পুনশ্চ প্যারিস

পর্ব ::৪৬

[পূর্বে প্রকাশিতের পর]

ওকাম্পো-রবীন্দ্রনাথের সম্পর্ক সাহিত্যে নারী-পুরুষের সম্পর্ক রূপায়ণের ক্ষেত্রে এক আধুনিক বোধের জন্ম দিয়েছিল। সমালোচকেরা এদের মধ্যকার সম্পর্ককে কী নামে ডাকবেন, সেটা বুঝি এখনও পুরোপুরি স্থির করতে পারেননি। কেউ একে বলেছেন- গভীর দার্শনিক ও আত্মিক যোগাযোগ; কেউ বলেছেন ‘প্লাতোনিক প্রেম’; কেউ বা সন্দেহ করেছেন- এর চেয়ে আরও বেশি কিছুর। আমি এই শেষোক্ত দলে পড়ি। আঁদ্রে জিদ ভিক্টোরিয়ার প্রগাঢ় জ্ঞানচর্চার পরিধি দেখে বলেছিলেন- ‘ওকাম্পো যেন নিজেই এক পুরাণ গ্রন্থ।’ মান রে’র (Man Ray) মতো শিল্পী যার পোর্ট্রেট ছবি তুলেছেন; যিনি লাতিন আমেরিকার নবধারার সাহিত্য-আন্দোলনের পথিকৃৎ ‘Sur’ পত্রিকার ডাকসাইটে সম্পাদক; একজন পুরোধা নারীবাদী; তুখোড় সাহিত্য-সমালোচক; বোর্হেসের মতো সাহিত্যিকের সঙ্গে যার রয়েছে দীর্ঘ কথোপকথনের অনন্য দলিল; একজন বহু ভাষাভাষী সুন্দরী ও বিদূষী (রবীন্দ্র-পরিমণ্ডলের সব আধুনিকা নারীদের চেয়ে যিনি আধুনিকতমা ও জ্ঞানে-রুচিতে প্রাগ্রসরা) এবং সর্বোপরি বিশ্বস্ত ও মমতাময়ী- তার প্রতি নিঃসঙ্গ রবীন্দ্রনাথের আকৃষ্ট না হওয়ার কোনো কারণ ছিল না সেদিন। পরবর্তী দিনগুলোয় এই আকর্ষণ গভীর আস্থার, বন্ধুত্বের ও ভালোবাসার সম্পর্কে পরিণত হয়েছে (এটা কোন ধরনের প্রেম বা প্রেম হয়ে থাকলে তার সামনে সতর্ক ‘এপিথেট’ বসানোর কষ্টকর চেষ্টা কিছুটা হাস্যকরও ঠেকে) চিত্রকর্মে রবীন্দ্রনাথের উৎসাহ সেই তরুণ বয়স থেকেই। লেখার ফাঁকে ফাঁকেই তিনি বিরতিহীনভাবে মুখ, মুখোশ, জীবজন্তু, পৌরাণিক বা অবচেতন মনের অস্তিত্ব জানান দিচ্ছে এমন কিছু আঁকছেন বা আঁকিবুঁকি করে আসছেন। এটা একসময় নেশায় পেয়ে বসে কবিকে। ষাটোর্ধ্ব রবীন্দ্রনাথ নিজের ভেতরে একদিন হঠাৎই আবিস্কার করলেন স্ব-অস্তিত্বে ও স্ব-মহিমায় বিশ্বাসী এক চিত্রশিল্পীর :’ছবির নেশার আমার কাব্যের উপর কিছু উৎপাত বাধিয়েচে। অধিক বয়সে তরুণী ভার্য্যায় মানুষকে অভিভূত করে এমন একটা প্রবাদ আছে। আমার প্রাচীনাটি এই তরুণীটির সঙ্গে পেরে উঠচে না।’ ওকাম্পোর লেখায় সেই নেশার আদি-মুহূর্তের বিবরণ রয়েছে। ওকাম্পো লিখেছেন (গণেশ পাইনের সুবাদে সে তথ্য তুলে দিচ্ছি)-

‘ওঁর একটি ছোট খাতা টেবিলে পড়ে থাকত, ওরই মধ্যে কবিতা লিখতেন …লেখার নানা কাটাকুটিকে একত্র জুড়ে দিয়ে তার উপর কলমের আঁচড় কাটতে যেন মজা পেতেন কবি। এই আঁকিবুঁকি থেকেই বেরিয়ে আসত সব রকমের মুখ, প্রাগৈতিহাসিক দানব, সরীসৃপ অথবা নানা আবোলতাবোল। …এই ছোট খাতাটিই হলো শিল্পী রবীন্দ্রনাথের সূচনাপর্ব।’ পরবর্তীকালে দেশে ফিরে গিয়ে রবীন্দ্রনাথ বিজয়াকে লিখেছিলেন, ‘তুলি দিয়ে আমি ছবি আঁকব না, যে কলম দিয়ে কথার কাব্য লিখি, সেই কলমে রং এবং রেখার কাব্য লিখতে পারি কিনা, তারই একটা পরীক্ষা চালাতে চাই।’

এককথায়, রবীন্দ্রনাথের ছবি আঁকার উন্মেষ-পর্বের সাক্ষী ছিলেন বিজয়া। যখন সত্যি সত্যি রবীন্দ্রনাথ ‘চিত্রকর’ হয়ে উঠলেন, তখন এই বিজয়াই সমস্ত সহায়সম্বল নিয়ে এগিয়ে এলেন। আর্জেন্টিনায় যে দু’মাস ছিলেন রবীন্দ্রনাথ, তার চিকিৎসা, থাকা-খাওয়া সব খরচ চালিয়ে ছিলেন ওকাম্পো। এজন্যে তাকে তার মহা মূল্যবান হিরের আংটিটি বিক্রি করে দিতে হয়েছিল। ১৯৩০ সালে প্যারিসে কবির চিত্রপ্রদর্শনীর আয়োজন করার জন্য শুধু সুদূর আর্জেন্টিনা থেকে ছুটে আসাই নয়, তাকে অনেক অর্থ-ব্যয়ও করতে হয়েছিল। রবীন্দ্রনাথ লিখেছেন এই মর্মে :’ভিক্টোরিয়া যদি না থাকত, তাহলে ছবি ভালোই হোক মন্দই হোক কারও চোখে পড়ত না। একদিন রথী ভেবেছিল, ঘর পেলে ছবির প্রদর্শনী আপনি ঘটে- অত্যন্ত ভুল। …ভিক্তোরিয়া অবাধে টাকা ছড়াচ্ছে। এখানকার গুণীজ্ঞানীদের ও জানে- ডাক দিলেই তারা আসে।’ ওকাম্পো ‘ডাক দিলেই’ প্যারিসের এলিট বুদ্ধিজীবী, শিল্পী-সাহিত্যিকেরা ‘ছুটে আসে’- এই একটি কথার মধ্য দিয়েই রবীন্দ্রনাথ বুঝিয়ে দিলেন বিজয়ার আকর্ষণী বিদূষী সত্ত্বাকে।

প্যারিসে রবীন্দ্রনাথের চিত্রপ্রদর্শনী অনুষ্ঠিত হয়েছিল ১৯৩০ সালের ২ মে। ১২৬টি চিত্রকর্ম স্থান পেয়েছিল তাতে। এর সমস্ত আয়োজন/ ব্যবস্থা করেছিলেন ভিক্টোরিয়া ওকাম্পো। শুধু রবীন্দ্রনাথের ডাকেই এটা করেছিলেন তিনি। অন্য কোনো কারণে আসেননি। আর্জেন্টিনা থেকে শুধু একটা প্রদর্শনী আয়োজন করার জন্যই তিনি সেবার প্যারিসে এসেছিলেন। ওটা অ্যারোপ্লেন-যুগের আগের কথা, এ কথাও মনে রাখতে হবে। একে যদি আমরা গাঢ় প্রেমের চিহ্ন হিসেবে না দেখি, তাহলে ‘প্রেম’ কাকে বলব? রবীন্দ্রনাথ প্যারিস ছেড়ে যান ১১ মে। প্যারিসের গ্যার দ্যু পর্দ রেলওয়ে স্টেশনের প্ল্যাটফর্মে শেষবারের মতো তার দেখা হয়েছিল ভিক্টোরিয়ার সাথে। এর ঠিক চার মাসের মাথায় রবীন্দ্রনাথ (১১ সেপ্টেম্বর ১৯৩০) যাবেন বিপ্লব-উত্তর রাশিয়া দেখতে। ভিক্টোরিয়া ফিরে যাবেন বুয়েনস এয়ার্সে। কিন্তু অপ্রত্যক্ষে থেকেও দু’জনের মধ্যে পত্রালাপ ও মৌনালাপ আমৃত্যু চলতেই থাকবে। দু’তরফ থেকেই দেখা এর সম্পূর্ণ চিত্র অবশ্য এখনও আমরা পাইনি।

কুই ব্রানলি মিউজিয়ামে আফ্রিকা, পলিনেশিয়া, ওশেনিয়া, লাতিন আমেরিকার আজটেক, মায়া, ইনকা, বৃহত্তর অর্থে তৃতীয় বিশ্বের আদিবাসী সংস্কৃতির প্রিমিটিভ ও ট্রাইবাল আর্ট দেখতে দেখতে আমার মনে হয়েছিল, ‘আধুনিকতার’ পেছনে ‘অনাধুনিকের’ একটি বড় ধরনের অবদান রয়ে গেছে। এটা চেঁচিয়ে চলা দরকার। এই ‘অবদান’ যেমন পাই পাশ্চাত্যের সেজান-পরবর্তী পোস্ট-ইমপ্রেশনিস্ট, কিউবিস্ট, এক্সপ্রেশনিস্ট ও বিমূর্ত চিত্রকলায়, তেমনি পাই এই ভূভাগের বিশেষ করে রবীন্দ্রনাথের চিত্রকলায়। শিল্প-সমালোচক আনন্দ কুমারস্বামী সঠিকভাবেই এর কুললক্ষণ শনাক্ত করেছিলেন। তিনি বলেছিলেন, রবীন্দ্রনাথের ছবিগুলো হচ্ছে, ‘genuine examples of modern primitive art.’ পক্ষান্তরে, ইউরোপের প্রিমিটিভ আর্টের আধুনিক অনুসারীরা বরং ‘More calculated primitivisms, archaisms, and pseudo-barbarisms’-র নিদর্শনই তুলে ধরেছেন। কথাটায় হয়তো অতিশয়োক্তি রয়েছে। পিকাসো, মাতিস, মদিলিয়ানি, নোল্‌দে, ক্লি, ক্রিশ্‌নের বা মিরো প্রিমিটিভিজমের সিরিয়াস চর্চাই করেছেন এবং আধুনিক শিল্পকলায় নবধারার বিপ্লবের সূচনা করেছেন। এ ক্ষেত্রে তাদের কাজের গুরুত্বকে ছোট করে দেখার উপায় নেই। কিন্তু রবীন্দ্রনাথ সম্পর্কে তিনি কোনো ভুল বা ‘বিভ্রান্তিকর’ (কথাটা ডাইসন-অধিকারীর) ব্যাখ্যা দিয়ে যাননি। প্যারিসে রবীন্দ্রনাথ আধুনিক প্রিমিটিভ ‘ছবির রবীন্দ্রনাথ’ হিসেবেই আত্মপ্রকাশ করেছিলেন। একটা প্রশ্ন উঠতে পারে, রবীন্দ্রনাথ চিত্রকলার ‘ফর্মাল’ অনুশীলন না করেই কী করে আঁকার জগতে প্রবেশ করতে পারলেন? এর উত্তর কিছুটা মেলে শিল্পী বিনোদবিহারী মুখোপাধ্যায়ের কথায় :’আমাদের দেশে মডার্ন যে এক্সপেরিমেন্ট হচ্ছে, সেটা গুরুদেবই করছেন। একটা লোকের ভেতরে যদি চরম সেন্স অব রিজন, মিউজিক, কালার থাকে তার অ্যাকাডেমিক ট্রেনিং দরকার হয় না।’ তবে প্রথাগত অনুশীলন না থাকলেও ইউরোপের সর্বাধুনিক চিত্রকলার প্রতিলিপি তিনি সংগ্রহ করে দেখতেন; রোদ্যাঁর সাথে তিনি দেখা করেছেন, কান্ডিনস্কি ও বাউহাউস স্কুলের প্রদর্শনী স্বচক্ষে দেখেছেন; Kathe Kollwitz-র মতো শিল্পীরা তার সাথে দেখা করেছেন এবং তার সাথে ছবির ভাবনার বিনিময় করেছেন। পঞ্চাশে নোবেল-প্রাপ্তির পরে সত্তরে তার চিত্রকর্মই ছিল রবীন্দ্রনাথের- তার ভাষাতেই বলছি- ‘শেষ কীর্ত্তি’। এই সৃষ্টিসম্ভারকে তার নিজের দেশে অনেকেই বুঝতে পারেনি সে সময়ে; বিদেশেও অনেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছিলেন। যেমন, আমেরিকায়, যেখানে তখন পর্যন্ত কিউবিস্ট বা এক্সপ্রেশনিস্ট আর্ট সমাদৃত হতে শুরু করেনি। আমেরিকায় ছবির রাজ্যে বিপ্লব ঘটবে দ্বিতীয় মহাযুদ্ধের পরে। তখন জ্যাকসন পোলককে কেন্দ্র করে বেরিয়ে আসবে একঝাঁক নতুন প্রজন্মের শিল্পী- জন্ম হবে আর্টের আরেক নবধারা, যার নাম দেওয়া হবে ‘অ্যাবস্ট্রাক্ট এক্সপ্রেশনিজম’। সর্বাধুনিক রবীন্দ্রনাথকে কিছুটা হয়তো বুঝতে পেরেছিল ফ্রান্স, কিছুটা পরিমাণে জার্মানি ও রাশিয়া (হ্যাঁ, মালেভিচ-লিসিৎস্কি-শাগাল-ওসিপা জাদকিনের রাশিয়া)। আমেরিকা তখনও ইউরোপের তুলনায় শিল্পকলার রুচিতে অনেক পিছিয়ে। কবি পল ভ্যালেরি প্যারিসে রবীন্দ্রনাথের ছবির প্রদর্শনী দেখে বলেছিলেন, ‘ইওর পিকচার্স উইল বি অ্যা লেসন টু আওয়ার আর্টিস্টস্‌’। রবীন্দ্রনাথ ঠিকই বুঝতে পেরেছিলেন যে তার ছবিতে যাদের অনীহা, সেটা তাদের ব্যক্তিগত বিরুদ্ধতার কারণে নয়, নিতান্তই ‘চিত্রদর্শনের অভিজ্ঞতার’ অভাবের কারণে। আর সে কারণেই বলতে পেরেছিলেন যে, ‘সে জন্য এ দেশে আমাদের রচনা অনেকদিন পর্যন্ত অপরিচিত থাকবে।’ হয়তো ‘আমার মৃত্যুর পর ওর (রবীন্দ্রনাথের ছবির) আবরণ মোচন করো- তখন ওর মূল্য হবে ঐতিহাসিক দিক থেকে।’ উপমহাদেশের আধুনিকতম চিত্রকলার একজন পুরোধা শিল্পী গণেশ পাইন রবীন্দ্রনাথের ছবি সম্পর্কে বলেছেন, তার ছবি এতই একক ও স্বয়ম্ভু, এ দিয়ে ‘কোনো ঘরানা আপাতত তৈরি করা যায়নি।’ তিনি আরও জানিয়েছেন, ‘কেউ যদি তার ছবি দেখে বলতেন সুন্দর হয়েছে, তৎক্ষণাৎ সেই ছবির উপর কালি ঢেলে দিতেন তিনি এবং সেই অন্ধকারের মধ্যেই সন্ধান করতেন তার ‘সুন্দর’-এর।’ ঠিক প্রিমিটিভ ও ট্রাইবাল আর্টের নাম-না-জানা অগণিত শিল্পীর মতো। নিজেকে তিনি কখনও কখনও বলেছেন এক ‘আজগুবি ছবি-আঁকিয়ে’ বলে। কিন্তু আমরা তো এখন বুঝতে পারি ধারাবাহিকভাবে খাপছাড়া ও আজগুবি ছবি এঁকে যাওয়া কত কঠিন। অবনীন্দ্রনাথ এদিকটি বুঝতে হয়তো ভুলই করেছেন। নইলে তিনি রানী চন্দকে বলবেন কেন- ‘একটা ঢেউ উঠেছে, প্রিমিটিভ, ক্রুড, এই সব আঁকতে হবে। তাতে কী আছে, না, ‘স্ট্রেংথ’ আছে। সেটা ভুল। প্রকৃতিতে তো তা নেই। …একটা জিনিস যখন অসম্পূর্ণ অবস্থায় থাকে, সেটাকেই বলে ক্রুড। …’স্ট্রেংথ’ থাকবে ভিতরে, কিন্তু বাইরে থাকবে সৌন্দর্যের আবরণ।’ ট্রকাদেরো মিউজিয়ামে গ্রেবো মূর্তির মধ্যে যে ম্যাজিক, যে সম্মোহনের প্রভা দেখেছিলেন পিকাসো, সেটিই আমরা পাই রবীন্দ্রনাথের চিত্রকর্মে। প্যারিসে রবীন্দ্রনাথের চিত্রপ্রদর্শনী দেখার পর চিত্রকর আঁদ্রে কার্পেলেসের কথায় পিকাসোর বিস্ময়-বিমুগ্ধ অভিজ্ঞতারই অনুরণন পাই। কার্পেলেস প্যারিস-প্রদর্শনীটির ছবিগুলো দেখে রথীন্দ্রনাথকে যা লিখেছিলেন, তা সম্পূর্ণ উদ্ৃব্দতির দাবি করে:

‘They are far beyond what I expected and dreamt ofÑ You are rightÑ RothiÑ It is some thing newÑ uniqueÑ grandÑ Not only will they be a treat for the admirers but they will be the bestÑ long awaited lesson for the western artists. What they have been looking for, struggling for, what they have failed to expressÑ (because abstraction needs genius to find the means of making it tangible) [Tagore] has attained it in one unique flight. His pictures have the freshness, the mysterious strength of the early primitive expressions of art …They are modern bccause they bring the message of something entirely original.’

প্রিমিটিভ কিন্তু মডার্ন, পুরাতনী কিন্তু সাম্প্রতিক- এই হচ্ছে রবীন্দ্রনাথের অর্ধচেতন অবচেতন সচেতন আঁকিবুঁকি থেকে নিষ্ফ্ক্রান্ত স্ব-উদ্ভাবিত চিত্রকলা।

[এই বিষয় সমাপ্ত]

Leave a Reply

Fill in your details below or click an icon to log in:

WordPress.com Logo

You are commenting using your WordPress.com account. Log Out /  Change )

Facebook photo

You are commenting using your Facebook account. Log Out /  Change )

Connecting to %s