানবাহন, বিদ্যুৎ সরবরাহ, রাসায়নিক শিল্প, বন-জঙ্গল, পাট, চা, চিনি জাতীয় বৃহৎ শিল্পপ্রতিষ্ঠান। বহু লোকের শ্রম যেখানে কতিপয় লোকের মুনাফার বন্দোবস্ত করিয়া দেয়, এরূপ সমস্ত শিল্প প্রতিষ্ঠান গুরুত্ব ও প্রয়োজন অনুসারে রাষ্ট্রের দখলে কিংবা রাষ্ট্রের প্রত্যক্ষ তত্ত্বাবধানে ও পরিচালনায় আনিতে হইবে।’
শুধু বৃহৎ শিল্পের জাতীয়করণই নয়, এসব শিল্পের পরিচালনায় রাষ্ট্রের প্রতিনিধি ও শ্রমিকদের যৌথ অংশগ্রহণের কথাও আবশ্যকীয় উপাদান হিসেবে ভাবা হয়েছিল। দ্বিতীয় দফাতেই লেখা ছিল : ‘সমস্ত প্রধান শিল্পগুলোকে রাষ্ট্রীয় প্রতিনিধি ও শ্রমিকদের গণতান্ত্রিক উপায়ে নির্বাচিত প্রতিনিধিদের সহযোগিতায় ও পরিকল্পনায় পরিচালিত করিতে হইবে।’
জাতীয়করণকৃত শিল্পের ক্ষেত্রে একটা বড় প্রতিবন্ধকতা হচ্ছে, এতে দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগের জন্য আলাদা করে ভাবতে হয়। ব্যক্তি-মালিকানাধীন বৃহৎ শিল্পে বিনিয়োগের প্রশ্নটি অত কঠিন নয়- কেননা বাজার-বৃদ্ধি ও মুনাফার পরিমাণের সাথে সংগতি রেখে সেখানে নতুন বিনিয়োগ ফি বছরই ঘটে থাকে। জাতীয়করণকৃত শিল্পে আমলাতান্ত্রিক Redtape-এর জন্য সেটা অনেক সময়েই হয়ে ওঠে না, এবং এতে করে রাষ্ট্রায়ত্ত খাতের মিলগুলোর প্রযুক্তি ও উৎপাদনশীলতার বিচারে দীর্ঘমেয়াদে পিছিয়ে পড়ার আশঙ্কা দেখা দেয়। সে কারণে তৃতীয় দফায় বলা হয়েছে :’শিল্পের ব্যাপক সম্প্রসারণের জন্য স্বল্পমেয়াদি ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা গ্রহণ ও অবিলম্বে কার্যকর করিতে হইবে। … দেশের সমস্ত মূলধন রাষ্ট্রের পরিচালনায় আনিয়া ব্যাপক শিল্প সম্প্রসারণের পথ সুগম করিতে হইবে।’ শিল্পের উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধির জন্য আরও চাই উপযুক্ত প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা। চতুর্থ দফায় সেদিকে নজর দেওয়া হয়েছে : ‘বিভিন্ন স্থানে পর্যাপ্ত পরিমাণে কারিগরী শিক্ষা কেন্দ্র খুলিয়া এবং সাহায্য ও সুবিধা দানে প্রচুর সংখ্যক যুবকের কারিগরি শিক্ষার বন্দোবস্ত করিতে হইবে।’ ষষ্ঠ দফায় একচেটিয়া পুুঁজিবাদকে নিয়ন্ত্রণে এনে বিকাশের কথা বলা হয়েছিল :’শিল্প ও ব্যবসায়ে একচেটিয়া অধিকার থাকিবে না’ এবং সপ্তম দফায় দাবি জানানো হয়েছিল :’শিল্পে মুনাফার ঊর্ধ্বতন হার আইন করিয়া নির্ধারণ করিয়া দিতে হইবে।’ শুধু দেশজ বৃহৎ কল-কারখানা জাতীয়করণ নয়, দশম দফায় বলা হয়েছিল :’সমস্ত ব্রিটিশ মার্কিন অন্যান্য বৈদেশিক ব্যবসা ও মূলধনকে জাতীয় সম্পত্তিতে পরিণত করিতে হইবে।’ রাষ্ট্রের ওপরে থাকবে ‘অভ্যন্তরীণ ও বৈদেশিক বাণিজ্যের নিয়ন্ত্রণ ও পরিচালনার ভার’ (অষ্টম দফা)। সংরক্ষণমূলক শিল্পনীতির কথা ঘোষণা করা হয়েছিল ১৩তম দফায় :’দেশীয় শিল্প সংরক্ষণের জন্য বিদেশি পণ্য দ্রব্যের উপর অতিরিক্ত কর ধার্য করিতে হইবে।’ এবং আজকের পরিভাষায় যাকে আমরা বলি ‘রেন্ট-সিকিং-এর সুযোগ’, সেটিকে ১২তম দফায় কঠোরভাবে বন্ধ করার অঙ্গীকার করা হয়েছিল : ‘চোরা কারবার ও অন্যান্য অবৈধ উপায়ে অর্জিত যাবতীয় ধন-সম্পদ ও মূলধন বাজেয়াপ্ত করিতে হইবে।’ দারুল ইসলামের অর্থনীতিতে সেদিন যেসব দফা সন্নিবেশিত হয়েছিল তা এক অর্থে বাহাত্তরের সংবিধান ও তৎপরবর্তী প্রথম পাঁচসালা পরিকল্পনার থেকেও কোনো কোনো দিক থেকে অনেক বেশি র্যাডিকেল ধারার কর্মসূচি। আরও যেটা লক্ষণীয় যে, এসব দাবিকে কোনো এক অনির্দিষ্ট সময়ের জন্য মুলতবি করে রাখার চেষ্টা করা হয়নি। এই দলিলের প্রণেতারা পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগের ‘আশু কর্মসূচি’ অধ্যায়ে এসব মূল দাবিগুলোকে পুনরায় বিবৃত করেন। সময়টা ১৯৪৯ সাল সেটাও পাঠকদের মনে রাখতে হবে :
– ‘অবিলম্বে পাক গণপরিষদ ও প্রাদেশিক আইনসভা ভাঙ্গিয়া দিয়া গঠনতন্ত্র কিরূপ হইবে নির্ধারণ করিবার নিমিত্ত প্রাপ্তবয়স্কদের ভোটাধিকারের ভিত্তিতে গণপরিষদ ও প্রাদেশিক আইনসভার সাধারণ নির্বাচন দাবি।’
– ‘অবিলম্বে অবৈতনিক ও বাধ্যতামূলক প্রাথমিক শিক্ষার প্রচলন এবং মাধ্যমিক ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষাব্যবস্থার পুনর্গঠন দাবি।’
– ‘বিনা খেসারতে জমিদারী প্রথার উচ্ছেদ ও প্রকৃত চাষীদের মধ্যে ভূমির পুনর্বণ্টন করিবার জন্য শক্তিশালী জনমত গঠন।’
– ‘মূল শিল্পাদির জাতীয়করণ, সরকারি নিয়ন্ত্রণ ও তত্ত্বাবধানে শিল্প-প্রতিষ্ঠা, কুটির শিল্পের উন্নয়নকল্পে সাহায্য ও উৎসাহ দান এবং দেশীয় শিল্প-সংরক্ষণের জন্য বিদেশী পণ্যদ্রব্যের উপর অতিরিক্ত কর কার্যকরণ।’
– ‘কেন্দ্র ও প্রাদেশিক সরকারের মধ্যে রাজস্বের ন্যায়সঙ্গত বিভাগ।’
– ‘জুট বোর্ডের পুনর্গঠন এবং চাষীরা যাহাতে পাটের সর্বোচ্চ মূল্য পায় তাহার ব্যবস্থা ও অবিলম্বে যথেষ্ট সংখ্যক পাটকল স্থাপনের জন্য জনমত গঠন।’
– ‘সুষ্ঠু ও নির্বিঘ্ন জীবন-যাত্রার জন্য প্রয়োজনীয় খাদ্য, আবাস, স্বাস্থ্য, নিরাপত্তা, ন্যায়বিচার, কাজ করার ও কাজের উপযুক্ত মজুরী, ধর্ম সভ্যতা, সংস্কৃতি ও পূর্ণ ব্যক্তি স্বাধীনতা- মতামত প্রকাশের স্বাধীনতা, বাক স্বাধীনতা, পত্রিকা ও প্রচারপত্রের স্বাধীনতা, শোভাযাত্রা, মিছিল, বিক্ষোভ প্রদর্শন ও ধর্মঘট করার স্বাধীনতা, সংবাদ আদান-প্রদানের স্বাধীনতা, ব্যক্তি বিশেষের মর্যাদা ও ঘরবাড়ী অক্ষুণ্ণ রাখার স্বাধীনতা, গতিবিধির স্বাধীনতা এবং রেডিও মারফত প্রচারের অধিকার প্রত্যেক পাকিস্তানবাসীকে সমান ও সহজভাবে দিতে হইবে।’
– ‘দিল্লি চুক্তিকে সাফল্যমণ্ডিত করিয়া হিন্দু-মুসলিম সম্প্রীতি স্থাপন।’
– ‘বৃটিশ কমনওয়েলথের সহিত সম্পর্কচ্ছেদ।’
– ‘আগামী তিন মাসের মধ্যে জাতিসংঘ কর্তৃক কাশ্মীরে গণভোটের আয়োজন।’
– ‘গণতান্ত্রিক, মুসলিম ও প্রতিবেশী রাষ্ট্রসমূহের সহিত বন্ধুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সম্পর্ক স্থাপন।’
– ‘ইসলামের সত্যিকার ব্যাখ্যা এবং ব্যক্তি ও সমাজজীবনে ইহার বাস্তব প্রয়োগ করিয়া পাকিস্তানকে সত্যিকার ইসলামী পরিবেশ, সমাজ ও রাষ্ট্র বা দারুণ ইসলাম হিসেবে গড়িয়া তুলিবার জন্য অবিরাম সংগ্রাম।’
এককথায়, ধর্মীয় ভাবাদর্শের উপমা, প্রতীক ও চিত্রকল্পের ছায়ায় এক উদারনৈতিক গণতন্ত্র ও সমতামুখীন সমাজ গড়ার রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক কর্মসূচি দিয়েছিল সেদিনের তরুণ শামসুল হক, শেখ মুজিব ও তাদের সহকর্মীদের ঐকমত্যের ‘খসড়া ম্যানিফেস্টো’। পরবর্তীতে এর একটি ইংরেজি সংক্ষিপ্তসার প্রকাশিত হয় ‘Draft Constitution and Rules of the East Pakistan Awami Muslim Leage’ নামে। সেখানে ইতিপূর্বে উল্লেখিত মূলধারাগুলো উপস্থাপিত হয়। কেন মুসলিম লীগের বিপরীতে আওয়ামী মুসলিম লীগ করতে হচ্ছে সেটার ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে বলা হয়েছিল : ‘The orgnisation is for all the PeopleÑ the AwamÑas opposed to the pocket or the Sarkari League, which is subservient to the present rulers’. আর মূল মূল দাবিগুলো ছিল নিম্নরূপ। পুনরুক্তি সত্ত্বেও প্রসঙ্গের গুরুত্ব বিবেচনায় তা নিচে তুলে ধরছি :
– ‘To ensure that the constitution and the laws of Pakistan are founded on the principles of true democracy.’
– ‘To promote and maintain the religious, cultural, social, educational and economic interests of the Muslims of Pakistan and to ensure similar rights to other non-Muslim citizens of Pakistan’.
[ক্রমশ]