পর্ব ::১৫
পূর্ব প্রকাশের পর
১৮৫৭ সালের সিপাহী বিপ্লবের প্রসঙ্গ যেভাবে সমসাময়িক কথা-সাহিত্যে প্রায়-অনুপস্থিত, ১৮৬০-১৯০০ সাল অবধি বাংলার চরম খাদ্যাভাব, মৌসুমী ক্ষুধা ও সময় সময় প্রায় দুর্ভিক্ষের পরিস্থিতি নিয়ে অনুরূপ নীরবতা দৃশ্যমান। সমসাময়িক পত্র-সাহিত্যেও ক্ষুধা ও দুর্ভিক্ষের উল্লেখ পাওয়া যায় না। তিরিশ পেরুনো রবীন্দ্রনাথ যখন অবিস্মরণীয় ‘ছিন্নপত্র’ লিখছেন তার মধ্যে বাংলার মায়াময় প্রকৃতির ছবি ফুটে ওঠে, ক্ষুধা ও অনাহারের বিস্তৃতি কোথাও দেখি না। কিন্তু সম-সাময়িক পত্রিকা-সাময়িকী- বিশেষত স্থানীয় পর্যায়ে প্রকাশিত বাংলার নানা পত্র-পত্রিকা- নিজেদের সাধ্যমত দুর্ভিক্ষের আশংকার কথা জোরে-সোরে তুলে ধরেছে। তাতে প্রেরণা এসেছে নানা সূত্র থেকে। ‘আঙ্কল টম’স কেবিন’ উপন্যাসটির উদাহরণ এক্ষেত্রে স্মরণ করা যেতে পারে। ১৮৫২ সালে প্রকাশিত দাস-প্রথা বিরোধী এই উপন্যাসটি পঞ্চাশের দশকের প্রাগ্রসর বাঙ্গালী বুদ্ধিজীবীদের মধ্যে প্রভাব ফেলেছিল। দ্য হিন্দু প্যাট্রিয়ট-র বরাত দিয়ে নরহরি কবিরাজ জানাচ্ছেন যে, এরা মনে করতেন আমেরিকার দাসদের মতই মানবেতর জীবনের পর্যায়ে নেমে গেছে বাংলার চাষীদের জীবন। এরা তাই ঠিক করলেন যে, ‘বাংলার রায়তদের সামাজিক অবস্থা’ নিয়ে রচনা-প্রতিযোগিতার আয়োজন করবেন। এতে যিনি সেরা রচনাটি লিখবেন তিনি পাবেন পাঁচশত টাকা পুরস্কার। এর বিচারকমণ্ডলীতে ছিলেন সেকালের উদারনৈতিক তিন ব্যক্তিত্ব : ‘দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর, কিশোরী চাঁদ মিত্র এবং রেভারেন্ড জেমস লং’। ১৮৫৫ সালে প্যাট্রিয়ট আরো আশা করেছিল যে, রায়তদের অবস্থা নিয়ে ‘যদি কোন উপন্যাস অদূর ভবিষ্যতে লিখিত হয়, সে লেখার মান ডিকেন্স অবধি না গড়ালেও’ তা একটি বড় কাজ হবে এবং এর মধ্য দিয়ে জমিদারী ব্যবস্থার সাথে চলতে থাকা ‘নানা জঘন্য কাজ জনসাধারণ্যে পৌঁছাবে।’ নীলদর্পণ বা জমিদার-দর্পণ-এর মধ্য দিয়ে প্যাট্রিয়ট-এর সেই আশা সেভাবে পূর্ণ হয়নি।
১৮৭০ দশকের উপোসি বাংলার দুঃখ-দুর্দশা ১৮৮০-৯০ দশক জুড়েই অব্যাহত ছিল। ১৮৯২ সালের ‘সামাজিক প্রবন্ধ’ গ্রন্থে ভূদেব মুখোপাধ্যায় পরিসংখ্যান-সারণী ব্যবহার করে এ বিষয়ে তথ্য-উপাত্ত উপস্থাপন করেছেন। পারিবারিক ও ধর্মীয় বিষয়ে ভূদের যতটাই প্রাচীনপন্থী ছিলেন, অর্থনৈতিক বিষয়ে তিনি ছিলেন ততটাই আধুনিক-পন্থী। যারা তার ‘আর্থিক অবস্থা বিষয়ক’ ভবিষ্যবিচার পড়বেন, তারাই বিস্মিত হবেন তার অর্থনৈতিক চিন্তার প্রাজ্ঞতা ও স্বচ্ছতার পরিচয় পেয়ে। ভূদেবের চিন্তার এই দিকটি পৃথক অভিনিবেশের দাবী রাখে। আপাতত, এটা দেখানো জরুরী যে, ১৮৯০ দশকের পটভূমিতে- অর্থাৎ উনিশ শতক যখন শেষ হয়ে আসছে- ভূদেব দুর্ভিক্ষ বিষয়ে কী বলছেন :
‘পণ্ডিতেরা গণনা করিয়াছেন যে, ৫ কোটি ভারতবাসীর পক্ষে পর্যাপ্ত অন্ন দুই সন্ধ্যা জুটে না! কেহ কেহ বলিয়াছেন যে, অনাহার, অল্পাহার এবং কদাহার দোষে ভারতবাসী ক্ষীণবীর্য্য এবং স্বল্পায়ু হইতেছে। একপ্রকার নিশ্চয় হইয়াই গিয়াছে যে, প্রতি দশ এগার বৎসর অন্তর ভারতবর্ষে একটি করিয়া বৃহৎ দুর্ভিক্ষ দেখা দেয়, এবং তাহার পরেই একটী করিয়া মহামারী আসিয়া উপস্থিত হয়। তদ্ভিন্ন, স্থানে স্থানে অন্নকষ্ট এবং মারীভয় প্রায় প্রতিবর্ষেই দৃষ্ট হইয়া থাকে। প্রভূত ধনশালী ইউরোপের কথা ছাড়িয়া দিলেও পৃথিবীর অপর কোন দেশের অবস্থা এরূপ হইয়াছে বলিয়া শুনা যায় না।’
ভূদেব মুখোপাধ্যায়ের মতকে হাল্ক্কা করে দেখার উপায় নেই। তার ‘সামাজিক প্রবন্ধ’ প্রকাশের পর এশিয়াটিক সোসাইটির আলোচনা সভায় স্যার চার্লস এলিয়ট এরকম মন্তব্য করেছিলেন যে, ভূদেবের মত ‘এত বিশাল জ্ঞানের অধিকারী ভারতে আর কেউ নেই।’ এ কথা ইতিহাসবিদ তপন রায়চৌধুরী তার ‘ইউরোপ পুনর্দর্শন’ গ্রন্থে আমাদের স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন।
উপোসি বাংলা বিষয়ে বঙ্কিমচন্দ্র, রমেশচন্দ্র দত্ত, ভূদেব মুখোপাধ্যায় ও স্থানীয় পত্র-পত্রিকার উদাহরণ টেনে আমি এ পর্যন্ত দেখাবার চেষ্টা করেছি যে, উনিশ শতকের বাংলার বৃহত্তর গ্রামীণ কৃষিনির্ভর জনগোষ্ঠী তথা রায়তদের মধ্যে ক্ষুধার ব্যাপক বিস্তৃতি হয়েছিল। এর প্রভাব থেকে অপেক্ষাকৃত খাদ্যে-উদ্বৃত্ত জেলাগুলোও বাদ ছিল না। পূর্ব বঙ্গের নানা জেলাতেই কখনো বন্যার কারণে, কখনো অনাবৃষ্টির কারণে ফসল হানি হয়েছে, কিন্তু জমিদারের শোষণের মাত্র কমে নি- ১৮৫৯ সালের বর্গা-স্বত্ব আইনের সংস্কার প্রচেষ্টার পরেও। গ্রামাঞ্চলে রায়তী অধিকারবিহীন (যাদেরকে টহফবৎ-জুড়ঃ বলা হয়েছে) এক নিম্নতম বর্গের সৃষ্টি হয়েছিল, যারা নেমে গিয়েছিল দারিদ্র্য-সীমার অনেক নীচে, দারিদ্র্য আর ক্ষুধার মধ্যবর্তী পর্যায়ে। এরাই ছিল উনিশ শতকের বাংলার প্রান্তিক মানুষ। ফসলহানির বছরে এরাই চলে যেত দুর্ভিক্ষাবস্থায় বা রইত দুর্ভিক্ষের ঝুঁকিতে। আমি মাঝে মাঝে সন্দেহ করি যে এক নীরব ক্ষুধা-অনাহারের বেদনা মিশে আছে উনিশ শতকীয় বাংলার ‘বাউলা’ গানে-কবিতায়। এই পৃথিবীবিমুখতা, জগৎ-সংসার ছেড়ে অচিনপুরের চিন্তা, এর পেছনে হয়ত গ্রামের নিম্নতম বর্গের সামাজিক-অর্থনৈতিক কষ্ট-বঞ্চনার অগ্রন্থিত অভিজ্ঞতা কাজ করে থাকবে। অথবা, গ্রাম-বাংলার বুক থেকে উঠে আসা এই বেদনার্ত লোকজ গানগুলো ছিল ক্ষুধাপীড়িত গ্রামীণ জন-জীবনেরই শুদ্ধতম শিল্পরূপ। এ নিয়ে বারান্তরে আলোচনা করা যাবে।
৫. পঞ্চাশের মন্বন্তর
এলা সেনের ছোটগল্প সংকলন ‘ডার্কেনিং ডেইস’ (উধৎশবহরহম উধুং) বেরিয়েছিল ১৯৪৪ সালের মে মাসে। ইংরেজিতে লেখা নয়টি গল্প ছিল তাতে। বইটির দুটি বিশেষত্ব প্রথমেই চোখে পড়বে। প্রথমত, গল্পগুলো লেখা ‘নারীর দৃষ্টিকোণ’ থেকে। কথাটা আজকের দিনে আর তেমন নতুন মনে হবে না। কিন্তু গ্রন্থ রচনার কাল ১৯৪৩-৪৪ সালে সেটা মনে রাখলে কিছুটা বিস্মিত হতেই হয়। গ্রন্থকার বলছেন : ্তুঃযরং নড়ড়শ রং ধফসরঃঃবফষু ৎিরঃঃবহ ভৎড়স ধ ড়িসধহ্থং ঢ়ড়রহঃ ড়ভ ারব,ি রভ ড়হ :যরং ধপপড়ঁহঃ ড়াবৎ-বসঢ়যধংরং রং ষধরফ ড়হ :যব ারপরংংরঃঁফবং ড়ভ ড়িসবহ ফঁৎরহম :যব ফৎবধফভঁষ ফধুং ড়ভ ষধংঃ ুবধৎ রঃ রং হড়ঃ ভড়ৎ ধিহঃ ড়ভ ধঢ়ঢ়ৎবপরধঃরড়হ ড়ভ :যব ংঁভভবৎরহমং ড়ভ সবহ্থ ইংরেজি ১৯৪৩ সালের (বাংলায় যা ‘পঞ্চাশের মন্বন্তর’ নামে পরিচিত) এক বছর বাদে প্রকাশিত বইটির ভূমিকার লেখিকা বলছেন : ‘দুর্ভিক্ষ এখনও কেটে যায়নি।… মহামারী এখন গ্রামের পর গ্রামে মাথা তুলছে এবং এখনও পর্যন্ত পর্যাপ্ত পরিমাণে চিকিৎসা সাহায্য পৌঁছায়নি। অধিকাংশই বোঝে না পুনর্বাসনের মানে কী… উটপাখির মতো মাথা গুঁজে বসে থাকলে সমাধান মিলবে না… এই বইতে আমি বলার চেষ্টা করেছি যে বড় আকারের ত্রাণ তৎপরতা হাতে নেওয়া প্রয়োজন, যদি বাংলাকে পুনর্জীবিত করতে হয়।… সরকার কি করবে বা করবে না, বা করতে পারবে না, তার জন্য বসে না থেকে অ-সরকারি ত্রাণকার্য চালিয়ে যেতে হবে।… লক্ষ্মী, যূথিকা বা সুখীর দুঃখ-যন্ত্রণাকে বৃথা যেতে দেওয়া যাবে না।’
এলা সেনের বইটির দ্বিতীয় বৈশিষ্ট্য হচ্ছে জয়নুল আবেদিন। দুর্ভিক্ষের যে-চিত্রকর্মগুলোর জন্য তরুণ জয়নুল (তার তখন উনত্রিশ বছর বয়স) রাতারাতি বিখ্যাত হয়ে ওঠেন সেই ছবিগুলো দিয়ে সাজানো বইটি। হলদে কাগজের ওপরে কালো (চাইনিজ ইংক) কালিতে আঁকা সেসব, প্রতিটিতে ১৯৪৩ সালের উল্লেখ রয়েছে। এলা সেন বইয়ের পরিচিতিপত্রে যোগ করেছেন, ‘উইথ ড্রইং ফ্রম লাইফ বাই জয়নুল আবেদিন’। তেরোটি ছবি, এদের বেশিরভাগই এখন ব্রিটিশ মিউজিয়ামে সংরক্ষিত। আমার জানা মতে, এলা সেনের বইটিতে জয়নুলের দুর্ভিক্ষের ছবিগুলো প্রথম প্রকাশিত হয়। কী করে জয়নুলের সঙ্গে এলা সেনের যোগাযোগ হলো সেটাও আমাদের আগ্রহ জাগায়। কে ছিলেন এই এলা সেন?
এলা সেনের বইটি প্রকাশিত হয়েছিল সুশীল গুপ্ত’র প্রকাশনালয় দ্বারা। তার মেয়ে লীলা দাস গুপ্ত জানাচ্ছেন, “এলা সেন ছিলেন সাংবাদিক। তার স্বামী আলেক রেইড কলকাতার স্টেটসম্যান পত্রিকায় কাজ করতেন। খুশওয়ান্ত সিং-এর ‘সাহিবস্ হু লাভড্ ইন্ডিয়া’ বইটিতে আলেক রেইডের উল্লেখ আছে।” পরবর্তীতে এলা সেন ইন্দিরা গান্ধীর ঘনিষ্ঠ হয়ে ওঠেন এবং ১৯৭৩ সালে ইন্দিরার প্রথম জীবনীকার ছিলেন তিনিই। নারী অধিকার কর্মী ও কমিউনিস্ট পার্টির সদস্য মনিকুন্তলা সেনের বরাত দিয়ে ‘ক্যালকাটা : দ্য স্টর্মি ডেকেডস্’ গ্রন্থে ইতিহাসবিদ তনিকা সরকার জানাচ্ছেন যে, এলা সেনের কলকাতার বাসায় বামধারার ও প্রগতিশীল মতের নারীরা প্রায়ই মিলিত হতেন। তরুণ জয়নুল আবেদিনও প্রগতি লেখক ও শিল্পী সংঘের সঙ্গে যুক্ত হয়েছিলেন এ সময়ে। মকবুল ফিদা হুসেন ও সৈয়দ হাশিম রাজার মতো শিল্পীরা যেমন করে উন্মেষ পর্বেই প্রগ্রেসিভ আর্টিস্ট মুভমেন্টের সঙ্গে যুক্ত হয়েছিলেন, জয়নুলও তেমনিভাবে প্রগতিশীল লেখক-শিল্পীদের আন্দোলনের সঙ্গে জড়িয়ে পড়েছিলেন। এই আন্দোলন ও গোষ্ঠী গড়ে তোলার পেছনে প্রত্যক্ষভাবে কমিউনিস্ট পার্টির ভূমিকা ছিল। পার্টির প্রেরণাতেই জয়নুল কলম-তুলি ধরেছিলেন দুর্ভিক্ষের ডকু-বিবরণী রঙে-রেখায় প্রকাশের জন্য। এ কাজে তিনি অবশ্য একা ছিলেন না। তার সঙ্গে ছিলেন শোভা সিং, চিত্তপ্রসাদ, সোমনাথ হোর প্রমুখ শিল্পী। এন্ড্রু হোয়াইটহেড মন্তব্য করেছেন, ‘স্পষ্টতই জয়নুল ছিলেন বামধারার পক্ষে’। পরবর্তীতে এই ‘বামপন্থি’ জয়নুল আবেদিন ‘বাংলাদেশের আধুনিক শিল্পকলার জনক হয়ে ওঠেন’।
কিন্তু এলা সেনের বইটি গল্পগ্রন্থ হলেও সেখানে একটা পরিশিষ্ট ছিল, যাতে পঞ্চাশের মন্বন্তর সম্পর্কে চলতি তথ্যের বিরল বিচার বিশ্নেষণ চিহ্নিত। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের এনথ্রোপলজি বিভাগের দ্বারা পরিচালিত জরিপের উল্লেখ করে সেখানে বলা হয়েছে : ১৯৪৩-৪৪ সালের দুর্ভিক্ষে মহামারীতে ‘স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি মৃত্যুর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে পঁয়ত্রিশ লাখের বেশি।’ (ঃযব ঢ়ৎড়নধনষব :ড়ঃধষ হঁসনবৎ ড়ভ ফবধঃযং ধনড়াব :যব হড়ৎসধষ পড়সবং :ড় বিষষ ড়াবৎ :যৎবব ধহফ ধ যধষভ সরষষড়হং)। ১৯৪৩ সালের মুভমেন্টে মৃত্যুর সংখ্যা ১৯ লাখে গিয়ে দাঁড়াবে। পরিসংখ্যানকে বিশ্বাসযোগ্য করে তোলার জন্যই বোধকরি দুই মিলিয়ন নয়, একেবারে গুণে গুণে ১.৯ মিলিয়নের মৃত্যু সংখ্যা নির্দিষ্ট করা হয়েছিল।
কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের পূর্বে উল্লিখিত জরিপের মতে, ‘এই মৃত্যুর ৩০ থেকে ৫০ শতাংশই পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশু। অমর্ত্য সেনের মতোই লেখিকা এখানে যুক্তি দেখাচ্ছেন যে, খাদ্যের উৎপাদনে স্বল্পতা নয়, খাদ্যের বণ্টনে বৈষম্য ও অব্যবস্থার কারণেই এই দুর্ভিক্ষ হয়েছে। আমেরিকার ‘লাইফ’ ম্যাগাজিনের বরাত দিয়ে জানানো হয় যে, ‘প্রকৃত পক্ষে [১৯৪৩ সালে] ভারতে খাদ্যশস্যের উৎপাদন ১৯৪২ অথবা ১৯৪১ সালের চেয়েও বেশি হয়েছিল। স্থানীয় পর্যায়ে কোথাও কোথাও ঘাটতি অনুভূত হলেও সেটা বড় কারণ ছিল না। মূল কারণ ছিল দুটো। একটি হচ্ছে কেন্দ্রের ব্রিটিশ সরকার ও স্থানীয় স্বায়ত্তশাসিত সরকারের মধ্যে দায়িত্বশীল সম্পর্কের আংশিক ভেঙ্গে-পড়া। আরেকটি হচ্ছে, (প্রবল) মূল্যস্ম্ফীতি।’
সম্প্রতিকালে দুটো প্রকাশনা পঞ্চাশের মন্বন্তরের কার্যকারণের ব্যাখ্যায় উল্লেখযোগ্য নতুন মাত্রা যোগ করেছে। মধুশ্রী মুখার্জি তার দীর্ঘকালের গবেষণা দিয়ে দেখিয়েছেন যে, জাপানি আক্রমণের ঝুঁকির মুখে ব্রিটিশ সরকার বাংলার সব উদ্বৃত্ত চাল মধ্যপ্রাচ্যে যুদ্ধরত ইংরেজ সেনাদের জন্য মজুদ করে রেখেছিল। তার ওপরে যাতে করে কোনো চাল বাজার-ব্যবস্থার মাধ্যমে অন্য কারও হাতে চলে না যায় বা বাংলার বাইরে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় জাপানি অধিকৃত অঞ্চলে চলে না যায় সে জন্য পূর্ববঙ্গের থেকে চাল রফতানিতে ব্যবহূত পণ্যবাহী ছোট ছোট নৌযানগুলো পর্যন্ত ধ্বংস করে ফেলা হয়েছিল। সমগ্র ১৯৪৩ সাল জুড়েই কলকাতার স্টেটসম্যান পত্রিকা তাদের প্রথম পাতায় তিনটি পরিসংখ্যান বড় করে প্রকাশ করত- ‘গতকাল মৃত্যুর সংখ্যা’, ‘গত সপ্তাহের মৃত্যুর সংখ্যা’ এবং ‘গত মাসের মৃত্যুর সংখ্যা’।
[ক্রমশ]
Original in সমকাল