[তুমুল গাঢ় সমাচার] মিলের ভারতবর্ষ ও বঙ্কিমচন্দ্রের মিল (Mill’s India and Bankimchandra)

পর্ব ::১০

[গত সংখ্যার পর]
এটা ঠিক যে, বঙ্কিম অন্যত্র বলেছেন, ‘আকবর শাসিত ভারতবর্ষকে স্বতন্ত্র ও স্বাধীন বলি।’ এতে রাজশক্তির সুশাসনের গুণাবলির ওপরেই গুরুত্ব বেশি করে পড়ে; তার ধর্মপরিচয় নির্ণয়ের ওপরে নয়। তবু ধর্মপরিচয় নিয়ে বঙ্কিমের নিজের ভেতরে টানাপড়েন ছিল, পাছে নিরপেক্ষ পাঠক তাকে একদেশদর্শী ভাবেন, তা নিয়ে। ‘রাজসিংহ’ উপন্যাসের উপসংহারে তাই বঙ্কিম আত্মপক্ষ সমর্থনে যুক্তি দিচ্ছেন এভাবে :’গ্রন্থকারের বিনীত নিবেদন এই যে, কোনো পাঠক না মনে করেন যে, হিন্দু মুসলমানের কোনো প্রকার তারতম্য নির্দেশ করা এই গ্রন্থের উদ্দেশ্য। হিন্দু হইলেই ভালো হয় না, মুসলমান হইলেই মন্দ হয় না, অথবা হিন্দু হইলেই মন্দ হয় না, মুসলমান হইলেই ভালো হয় না। ভালো-মন্দ উভয়ের মধ্যে তুল্যরূপেই আছে।’ কিন্তু এর থেকে বঙ্কিম ভারতবর্ষের সামাজিক ইতিহাসে হিন্দু-মুসলমানের ‘যুক্ত সাধনা’র কোনো আদর্শ স্থাপনে এগিয়ে এলেন না। এর পরবর্তী লাইনগুলো ব্যয়িত হলো তুলনামূলক বাহুবল ও রাজকীয় গুণের তত্ত্বে, যা দুই সম্প্রদায়ের মধ্যে শতাব্দীব্যাপী এক দ্বন্দ্বাত্মক ‘প্রতিদ্বন্দ্বী’ আচরণের কথাই কেবল তুলে ধরে। হাসিম শেখ-রামা কৈবর্ত যে একই সুখ-দুঃখের জীবন অতিবাহিত করে এসেছে- সে কথা রাজকীয় ইতিহাসের তুলনামূলক ভূমিকার পর্যালোচনায় চাপা পড়ে গেল। যখন হিন্দু-মুসলমানকে ইতিহাসের বলয়ে সমদর্শী চোখে দেখার চেষ্টা করেছেন তখনও বঙ্কিম রাজশক্তি লাভে ইচ্ছুক পরস্পর যুধ্যমান দুই পরাশক্তি হিসেবেই তাদেরকে চিহ্নিত করেছেন :’বরং ইহাতে স্বীকার করিতে হয় যে, যখন মুসলমান এত শতাব্দী ভারতবর্ষের প্রভু ছিল, তখন রাজকীয় গুণে মুসলমান সমসাময়িক হিন্দুদিগের অপেক্ষা অবশ্য শ্রেষ্ঠ ছিল। কিন্তু ইহাও সত্য নহে যে, সকল মুসলমান রাজা সকল হিন্দু রাজা অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ ছিলেন। অনেক স্থলে মুসলমানরাই হিন্দুর অপেক্ষা রাজকীয় গুণে শ্রেষ্ঠ। অনেক স্থলে হিন্দু রাজা মুসলমান অপেক্ষা রাজকীয় গুণে শ্রেষ্ঠ। অন্যান্য গুণের সহিত যাহার ধর্ম আছে- হিন্দু হউক, মুসলমান হউক, সেই শ্রেষ্ঠ। অন্যান্য গুণ থাকিতেও যাহার ধর্ম নাই-হিন্দু হউক, মুসলমান হউক-সেই নিকৃষ্ট।’ এখানে তিনি স্পষ্টতই মিল-বর্ণিত লিবার্টি ও ইকুয়ালিটির সাম্য-চিন্তা থেকে সরে এসে ধর্মকেন্দ্রিক আত্মপরিচয়ের ওপরে বিশেষ করে জোর দিচ্ছেন। যিনি ধর্মানুরাগী তিনিই শ্রেষ্ঠ, যিনি ধর্মশূন্য তিনিই নিকৃষ্ট বললে হিন্দু-মুসলিম চলমান সমস্যার কোনো সুরাহা হয় না, বরং সমস্যার সূত্রপাত হয় কেবল, যার পরিচয় পাই পোস্ট-কলোনিয়াল রাষ্ট্রনৈতিক সেক্যুলারিজমের ব্যর্থতায়।

তারপরও বঙ্কিমের জীবনের শেষ উপন্যাস ‘সীতারাম’-এ মুসলমান ফকির চাঁদশাহের মুখ দিয়ে সীতারামের উদ্দেশে যে কথা বলা হয়, তার থেকে ভিন্ন এক রাজনৈতিক-সামাজিক সম্ভাবনা যেন উঁকি দিয়ে ওঠে :’ফকির বলিল, বাবা। শুনিতে পাই, তুমি হিন্দুরাজ্য স্থাপন করিতে আসিয়াছো, কিন্তু অত দেশাচারের বশীভূত হইলে, তোমার হিন্দুরাজ্য সংস্থাপন করা হইবে না। তুমি যদি হিন্দু-মুসলমান সমান না দেখ, তবে এই হিন্দু-মুসলমানের দেশে তুমি রাজ্য রক্ষা করিতে পারিবে না। তোমার রাজ্যও ধর্মরাজ্য না হইয়া পাপের রাজ্য হইবে। সেই এক জনই হিন্দু-মুসলমানকে সৃষ্টি করিয়াছেন; যাহাকে হিন্দু করিয়াছেন, তিনিই করিয়াছেন, যাহাকে মুসলমান করিয়াছেন, সেও তিনিই করিয়াছেন। উভয়েই তাঁহার সন্তান; উভয়েই তোমার প্রজা হইবে। অতএব দেশাচারের বশীভূত হইয়া প্রভেদ করিও না। প্রজায় প্রজায় প্রভেদ পাপ। পাপের রাজ্য থাকে না।’

এ উক্তি সাতচল্লিশের পার্টিশনের কালে নেহরু, প্যাটেল ও জিন্নাহ্‌র প্রতিও বলা যেতে পারত। এই উক্তিকে যদি বঙ্কিমচন্দ্রের প্রকৃত সত্তা বলে মেনে নিই, তাহলে অন্য সব অসংবেদনশীল রূঢ় উক্তি সকলকে ব্যাখ্যা করি কী করে? আনন্দমঠ-এর অরাজক পরিবেশে ভবানন্দ কি বলেনি, ‘সকল দেশে রাজার সঙ্গে রক্ষণাবেক্ষণের সম্বন্ধ। আমাদের রাজা রক্ষা করে কই? ধর্ম গেল, জাতি গেল, মান গেল, কুল গেল, এখন ত প্রাণ পর্যন্ত যায়। এ নেড়েদের না তাড়াইলে আর কি হিন্দুর হিন্দুয়ানী থাকে?’ তারপর রয়েছে দাঙ্গার বিভীষিকাময় বর্ণনা, তা-ও আবার পল্লীগ্রামের পটভূমিতে :”সকলে বলিল, ‘ইংরেজ মুসলমান একত্রে পরাভূত হইয়াছে, দেশ আবার হিন্দুর হইয়াছে। সকলে একবার মুক্ত কণ্ঠে হরি হরি বল।’ গ্রাম্য লোকেরা মুসলমান দেখিলেই তাড়াইয়া মারিতে যায়। কেহ কেহ সেই রাত্রে দলবদ্ধ হইয়া মুসলমানদিগের পাড়ায় গিয়া তাহাদের ঘরে আগুন দিয়া সর্বস্ব লুটিয়া লইতে লাগিল। অনেক যবন নিহত হইল, অনেক মুসলমান দাড়ি ফেলিয়া গায়ে মৃত্তিকা মাখিয়া হরিনাম করিতে আরম্ভ করিল, জিজ্ঞাসা করিলে বলিতে লাগিল, ‘মুই হেঁদু’।” বাংলায় পর্যায়ক্রমিক দাঙ্গা-হাঙ্গামা শুরু হয় বিশ শতকে। কিন্তু তার আগেই বঙ্কিমচন্দ্র সাহিত্যের পাতায় দাঙ্গা-হাঙ্গামা শুরু করে দিয়েছিলেন।

প্রশ্ন জাগে- আনন্দমঠ থেকে উপরোক্ত সন্ন্যাসী ভবানন্দ-নিঃসৃত উদ্ধৃতির বঙ্কিম আর সীতারাম থেকে পূর্বে উল্লিখিত ফকির চাঁদশাহ-নিঃসৃত উদ্ৃব্দতির বঙ্কিম কি একই ব্যক্তি, একই লেখক, একই সত্তার দুই বিপরীত বহিঃপ্রকাশ? বিশ্বাস হতে চায় না এই বিভাজন-রেখা একই সৃষ্টিশীল প্রতিভার মধ্য দিয়ে চলেছে। উনিশ শতকের বাংলায় একাধারে আধুনিকতাবাদী রেনেসাঁ ও হিন্দু পুনরুজ্জীবনবাদের যে বিকাশ ঘটে, তার মৌলিক দ্বিত্বতার প্রকাশ পাই বঙ্কিম-মানসে। এই দ্বিখণ্ডন অমোচনীয়, অপরিত্রাণযোগ্য, যা ধর্মীয় জাতীয়তাবাদকে একটি প্রধান ধারায় পরিণত করবে তার মৃত্যুর দুই দশকের মধ্যেই। এর ত্র্যহস্পর্শ থেকে কংগ্রেস-লীগ ধারার রাজনীতিক প্রায় কেউই বাদ যাবেন না। মিল-বঙ্কিমের সত্তার বিভক্তির সূত্রেই; উদার ও অনুদার চিন্তারাজিকে একত্রে সহাবস্থানে অনুপ্রাণিত প্রদর্শিত পথেই অগ্রসর হবেন অনেক প্রাগ্রসর মুসলিম বুদ্ধিজীবীও।

৩. শেষের কথা

ফ্রয়েডের শেষ জীবনের লেখা ‘আউটলাইন অব সাইকো-অ্যানালাইসিস’-এ ‘বিভক্ত সত্তা’ বিষয়ে উৎসাহ লক্ষ্য করা যায়। সেখানে ফ্রয়েড দেখান কী করে সত্তা ‘নিজের ভেতরে ফাটল অথবা বিভক্তির দেয়াল তুলে দিয়ে’ ক্রমাগত দ্বৈরথের দোটানার ফলে ‘সম্ভাব্য বিনাশ থেকে নিজেকে রক্ষা করে’। এই লেখাটিকে জাক লাকাঁ ফ্রয়েডের সেরা লেখাগুলোর একটি বলে চিহ্নিত করেন। আমাদের আলোচনার জন্য ফ্রয়েডের এই ধারণাটি ছিল গুরুত্বপূর্ণ। আমরা দেখেছি, ইউরোপিয়ান এনলাইটেনমেন্টের এক প্রধান ব্যক্তিত্ব জন স্টুয়ার্ট মিল কী করে ভারতবর্ষীয় উপনিবেশ প্রশ্নে এসে অবলীলায় ‘ভিন্ন রীতি’ অবলম্বনের পথে ওকালতি করেন। ইউরোপের জন্য ‘লিবারেল’ চিন্তা, আর ভারতবর্ষের জন্য ‘ইল-লিবারেল’ চিন্তার অনুমোদন উপনিবেশে আধুনিকতার চৌহদ্দি নিয়ন্ত্রণ করে দিয়েছিল। এই আধুনিকতা, যাকে ‘ঔপনিবেশিক আধুনিকতা’ বলা যায়- শব্দ-উপমা ব্যবহারে ইউরোপের ঝুলি থেকে নানা বুলি ধার করেছে। কিন্তু সেই সাথে তাকে এই সীমানাও বেঁধে দেওয়া হয়েছে যে, ইউরোপীয় আধুনিকতার সবকিছু তার জন্য প্রযোজ্য নয়। কেন প্রযোজ্য হবে না, এ জন্য কোনো যুক্তি-প্রমাণ হাজির করেননি মিল। মিলের দুই সত্তা। একদিকে ইউরোপীয় উদারনৈতিক চিন্তকের ভাবমূর্তি, অন্যদিকে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির অনুদার নীতিমালা নির্ধারণে প্রশাসনিক ভূমিকা পাশাপাশি বিরাজ করছিল কোনো দৃশ্যত দ্বন্দ্ব-সংঘাত সৃষ্টি না করেই। এতে আশ্চর্যের কিছু নেই। সত্তার ভেতরে যাতে প্রচন্ড দ্বন্দ্ব-সংঘাতের সৃষ্টি না হয় সে জন্যই সত্তা বিভক্ত হয়ে যায় দুই অচেনা প্রদেশে। এতে যুক্তিবাদিতা ও অযৌক্তিক দৃষ্টিভঙ্গি দুই-ই অনায়াসে মুখ দেখাদেখি না করে অনায়াসে চলতে পারে।

আমরা দেখেছি মিল-শিষ্য বঙ্কিমচন্দ্রের ক্ষেত্রেও অনুরূপ বিভক্তির অনুবৃত্তি। ভারতবর্ষীয় জাতি-গঠন প্রকল্পে এসে আপাদমস্তক যুক্তিবাদী ‘র‌্যাশনাল’ বঙ্কিম শেষ পর্যন্ত এক দ্বিখণ্ডিত সত্তায় বিভক্ত হয়ে গেলেন। সেখানে শুধু হিন্দু জনগোষ্ঠীকেই জাতি গঠনের মধ্যে স্বীকার করে নেওয়া হলো; অন্যদিকে, মুসলমান জনগোষ্ঠীকে ঠেলে দেওয়া হলো জাতির বাইরে, ইতিহাসের বাইরে, আধুনিকতার বাইরে ‘অপর-বর্গ’ হিসেবে। এই কাজটি করা হলো কোনো যুক্তি-তর্ক-ফয়সালার মাধ্যমে নয়; সম্পূূর্ণ একপেশে যুক্তিরহিত পদক্ষেপের মাধ্যমে। ‘কৃষ্ণ চরিত্র’ নির্মাণে বঙ্কিম যতটা তার্কিক শক্তি ব্যবহার করেছেন, তার সামান্যতম নমুনাও আমরা কোথাও দেখতে পাই না মুসলমান জনগোষ্ঠীকে অপাঙ্‌ক্তেয় করার ক্ষেত্রে কোনো যুক্তি প্রদর্শনে। কেন তিনি মুসলমান জনগোষ্ঠীকে ভারতবর্ষীয় কমিউনিটির বাইরে দূরে সরিয়ে রাখলেন; ভারত-ইতিহাসের অন্দরমহলে স্থান দিলেন না- এ সম্পর্কে কোনো ব্যাখ্যা নেই তার।

আমি সন্দেহ করি যে, সাইকো-অ্যানালাইসিসে যদিও রবীন্দ্রনাথের পক্ষপাত ছিল না, তবুও তার কোনো কোনো লেখাকে ‘বিভক্ত সত্তা’র ওপরে ক্রিটিক্যাল কমেন্টারি হিসেবে দিব্যি পাঠ করা যায়। বঙ্কিম যেখানে ইউরোপীয় আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে জাতি গড়ার প্রকল্পে এগোবেন এবং মাতৃরূপিণী দেবী শক্তির কাছে উৎসর্গীকৃত হিন্দু জাতির আদর্শকে শেষ পর্যন্ত শ্রেয়োজ্ঞান করবেন, রবীন্দ্রনাথ সেখানে (স্বদেশী সমাজ পর্বের মোহভঙ্গের পর) পুনর্বিবেচনা করবেন সমগ্র জাতি গঠন প্রকল্পকেই। জাতীয়তাবাদকে রবীন্দ্রনাথ অভিহিত করবেন ‘ভৌগোলিক অপদেবতা’ বলে; বঙ্কিম রচিত ‘বন্দে মাতরম’ সঙ্গীত যে কোনোভাবেই ‘জাতীয় সঙ্গীত’ হিসেবে গীত হতে পার না- এ মর্মে তিনি কংগ্রেস ওয়ার্কিং কমিটিকে চিঠি লিখবেন। আমার এ রকমও মনে হয় যে, তার লেখায় ‘ছোট ইংরেজ’ বনাম ‘বড় ইংরেজ’ বিভাজন শুধু ইংরেজ রাজ-কর্মচারী যারা ভারত শাসন করেছেন, আর ইংরেজ সাহিত্যিক-বুদ্ধিজীবী যাদের লেখা পড়ে ভারতবর্ষীয়রা আধুনিক সাহিত্য-দর্শনে প্রশিক্ষিত হয়ে উঠেছেন, এই দুই বলয়ের বৈপরীত্য বোঝাবার জন্যই কেবল লেখা হয়নি। একই সত্তার মধ্যেই ‘ছোট ইংরেজ’ ও ‘বড় ইংরেজ’ ঢুকে যেতে পারে, বাইরের বিভক্তি তখন লিবারেল আধুনিকতার অন্তরের বিভক্তিতে পরিণত হতে পারে- এমন একটি সম্ভাবনা রবীন্দ্রনাথের চোখ এড়ায়নি।

আমি যুক্তি দেওয়ার চেষ্টা করেছি যে সত্তার এই বিভক্তিকে কোনো সাধারণ মাপের দোলাচল, দ্বৈরথ, নিছক ‘নেতিবাচক ও ইতিবাচক’ প্রবণতার দ্বন্দ্ব হিসেবে দেখা যায় না। ইউরোপের আধুনিকতার জন্য ‘এক নিয়ম’, আর ভারতবর্ষীয় ঔপনিবেশিক আধুনিকতার জন্য ‘অন্য নিয়ম’- মিলের এই কল্পনাকে নিছক ‘প্রগতিশীল’ ও ‘প্রতিক্রিয়াশীল’ প্রবণতার দ্বন্দ্ব বললে আধুনিকতার শাসন-সংকটের গভীরে যাওয়া যায় না। ঠিক একইভাবে যুক্তিবাদী বঙ্কিম-মানসে হিন্দুদের জন্য ‘এক নিয়ম’, আর মুসলমানদের জন্য ‘অন্য নিয়ম’- এ রকম কল্পনাকেও ইতি এবং নেতির দ্বন্দ্ব বলে লঘু করা যায় না। সাধারণ মাপের মানুষ হলে যা-ও বা দেখা যেত, তাদের অসাধারণ ব্যক্তিত্ব, তীক্ষষ্টধী মনন, ইউরোপীয় ও ভারতবর্ষীয় জাতি গঠন প্রক্রিয়ায় তাদের পথিকৃৎ ভূমিকার কথা মনে রাখলে তাদের ব্যক্তিগত সত্তার ফাটল আর ‘ব্যক্তিগত’ থাকে না। পরবর্তীকালের ঔপনিবেশিক শাসন ও তার বিরুদ্ধে জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের ক্রমশ বিভেদমুখী বিকাশের জন্য এই সত্তার বিভক্তি এক সুদূরপ্রসারী প্রভাব বিস্তার করেছিল ভারতবর্ষে।

[ক্রমশ]

Original in সমকাল

Leave a comment